কেরালার ওয়ানাড় ছেড়ে দিলেন রাহুল গান্ধী, সেখান থেকে প্রথমবারের জন্য নির্বাচনে লড়বেন প্রিয়ঙ্কা গান্ধী।
বিজ্ঞাপন
রাহুল গান্ধী এবার উত্তরপ্রদেশের রায়বেরিলি ও কেরালার ওয়ানাড় দুই জায়গা থেকেই বিপুল ভোটে জিতেছিলেন। রায়বেরিলি থেকে তিনি জিতেছেন তিন লাখ ৯০ হাজার ৩০ ভোটের ব্যবধানে। আর ওয়ানাড় থেকে তিনি জিতেছিলেন তিন লাখ ৬৪ হাজার ৪২২ ভোটে।
দুইটি কেন্দ্রের মধ্যে একটি ছেড়ে দিতে হতো রাহুলকে। সোমবার সন্ধ্যায় তিনি ঘোষণা করেছেন, তিনি রায়বেরিলি রাখছেন, ওয়ানাড় ছেড়ে দিচ্ছেন। সেখান থেকে বোন প্রিয়াঙ্কা লড়বেন।
এই ঘোষণার মধ্যে দিয়ে জল্পনার অবসান হলো, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী নির্বাচনে লড়বেন।
বোন প্রিয়াঙ্কা, দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং কেরালার নেতা কে সি বেনুগোপালকে পাশে নিয়ে রাহুল জানিয়েছেন, ''এই সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ ছিল না। গত পাঁচবছর ধরে আমি ওয়ানাড়ের প্রতিনিধি ছিলাম। সেখানকার মানুষ আমাকে ভালোবাসা দিয়েছেন। আবার রায়বেরিলির সঙ্গে আমার পরিবারের দীর্ঘদিনের যোগ। সেখানকার মানুষও আমাকে ভালোবাসেন।''
রাহুল জানিয়েছেন, ''তিনি সাংসদ না থাকলেও আগের মতো বারবার ওয়ানাড় যাবেন। আর বোন প্রিয়াঙ্কা তো থাকবেনই। আর প্রিয়াঙ্কা দীর্ঘদিীন ধরে রায়বেরিলিতে কাজ করেছেন। ফলে দুই কেন্দ্রের মানুষ কার্যত দুইজন করে সাংসদ পাবেন।''
প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর হস্তক্ষেপে উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টি ও কংগ্রেসের মধ্যে জোট হচ্ছে। ১৭টি আসনে লড়বে কংগ্রেস।
ছবি: Getty Images/AFP/A. Deep
কেন প্রিঙ্কাকাকে হস্তক্ষেপ করতে হলো?
সমাজবাদী পার্টি(সপা) প্রথমে ১১টি আসন কংগ্রেসকে ছাড়তে চাইছিল। তখন অবশ্য ঠিক ছিল, জয়ন্ত চৌধুরীর ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল লোকদল তাদের সঙ্গে জোট করে লড়বে। কিন্তু জয়ন্ত চৌধুরী বিজেপি-র সঙ্গে হাত মেলান। এরপর কংগ্রেসকে ১৫টি আসন ছাড়তে রাজি হন সপা নেতা অখিলেশ যাদব। কিছু আসন নিয়ে দড়ি টানাটানি চলতে থাকে। আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়। তখন আসরে নামেন প্রিয়াঙ্কা।
ছবি: Reuters/A. Dave
অখিলেশকে ফোন
সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদবকে ফোন করেন প্রিয়াঙ্কা। তিনি জানান, কংগ্রেস ১৭টি আসন নিয়ে লড়তে রাজি। প্রিয়াঙ্কা অখিলেশকে অনুরোধ করেন, কংগ্রেসকে প্রধানমন্ত্রীর কেন্দ্র বারাণসী আসনটি ছেড়ে দিতে। অখিলেশ রাজি হয়ে যান। প্রিয়াঙ্কা বলেন, শ্রাবস্তীর মতো আসনের দাবি কংগ্রেস ছেড়ে দিচ্ছে।
ছবি: Samiratmaj Mishra/DW
রাহুলের যাত্রায় যোগ দেবেন
অখিলেশও কংগ্রেস নেতাদের জানিয়েছেন, তিনি রাহুল গান্ধীর যাত্রায় যোগ দেবেন। ২৪ তারিখ পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে যাত্রা করবেন রাহুল। কংগ্রেস নেতা অজয় রাই জানিয়েছেন, সমাজবাদী পার্টিকে রাহুলের রুট ম্যাপ দিয়ে দেয়া হয়েছে। এবার অখিলেশ ঠিক করবেন, তিনি কোথায় যোগ দেবেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কে কটা আসনে লড়বে?
উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টি লড়বে ৬২টি আসনে এবং কংগ্রেস লড়বে ১৭টি আসনে। কংগ্রেস লড়বে রায়বেরিলি, আমেঠি, কানপুর, ফতেপুর সিক্রি, বনসগাঁও, সাহারানপুর, প্রয়াগরাজ, মহারাজগঞ্জ, বারাণসী, আমরোলা, ঝাঁসি, গাজিয়াবাদ, মথুরা, সীতাপুর, বারাবাঙ্কি ও দেওরিয়াতে। উপরের ছবিটি বারাণসীর।
ছবি: Pawan Kumar/REUTERS
প্রিয়াঙ্কা কি রায়বেরিলিতে লড়বেন?
রায়বেরিলি থেকে সোনিয়া গান্ধী লড়তেন। কিন্তু স্বাস্থ্য়ের কারণে তিনি আর লোকসভায় লড়বেন না। তিনি রাজস্থান থেকে রাজ্যসভায় নির্বাচিত হয়েছেন। তার জায়গায় লড়তে পারেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। রাহুলের বোন এখনো নির্বাচনে লড়েননি। তবে তিনি দীর্ঘদিন হয়ে রায়বেরিলিতে মায়ের হয়ে নির্বাচন পরিচালনার কাজ করেছেন। এবার তার লড়ার সম্ভাবনা প্রবল।
ছবি: Getty Images/AFP/A. Deep
এই জোটের ফলে কী হবে?
উত্তরপ্রদেশে যাদব ভোটদাতার সংখ্যা প্রায় ১১ শতাংশ। মুসলিম ভোটদাতা আছেন ১৯ শতাংশ। যাদবদের মধ্যে সমাজবাদী পার্টির প্রভাব রয়েছে। সমাজবাদী পার্টি ও কংগ্রেস একসঙ্গে লড়লে মুসলিম ভোটের সিংহভাগ তাদের দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া কংগ্রেসের কাছে এখনো অনগ্রসর, উচ্চবর্ণ, দলিত মিলিয়ে সাত শতাংশের মতো ভোট রয়েছে। সমাজবাদী পার্টির কছেও যাদব ছাড়া কিছু অনগ্রসর ভোট আছে।
ছবি: DW/F.Freed
দিল্লিতে কংগ্রেস-আপ সমঝোতা?
রাজধানী দিল্লির সাতটি লোকসভা আসনে কংগ্রেস ও আপের মধ্য়ে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত হয়েছে বলে সূত্র জানাচ্ছে। আপ চারটি ও কংগ্রেস তিনটি আসনে লড়বে। মাঝখানে আপ জানিয়েছিল, তারা একাই লড়বে। কিন্তু পরে আবার আলোচনা শুরু হয় এবং সমঝোতা নিয়ে মতৈক্য হয়েছে বলে কংগ্রেস ও আপ নেতাদের দাবি।
ছবি: DW/S. Kumar
গুজরাটে আপকে আসন?
গুজরাটে আপকে দুইটি আসন ছাড়তে পারে কংগ্রেস। হরিয়ানাতেও একটি আসন ছাড়া নিয়ে কথা চলছে। গোয়াতেও আপের সঙ্গে আসন সমঝোতা করা নিয়ে কথা বলছে কংগ্রেস। চণ্ডীগড় আসনটি কংগ্রেসকে ছেড়ে দিতে পারে আপ। তবে পাঞ্জাবে এখনো পর্যন্ত আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা এগোয়নি।
প্রায় প্রতিটি লোকসভাতেইপ্রিয়াঙ্কাকে নিয়ম করে একটা প্রশ্ন শুনতে হতো, সেটা হলো, তিনি কি এবার ভোটে লড়ছেন? আর প্রতিবার নিয়ম করে প্রিয়াঙ্কা একটাই জবাব দিতেন, তার ভোটে দাড়ানোর কোনো ইচ্ছে নেই। প্রতিবার মায়ের কেন্দ্র রায়বেরিলি ও ভাইয়ের সাবেক কেন্দ্র আমেঠির জন্য কাজ করতেন তিনি। বস্তুত, এই দুইটি কেন্দ্রর দেখভালও তিনিই করতেন।
এবার সেই প্রিয়াঙ্কা ভোটে প্রার্থী হচ্ছেন, সেটাও কেরালা থেকে। রাহুলের জিতে আসা কেন্দ্রে প্রিয়াঙ্কা লড়বেন। কংগ্রেসের কাছে এই কেন্দ্রে গান্ধী পরিবারের কাউকে রাখা জরুরি ছিল। কারণ, ২০২৬ সালে কেরালায় বিধানসভা নির্বাচন। বামেদের হাত থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়ার আশা করছে কংগ্রেস। সেখানে তারা এমন কোনো পদক্ষেপ নিতে চাননি, যার জন্য মানুষ তাদের উপর বিন্দুমাত্র ক্ষুব্ধ হন। রাহুলের জায়গায় তাই প্রিয়াঙ্কাকে দাঁড় করানো হয়েছে।
বিজেপি অবশ্য এই ঘোষণার পরেই আবার কংগ্রেসের পরিবারবাদ নিয়ে সোচ্চার হয়েছে।