বুধবার থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট তদন্তের প্রকাশ্য শুনানি শুরু হচ্ছে৷ রিপাব্লিকান দল প্রেসিডেন্টের অবস্থান সমর্থন করতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে৷ বিরোধীরাও হাত গুটিয়ে বসে নেই৷
বুধবার থেকে মার্কিন প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তাকে সংবিধানের প্রতি আনুগত্যের শপথ নিয়ে সংসদীয় কমিটির সামনে সত্য উন্মোচন করতে হবে৷ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সংলাপে ট্রাম্প তাঁর পদের মর্যাদা কতটা রক্ষা করেছেন, আইনের সীমা পেরিয়ে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার স্পৃহাকেই প্রাধান্য দিয়েছিলেন কিনা, সেই সত্য উঠে আসবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ বিরোধী ডেমোক্র্যাট দল এই সব সাক্ষ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে প্রেসিডেন্টকে পদচ্যুত করার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে৷ তবে সংসদের নিম্ন কক্ষে সাফল্য পেলেও উচ্চ কক্ষে সেই সম্ভাবনা এখনো অত্যন্ত ক্ষীণ৷ সেখানে রিপাব্লিকান দল প্রেসিডেন্টকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে৷ তবে সামান্য মাত্রায় হলেও দলের মধ্যে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থনে ভাটা পড়ছে৷
ইমপিচমেন্ট তদন্তের শুনানি সত্ত্বেও অ্যামেরিকার মানুষের কাছে ট্রাম্পের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল রাখতে আপাতত রিপাব্লিকান দল নানা উদ্যোগ নিচ্ছে৷ বৃহস্পতিবার এক সম্মেলনে দলের সমর্থকরা ডেমোক্র্যাটদের উপর চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করবে৷ ট্রাম্পের ‘অ্যামেরিকা ফার্স্ট' নীতিকে খাটো করতেই বিরোধীরা প্রেসিডেন্টের ক্ষতি করছে বলে সমর্থকরা সোচ্চার হচ্ছে৷
ডেমোক্র্যাটিক দল এই প্রকাশ্য শুনানির সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে যাবতীয় উদ্যোগ নিচ্ছে৷ মঙ্গলবার তারা আরও আটজন সাক্ষীকে তলব করেছে৷ রূদ্ধদ্বার শুনানিতে তাঁরা আগেই বক্তব্য রেখেছেন৷
ওয়াটারগেইট কেলেঙ্কারি
রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যোগাযোগ নিয়ে তদন্ত এবং প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির তুলনা করা হচ্ছে৷ কী ছিল সেই ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি, যা নিক্সনকে পদত্যাগে বাধ্য করেছিল?
ছবি: picture alliance/Everett Collection
ওয়াটারগেট হোটেল
এই হোটেলটিই সব নষ্টের গোড়া৷ ১৯৭২ সালের ১৭ই জুন ভোরে পাঁচ অনুপ্রবেশকারী হোটেলে ঢুকে ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটির অফিসে ছোট ছোট মাইক্রোফোন বসিয়ে সটকে পড়ে৷ বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে সন্দেহের তীর ঝুঁকে প্রেসিডেন্ট নিক্সনের দিকে৷ সহযোগীরা অভিযোগ নাকচ করে দিলেও দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হবার দু’বছরের মধ্যেই নিক্সনের জড়িত থাকার বিষয়টি বেরিয়ে আসে৷ ফলে তাঁকে ছেড়ে দিতে হয় প্রেসিডেন্টের পদ৷
ছবি: Paul J. Richard/AFP/GettyImages
রিচার্ড নিক্সনের সফল বিদেশনীতি
ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির আগে নিক্সন তার কূটনৈতিক সাফল্যের জন্য বিখ্যাত ছিলেন৷ ১৯৬৮ ও ১৯৭২-এ পরপর দু’বার নির্বাচিত হবার পর তিনিই প্রথম প্রেসিডেন্ট যিনি চীন সফরে যান৷ ঐতিহাসিক এ সফরে তিনি চেয়ারম্যান মাও সেতুং-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং মার্কিন-চীন সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন৷
