অ্যামেরিকা পরমাণু চুক্তি ত্যাগ করলে তার পরিণাম ভালো হবে না, জানিয়েছে ইরান৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ১২ই মে চুক্তি থেকে সরে আসার যে হুমকি দিয়েছেন, তার ফলে ইউরোপেও তৎপরতা বাড়ছে৷
বিজ্ঞাপন
ইরানের সঙ্গে নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য ও জার্মানির পরমাণু চুক্তিকে বড় সাফল্য হিসেবে গণ্য করে আন্তর্জাতিক সমাজ৷ এক মাধ্যমে সে দেশের পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি আপাতত বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা৷ তাছাড়া সে দেশে চরম রক্ষণশীল শক্তির প্রভাব খর্ব করে উদারপন্থিদের হাত শক্ত করাও এই চুক্তির পরোক্ষ উদ্দেশ্য৷ তবে ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিকে চুক্তির অন্তর্গত করতে না পারায় কিছু মহলে সমালোচনা উঠেছে৷ তাছাড়া ইরান যেভাবে সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেন-সহ গোটা অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করার চেষ্টা করে চলেছে, সেই উচ্চাভিলাষেও রাশ টানা সম্ভব হয়নি৷ বিশেষ করে ইসরায়েল ও সৌদি আরব ইরানের শক্তি খর্ব করতে বদ্ধপরিকর৷ একটি পরমাণু চুক্তির মধ্যে এত বিষয় অন্তর্গত করা যে বাস্তবসম্মত হতে পারে না, সেই কঠিন সত্য উপেক্ষা করে চলেছেন বিরোধীরা৷ তাই ইরান চুক্তির শর্ত মেনে চলা সত্ত্বেও সেই চুক্তি বাতিল করার জন্য চাপ দিয়ে চলেছে সমালোচকরা৷
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনের আগে থেকেই সমালোচকদের দলে নাম লিখিয়েছিলেন৷ ক্ষমতায় এসে তিনি সেই লক্ষ্যেই পদক্ষেপ নিয়ে চলেছেন৷ তাঁর প্রশাসনেও বর্তমানে ইরান-বিরোধীদের আধিপত্য চলছে৷ ইউরোপে সহযোগী দেশগুলি ট্রাম্পকে সেই কাজ থেকে বিরত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির ৫০০ সংসদ সদস্য একযোগে এই মর্মে মার্কিন কংগ্রেসকে একটি চিঠি লিখেছেন৷
আগামী ২৭শে এপ্রিল ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলও সেই চেষ্টা চালাবেন বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন, যে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি আগামী ১২ই মে-র মধ্যে চুক্তির ‘মারাত্মক ত্রুটি' দূর করতে না পারলে তিনি ইরানকে নিষেধাজ্ঞা থেকে আর রেহাই দেবেন না৷ উল্লেখ্য, চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে নিয়মিত ‘ওয়েভার' স্বাক্ষর করতে হয়৷ গতবার ট্রাম্প তাতে স্বাক্ষর করলেও এবার তিনি বেঁকে বসেছেন৷
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহম্মদ জাভাদ জরিফ নিউ ইয়র্কে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেন, ওয়াশিংটন চুক্তি থেকে সরে এলে ইরানের হাতে বেশ কয়েকটি বিকল্প রয়েছে৷ স্বাক্ষরকারী সব দেশ চুক্তি মেনে চললে ইরানও শর্ত মেনে চলবে৷ অ্যামেরিকা চুক্তি ত্যাগ করলে ইরান চুক্তি ছিঁড়ে ফেলবে, বলেন জরিফ৷
ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি রক্ষা করতে ইউরোপেও তৎপরতা শুরু হয়ে গেছে৷ ওয়াশিংটনকে খুশি করতে ইরানের উপর কিছু নিষেধাজ্ঞা চাপানোর বিষয়েও আলোচনা হয়েছে৷ তবে ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেননি৷ ১২ই মে-র মধ্যে যৌথ পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত কঠিন হবে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন৷
নয়া মার্কিন প্রেসিডেন্টকে নিয়ে ইরানের রাজধানীতে একটি ব্যঙ্গচিত্র প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে৷ অংশ নিচ্ছেন ৭৮টি দেশের কার্টুন আঁকিয়ে, তাঁদের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকেও দু’জন আছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Kenare
ছেলেমানুষি
ডোনাল্ড ট্রাম্পের আচার-ব্যবহার কোনো প্রবীণ বা অভিজ্ঞ রাজনীতিকের মতো নয় – কোথায় যেন তার মধ্যে ছেলেমানুষি মিশে আছে৷ কার্টুনের খোকা ট্রাম্প...
