ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে মামলার কারণে আটকে গেছে পশ্চিমবঙ্গে কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়া। কলেজে ভর্তির কেন্দ্রীয় পোর্টালে ফর্ম দেয়ার কাজ শেষ হয়নি।
এই জটিলতায় আতান্তরে পরেছেন লক্ষাধিক ছাত্রছাত্রী।ছবি: Subrata Goswami/DW
বিজ্ঞাপন
উচ্চমাধ্যমিকে ৯০ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করেছেন স্বপ্নময় ঘোষ। ইচ্ছে ছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বা ইংরেজি নিয়ে স্নাতকস্তরে ভর্তি হওয়ার। অন্যান্য বছরে ১ অগাস্টেই কলেজে নতুন ক্লাস শুরু হয়ে যায়। এবছর কেন্দ্রীয় পোর্টালে ফর্ম জমা নেয়ার কাজই শেষ হয়নি এখনো। রাজ্যের নতুন ওবিসি তালিকা নিয়ে জটিলতার কারণে স্নাতক স্তরে কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়া এখনো বিশ বাঁও জলে।
মে মাসেই প্রকাশিত হয়েছিল এই বছরের উচ্চ মাধ্যমিকের ফল। সাধারণভাবে প্রতি বছর এই ফল প্রকাশের পর থেকেই রাজ্যের কলেজগুলিতে স্নাতক স্তরে ছাত্র ছাত্রীর ভর্তির তাড়াহুড়ো দেখা যায়। এই বছর ব্যতিক্রম। নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন, স্কটিশ চার্চ কলেজ, সেন্ট জেভিয়ার্সের মতো হাতে গোনা কয়েকটি স্বায়ত্তশাসিত এবং সংখ্যালঘু কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকলেও রাজ্যের শতাধিক কলেজে কেন্দ্রীয় পোর্টাল মারফত ভর্তির প্রক্রিয়া ক্রমাগত পিছিয়ে চলেছে।
যাদবপুরের ভর্তি
এর মধ্যেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে ভর্তির প্রক্রিয়া। এই বছর রাজ্যের প্রকাশিত ওবিসি সংরক্ষণ তালিকা নিয়ে গোল বেঁধেছিল। কোন গোষ্ঠী এই তালিকাভুক্ত হতে পারেন সেই নিয়ে মামলা চলছে সুপ্রিম কোর্টে। এই বছর জুনে হাইকোর্টের একটি রায়ে রাজ্যকে আপাতত ২০১০-এর পুরনো ওবিসি তালিকা মেনেই নিয়োগ বা ভর্তি প্রক্রিয়া চালাতে বলা হয়েছিল। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সেই রায় মেনেই ছাত্র ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিছু সিট সংরক্ষিত থাকবে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের উপর ভিত্তি করেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ততদিনে ক্লাস শুরু হয়ে যাবে। যাদবপুরে তাই বিজ্ঞান বিভাগে এন্ট্রান্স পরীক্ষা শেষ হয়েছে এবং মেধা তালিকা প্রকাশের কাজ শুরু হয়েছে। সেই ভিত্তিতে এই মাসের শেষে ২৮ থেকে ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে চলবে ভর্তি। কলা বিভাগে সবে শেষ হয়েছে এন্ট্রান্স পরীক্ষা। খাতা দেখার কাজ চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, কলা বিভাগে ভর্তি শুরু হবে অগাস্টে।
যাদবপুরে প্রতিবাদ চলছে, শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে এফআইআর
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও তার গাড়ি চালকের বিরুদ্ধে এফআইআর হলো।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ব্রাত্য বসুর বিরুদ্ধে এফআইআর
বৃহস্পতিবার রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, তার গাড়ির চালক এবং অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিশ্রর বিরুদ্ধে এফআইআর করেছে পুলিশ। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের নির্দেশের পরেই তারা এই এফআইআর করে। আহত পড়ুয়া ইন্দ্রানুজ রায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর করা হয়। এনিয়ে হাইকোর্টের তীব্র ভর্ৎসনার মুখেও পড়ে পুলিশ।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বিক্ষোভ-মিছিল চলছে
