সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সে দেশে নিয়োজিত ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ প্রতিনিধির মর্যাদা কোনো দেশের রাষ্ট্রদূতের চেয়ে কমিয়ে আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সমান করেছিল৷ সোমবার আবারও তার আগের মর্যাদা ফিরে পেল ইইউ৷
বিজ্ঞাপন
আঠাশটি দেশের সমন্বয়ে গঠিত বা ইইউ-র রাষ্ট্রদূত ডেভিড ও'সুলিভান ২০১৬ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে কোনো দেশের রাষ্ট্রদূতের সমান মর্যাদা পেতেন৷ কিন্তু সম্প্রতি তাঁর মর্যাদা কমিয়ে আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সমান করা হয়েছিল৷
গত বছরের শেষ দিকে কয়েকটি অনুষ্ঠানে ওয়াশিংটনে ইইউর রাষ্ট্রদূত ও'সুলিভানকে আমন্ত্রণ না জানানোয় বিষয়টি প্রথম ‘ইইউ'-র নজরে আসে৷
এরপর ৫ ডিসেম্বর সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডাব্লিউ বুশের শেষকৃত্যানুষ্ঠানের আয়োজকরা ‘ইইউ'-র মর্যাদা কমানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন৷
কিন্তু সোমবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের মার্কিন প্রতিনিধি গর্ডন সন্ডল্যান্ড জানান যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আবার ইইউ'র পুরনো মর্যাদা বহাল করছে৷ বিষয়টি নিয়ে একটি টুইটও করেন তিনি৷
কেন গুরুত্বপূর্ণ ইউ?
‘‘অ্যামেরিকার জন্য ইইউ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সংগঠন৷ বিশ্বের উন্নয়ন ও নিরাপত্তার বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকাণ্ডে ইইউ'র ভূমিকা মূল্যবান,'' এমনটাই মনে করেন সন্ডল্যান্ড৷
মর্যাদা কমানোর বিষয়টি ইইউ কূটনীতিকদের নজরে আসলে এই নিয়ে তাঁরা মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেন৷
এবিষয়ে ইইউ কূটনীতিকদের একজন জানান, ‘‘তাঁরা আমাদের বলেছেন যে, তাঁরা আমাদের জানাতে ভুলে গেছেন৷ এবং তাঁরা এেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কারণ চিফ অফ প্রটোকল মনে করেন, এটাই ঠিক সিদ্ধান্ত৷''
মর্যাদা ফেরানোর পাশাপাশি সোমবারই ইইউ'র সাবেক মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিনিধি স্টাভরোস লামব্রিনিদিস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন৷
এসএস/জেডএইচ (এপি, ডিপিএ)
কীভাবে বড় হলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন
১৯৫৭ সালে পশ্চিম ইউরোপের ছয় দেশ নিয়ে শুরু হয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ এরপর থেকে এর পরিসর বেড়ে এখন ২৮টি দেশ এর সদস্য৷ বিগত বছরগুলোতে এই জোটের পরিসর কীভাবে পরিবর্তিত হলো তা থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Diezins
১৯৫৭: ছয় দেশের নতুন ইউরোপ
রোম চুক্তি সই করার মধ্য দিয়ে ১৯৫৭ সালের ২৫ মার্চ জোট বাধে জার্মানি, ফ্রান্স, ইটালি, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস ও লুক্সেমবুর্গ৷ সমন্বিতভাবে অভ্যন্তরীণ ও আন্তঃদেশীয় বাণিজ্যে সুবিধা নেয়াই ছিল ইউরোপীয়ান ইকোনোমিক কমিউনিটি বা ইইসি নামের এই জোটের লক্ষ্য৷ ইইসি ও অন্য জোটগুলো মিলে কয়লা, ইস্পাত ও পরমাণু সহযোগিতায় একসঙ্গে কাজ শুরু করলে এর নাম হয় ইউরোপীয়ান কমিউনিটিস বা ইসি৷
ছবি: picture-alliance/AP Images
১৯৭৩: ব্রিটেন, আয়ারল্যান্ড ও ডেনমার্ক
