জার্মান ফুটবল ফেডারেশন, ডিএফবির প্রধান রাইনহার্ড গ্রিন্ডেল তাঁর ও ফেডারেশনের বিরুদ্ধে ওঠা বর্ণবাদের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন৷ তবে ও্যজিল ইস্যু সামলাতে তিনি ভুল করেছেন বলে স্বীকার করেছেন৷
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার ফেডারেশন থেকে প্রকাশ করা এক বিবৃতিতে গ্রিন্ডেল বলেন, তাঁর উপর ব্যক্তিগত আক্রমণে তিনি ‘ব্যথিত'৷
গত মে মাসে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়িপ এর্দোয়ানের সঙ্গে জার্মানির সাবেক ফুটবলার মেসুট ও্যজিলের বৈঠকের ছবি প্রকাশিত হওয়ার পর বিতর্ক শুরু হয়৷ এরপর রাশিয়া বিশ্বকাপে জার্মানির প্রথম পর্ব থেকে বিদায়ের পর এই বিতর্ক আরও জোরদার হয়৷ তার প্রতিক্রিয়ায় জার্মান জাতীয় দল থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেন ও্যজিল৷
পুরো ঘটনা ঠিকমতো সামলাতে ব্যর্থ হওয়ায় গ্রিন্ডেলের সমালোচনা করেছিলেন অনেকে৷ তাঁর পদত্যাগের দাবিও করেছেন কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা৷
এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার বিবৃতি দেয়ার মাধ্যমে নিজের প্রতিক্রিয়া জানানোর চেষ্টা করেছেনডিএফবি প্রেসিডেন্ট গ্রিন্ডেল৷
তিনি বলেন, তাঁর ও ডিএফবির বিরুদ্ধে ওঠা বর্ণবাদের অভিযোগ তিনি ‘প্রবলভাবে প্রত্যাখ্যান' করছেন৷ ‘‘ডিএফবির মূল্যবোধ আমারও মূল্যবোধ৷ বৈচিত্রতা, একাত্মতা, বৈষম্যবিরোধিতা ও ইন্টিগ্রেশন, এসব মূল্যবোধের অবস্থান আমাদের হৃদয়ের অতি কাছে,'' বলেন গ্রিন্ডেল৷
আলোচিত ছবিটি ব্যবহার করে ও্যজিল ও তাঁর আরেক জার্মান সহকর্মী গুনডোয়ানের তুর্কি ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী হামলা উসকে দেয়ার ঘটনায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন৷ ‘‘প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমার স্পষ্ট করে বলা উচিত ছিল যে, কোনো প্রকারের বর্ণবাদমূলক বৈরিতা সহ্য করা হবে না,'' বলেন ডিএফবি প্রেসিডেন্ট গ্রিন্ডেল৷
উল্লেখ্য, জার্মান দল থেকে সরে দাঁড়ানোর বিবৃতিতে ও্যজিল ডিএফবি প্রধানের বিরুদ্ধে তাঁকে রক্ষায় এগিয়ে আসতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ এনেছিলেন৷ ‘‘গ্রিন্ডেল ও তাঁর সমর্থকদের চোখে আমরা যখন জিতি তখন আমি জার্মান, কিন্তু যখন হারি, তখন আমি একজন অভিবাসী৷ এর কারণ, জার্মানিতে কর দেয়া, জার্মান স্কুলে সহায়তা দেয়া এবং জার্মানির হয়ে বিশ্বকাপ জেতার পরও আমাকে সমাজে গ্রহণ করা হয়নি৷ আমাকে ‘ভিন্ন' হিসেবে মনে করা হয়েছে,'' বিবৃতিতে লিখেছিলেন ও্যজিল৷
এদিকে, বৃহস্পতিবারের বিবৃতিতে ডিএফবি প্রেসিডেন্ট গ্রিন্ডেল আরও জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে ইন্টিগ্রেশন প্রক্রিয়া আরও তরান্বিত করতে ডিএফবি তার চেষ্টা বাড়াবে৷
এ বিষয়ে আপনার কোনো মতামত থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷
এক নজরে মেসুত ও্যজিল
এক যুগ জার্সি গায়ে বিভিন্ন পর্যায়ের জার্মান দলের প্রতিনিধিত্ব করার পর, এর্দোয়ান-বিতর্কে অবসর নিলেন মেসুত ও্যজিল৷ চলুন এক নজরে দেখে নেয়া যাক ও্যজিলের বর্ণিল ক্যারিয়ার৷
২০০৫ সালে ও্যজিল নিজের শহর গালসেনকিয়র্শেনে বুন্ডেসলিগার দল শালকের যুবা দলে যোগ দেন৷ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাঁর সাফল্য আসে বেশ দ্রুতই৷ ২০০৯ সালে জার্মানির হয়ে অনূর্ধ্ব-২১ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন তিনি৷
ছবি: Imago/Team 2
ব্রেমেন এবং তারপর