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ চলছে। শুক্রবার বিক্ষোভকারী ছাত্রছাত্রীরা মিছিলও করেন। বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হয় মিছিল।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কারা ছিলেন মিছিলে
বিক্ষোভকারীদের দাবি ছিল, এটা হলো নাগরিক মিছিল। সেখানে বাম এবং অতি বাম ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ছাড়াও ছিলেন বেশ কিছু মানুষ।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
পড়ুয়াদের দাবি
এই বিক্ষোভ-মিছিলের অন্যতম দাবি হলো, ক্যাম্পাসে ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করতে হবে। দিন কয়েক আগে ওয়েবকুপার বৈঠকে যারা অবৈধভাবে ঢুকেছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে ইত্যাদি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
রোববার জোড়া মিছিল
রোববারও দুইটি মিছিলের ডাক দেয়া হয়েছে। একটি মিছিল শুরু হবে ধর্মতলা থেকে, অন্যটা হাজরা রোড থেকে। দুইটি মিছিল একাডেমি অফ ফাইন আর্টসে গিয়ে শেষ হবে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
আন্দোলনকারীদের হুমকি
বৃহস্পতিবার রাতে বৈঠক করে পড়ুয়ারা। তাদের দাবি, সোমবারের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলকে বৈঠকে বসতে হবে। তারা দাবি মেনে কোনো পদক্ষেপ না নিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ব্যবস্থাকেই অচল করে দেয়া হবে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
হাইকোর্টে বিচারপতি বনাম কল্যাণ
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে ওঠে। সেখানে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন তৃণমূল সাংসদ ও আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বিচারপতি বলেন, মন্ত্রীর উপর জনতা ঝাঁপিয়ে পড়লো। এটা পুলিশের ব্যর্থতা। কল্যাণের দাবি, বিশ্ববিদ্য়ালয়ে ঢুকলে রক্ষীদের বাইরে রেখে ঢোকা হয়। এটা আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যর্থতা।
ছবি: Satyajit Shaw /DW
সওয়াল করবেন না কল্যাণ
বিচারপতি বলেন, মন্ত্রীর প্রটোকল মানা উচিত। কল্যাণ জানান, তাদের পক্ষে সবসময় প্রটোকল মানা সম্ভব নয়। বিচারপতি জানান, কল্যাণ এমনভাবে কথা বলছেন, আদালত তাতে নিজেকে অসম্মানিত বোধ করছে। কল্যাণ জানান, তিনি যদি আদালতকে অসম্মান করে থাকেন, তাহলে তিনি দুঃথিত। তিনি আর এই আদালতে সওয়াল করতে আসবেন না।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
8 ছবি1 | 8
তবে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তির অচলাবস্থা কাটতে এখনো দেরি। কারণ রাজ্য এখনো জয়েন্ট এন্ট্রান্সের ফল প্রকাশ করেনি। সেখানেও ওবিসি সংরক্ষণটা একটা সমস্যা বলে বিশেষজ্ঞদের মত। নাহলে সাধারণভাবে জয়েন্টের ফল উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলের আশে পাশেই প্রকাশিত হয়।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া দেরি হওয়ার কারণে যাদবপুরেই প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসেছেন স্বপ্নময়। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, "আমার কাছে অপশন অনেক কমে গেল। এক প্রকার বাধ্য হয়েই যাদবপুরের উপর ভরসা করে বসে আছি। ভালো ফল করেছি। কিন্তু কলেজে ভর্তি হতে পারছি না। এবং এই অনিশ্চয়তায় আমার কোনো ভূমিকা নেই।"
