1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ওহে ফেসবুকবাসী, নজর আরো বড় করুন

২১ সেপ্টেম্বর ২০২০

ফেসবুকবাসীরা আরেকটি ‘মুরগি’ পেয়ে গেছেন৷ তাকে নিয়েই হাসি-ঠাট্টায় মেতে আছেন তারা৷ এবার তারা যাকে ‘জবাই’ করছেন তার নাম আবদুল মালেক ওরফে বাদল৷ তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিবহন পুলের একজন গাড়িচালক ও তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী৷

আবদুল মালেক ওরফে বাদলছবি: bdnews24.com

রবিবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ এখন পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনী ঢাকায় তার দুটি সাততলা ভবন, নির্মাণাধীন একটি দশ তলা ভবন, জমি, গরুর খামার খুঁজে পেয়েছে৷ মালেককে গ্রেপ্তারের সময় তাঁর কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, পাঁচ রাউন্ড গুলি, দেড় লাখ জাল বাংলাদেশি টাকা, একটি ল্যাপটপ ও একটি মোবাইল উদ্ধার করা হয়৷

ভয় দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে অনেক সম্পদের মালিক হয়েছেন মালেক৷ এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতি বাণিজ্যেও যুক্ত ছিলেন তিনি৷ তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, মালেক বরাবরই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ চিকিৎসক নেতাদের আনুকূল্য পেয়েছেন৷

গণমাধ্যমের এই খবরে অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী ‘খুশি’ হয়েছেন৷ কারণ, মালেককে নিয়ে ‘ক্রিয়েটিভ' সব স্ট্যাটাস দিয়ে লাইক, কমেন্ট কামিয়ে নিজেকে ‘ফেসবুক স্টার’ ভাবছেন তারা৷ এছাড়া এমন একটা স্ট্যাটাস দিয়ে সামাজিক দায়িত্ব পালন হলো বলেও গর্ববোধ করছেন অনেকে৷

এই ফেসবুক তারকারাই অতীতে হাসপাতালের পর্দা ও পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য বালিশ কেনায় দুর্নীতি, ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিল ইত্যাদি খবর ‘ক্যাশ’ করেছেন৷ অর্থাৎ, এসব বিষয়ে স্ট্যাটাস দিয়ে নিজেদের ‘স্ট্যাটাস’ বাড়িয়েছেন৷

এসব স্ট্যাটাস পড়লে মনে হবে দেশে শুধু চুনোপুঁটিরাই দুর্নীতি করছেন, বাকিরা ঠিকই আছেন৷ আসলে কি তাই?

এই যেমন মালেকের বিরুদ্ধে তদন্তকারীরা বলছেন, তিনি নাকি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ চিকিৎসক নেতাদের আনুকূল্য পেয়েছেন৷ কিন্তু ফেসবুকে ঐ কর্মকর্তাদের শাস্তি চাইতে তো দেখলাম না কাউকে!

গতবছর চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হতে দেখেছি আমরা৷ কিন্তু এসব নেতা যাদের ছত্রছায়ায় থেকে দুর্নীতি করেছেন এবং তাদের দুর্নীতির অংশ যেসব নেতা পেয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে তো কোনো অভিযান দেখলাম না! ফলে ফেসবুকবাসীরা নীচু পর্যায়ের নেতাদের গ্রেপ্তার নিয়েই ফেসবুক কাঁপিয়েছে, বড় দুর্নীতিবাজদের কথা ভুলে গেছে৷ 

জাহিদুল হক, ডয়চে ভেলে বাংলাছবি: DW

এভাবেই আসলে সরকার ও প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিদের দুর্নীতির খবর আড়ালে থেকে যাচ্ছে৷

অবশ্য শুধু ফেসবুক তারকাদের দোষ দিচ্ছি কেন? তারা তো শুধু গণমাধ্যমে আসা খবরগুলো নিয়ে স্ট্যাটাস দেন৷ গণমাধ্যমে যদি বড় নেতা, কর্মকর্তাদের দুর্নীতির খবর না আসে, তাহলে ফেসবুকবাসীরা কী করবেন?

কিন্তু ফেসবুকবাসীরা ভালো করেই জানেন, কেন গণমাধ্যমগুলো এখন রাঘব-বোয়ালদের বিরুদ্ধে খবর প্রকাশ করছে না? কেন তারা শুধু কারো বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান চলার পরই তাকে নিয়ে খবর করছে? ওসি প্রদীপের ক্ষেত্রে যেমনটা আমরা দেখেছি৷ মেজর (অব.) সিনহা হত্যা মামলায় ওসি প্রদীপকে গ্রেপ্তার করার পরই গণমাধ্যম আমাদের জানিয়েছিল যে, প্রদীপ ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা নিতেন!

ফেসবুক তারকারা যদি সত্যিকারের তারকা হতে চান তাহলে তাদের নিজেদের চোখ কান খোলা রাখা উচিত৷ কেননা বড় বড় দুর্নীতিগুলো সবার চোখের সামনেই ঘটছে৷ এসব দুর্নীতির ঘটনা সামনে নিয়ে আসতে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা না করে নিজেরাই স্ট্যাটাসে সেগুলো তুলে ধরুন৷ এভাবে আপনি গণমাধ্যমকেও সাহায্য করতে পারবেন৷

ফেসবুকবাসীরা বিষয়টা ভেবে দেখবেন আশা করি৷

১৪ জানুয়ারির ছবিঘরটি দেখুন...

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