ওয়ার্নার-মার্শের ঝড়ো সেঞ্চুরিতে রানের পাহাড়ে অস্ট্রেলিয়া
২০ অক্টোবর ২০২৩ইনিংস শেষে অস্ট্রেলিয়া ও ওয়ার্নার নিশ্চয় একটা ধন্যবাদ দেবেন উসামা মীরকে। ভাগ্যিস, ওয়ার্নারের ক্যাচটা তিনি হাত থেকে ফেলেছিলেন, নইলে হয়তো অস্ট্রেলিয়ার এমন পাহাড়ে চড়া হয় না, ওয়ার্নারের এই ইনিংস খেলা হয় না!
ওয়ার্নারের রান তখন মাত্র ১০। শাহীন শাহ আফ্রিদির বলটা পুল করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিলেন মিড অনে। যে কোনো পেশাদার ক্রিকেটারের ক্যাচটা মিস করা প্রায় অমার্জনীয় অপরাধ। শাহীনও উদযাপনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন। কিন্তু সবাইকে হতভম্ব করে উসামা ক্যাচটা ফেলে দিলেন।
সেই শুরু। এরপর ওয়ার্নার আর মার্শ যা করেছেন, সেটা পাকিস্তান ক্রিকেটারদের দুঃস্বপ্নে তাড়া করবে অনেকদিন।
ওই ক্যাচ মিসের পরও অবশ্য শুরুর দিকের ওভারগুলো দেখেশুনেই খেলছিলেন ওয়ার্নার-মার্শ। দুজনের রুদ্রমূর্তির শুরু ইনিংসের নবম ওভারে, হারিস রউফের ওভার দিয়ে। প্রথম বলে চারের পরের বলেই রউফকে চিন্নাস্বামীর ছাদের ওপর আছড়ে ফেললেন ওয়ার্নার। মার্শ এরপর স্ট্রাইক পেয়ে ওই ওভারেই শেষ তিন বলে নিলেন তিন চার। এক ওভারেই হারিস দিলেন ২৪।
এরপর ওয়ার্নার-মার্শ কচুকাটা করেছেন কমবেশি সবাইকেই। হারিসের ওপর দিয়েই ঝড়টা বেশি গেছে, তার প্রথম ৩ ওভার থেকে আসে ৪৭ রান। অস্ট্রেলিয়ার ১০০ রানের সাথে ওয়ার্নারের ফিফটি হলো। রান খরায় থাকা ওয়ার্নার উদযাপনটা রেখে দিলেন আরও বড় কিছুর জন্য। ওদিকে ‘বার্থডে বয়' মার্শও জন্মদিনটা রাঙিয়ে ফিফটি পেয়ে গেছেন খানিক পর, টুর্নামেন্টে যা তার দ্বিতীয়।
দুজনের জুটিতে এরপর ২০০ রান উঠে গেছে। সেঞ্চুরির পরেই আবার সুযোগ দিয়েছিলেন ওয়ার্নার, ক্যাচ ফেলে দেন এবার আব্দুল্লাহ শফিক। কিন্তু দুর্ভাগা বোলার এবার উসামা মীর। কাকতালীয়ই বটে, যে মীর আগের সহজ ক্যাচ ধরতে পারেননি , সেই মীরই পরে বেশ ভালো ক্যাচ নিলেন মিচেল মার্শের। তার আগে অবশ্য মার্শ ও ওয়ার্নার দুজনেরই পর পর দুই বলে সেঞ্চুরি হয়ে গেছে। দুজনেই বুনো উদযাপনে বুঝিয়ে দিয়েছেন, কতটা দরকার ছিল তাদের। বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ওপেনিং জুটিও হয়ে গেছে এর মধ্যে।
মার্শকে ১২১ রানে আউট করে শাহীনই ভাঙেন জুটি। পরের বলেই ক্যাচ তুলে দেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, পর পর দুই বলে উইকেট পেয়ে যান শাহীন। স্মিথও থাকেননি বেশিক্ষণ, তবে অন্যদিকে ওয়ার্নারের ঝড় চলেছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডেতে টানা চতুর্থ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন, পরে পেরিয়ে গেছেন ১৫০। শেষ পর্যন্ত আউট হয়েছেন ১২৪ বলে ১৬৩ রান করে সেই হারিসের বলেই, তার আগে হয়ে গেছে এই বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস।
ওয়ার্নার যতক্ষণ ছিলেন, ৪০০ মনে হচ্ছিল খুবই সম্ভব। কিন্তু তার আউটের পরেই পথ হারিয়ে ফেলে অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তানের বোলাররা দেরিতে হলেও ফিরেছেন ম্যাচে। ইংলিস, স্টয়নিস, লাবুশেন কেউই পরিস্থিতির দাবি মেটানো ক্যামিও খেলতে পারেননি। পুরো ৫০ ওভার খেলেও অস্ট্রেলিয়া তাই ৩৬৭ রানের বেশি করতে পারেনি। ওয়ার্নার আউট হওয়ার পর ৪৬ বল খেলে অস্ট্রেলিয়া করেছে মাত্র ৪২ রান, হারিয়েছে আরও ৫ উইকেট। শুরুর দুঃস্বপ্নের পর হারিস নিয়েছেন তিন উইকেট। তবে শেষ ওভারে দুই উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের বোলিংয়ের নায়ক ছিলেন শাহীন আফ্রিদি। পাঁচ উইকেট নিয়ে তার বোলিং ফিগার ছিল শেষ পর্যন্ত ১০-১-৫৪-৫, উসামা শুরুর ক্যাচটা নিলে সেটা হতে পারতো আরও উজ্জ্বল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
অস্ট্রেলিয়া ৫০ ওভারে ৩৬৭/৯ (ওয়ার্নার ১৬৩, মার্শ ১২১; শাহীন ৫/৫৪, হারিস ৩/৮৩)