যুক্তরাজ্য শুরুতে গররাজি থাকলেও ষাট এর দশকে এসে যোগ দেয়৷ ফ্রেঞ্চদের বিরোধিতার কারণে প্রথম দু’বার তাদের যোগ দেয়ার প্রচেষ্টা সফল হয়নি৷ পরে অবশ্য প্যারিস তাদের আপত্তি তুলে নেয় এবং আয়ারল্যান্ড ও ডেনমার্কের সঙ্গে ১৯৭৩ সালে ইসি-তে যোগ দেয় যুক্তরাজ্য৷ তবে সেজন্য ১৯৭৫ সালে নিজ দেশে একটি গণভোটেরও আয়োজন করতে হয় ব্রিটিশদের, যেখানে সিংহভাগ মানুষ এর পক্ষে ভোট দেয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Lipchitz
১৯৮১: গ্রিস
ছয় বছর চেষ্টার পর ১৯৮১ সালে দশম সদস্য হিসেবে ইসি-তে যোগ দেয় গ্রিস৷ ১৯৭৪ সালে ভূমধ্যসাগরের দেশটিতে সামরিক স্বৈরশাসনের পতন ও গণতন্ত্রের পুনর্বহালের সময় চলমান টানাপোড়েন জোটে যোগ দেয়ার বিষয়টিকে বাধাগ্রস্ত করে৷ এমনকি এই অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল দেশটির জোটভুক্ত হওয়া নিয়ে মতভিন্নতা ছিল অন্য দেশগুলোর মধ্যে৷
ছবি: Getty Images/C. Furlong
১৯৮৬: স্পেন ও পর্তুগাল
পাঁচ বছর পর জোটভুক্ত হয় স্পেন ও পর্তুগাল৷ গ্রিসের মতো তারাও ছিল নতুন গণতন্ত্রের দেশ৷ স্পেনের স্বৈরশাসক ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কো মারা যান ১৯৭৫ সালে৷ সে বছর পর্তুগালেও স্বৈরশাসক সরকারের পতনের পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়৷
ছবি: picture-alliance/G. Silva
১৯৯৫: অস্ট্রিয়া, সুইডেন ও ফিনল্যান্ড
ইসি আজকের দিনের ইউরোপীয় ইউনিয়নে পরিণত হয় ১৯৯২ সালে মাস্ট্রিক্ট চুক্তি অনুযায়ী৷ ১৯৯৫ সালে নতুন রূপের এই জোটে যোগ দেয় অস্ট্রিয়া, সুইডেন ও ফিনল্যান্ড৷ শীতল যুদ্ধের সময় এই তিন দেশই নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে৷ ফলে নর্থ অ্যাটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন বা ন্যাটো জোটভুক্ত হয়নি তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/L. Bry
২০০৪: পূর্ব ইউরোপের দশ দেশ
২০০৪ সালের ১ মে ইইউ-তে সবচেয়ে বড় সম্প্রসারণের ঘটনা ঘটে৷ চেক রিপাবলিক, এস্তোনিয়া, সাইপ্রাস, লাটভিয়া, লিথুনিয়া, হাঙ্গেরি, মাল্টা, পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া ও স্লোভেনিয়া যুক্ত হয়৷ এই দেশগুলোর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অগ্রগতির জন্য এটি একটি বিরাট উদ্যোগ ছিল৷ দুই দশক আগেও এই দেশগুলোতে কমিউনিজম ছিল৷ সেখান থেকে বেরিয়ে এসে গণতন্ত্র ও পুঁজিবাদি রাষ্ট্র হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছে এই উদ্যোগ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
২০০৭: রোমানিয়া ও বুলগেরিয়া
২০০৪ সালেই রোমানিয়া ও বুলগেরিয়া জোটভুক্ত হতে চেয়েছিল৷ কিন্তু জোট থেকে দেশ দু’টির বিচার বিভাগ ও রাজনীতিতে যে সংস্কারের শর্ত দেয়া হয়েছিল, তা পূর্ণ করতে দেরি হওয়ায় তাদের জোটভুক্তির প্রক্রিয়াও দেরি হয়৷ এই ব্লকের সবচেয়ে গরিব ও দুর্নীতিপরায়ণ দেশ এরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Donev
২০১৩: ক্রোয়েশিয়া
সবশেষ জোটভুক্ত দেশ ক্রোয়েশিয়া৷ স্লোভেনিয়ার পর রক্তক্ষয় করে যুগোস্লাভিয়া থেকে বেরিয়ে আসা দ্বিতীয় দেশ হিসেবে ইইউ-তে যোগ দেয় তারা৷ যুগোস্লাভিয়া থেকে বিচ্ছেদ হওয়া আরো দু’টি দেশ মন্টেনেগ্রো ও সার্বিয়া ২০১২ ও ২০১৪ সাল থেকে জোটে যোগ দেবার চেষ্টা করে যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/D. Puklavec
ভবিষ্যত: মেসিডোনিয়া ও আলবেনিয়া
২০১৮ সালের জুনে ইইউ সিদ্ধান্ত নেয় যে, আরো দু’টি বলকান দেশ, মেসিডোনিয়া ও আলবেনিয়াকে যুক্ত করার বিষয়ে কথাবার্তা শুরু করা যেতে পারে৷ তবে বসনিয়া-হ্যারৎসেগোভিনা ও কসভোর মতো অন্য যুগোস্লাভ দেশগুলোর বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