ইরানের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার চাপ সামলাতে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলির সহায়তার উদ্যোগ নিচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ অন্যদিকে ওয়াশিংটন ইরানের সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী জোট গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
ওয়াশিংটন ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি বাতিল করার ফলে সে দেশের সঙ্গে ইউরোপের সংঘাতের আশঙ্কা বেড়ে চলেছে৷ অ্যামেরিকার নিষেধাজ্ঞার ভয়ে ইউরোপের অনেক কোম্পানি এখনই ইরান থেকে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলার তোড়জোড় করছে৷ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ অবশ্য বিষয়টি নিয়ে অ্যামেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধের কোনো আশঙ্কা দেখছেন না৷ তাঁর মতে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপের কোম্পানিগুলিকে ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনলেও মার্কিন কোম্পানিগুলির বিরুদ্ধে ইউরোপের পালটা পদক্ষেপ নেবার কোনো অর্থ হয় না৷ উল্লেখ্য, বর্তমান অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে ফ্রান্সের টোটাল কোম্পানি ইরানে এক গ্যাস প্রকল্প থেকে প্রত্যাহারের হুমকি দিয়েছে৷
বুলগেরিয়ার রাজধানী সোফিয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন শীর্ষ সম্মেলনে ইরান চুক্তির প্রশ্নে জোরালো ঐক্য দেখা গেছে৷ এমনকি প্রয়োজনে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সংঘাতের পথে যেতেও প্রস্তুত ইউরোপীয় নেতারা৷ ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞার পালটা জবাব হিসেবে ইউরোপ বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ বিবেচনা করছে৷ যেমন ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞা মানলে ইইউ-ভিত্তিক কোম্পানিগুলির উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানোর আইনি প্রক্রিয়া শুরু করা হবে৷
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ ক্লোদ ইয়ুংকার জানিয়েছেন, শুক্রবারই ‘ব্লকিং স্ট্যাটিউট' নামের আইন চালু করার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে৷ উল্লেখ্য, এখনো পর্যন্ত এই আইন প্রয়োগ করা হয়নি৷ তাই এই পদক্ষেপের কার্যকারিতা নিয়ে অনেক মহলে সংশয় রয়েছে৷ বিশেষ করে গোটা বিশ্বে বাণিজ্যিক ও আর্থিক ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যের আলোকে ইউরোপের কোনো একক পদক্ষেপ ইউরোপীয় কোম্পানিগুলির জন্য কতটা সহায়ক হবে, তা স্পষ্ট নয়৷ ফলে তারা মার্কিন চাপের মুখে আন্তর্জাতিক স্তরে নানা বাধার মুখোমুখি হতে পারে৷
ইরান চুক্তি বাতিল করে একঘরে হয়ে পড়লেও মার্কিন প্রশাসন তেহরানের সরকার ও ‘স্থিতিশীলতা বিপন্ন করতে তাদের কার্যকলাপ'-এর বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী এক জোট গঠন করতে চায়৷ মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সোমবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এই উদ্যোগের রূপরেখা তুলে ধরবেন৷ নতুন এই উদ্যোগের মূলমন্ত্র হলো, ইরানের সরকার শুধু আঞ্চলিক স্তরে নয়, গোটা বিশ্বের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে – এই বাস্তব সবার কাছে স্পষ্ট করে দেওয়া হবে৷ মার্কিন প্রশাসন ইরানের সরকারের বিরোধিতা করলেও সে দেশের জনগণের পাশে রয়েছে৷ ২০১৪ সালে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রায় ৭৫টি দেশের যে জোট সৃষ্টি করা হয়েছিল, সেই আদলে ইরানের বর্তমান সরকার-বিরোধী জোট সৃষ্টি করতে চায় ওয়াশিংটন৷
ট্রাম্প ও মাক্রোঁ – চাপের মুখে বন্ধু?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বিশ্বনেতাদের তেমন সুসম্পর্ক নেই৷ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ এর বিরল ব্যতিক্রম৷ কিন্তু প্রকাশ্যে উষ্ণতার নেপথ্যে তাঁদের সম্পর্ক আসলে কতটা দৃঢ়?
ছবি: Reuters/K. Lamarque
শুরুতে মধুর নয়
ট্রাম্প ও ফ্রান্সের তরুণ প্রেসিডেন্টের সম্পর্কের সূচনা তেমন মধুর ছিল না৷ মাক্রোঁ প্রথম সাক্ষাতে করমর্দনের সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের হাত এত জোরে চেপে ধরেছিলেন যে ট্রাম্প ব্যথায় শিউরে উঠেছিলেন৷ জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলার লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত প্যারিস চুক্তি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করেন মাক্রোঁ৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Ngan
জাঁকজমকে মুগ্ধ
২০১৭ সালে ফ্রান্সের জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত ছিলেন ট্রাম্প৷ প্যারিসে বর্ণাঢ্য সেই অনুষ্ঠান দেখে আপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি৷ এমনকি ওয়াশিংটনেও সামরিক শক্তির এমন জাঁকজমকপূর্ণ প্রদর্শন করতে চেয়েছিলেন তিনি৷ তখন থেকেই মাক্রোঁর সঙ্গে তাঁর উষ্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে৷
ছবি: Reuters/G. Fuentes
ট্রাম্প বনাম বাকি বিশ্ব
গত কয়েক বছরে ইউরোপ তথা বাকি অঞ্চলের সহযোগী দেশগুলির সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে৷ বিশেষ করে রাজনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক প্রশ্নে ইউরোপের সঙ্গে বার বার সংঘাত দেখা যাচ্ছে৷ এই অবস্থায় ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইউরোপের নেতারা মাক্রোঁর উপর আস্থা রাখতে বাধ্য হচ্ছেন৷
ছবি: Getty Images/B.Doppagne
ট্রাম্প আমলে প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর
প্যারিসে আতিথেয়তায় মুগ্ধ ট্রাম্প ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে হোয়াইট হাউসে স্বাগত জানান৷ তাঁদের মধ্যে করমর্দন, আলিঙ্গন, হাত ধরে হাঁটা, মৃদু চুম্বনের মতো অনেক ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি হয়েছে৷ এমনকি মাক্রোঁর জামা থেকে খুসকি ঝেড়ে তাঁকে ‘পার্ফেক্ট’ দেখাতেও কার্পণ্য করেননি ট্রাম্প৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
ইরান নিয়ে তৎপরতা
ট্রাম্পকে ‘ভোলাতে’ মাক্রোঁ ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তির নতুন ও বর্ধিত সংস্করণের প্রস্তাব দিয়েছেন – এমন এক ধারণা সৃষ্টি হয়েছে৷ ট্রাম্প যাতে বর্তমান চুক্তি বাতিল না করে নতুন আইডিয়ার ভিত্তিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি ও আঞ্চলিক প্রভাবে রাশ টানার চেষ্টা করেন, সেটাই ছিল মাক্রোঁর উদ্দেশ্য৷
ছবি: Reuters/J. Ernst
মতপার্থক্য গোপন নয়
মার্কিন কংগ্রেসে এক ভাষণে মাক্রোঁ ট্রাম্প প্রশাসনের অনেক নীতির খোলামেলা বিরোধিতা করেন৷ মিষ্টি ভাষার মোড়কে তিনি জলবায়ু চুক্তি থেকে শুরু করে সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদের মতো বিষয়ে অ্যামেরিকার অবস্থান বদলানোর ডাক দেন৷ বিশ্বের অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হলে আন্তর্জাতিক সহযোগিতাই সঠিক পথ, বলেন মাক্রোঁ৷