ছবি: picture alliance/Everett Collection
বিপুল জয়
তখনো ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারিতে নিক্সনের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হয়নি৷ আগের মেয়াদে নিক্সনের জনপ্রিয়তা এতটাই তুঙ্গে ছিল যে, ১৯৭২ সালের নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৫০টি রাজ্যের ৪৯টিতেই জয়ী হন৷
ছবি: AP
সাংবাদিক উডওয়ার্ড ও বার্নস্টেইন
এত জনপ্রিয়তার পরও ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি পিছু ছাড়েনি নিক্সনের৷ ওয়াশিংটন পোস্টের দুই সাংবাদিক কার্ল বার্নস্টেইন (বামে) ও বব উডওয়ার্ড (ডানে) হোটেল আর হোয়াইট হাউসে পাঁচ অনুপ্রবেশকারী সম্পর্কে গভীর তদন্ত শুরু করেন৷ শেষমেশ উডওয়ার্ড ‘গোপন উৎস’ থেকে খবর পান, যাকে পরে ‘ডিপ থ্রোট’ নামে উল্লেখ করা হয় রিপোর্টে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নিক্সন বনাম প্রেস
ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত রিপোর্টগুলো মোটেই ভালোভাবে নেয়নি নিক্সন প্রশাসন৷ তাঁর মুখপাত্ররা পত্রিকাটি প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে অন্যায় যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে বলে অভিযোগ করে৷ প্রশাসনের অব্যাহত চাপের পরও পত্রিকাটি তাদের অবস্থানে অটল ছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
কুখ্যাত টেপগুলো
১৯৭১-এর শুরু থেকে নিক্সন তার টেলিফোন আলাপ, ওভাল অফিসসহ হোয়াইট হাউস ও ক্যাম্প ডেভিডের সভাগুলোর কথোপকথন রেকর্ড করতে শুরু করেন৷ এই রীতিটি অবশ্য শুরু হয় চল্লিশের দশকে প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের সময়৷ ১৯৭৩ সালে এসব রেকর্ডিং ফাঁস হয়ে গেলে ওয়াটারগেট মামলায় তা নতুন মাত্রা যোগ করে৷
ছবি: picture alliance/dpa/Everett Collection
অব্যাহতিই হলো কাল
১৯৭৩ সালে অ্যাটর্নি জেনারেল এলিয়ট রিচার্ডসন (ডানে) ওয়াটারগেট মামলায় তদন্তকারী প্রসিকিউটর হিসেবে আর্চিবাল্ড কক্সকে নিয়োগ দেন৷ কক্স নিক্সনের কাছে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি টেপ চান৷ নিক্সন ক্ষেপে গিয়ে তা দিতে অস্বীকার করেন এবং ২০ অক্টোবর তাঁকে চাকরিচ্যুত করেন৷ এই ঘটনায় নিক্সনের প্রতি সবার সন্দেহ বাড়ে এবং তাঁকে ইমপিচ করার দাবি জোরালো হয়৷
ছবি: picture-alliance/Everett Collection
রোজ মেরি’র কাণ্ড
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে অবশেষে টেপগুলো হস্তান্তর করেন নিক্সন৷ কিন্তু একটি রেকর্ডিংয়ের ১৮ মিনিট খুঁজে পাননি তদন্তকারীরা৷ সেক্রেটারি রোজ মেরি উডস দাবি করেন, ট্রান্সক্রাইব করার সময় দুর্ঘটনাবশত ঐ অংশটুকু মুছে গেছে৷ তাঁর এই বিশেষ অবস্থান নেয়ার ঘটনাটিকে বলা হয় ‘রোজ মেরি স্ট্রেচ’৷
ছবি: gemeinfrei
নিক্সনের প্রেসিডেন্সির অবসান
নিক্সনের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া শুরু হয় ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে৷ পুরো টেপ হস্তান্তর করতে না চেয়ে তিনি ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠায় বাধা তৈরি করেছিলেন কিনা সেটাই ছিল প্রশ্ন৷ ইমপিচমেন্ট এড়াতে আগস্টে নিজেই পদত্যাগ করেন নিক্সন৷ তবে যখন তিনি তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার পেছনে ফেলে ডিসি ছাড়ছিলেন, তখন তাঁকে খুব একটা অনুতপ্ত মনে হয়নি৷