1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ওবিসি-জটে পশ্চিমবঙ্গে অনেক কলেজে ভর্তি শুরু হয়নি

শময়িতা চক্রবর্তী
২৪ জুলাই ২০২৫

ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে মামলার কারণে আটকে গেছে পশ্চিমবঙ্গে কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়া। কলেজে ভর্তির কেন্দ্রীয় পোর্টালে ফর্ম দেয়ার কাজ শেষ হয়নি।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে ভর্তির প্রক্রিয়া।
এই জটিলতায় আতান্তরে পরেছেন লক্ষাধিক ছাত্রছাত্রী।ছবি: Subrata Goswami/DW

উচ্চমাধ্যমিকে ৯০ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করেছেন স্বপ্নময় ঘোষ। ইচ্ছে ছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বা ইংরেজি নিয়ে স্নাতকস্তরে ভর্তি হওয়ার। অন্যান্য বছরে ১ অগাস্টেই কলেজে নতুন ক্লাস শুরু হয়ে যায়। এবছর কেন্দ্রীয় পোর্টালে ফর্ম জমা নেয়ার কাজই শেষ হয়নি এখনো। রাজ্যের নতুন ওবিসি তালিকা নিয়ে জটিলতার কারণে স্নাতক স্তরে কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়া এখনো বিশ বাঁও জলে।   

মে মাসেই প্রকাশিত হয়েছিল এই বছরের উচ্চ মাধ্যমিকের ফল। সাধারণভাবে প্রতি বছর এই ফল প্রকাশের পর থেকেই রাজ্যের কলেজগুলিতে স্নাতক স্তরে ছাত্র ছাত্রীর ভর্তির তাড়াহুড়ো দেখা যায়। এই বছর ব্যতিক্রম। নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন, স্কটিশ চার্চ কলেজ, সেন্ট জেভিয়ার্সের মতো হাতে গোনা কয়েকটি স্বায়ত্তশাসিত এবং সংখ্যালঘু কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকলেও রাজ্যের শতাধিক কলেজে কেন্দ্রীয় পোর্টাল মারফত ভর্তির প্রক্রিয়া ক্রমাগত পিছিয়ে চলেছে।

যাদবপুরের ভর্তি

এর মধ্যেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে ভর্তির প্রক্রিয়া। এই বছর রাজ্যের প্রকাশিত ওবিসি সংরক্ষণ তালিকা নিয়ে গোল বেঁধেছিল। কোন গোষ্ঠী এই তালিকাভুক্ত হতে পারেন সেই নিয়ে মামলা চলছে সুপ্রিম কোর্টে। এই বছর জুনে হাইকোর্টের একটি রায়ে রাজ্যকে আপাতত ২০১০-এর পুরনো ওবিসি তালিকা মেনেই নিয়োগ বা ভর্তি প্রক্রিয়া চালাতে বলা হয়েছিল। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সেই রায় মেনেই ছাত্র ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিছু সিট সংরক্ষিত থাকবে। সুপ্রিম  কোর্টের নির্দেশের উপর ভিত্তি করেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ততদিনে ক্লাস শুরু হয়ে যাবে। যাদবপুরে তাই বিজ্ঞান বিভাগে এন্ট্রান্স পরীক্ষা শেষ হয়েছে এবং মেধা তালিকা প্রকাশের কাজ শুরু হয়েছে। সেই ভিত্তিতে এই মাসের শেষে ২৮ থেকে ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে চলবে ভর্তি। কলা বিভাগে সবে শেষ হয়েছে এন্ট্রান্স পরীক্ষা। খাতা দেখার কাজ চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, কলা বিভাগে ভর্তি শুরু হবে অগাস্টে।

তবে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তির অচলাবস্থা কাটতে এখনো দেরি। কারণ রাজ্য এখনো জয়েন্ট এন্ট্রান্সের ফল প্রকাশ করেনি। সেখানেও ওবিসি সংরক্ষণটা একটা সমস্যা বলে বিশেষজ্ঞদের মত। নাহলে সাধারণভাবে জয়েন্টের ফল উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলের আশে পাশেই প্রকাশিত হয়।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া দেরি হওয়ার কারণে যাদবপুরেই প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসেছেন স্বপ্নময়। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, "আমার কাছে অপশন অনেক কমে গেল। এক প্রকার বাধ্য হয়েই যাদবপুরের উপর ভরসা করে বসে আছি। ভালো ফল করেছি। কিন্তু কলেজে ভর্তি হতে পারছি না। এবং এই অনিশ্চয়তায় আমার কোনো ভূমিকা নেই।"       