ছবি: Getty Images/AFP/A. Kenare
পিনোকিও
কলোডির গল্পের কাঠের পুতুল পিনোকিও-র নাক সে মিথ্যে কথা বললেই আরো খানিকটা লম্বা হয়ে যেতো৷ ট্রাম্পের লম্বা নাকের অর্থ যদি মিথ্যাভাষণ হয়, তবে সেই নাকের ওপর টুইটারের লোগোর মতো দেখতে ছোট ছোট পাখি বলে দিচ্ছে, ট্রাম্প কিভাবে মিথ্যাভাষণ করে থাকেন৷ কার্টুনিস্টের কল্পনায় একেবারে সামনের পাখিটি আবার নখে বোমা ঝুলিয়ে চলেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Kenare
টুইটারের লোগো, কিন্তু মুখটা ডোনাল্ড ট্রাম্পের
ট্রাম্প যে টুইট করতে ভালোবাসেন, সেটা বিশ্বের বাকি মানুষজনের মতো কার্টুনিস্টদেরও নজর এড়ায়নি৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Kenare
সীমান্তে প্রাচীর
সারা বিশ্ব থেকে মোট ১,৬১৪টি ব্যঙ্গচিত্র তেহরানের ট্রাম্প কার্টুন প্রতিযোগিতায় এসে পৌঁছেছে – তার মধ্যে দু’টি ব্যঙ্গচিত্র এসেছে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে, বলে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন৷ ট্রাম্প যে মেক্সিকো সীমান্তে প্রাকার নির্মাণ করতে চান, এই প্রসঙ্গটিকে বিষয়বস্তু করেছেন বহু কার্টুনিস্ট৷ ছবিতে কিউবার এক কার্টুনিস্টের পাঠানো ব্যঙ্গচিত্রটি দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Kenare
মেলানিয়ার মুখে হাসি ফোটানোর পন্থা
ইটালির এক কার্টুনিস্টের ব্যঙ্গচিত্রে ট্রাম্প মেলানিয়ার ঠোঁটের কোণ টেনে ধরে তাঁকে জোর করে হাসাচ্ছেন৷ এখানে দু’জনের সম্পর্কের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে: ট্রাম্পদের দাম্পত্য জীবন কি সুখের? ওদিকে মেলানিয়া এ পর্যন্ত ক’বার ট্রাম্পের হাত ঠেলে সরিয়ে দিয়েছেন, তার হিসেব রাখছেন ট্যাবলয়েড সাংবাদিকরা৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Kenare
‘অ্যামেরিকা মানে তো আমি!’
কার্টুনটিতে নানা দেশের পতাকা উড়ছে – শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে পতাকার জায়গায় উড়ছেন ট্রাম্প স্বয়ং৷ তেহরানে এর আগেও কার্টুন প্রতিযোগিতা হয়েছে এবং তার সবটাই যে বিতর্ক মুক্ত, এমন নয়: যেমন ইসলামিক স্টেট সন্ত্রাস গোষ্ঠীকে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রতিযোগিতা সাহসী বলে প্রশংসা পেলেও, হলোকস্ট নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রতিযোগিতা কতটা সুরুচির পরিচায়ক, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Kenare
এ কেমন বৈরি
দেশ বা প্রশাসন হিসেবে ইরান যে ঠিক মানবাধিকারের আলোকবর্তিকা নয়, তা বলা চলে৷ তবে ইরান-মার্কিন সম্পর্কের বর্তমান পরিস্থিতিতে কার্টুনিস্টরা ট্রাম্পকে তুলোধোনা করলে তেহরানের আপত্তি না থাকারই কথা৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Kenare
বিজয়ী ইরানেরই
জ্বলন্ত মাথার চুল আর একশ’ ডলার নোটের তৈরি সুট পরিহিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যঙ্গচিত্র এঁকে প্রায় দেড় হাজার মার্কিন ডলার মূল্যের প্রথম পুরস্কার লাভ করেছেন ইরানি কার্টুনিস্ট হাদি আসাদি৷ তাঁকে অভিনন্দন৷