1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ওরা ২৫ জন

১৩ নভেম্বর ২০১৯

আবরার হত্যার দায়ে ২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ৷ নৃশংসভাবে খুন হওয়া আবরারসহ তারা সকলেই বুয়েটের ছাত্র৷ চার্জশিটভুক্ত সকলে এই ৫৬ হাজার বর্গমাইলে লেখাপড়ায় সবচেয়ে ভালো ফল করা ছাত্র৷

আবরার হত্যার প্রতিবাদ (ফাইল ছবি)ছবি: bdnews24

সবচেয়ে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়টিতে পড়তে পড়তে কীসের নেশায় বা কার নির্দেশে এরকম ভয়ংকর খুনি তারা হয়ে উঠলেন আমাদের সকলকেই তা ভাবতে হবে৷

আমি কিন্তু এরকম স্টেরিওটাইপে যেতে চাই না যে, পড়ালেখায় ভালো হলেই কেউ ক্রিমিনাল হতে পারবেন না৷ বরং আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, পড়ালেখার সঙ্গে নৈতিকতার কমই সম্পর্ক রয়েছে৷ দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী, লুটেরা ব্যাংকার বা ঘুসখোর পেশাজীবীদের বেশিরভাগই উচ্চশিক্ষায় নামজাদা৷ আজ পর্যন্ত আমি কাউকে বলতে শুনিনি, আমি কী করে ঘুস খাব আমিতো অমুক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র!

আমার মতে, মানুষ প্রাণী হিসেবে অপরাধপ্রবণ হলেও তার মধ্যে ধরা পড়ার ভয়টা খুব কাজ করে৷ আর পাশাপাশি সে এক ধরনের শান্তি বা স্থিতাবস্থা চায়৷ তাই অন্য কিছু করার অপশন থাকলে সে অপরাধ করতে চায় না৷ তাই আমরা দেখি বঞ্চিত, অবহেলিত এবং ব্যর্থদের মধ্যে অপরাধস্পৃহা বেশি থাকে৷ বুয়েটের দ্বিতীয় বা তৃতীয় বর্ষের ছাত্রদের অপশনের কোনো কমতি নেই৷ বলতে গেলে পুরো পৃথিবীটাই তাদের হাতের মুঠোয়৷ দেশে বিরক্ত লাগলে তারা বিদেশে চলে যেতে পারেন৷ চাকরি করতে ভালো না লাগলে করতে পারেন ঠিকাদারিসহ অন্য যে কোনো ব্যবসা বাণিজ্য৷ হতাশা বা বঞ্চনায় নিমজ্জিত হওয়ার কোনো কারণ আপাতত আমার নজরে আসছে না৷ তাহলে আরেকটি হতে পারে যে, এই অল্পবয়সি ছেলেগুলো এটা বুঝেছিল যে, কিছু করলেই তাদের কিছু হবে না৷

বুয়েটে পড়ছে মানে অংক, বিজ্ঞান বা স্বাভাবিক যুক্তিবিদ্যায় ভালো ছেলেগুলোর এরকম কেন মনে হলো যে, তারা যাই করুক পার পেয়ে যেতে পারবে? কে তাদের দিলো এ আশা? কে দিলো ভরসা? কার নির্দেশে মজা করতে করতে বা গল্প করতে করতে অনেকক্ষণ ধরে একজন সতীর্থকে পেটানো যায়৷

খালেদ মুহিউদ্দীন, প্রধান, ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগছবি: DW/P. Böll

অনেকেই একথা বলতে চাইছেন যে, অভিযুক্তরা বুঝতে পারেননি যে আবরার মরেই যাবে- তাই এটিকে দুর্ঘটনা বলাই সঙ্গত৷ আমারও যেন কিছুটা বিশ্বাস হয় এই যুক্তি৷ কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে কাউকে পেটানোর ঘটনা এটাই প্রথম নয়৷ এমনকি নয় সর্বশেষও৷ এর অনেকগুলো খবর হয়েছে, আড়ালে রয়ে গেছে তারও বেশি৷ একবার ভাবুন আবরার যদি না মারা যেতো তাহলে কী হতো? তাহলেও কী আমাদের টনক নড়তো? আমরা ফেসবুক ফাটিয়ে ফেলতাম? প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিতেন কাউকে না ছাড়ার? এখনো কি যেসব আবরার মার খাচ্ছেন তাদের একটু সাবধানে মারা হচ্ছে না? যাতে তারা একটুখানি অন্তত বেঁচে থাকেন৷ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আবরারদের যারা দলবদ্ধভাবে মারছেন, তারা নিশ্চয়ই আসি আসি শীতের ফুলকপির বড়া খাচ্ছেন, হাত বাড়িয়ে চায়ে আরেকটু চিনি নিচ্ছেন!

আমাদের সকলের সাবধান হওয়া উচিত একারণে যে, নিজেদের অজান্তেই আমরা কিন্তু ঠাণ্ডা মাথার খুনি তৈরি করছি৷ আজ তাদের ২৫ জন আবরারকে মেরেছেন, কাল তারা আপনাকে বা আমাকে মারতে আসবেন৷ হয়তো একটু খেয়াল রাখবেন আমরা যাতে একেবারে মরে না যাই৷ স্ট্যানলি কুবরিকের ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জের কেন্দ্রীয় চরিত্রদের মতো হয়তো আমাদের পিটিয়ে মেরে নির্বিকারভাবে গ্লাস গ্লাস পুষ্টিকর দুধও পান করবেন তারা৷

খালেদ মুহিউদ্দীন ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগের প্রধান। ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত।
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