যাঁরা একসময় ‘ভবিষ্যতের তারকা’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন, তাঁদের হতাশ করেননি ও্যজিল৷ শালকের সাথে বেতন নিয়ে বনিবনা না হওয়ার পর ২০০৮ সালে ভ্যার্ডার ব্রেমেনে যোগ দেন তিনি৷ ২০১০ সালের বিশ্বকাপে তাঁর নজরকাড়া নৈপুণ্য ইউরোপের সবচেয়ে ভালো ক্লাবগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করে৷ ২০১০ সালে ও্যজিল রেয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন, পরে তৎকালীন সময়ে ৫০ মিলিয়ন ইউরোর রেকর্ড ট্রান্সফার মানিতে যোগ দেন ইংলিশ দল আর্সেনালে৷
ছবি: Imago/Sven Simon
ইন্টিগ্রেশন
২০১০ সালে ও্যজিল জার্মানির সর্বোচ্চ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ‘বাম্বি’ জিতে নেন৷ জার্মানিতে ও্যজিল তাঁর পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম৷ তুর্কি ঐতিহ্য নিয়ে গর্ববোধ করলেও, ও্যজিল জার্মানির প্রতি তাঁর আনুগত্যের কথা বরাবরই জানিয়ে এসেছেন৷ ও্যজিল একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম৷ ২০১৬ সালে মক্কায় হজ করে এসেছেন তিনি, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছবিও পোস্ট করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Pedersen
জয় করেছেন হৃদয়
২০১২ সালে জার্মানির হয়ে তুরস্ককে হারানোর পরের ছবি এটি৷ খেলোয়াড়দের কেবিনে গিয়ে ও্যজিলের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ নিজের শান্ত মেজাজ ও ব্যক্তিত্ব দিয়ে এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার অনেক ভক্তকে কাছে টেনেছেন৷ ২০১৪ সালে নিজের বিশ্বকাপ জয়ের উপার্জন ব্রাজিলের দুস্থ শিশুদের চিকিৎসার জন্য দান করে সবার মন জয় করে নেন তিনি৷
২০১৪ সালে বিশ্বকাপ জয়ের পথে সাতটি ম্যাচই শুরুর করেছিলেন ও্যজিল৷ জার্মান কোচ ইওয়াখিম ল্যোভের সঙ্গে বরাবরই সুসম্পর্ক ছিল তাঁর৷ সবচেয়ে বেশি সফল পাসের তালিকায় সেবার তৃতীয় হয়েছিলেন ও্যজিল৷ সবচেয়ে বেশি গোলের সুযোগ তৈরি করে দেয়ার ক্ষেত্রে আর্জেন্টাইন তারকা মেসিই ছিলেন কেবল তাঁর চেয়ে এগিয়ে৷
ছবি: picture-alliance/GES/M. Gillar
এর্দোয়ান বিতর্ক
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়িপ এর্দোয়ানের সঙ্গে আগেও দেখা করেছেন ও্যজিল৷ কিন্তু ২০১৮ সালের মে মাসে এর্দোয়ানের সাথে এমনই এক সাক্ষাতের পর তোলা ছবি বিতর্ক উসকে দেয়৷ বামপন্থিরা এই বৈঠক ও ছবিকে বর্ণনা করেছেন স্বৈরাচারী এক শাসকের পক্ষে সমর্থনের প্রতীক বলে, অন্যদিকে, চরম ডান থেকে অভিযোগ এসেছে ও্যজিলের জার্মানির প্রতি আনুগত্যের অভাবের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Presidential Press Service
একটি অধ্যায়ের অবসান
২০১৮ সালে রুশ বিশ্বকাপের প্রথম পর্ব থেকেই বাদ পড়ে জার্মানি৷ কয়েক দশকের মধ্যে যা ছিল দেশটির সবচেয়ে বাজে পারফর্ম্যান্স৷ ডিএফবি-প্রধান রাইনহার্ড গ্রিন্ডেল নিজের দিকে আসতে থাকা সমালোচনার তীর ঘুরিয়ে দেন ও্যজিলের দিকে৷ তিনি অভিযোগ করেন, এর্দোয়ানের সঙ্গে বৈঠকের পর দলে বিক্ষিপ্ত মনোভাবের সৃষ্টি হয়েছে৷ এর সমালোচনায় মুখর হয়েছেন রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে জার্মান ফুটবল ফ্যানরাও৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
জিতলে ‘জার্মান’, হারলে ‘অভিবাসী’
মাত্র ২৯ বছর বয়সেই টুইটারে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে অবসরের ঘোষণা দিলেন ও্যজিল৷ গ্রিন্ডেলের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘তাঁর অদক্ষতার জন্য আমি বলির পাঁঠা হতে রাজি না’৷ ডিএফবি প্রধানের বিরুদ্ধে বর্ণবাদের অভিযোগও তোলেন তিনি৷ বাজে সময়ে পাশে থাকায় জার্মান কোচ ইওয়াখিম ল্যোভ এবং সহকর্মীদের ধন্যবাদ জানান তিনি৷ জার্মানির হয়ে মোট ৯২ আন্তর্জাতিক ম্যাচে ২৩টি গোল নিজে করেছেন এবং ৪০টি গোলে সহায়তা করেছেন ও্যজিল৷