এই জটিলতায় আতান্তরে পরেছেন লক্ষাধিক ছাত্রছাত্রী। বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্ক বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্র সোহম ঘোষ দস্তিদার ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, "সাধারণভাবে অগাস্ট মাসের মাঝামাঝি থেকে স্নাতক স্তরে ক্লাস শুরু হয়ে যায়। আমার বেলায় তাই হয়েছিল। পরের বছরেও তাই হয়েছিল। এবছর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝির আগে ক্লাস শুরু হবে বলে মনে হচ্ছে না। ক্লাস শুরুর কিছু দিনের মধ্যেই পুজোর ছুটি। ফলে মূল পড়াশুনা শুরু হতে হতে সেই অক্টোবর। এত দেরি এর আগে কখনো হয়নি। হয় প্রথম সেমিস্টার সংক্ষিপ্ত হবে অথবা তার প্রভাব পড়বে পরের সেমিস্টারে। আরেকটা বিষয় হল, আমাদের প্রথম মেধা তালিকা প্রকাশের প্রায় এক মাস বাদে দ্বিতীয় মেধা তালিকা প্রকাশিত হয়। এবছর সেই তালিকা প্রকাশ করতে করতে হয়ত পুজো পেরিয়ে যাবে। ফলে সেই তালিকার ছাত্র ছাত্রীরা অনেকটাই পিছিয়ে পড়বেন।"

সরকারি কলেজের অনিশ্চয়তা 

সরকার পরিচালিত কলেজে এই অচলাবস্থা তৈরি হলেও বেসরকারি কলেজগুলিতে এতদিনে ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। ছাত্র ছাত্রীদের একাংশের মতে, ওবিসি জটে সব থেকে ক্ষতগ্রস্ত হচ্ছেন প্রান্তিক মেধাবী পড়ুয়ারা, যাদের বেসরকারি কলেজে পড়ার অবস্থা নেই। তৃতীয় বর্ষ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র সৌরদীপ সামন্ত ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, "প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে, এমনকী আইআইটির মতো জায়গায়ওপ্রতি সেমিস্টারে গড়ে খরচ হয় এক লক্ষের কাছাকাছি টাকা। যাদবপুরে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চার বছরে খরচ হয় ১০ হাজার টাকা। ইঞ্জিনিয়ারিং বাদ দিন। সরকারি কলেজে সাধারণ স্নাতক বিভাগে পড়তে প্রতি বছর লাগে দুই হাজার টাকারও কম। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চার বছরে স্নাতক পাঠক্রমের খরচ সাধারণভাবে লক্ষাধিক। এই অবস্থায় অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া ভাই বোনেরা কোথায় যাবেন?" 

যাদবপুর কলেজের শিক্ষক সংগঠন জুটার পার্থ প্রতিম বিশ্বাস ডিডাব্লিউকে বলেন, "এই দায় সরকারের। রাজ্য শিক্ষা দপ্তরের সিদ্ধান্তহীনতা এবং বিজ্ঞপ্তি জারির ক্ষেত্রে টালবাহানাই এই দেরির জন্য দায়ী। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ স্নাতক স্তরের ক্লাস শুরু হবে। কিন্তু জয়েন্টের ফল না প্রকাশিত হলে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কী হবে? অল ইন্ডিয়া জয়েন্টের ফল ঘোষণা হয়ে গেছে। বেসরকারি কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়াও প্রায় হয়ে এসেছে। আমরা এই রাজ্যের মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদের প্রতি দায়বদ্ধ। ফলে আমরা রাজ্যের জয়েন্ট এন্ট্রান্সের ফলের ভিত্তিতে ভর্তির সুযোগ দিয়ে থাকি। এই অনিশ্চয়তায় মূলত বিপদে পড়েছেন এই প্রান্তিক মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা।" জুটার পক্ষ থেকে অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে একটি চিঠি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়। তাতে জুটা প্রস্তাব দেয় রাজ্য জয়েন্টের ফল ঘোষণার পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় নিজেরাই কাউন্সেলিং করবে। তাদের দাবি, 'এতে ভর্তি প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে।' 

তবে কেবলমাত্র ছাত্রছাত্রীরাই নয়, সরকারি কলেজের উপরেও এর প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন শিক্ষার মহলের একাংশ। রাজ্যের সরকার পরিচালিত কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়া চলে একটি কেন্দ্রীয় পোর্টালের মাধ্যমে। সাংবাদিক মধুমিতা দত্ত ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, "গত বছর স্নাতকে ভর্তি পর্বে এই পোর্টালের নয় লক্ষ আসনের মধ্যে সাড়ে চার লক্ষই ছিল ফাঁকা। এই বছর যেদিকে যাচ্ছে তাতে আরো অনেক বেশি ফাঁকা আসন থাকবে। ছাত্র ছাত্রীরা নিশ্চয়তা চায়। যাদের সামর্থ আছে তারা বেসরকারি কলেজে যাচ্ছেন। বাকিরা অন্যান্য পেশাগত পড়াশোনা বেছে নিচ্ছেন।" প্রসঙ্গত, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সূত্রের দাবি, আবেদনকারীর সংখ্যা কম হওয়ার কারণে দর্শন এবং সংস্কৃত বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষাও হচ্ছে না।   

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