ওলাফ শলৎসের নেতৃত্বে জার্মানির নতুন সরকার প্রস্তুত
৭ ডিসেম্বর ২০২১
সব শরিক দলের অনুমোদন ও মন্ত্রিসভার তালিকা স্থির করার পর মঙ্গলবার কোয়ালিশন চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে বুধবার নতুন সরকার কার্যভার গ্রহণ করবে৷
বিজ্ঞাপন
আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ক্ষমতা গ্রহণের জন্য প্রস্তুত জার্মানির আগামী জোট সরকার৷ সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি, উদারপন্থি এফডিপি ও পরিবেশবাদী সবুজ দলের ‘ট্রাফিক লাইট কোয়ালিশন’ মঙ্গলবার কোয়ালিশন চুক্তি স্বাক্ষরের পর বুধবারই জার্মানির আগামী চ্যান্সেলর হিসেবে শপথ নিতে চলেছেন ওলাফ শলৎস৷ তিন দলই মন্ত্রিসভার সদস্যদের তালিকা প্রস্তুত করে ফেলেছে৷ ফলে বুধবার তারাও শপথবাক্য পাঠ করে যে যার মন্ত্রণালয়ের হাল ধরতে পারবেন৷
স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে এসপিডি দলের কার্ল লাউটারবাখের মনোনয়ন সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ছে৷ করোনা সংকটের সময় বিশেষজ্ঞ হিসেবে তিনি দল, মত নির্বিশেষে জনসাধারণের একটা বড় অংশের আস্থা অর্জন করার পর তার নামই এই পদের জন্য সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছিল৷
নতুন সরকারি জোটের ঘোষিত অভিন্ন কর্মসূচির উপর কোন শরিক দল শেষ পর্যন্ত কতটা প্রভাব রাখতে পারলো, সে বিষয়ে তর্ক-বিতর্কের শেষ নেই৷ এক জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী সবচেয়ে ছোট শরিক হওয়া সত্ত্বেও এফডিপি দলই নিজস্ব স্বার্থ রক্ষায় সবচেয়ে সফল হয়েছে৷ অন্যদিকে দ্বিতীয় বৃহত্তম শক্তি হিসেবে সবুজ দলকে সবচেয়ে বেশি আপোশ মেনে নিতে হয়েছে বলে অধিকাংশ অংশগ্রহণকারী মনে করেন৷ তবে জোটের দলগুলি সেই হিসেবনিকেশ উড়িয়ে দিয়ে ‘আরও অগ্রগতির সাহস' শিরোনামে কোয়ালিশন চুক্তির সাফল্যের উপর জোর দিচ্ছে৷
জার্মানির নতুন সরকার সত্যি বেশ কিছু ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তনের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে৷ ন্যূনতম মজুরি আট ইউরো ষাট সেন্ট থেকে বাড়িয়ে ঘণ্টায় ১২ ইউরো করা হচ্ছে৷ দীর্ঘকাল বেকার থাকা মানুষের জন্য আরও উদার ভাতার ব্যবস্থা করা হবে৷ অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল পরিবারের শিশুদের কল্যাণে আরও আর্থিক সহায়তা করবে সরকার৷ জার্মানির বাসস্থান সংকট মোকাবিলা করতে বছরে কমপক্ষে চার লাখ করে নতুন বাসস্থান নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রাও স্থির করা হয়েছে৷ এছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে জার্মানিতে উৎপাদিত বিদ্যুতের কমপক্ষে ৮০ শতাংশ পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি থেকে আসবে৷ ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমাতে গণপরিবহণ ব্যবস্থার আরও উন্নতি করতে চায় ওলাফ শলৎসের সরকার৷ তবে সরকারি ঋণের ঊর্দ্ধসীমা লঙ্ঘন না করেই উচ্চাকাঙ্ক্ষী কর্মসূচিগুলির জন্য বাড়তি অর্থ সংগ্রহ করতে হবে৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, এএফপি)
জার্মানির নতুন চ্যান্সেলর সম্পর্কে ৬ তথ্য
সবকিছু ঠিক থাকলে আট ডিসেম্বর নতুন চ্যান্সেলর হিসেবে শপথ নেবেন ওলাফ শলৎস৷ সামাজিক গণতন্ত্রী দল এসপিডির এই রাজনীতিবিদ সম্পর্কে জেনে নিন ছয়টি তথ্য৷
ছবি: Michael Kappeler/dpa/picture alliance
গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা
জার্মান নির্বাচনে সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি দল থেকে চ্যান্সেলর পদে লড়েছেন ওলাফ শলৎস৷ সবকিছু ঠিক থাকলে বুধবার চ্যান্সেলর হিসেবে শপথ নেবেন তিনি৷ বিদায়ী খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী দল সিডিইউ এবং সামাজিক গণতন্ত্রী দল এসপিডি জোট সরকারে একইসঙ্গে ডেপুটি চ্যান্সেলর ও অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ৷
ছবি: Michael Kappeler/dpa/picture alliance
১৭ বছর বয়সে রাজনীতিতে
১৯৫৮ সালের ১৪ জুন পশ্চিম জার্মানির অসনাব্রুকে জন্ম নেন ওলাফ শলৎস৷ ১৯৭৫ সালে হাইস্কুলে পড়ার সময় এসপিডিতে যোগ দেন তিনি৷
ছবি: Bodo Marks/dpa/picture alliance
রক্ষণশীল অংশের সদস্য
এসপিডির রক্ষণশীল অংশের সদস্য বিবেচনা করা হয় তাকে৷ আবার এটাও ঠিক, তিনি বাম নাকি ডানপন্থি, তা বোঝাও কঠিন৷ এসপিডির যুবদলের ডেপুটি লিডার হিসেবে তার অনেক বক্তব্য ক্যাপিটালিজমের কট্টর সমালোচনা বলে বিবেচিত হয়েছিল৷
১৯৯৮ সালে প্রথমবার জার্মান সাংসদ নির্বাচিত হন শলৎস৷ হামবুর্গে আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন তিনি৷ ব্যবসায়িক আইন বিষয়ে তার পারদর্শিতা ছিল৷ সে কারণে অর্থনীতি ও ব্যবসা কীভাবে চলে সে সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতা ভালো ছিল৷ সেই অভিজ্ঞতা সরকারি কাজে লাগিয়েছেন শলৎস৷
ইতোমধ্যে কঠিন সংকট মোকাবিলায় দক্ষ এক রাজনীতিবিদ হিসেবে নিজেকে পরিচিত করতে সক্ষম হয়েছেন শলৎস৷ করোনা মহামারির সময়টাতে অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি৷ সেই সময় ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত অর্থ সহায়তা প্রদানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখায় তার ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে৷
ছবি: Hannibal Hanschke/REUTERS
দলীয় প্রধান না হলেও হচ্ছেন চ্যান্সেলর
২০১৯ সালে এসপিডির প্রধান পদে লড়েছিলেন ওলাফ শলৎস৷ কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে তার চেয়ে রাজনীতিতে কম অভিজ্ঞদের কাছে হেরে গিয়েছিলেন৷ তাতে অবশ্য দমে যাননি তিনি৷ বরং গতবছর তার দল তাকে চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়৷ এসপিডি, মুক্ত গণতন্ত্রী দল এফডিপি ও সবুজ দলের গড়া জোট সরকারের নেতৃত্ব দেবেন তিনি৷