এই জটিলতায় আতান্তরে পরেছেন লক্ষাধিক ছাত্রছাত্রী। বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্ক বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্র সোহম ঘোষ দস্তিদার ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, "সাধারণভাবে অগাস্ট মাসের মাঝামাঝি থেকে স্নাতক স্তরে ক্লাস শুরু হয়ে যায়। আমার বেলায় তাই হয়েছিল। পরের বছরেও তাই হয়েছিল। এবছর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝির আগে ক্লাস শুরু হবে বলে মনে হচ্ছে না। ক্লাস শুরুর কিছু দিনের মধ্যেই পুজোর ছুটি। ফলে মূল পড়াশুনা শুরু হতে হতে সেই অক্টোবর। এত দেরি এর আগে কখনো হয়নি। হয় প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত হবে অথবা তার প্রভাব পড়বে পরের সেমিস্টারে। আরেকটা বিষয় হল, আমাদের প্রথম মেধা তালিকা প্রকাশের প্রায় এক মাস বাদে দ্বিতীয় মেধা তালিকা প্রকাশিত হয়। এবছর সেই তালিকা প্রকাশ করতে করতে হয়ত পুজো পেরিয়ে যাবে। ফলে সেই তালিকার ছাত্র ছাত্রীরা অনেকটাই পিছিয়ে পড়বেন।"
বিজ্ঞাপন
সরকারি কলেজের অনিশ্চয়তা
সরকার পরিচালিত কলেজে এই অচলাবস্থা তৈরি হলেও বেসরকারি কলেজগুলিতে এতদিনে ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। ছাত্র ছাত্রীদের একাংশের মতে, ওবিসি জটে সব থেকে ক্ষতগ্রস্ত হচ্ছেন প্রান্তিক মেধাবী পড়ুয়ারা, যাদের বেসরকারি কলেজে পড়ার অবস্থা নেই। তৃতীয় বর্ষ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র সৌরদীপ সামন্ত ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, "প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে, এমনকী আইআইটির মতো জায়গায়ওপ্রতি সেমিস্টারে গড়ে খরচ হয় এক লক্ষের কাছাকাছি টাকা। যাদবপুরে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চার বছরে খরচ হয় ১০ হাজার টাকা। ইঞ্জিনিয়ারিং বাদ দিন। সরকারি কলেজে সাধারণ স্নাতক বিভাগে পড়তে প্রতি বছর লাগে দুই হাজার টাকারও কম। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চার বছরে স্নাতক পাঠক্রমের খরচ সাধারণভাবে লক্ষাধিক। এই অবস্থায় অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া ভাই বোনেরা কোথায় যাবেন?"
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশ্নবিদ্ধ ছাত্র মৃত্যু
শিক্ষাক্ষেত্রে দেশের অগ্রণী বিশ্ববিদ্যালয় হলো যাদবপুর। ছাত্র মৃত্যুর পর এখন তা সবচেয়ে বিতর্কিত বিশ্ববিদ্যালয়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভয়াবহ ঘটনা
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। কেন্দ্রীয় সরকারের তালিকায় দেশের পাঁচ নম্বর বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে ঘটে যাওয়া এক মৃত্যু নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে তোলপাড় রাজ্য। পুলিশ সূত্রে খবর, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের ‘এ’ ব্লকের তৃতীয় তলার বারান্দা থেকে ‘কোনও ভাবে’ পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় এক পড়ুয়ার।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পড়ুয়াদের দাবি
হস্টেলের অন্য পড়ুয়াদের দাবি, ৯ অগস্ট, বুধবার রাত ১১টা ৪৫ মিনিট নাগাদ তারা ওপর থেকে কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ পান। তারা দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন এক ছাত্র। সঙ্গে সঙ্গে তাকে নিকটবর্তী এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ মৃত্যু হয় ওই ছাত্রের।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ঘনিয়ে উঠেছে রহস্য
এর পর ধীরে ধীরে এই মৃত্যু ঘিরে ঘনিয়ে উঠেছে রহস্য। মৃত ছাত্র হস্টেলের বারান্দা থেকে ঝাঁপ দিয়েছিলেন, না কি নেপথ্যে অন্য কারণ রয়েছে? তদন্তে নেমে খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
ছবি: Subrata Goswami/DW
গেটে তালা
পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, বুধবার রাতে মৃত্যুর আগে ওই ছাত্রের আচরণ স্বাভাবিক ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে তেমনটাই জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। ওই ছাত্র নাকি বার বার বলছিলেন, ‘‘আমি সমকামী নই।” ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার পর একটা গেটে তালা পড়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
‘প্রাক্তনীদের মৌরসীপাট্টা’
এরপর পরিবারের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়ে যাদবপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই গোটা ঘটনায় আরও একটি বিষয় সামনে এসেছে। আঙুল উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে ‘বেআইনিভাবে’ থেকে যাওয়া প্রাক্তনীদের দিকে। ছাত্রদের একাংশের দাবি, হোস্টেলে ‘র্যাগিং’-এর নেপথ্যে রয়েছেন মূলত তারাই।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ডায়রির পাতা
পড়ুয়া্দের অনেকেই জানিয়েছেন, এই প্রাক্তনীরা প্রায়ই হস্টেলে মত্ত অবস্থায় ঝামেলা করেন। র্যাগিং করেন। আশঙ্কা, ছাত্রের রহস্যমৃত্যুর নেপথ্যেও প্রাক্তনীদের হাত থাকতে পারে। এরই মধ্যে সামনে এসেছে মৃত ছাত্রের ডায়েরিতে লেখা একটি চিঠি। সন্দেহ করা হচ্ছে তার মৃত্যু রহস্যের মোড় অন্যপথে চালিত করতেই এই চিঠির অবতারণা। পুলিশি জেরায় চিঠি লেখার কথা স্বীকার করেছেন ধৃত পড়ুয়া দীপশেখর দত্ত।
ছবি: Subrata Goswami/DW
নয়জন গ্রেপ্তার
পড়ুয়া মৃত্যুর ঘটনায় শুক্রবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী তথা হস্টেলের আবাসিক সৌরভ চৌধুরী গ্রেপ্তার হন। এর পর রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও দুই পড়ুয়া মনোতোষ ঘোষ এবং দীপশেখর দত্তকে গ্রেপ্তার করা হয়। বুধবার আরও ছয়জন পড়ুয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
‘র্যাগিং নতুন কিছু নয়’
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের অভিযোগ নতুন কিছু নয়। ঘটা করে তৈরি হয় ‘অ্যান্টি-র্যাগিং’ কমিটিও। এই মর্মে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখান ছাত্রছাত্রীদের একাংশ। বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআই এই ঘটনায় কর্তৃপক্ষের দিকে আঙুল তুলেছে। বিবৃতি প্রকাশ করে তাঁদের প্রশ্ন, হস্টেলের সুপারের উপস্থিতিতে কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল। যাদবপুর থানার সামনে বিক্ষোভ দেখায় এআইডিএসও।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পকসো
যাদবপুরের ছাত্রের মৃত্যু মামলায় তদন্তকারী পুলিশ জানিয়েছে তারা পকসো আইনের ধারা জুড়তে পারে। কারণ যাদবপুরের মৃত ছাত্রের বয়স মৃত্যুর সময় ১৮ পূর্ণ হয়নি বলে পরিবার সূত্রে খবর। সে ক্ষেত্রে ওই ছাত্র নাবালক। এবং তার বিরুদ্ধে হওয়া অত্যাচারের অভিযোগে নাবালকের বিরুদ্ধে অপরাধ দমনের আইন পকসো জুড়বে বলেই পুলিশ সূত্রে খবর।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কেঁদেই ফেলেন রেজিস্ট্রার
ঘটনার চার দিন পর অবশেষে সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু। তিনি ক্যাম্পাসে আসতেই তাকে প্রশ্ন করা হয়, এতদিন কোথায় ছিলেন? ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না কেন? সেই প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েই কেঁদে ফেলেন রেজিস্ট্রার।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কমিশনের নোটিস
সোমবারই ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে নোটিস পাঠায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। স্বতঃপ্রণোদিত এই নোটিসে কমিশন জানায়, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তাতে দেখা যাচ্ছে যে, ঘটনার আগে ডিনের সঙ্গে কথা বলেছিলেন মৃত ছাত্রের সহ-আবাসিকেরা। কিন্তু তাদের সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সাবেক উপাচার্যের মত
