গাঁজা একই সঙ্গে মাদক ও ওষুধ হিসেবে পরিচিত৷ কিন্তু বিশেষ করে ওষুধ হিসেবে সেটির প্রয়োগের ক্ষেত্রে উন্মাদনা বন্ধ হয়েছে৷ এক শণ গাছ থেকে গাঁজা পাওয়া যায়৷ সেটির ফুলে নানা পদার্থ থাকে৷ ‘ক্যানাবিনয়েড' গোত্রের এই সব পদার্থের মধ্যে টিএইচসি ও সিবিডি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ৷ ক্যাপসুল, তেল, স্প্রে, এমনকি ফুলের রূপেও ওষুধ হিসেবে এই সব পদার্থ পাওয়া যায়৷ সেগুলির মধ্যে শুধু টিএইচসি ও সিবিডির অনুপাতে পার্থক্য থাকে৷

‘ক্যানাবিনয়েড' পদার্থগুলি শরীর ও মনের উপর প্রভাব রাখে৷ কারণ আমাদের শরীরের নিজস্ব ক্যানাবিনয়েড রিসেপ্টর রয়েছে৷ সে কারণে গাঁজা-ভিত্তিক ওষুধকে ঘিরে বিপুল প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছিল৷ শুধু ব্যথা নয়, প্রদাহ, আড়ষ্ট পেশি, ভয়ের মতো প্রায় সব সমস্যারই মুসকিল আসান হিসেবে সেটিকে দেখা হচ্ছিল৷

পেন থেরাপিস্ট হিসেবে মায়া ফাল্কেনব্যার্গ অনেক রোগীর উপর গাঁজা-ভিত্তিক ওষুধ প্রয়োগ করে দেখেছেন৷ যখন প্রথম বার প্রেসক্রিপশন ড্রাগ হিসেবে সেটি প্রয়োগ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল, তিনি সেই সময়ের কথা মনে করেন৷ তখন বিশাল চাহিদা দেখা গিয়েছিল৷ কিন্তু প্রায়ই প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যায় নি৷ ফালকেনব্যার্গ বলেন, ‘‘সব মিলিয়ে আমাদের বেশিরভাগ রোগীই চিকিৎসা আবার বন্ধ করতে চেয়েছিলেন, কারণ যথেষ্ট মাত্রায় ব্যথা কমানো সম্ভব হয় নি৷''

কার্যকারিতার অভাব, বিরল বৈজ্ঞানিক প্রমাণের অভাবে ব্যথা বিশেষজ্ঞদের মনেও ইতোমধ্যে গভীর সংশয় দেখা দিয়েছে৷ মায়া ফাল্কেনব্যার্গ হাতে গোনা কয়েকটি গবেষণাপত্র ঘেঁটে জানতে পেরেছেন, যে ক্যানাবিনয়েড স্নায়ুর ব্যথার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কার্যকর হয়৷ তবে সবার ক্ষেত্রে সুফল পাওয়া যায় না৷ ফালকেনব্যার্গ বলেন, ‘‘নয় দশমিক পাঁচ জন রোগীর চিকিৎসা করলে তাঁদের মধ্যে একজন সুফল পেতে পারেন৷ অর্থাৎ খুবই খারাপ ফল৷''

তা সত্ত্বেও কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে গাঁজার বিস্ময়কর রকম সুফল পাওয়া যায়৷ যেমন সিগরিড পিপগাস প্রায় ৫০ বছর ধরে মাল্টিপল স্কলেরোসিসে ভুগছেন৷ কিছুদিন আগে তাঁর হালকা স্ট্রোকও হয়েছিল৷ কড়া ব্যথার ওষুধ তাঁর সহ্য হয় না৷ কিন্তু ক্যানাবিস ড্রপের কল্যাণে তাঁর দৈনন্দিন জীবনযাত্রা কিছুটা সহজ হয়ে উঠেছে৷

তাঁর চিকিৎসক ইয়ান স্টর্ক বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে গাঁজা প্রয়োগ করেন৷ একই সঙ্গে শরীর ও মনের উপর ভালো প্রভাব রাখার কারণে গাঁজা জীবনযাত্রার মানের উন্নতি ঘটায়৷ তাছাড়া বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে ক্যানাবিনয়েডের বাড়তি এক গুণ কাজ করে৷ অন্যান্য ওষুধের মতো এটি লিভার ও যকৃতের তেমন ক্ষতি করে না৷ ব্যথা বিশেষজ্ঞ হিসেবে স্টর্ক বলেন, ‘‘আমরা সত্যি বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে গাঁজা আরও বেশি প্রয়োগ করি৷ বিশেষ করে যাঁদের যকৃত বা লিভারের সমস্যা রয়েছে বলে অন্য ওষুধ প্রয়োগ করা সম্ভব নয়৷ ভালো প্রভাবের লক্ষ্যে আমরা সঠিক ডোজ স্থির করি৷''

এই ফুল রহস্যময় বটে৷ কখনো সামান্য ডোজেই ওষুধ হিসেবে গাঁজার সুফল পাওয়া যায়৷ কখনো আবার একেবারেই ফল হয় না৷ কোন্ মানুষের ক্ষেত্রে সেটা কাজ করে বা করে না, ডাক্তাররাও সবসময়ে তা বলতে পারেন না৷ অর্থাৎ স্পষ্টতার অভাব থেকেই যাচ্ছে৷

সিগরুন ডামাস/এসবি