ইহুদিদের জীবন নিয়ে মিউজিয়াম
২০ এপ্রিল ২০১৩দক্ষিণ পোল্যান্ডে অবস্থিত ছিল নাৎসিদের কুখ্যাততম মৃত্যুশিবির, যার নাম আউশভিৎস৷ আজও সেখানে প্রতিবছর ১৫ লক্ষ মানুষ আসেন স্মরণ করতে, শ্রদ্ধা জানাতে, দেখতে এবং শিক্ষা পেতে৷ পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশ আউশভিৎস থেকে অনেক দূর৷ ওয়ারশতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে পর্যন্ত বহু ইহুদির বাস ছিল, যাদের পরিবারবর্গ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সেখানে বসবাস করে আসছিলেন৷
অথচ আজ ওয়ারশতে কতগুলি নির্জন রাস্তায় কয়েকটি অর্ধবিস্মৃত স্মৃতিসৌধ ও স্মৃতিফলক, এবং কমিউনিস্ট আমলের কিছু বহুতল আবাসিক ভবনের পিছনের প্রাঙ্গণে আত্মগোপন করে থাকা একটি ইহুদি সিনাগগ ছাড়া ওয়ারশ-র ইহুদিদের সেই জীবনধারার আর কোনো চিহ্ন অবশিষ্ট নেই৷ যেটুকু বাকি আছে, তা হল পোল্যান্ডের সাধারণ মানুষদের মধ্যে হলোকস্টের সাত দশক পরেও চাপা এক ইহুদিবিদ্বেষ, যার বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রচেষ্টা হিসেবে নতুন মিউজিয়ামটি জন্ম নিচ্ছে৷
‘‘আমি এই মিউজিয়ামকে জীবনের মিউজিয়াম হিসেবে তুলে ধরতে চাই, মৃত্যুর মিউজিয়াম হিসেবে নয়,'' বলেছেন মিউজিয়ামের প্রধান আঞ্জ্রেই কুদক৷ ঐতিহাসিক ওয়ারশ ঘেটোর একটি রাস্তাতেই মিউজিয়ামটি খোলা হচ্ছে, যে ‘ঘেটো'-তে ইহুদিদের জড়ো করে রাখা হয়েছিল, অত্যাচার করা হয়েছিল, যেখানে তারা না খেতে পেয়ে মরেছিল, আবার মরণের সাহস নিয়ে বিদ্রোহ করেছিল – ইতিহাসের সেই ‘ওয়ারশ অভ্যুত্থান'-এর অকুস্থল এই ওয়ারশ ঘেটো৷
আগামী শুক্রবার মিউজিয়ামের উদ্বোধন৷ সেদিনটা হবে ওয়ারশ অভ্যুত্থান শুরু হওয়ার ৭০তম বার্ষিকী৷ ঘেটোর তরুণ ইহুদিরা যা কিছু অস্ত্র সংগ্রহ করতে পেরেছে, তাই নিয়েই জার্মান সৈন্যদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছিল৷ এক মাসের মধ্যেই তাদের সে বিদ্রোহ চরম নির্মমতার সঙ্গে শেষ করে দেওয়া হয়৷
কিন্তু এ মিউজিয়াম তো মরণের মিউজিয়াম নয়, এ জীবনের মিউজিয়াম৷ তাই মিউজিয়ামে পোল্যান্ডের ইহুদিদের বিগত হাজার বছরের জীবনযাত্রার নানা নিদর্শন রাখা হবে৷ তবে মিউজিয়ামের আটটি গ্যালারির মধ্যে একটির বিষয়বস্তু হবে হলোকস্ট৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে পোল্যান্ডে ত্রিশ লাখ ইহুদির বাস ছিল৷ যুদ্ধ শেষ হতে হতে তাদের ৯০ শতাংশ প্রাণ হারিয়েছিল৷
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী আজ পোল্যান্ডে মাত্র ৭,৫০০ ইহুদির বাস৷ এবং তারাও যেন মুখ লুকিয়েই থাকে৷ আজ আর ওয়ারশ-র রাস্তায় কাউকে ইয়ারমুল্কে কিংবা ফেডোরা টুপি পরে ঘুরতে দেখা যাবে না৷ তার কারণ পোল্যান্ডে গুপ্ত ইহুদিবিদ্বেষ, প্রকাশ্যে যা কেউ ব্যক্ত করে থাকে না৷ ওয়ারশ-র নতুন ইহুদি মিউজিয়াম ঠিক সেই অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্যই মাঠে নামছে৷
এসি/ডিজি (রয়টার্স)