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী এক সংবাদপত্রে কলম ধরেছেন। লিখেছেন, “আমি ইস্তফা দেওয়ার পরেই যাদবপুরে অরাজকতার কালো দিনের সূচনা। আমার মনে হয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় খাপ পঞ্চায়েতের আদলে চলে। সেখানে ‘জিবি মিটিং’ এবং নিজ নিজ শক্তি প্রদর্শনের খাতিরে আধিকারিক ও উপাচার্যকে ‘ঘেরাও’ করা দু’টি প্রচলিত ‘রীতি’।”
ছবি: Subrata Goswami/DW
রেজিস্ট্রারকে তলব
যাদবপুরকাণ্ডে বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু এবং ডিন অফ স্টুডেন্টস রজত রায়কে ডেকে পাঠানো হয় লালবাজারে। সেই মতো রেজিস্ট্রার বিকেলে হাজিরা দিলেও যাননি ডিন। পুলিশ সূত্রে খবর, পড়ুয়ারা ‘ঘেরাও’ করে রাখার কারণে তিনি লালবাজারে যেতে পারেননি বলে জানিয়েছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
উত্তাপ বাড়ছে
বুধবার উত্তপ্ত ছিল বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। তৃণমূল ছাত্রপরিষদের সঙ্গে বচসা এবং হাতাহাতি হয় এআইডিএসও-র সমর্থকদের। মৃত ছাত্রের এলাকা বগুলা থেকেও বহু মানুষের প্রতিবাদ মিছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পৌঁছায়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
14 ছবি1 | 14
যাদবপুর কলেজের শিক্ষক সংগঠন জুটার পার্থ প্রতিম বিশ্বাস ডিডাব্লিউকে বলেন, "এই দায় সরকারের। রাজ্য শিক্ষা দপ্তরের সিদ্ধান্তহীনতা এবং বিজ্ঞপ্তি জারির ক্ষেত্রে টালবাহানাই এই দেরির জন্য দায়ী। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ স্নাতক স্তরের ক্লাস শুরু হবে। কিন্তু জয়েন্টের ফল না প্রকাশিত হলে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কী হবে? অল ইন্ডিয়া জয়েন্টের ফল ঘোষণা হয়ে গেছে। বেসরকারি কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়াও প্রায় হয়ে এসেছে। আমরা এই রাজ্যের মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদের প্রতি দায়বদ্ধ। ফলে আমরা রাজ্যের জয়েন্ট এন্ট্রান্সের ফলের ভিত্তিতে ভর্তির সুযোগ দিয়ে থাকি। এই অনিশ্চয়তায় মূলত বিপদে পড়েছেন এই প্রান্তিক মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা।" জুটার পক্ষ থেকে অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে একটি চিঠি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়। তাতে জুটা প্রস্তাব দেয় রাজ্য জয়েন্টের ফল ঘোষণার পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় নিজেরাই কাউন্সেলিং করবে। তাদের দাবি, 'এতে ভর্তি প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে।'
তবে কেবলমাত্র ছাত্রছাত্রীরাই নয়, সরকারি কলেজের উপরেও এর প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন শিক্ষার মহলের একাংশ। রাজ্যের সরকার পরিচালিত কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়া চলে একটি কেন্দ্রীয় পোর্টালের মাধ্যমে। সাংবাদিক মধুমিতা দত্ত ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, "গত বছর স্নাতকে ভর্তি পর্বে এই পোর্টালের নয় লক্ষ আসনের মধ্যে সাড়ে চার লক্ষই ছিল ফাঁকা। এই বছর যেদিকে যাচ্ছে তাতে আরো অনেক বেশি ফাঁকা আসন থাকবে। ছাত্র ছাত্রীরা নিশ্চয়তা চায়। যাদের সামর্থ আছে তারা বেসরকারি কলেজে যাচ্ছেন। বাকিরা অন্যান্য পেশাগত পড়াশোনা বেছে নিচ্ছেন।" প্রসঙ্গত, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সূত্রের দাবি, আবেদনকারীর সংখ্যা কম হওয়ার কারণে দর্শন এবং সংস্কৃত বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষাও হচ্ছে না।