1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘‌চুমু থেরাপির'‌ স্বঘোষিত ভগবান শ্রীঘরে

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

শুনলে অবাক হবেন, রোগ নিরাময়ে ‘‌চুমু ওষুধ'‌ ব্যবহার করে আসছিলেন এক স্বঘোষিত ‘গডম্যান'৷ যাবতীয় অসুখ সারাতে তিনি নানা ভঙ্গিতে চুম্বন করতেন৷ বহু নারীকে বোকা বানিয়ে দিব্বি চলছিল তার কারবার৷ তবে শেষ রক্ষা হয়নি৷

Screenshot Twitter- 'Kissing Baba'
ছবি: Twitter

জীবনে সমস্যার কি শেষ আছে!‌ কেউ শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন, কেউ সাংসারিক অশান্তি থেকে নিস্কৃতি চান, কারো স্বামী বা স্ত্রী পরকীয়ায় আসক্ত, কেউ নেশাগ্রস্ত, কেউ আবার যৌন সমস্যায় জেরবার৷ বেশ কিছু সমস্যায় চিকিৎসকের কাছে যাওয়ায় সঙ্কোচ থাকে৷ সামাজিক সচেতনতার অভাবে ঠিক সেখানেই থাবা বসায় তথাকথিত ‘ধর্মগুরু' বা ‘‌বাবারা'৷ এমনই এক ‘‌বাবা'‌র সন্ধান মিলেছে ভারতের আসামে৷ যাবতীয় সমস্যার সমাধানে তার একটাই ওষুধ আর তা হলো ‘‌চুমু'৷ লোকমুখে তার নাম ‘‌কিসিং বাবা'‌৷ তবে দেরিতে হলেও সেই ভন্ডের ঠাঁই হয়েছে জেলে৷ কিন্তু হতভাগ্য দেশে এক ‘‌বাবা'‌ জেলে গেলে আর এক ‘‌‌বাবা'‌ ‌আবির্ভূত হয়৷

আসামের মোরিগাঁও থেকে রামপ্রকাশ চৌহান নামে বছর তিরিশের এক ভন্ড ‘‌বাবা'‌কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ ভোরালটুপ গ্রামের বাসিন্দা তিনি৷ তার এক অদ্ভুত দাবি৷ তার কাছে নাকি ভগবান বিষ্ণুর দেওয়া অলৌকিক শক্তি আছে!‌ শরণাপন্ন মহিলাদের গলা জড়িয়ে তিনি চুমু খেতেন৷ এ কারণেই তার নাম হয়ে যায় ‘‌চুমু বাবা'‌৷ তার দাবি ছিল, তার ‘‌চমৎকারী চুম্বন' ভীষণ শক্তিশালী৷ তা দিয়ে নাকি তাবৎ অসুখ নিমেষে ভালো করে দিতে পারেন৷

একবিংশ শতকে পৌঁছেও মোরিগাঁও এমন এক জায়গা, যেখানে যুগ যুগ ধরে সাধারণ মানুষ ‘‌কালো জাদু'‌তে বিশ্বাস করে আসছে৷ আর সেই সুযোগ নিয়ে নিজেকে ‘‌বিষ্ণুর অবতার'‌ দাবি করে মানবরূপী শয়তান রামপ্রকাশ সেখানে গত তিন মাস ধরে রমরমা কারবার ফেঁদে বসেছিলেন৷ রামপ্রকাশের মা-‌ও ছেলের ‘‌অলৌকিক'‌ শক্তির প্রচার করতেন৷ তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পু্লিশ৷ তার আশ্রমে যথারীতি ভক্তের ঢল নেমেছিল৷ নারী-‌পুরুষ সকলেই রোগ নিরাময়ের লক্ষ্যে আসতেন৷

শ্যামল চ্যাটার্জি

This browser does not support the audio element.

তবে ‘‌বাবা'‌র বেশি পছন্দ শিষ্যাদের৷ শর্ত একটাই– যে-কোনো সমস্যা নিয়ে ‘‌বাবা'‌র কাছে যেতে পারবেন শুধু মহিলারাই৷ ভিন্ন রোগে ভিন্ন চুমু৷ কাউকে স্রেফ ফ্রেঞ্চ কিস, কাউকে আবার লিপলক কিস৷ ধর্মান্ধ মানুষজন ‘‌বাবা'‌র ক্ষমতায় নাকি এমন অভিভূত যে, ক্রমে বাবার মাহাত্ম ও দৈব শক্তির খবর ছড়িয়ে পড়ে দূর দূরান্তের গ্রামগুলিতে৷ তার বাড়ির সামনেই তৈরি হয়ে যায় ‘চুমু বাবা'র মন্দির৷ খবর পেয়ে ছুটে এলেন টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকরা৷ ব্যাপক প্রচার হলো৷ তারপর এক এক করে মহিলারা আসছেন, আর ‘‌বাবা'‌ তাদের জাপটে ধরে চুমু খাচ্ছেন৷

গত কয়েক বছরে আশারাম বাপু থেকে ‌বাবা রাম রহিম‌৷ হালে ‌বাবা দাতি মহারাজ থেকে ‌ওম বাবা৷ এরা সবাই গেরুয়াধারী৷ ‌সবারই সহজ শিকার নারী৷ ধর্মের আড়ালে লালসার শিকার হয়েছেন শত শত মহিলা৷

কথা হচ্ছিল পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের আজীবন সদস্য শ্যামল চ্যাটার্জির সঙ্গে৷ তাঁর কথায়, ‘‌‘‌ বাবা-‌সংস্কৃতির বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলার প্রয়োজন আছে৷ এ নিয়ে অনেকেই কাজ করছেন৷ কিন্তু বেশকিছু ফাঁকফোকর থেকে যাচ্ছে৷ প্রশাসনের দায়িত্ব অস্বীকার করা চলে না৷ প্রশাসনিক পদক্ষেপ ঠিকঠাক হলে শুরুতেই বিনাশ হয় এই ‘বাবা'‌রা৷ ভারতে প্রশাসনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে এই ‘‌বাবা'‌দের প্রচার চলছেই৷ প্রচারমাধ্যমকেও আটকানো উচিত৷ সিনেমা, টিভি সিরিয়াল ও সোশ্যাল সাইটে দিব্যশক্তির প্রচার চলছে৷ শুধু আইন করে এদের রুখে দেওয়ার কথা বলা হলে, এক বাবা যাবেন, আর এক বাবা আসবেন৷'‌'‌

দীর্ঘদিন সামাজিক কুসংস্কার ও জনসচেতনতা নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে শ্যামল চ্যাটার্জি বললেন, ‘‘‌আরো একটি দিক হলো, সমাজের উচ্চপদস্থ ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের ভূমিকা৷ ধরুন, এপিজে আবদুল কালামকে যদি কোনো ‘‌বাবা'‌র পায়ের কাছে বসে থাকতে দেখা যায়, তাহলে সেই বাবা সম্পর্কে একটা আস্থা বা বিশ্বাস ছড়িয়ে পড়ে৷ সাধারণ মানুষ মনে করে, সমাজের গন্যমান্য ও বিখ্যাত ব্যক্তিরা যাদের শরণাপন্ন, তাঁরা নিশ্চয়ই মহান৷ ‌বহু ক্ষেত্রে দেখা গেছে, এমন ভন্ড ‘‌বাবা'দের বিরুদ্ধে বিজ্ঞানমনস্করা প্রচারে নামলে সাধারণ মানুষ বলে, ‘‌বাবা'‌দের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, কারণ, উচ্চ পদস্থ মানুষরা কী বোকা?‌''‌

আপনার কোনো মতামত থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