হামাস-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যেই ওয়েস্ট ব্যাংক থেকে উৎখাত হতে হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের। দেওয়া হচ্ছে হুমকি।
বিজ্ঞাপন
হালিমা খালিল ওয়েস্ট ব্যাংকের খিরবেত সুসিয়া গ্রামে থাকেন। ডিডাব্লিউকে তিনি জানিয়েছেন, সম্প্রতি মধ্যরাতে তাদের বাড়িতে হামলা হয়। ওয়েস্ট ব্যাংকের ইসরায়েলি বাসিন্দারা তার বাড়িতে যায়, তার স্বামীকে মারধর করে। কয়েকদিনের মধ্যে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দেয়। এবং একইসঙ্গে বলে দেওয়া হয় বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার সময় নিজেদের হাতে বাড়িটি যেন ভেঙে দেওয়া হয়। এই পরিস্থিতির মধ্যে এখন তারা কোথায় যাবেন, জানেন না অসহায় হালিমা।
হামাসের সুড়ঙ্গে ইসরায়েলের আক্রমণ
ইসরায়েলের দাবি, উত্তর গাজার ভিতরে ঢুকে হামাস সুড়ঙ্গে আক্রমণ চালাচ্ছে তারা। হাজার হাজার ফিলিস্তিনি দক্ষিণে পালাচ্ছেন।
ছবি: Ammar Awad/REUTERS
পালাচ্ছে মানুষ
ইসরায়েলের সেনা দাবি করেছে, উত্তর গাজা থেকে অন্তত ৫০হাজার বেসামরিক মানুষ দক্ষিণ গাজার দিকে পালিয়েছে। ইসরায়েলের সেনা তাদের পালাতে সাহায্য করেছে। ফোন করে, লিফলেট দিয়ে তাদের শহর ছাড়তে বলা হয়েছে।
ছবি: Belal Khaled/AA/picture alliance
সুড়ঙ্গের সন্ধানে সেনা
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, উত্তর গাজায় শহরের ভিতরে ঢুকে পড়েছে ইসরায়েলের সেনা। হামাসের সুড়ঙ্গ খুঁজে বার করে আক্রমণ চালাচ্ছে তারা। তারা এমন জায়গায় পৌঁছে গেছে, হামাস যা কোনোদিন কল্পনাও করতে পারেনি।
ছবি: Israeli Defense Forces/Handout via REUTERS
রকেট প্রস্তুকারকের মৃত্যু
ইসরায়েল জানিয়েছে, হামাসের এক গুরুত্বপূর্ণ রকেট প্রস্তুতকারক ব্যক্তি ইসরায়েলের সেনার হাতে নিহত হয়েছেন।
ছবি: Abed Khaled/AP Photo/picture alliance
উত্তর গাজায় ক্ষমতা হারিয়েছে হামাস
ইসরায়েলের দাবি, উত্তর গাজায় হামাস তার ক্ষমতা হারিয়েছে। এখনো দক্ষিণ গাজায় তারা লড়াই চালাচ্ছে। এবং সে কারণেই হাজার হাজার মানুষ উত্তর থেকে দক্ষিণের দিকে চলে যাচ্ছে। উত্তরের দখল কার্যত এখন ইসরায়েলের সেনার হাতে।
ছবি: Israel Defense Forces/Handout via REUTERS
১৩০টি সুড়ঙ্গ ধ্বংস
ইসরায়েলের সেনার দাবি, তারা উত্তর গাজায় হামাসের ১৩০টি সুড়ঙ্গ ধ্বংস করেছে। সুড়ঙ্গ অর্থাৎ, মাটির নিচে বাংকার। ইসরায়েলের দাবি, বেসামরিক বাড়ি, হাসপাতালের নিচে বাংকার বানিয়ে হামাস নিজেদের 'সন্ত্রাসী' কাজকর্ম চালাতো। সে কারণেই হামাসকে আক্রমণের সময় বহু বেসামরিক ভবনে আক্রমণ চালাতে হচ্ছে।
ছবি: Bashar Taleb/APA Images via ZUMA Press/picture alliance
বাংকারের কাঠামো
ইসরায়েলের দাবি, বাংকার গুলি ২ মিটার উঁচু এবং এক মিটার চওড়া। তার ভিতর জলের লাইন, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা সবই করা আছে। ফলে চাইলে মানুষ সেখানে টানা কিছুদিন থাকতে পারে।
ছবি: Bashar Taleb/APA Images via ZUMA Press/picture alliance
জি-৭ এর আবেদন
জি-৭ দেশগুলি ইসরায়েলের কাছে আবেদন জানিয়েছে সংঘাত-বিরতির জন্য। অ্যামেরিকার মতো তারাও বলেছে, যুদ্ধবিরতি না হোক, কৌশলগত বিরতি দিক ইসরায়েল। যাতে ওই সময়ে বেসামরিক মানুষ অন্তত ঘর থেকে পালাতে পারেন। ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা কৌশলগত বিরতি দিচ্ছে।
ছবি: Jack Guez/AFP
ইটালির হাসপাতাল জাহাজ
ইটালি গাজার কাছে সমুদ্রে একটি হাসপাতালের পরিকাঠামো যুক্ত জাহাজ পাঠিয়েছে। আহত বেসামিরক ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য ওই জাহাজ পাঠানো হয়েছে।
ছবি: AP
8 ছবি1 | 8
হালিমা একা নন, তাদের এলাকায় প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই একই ঘটনা ঘটেছে বলে সাংবাদিককে জানিয়েছেন তিনি। প্রায় প্রতিদিনই তাদের প্রাণে মারার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বাড়িতে লুঠপাট চলছে। বাড়িঘর ভাঙচুর হচ্ছে। অসহায় হয়ে তা দেখা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই এই মানুষগুলির। হালিমা জানিয়েছেন, তার বোনের স্বামীকেও একইভাবে মারধর করা হয়েছে। ভয়ে বমি করে ফেলেছে তাদের সন্তান।
এর আগেও এই গ্রামের মানুষদের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে। ইসরায়েলিরা তাদের উঠে যেতে বলেছে। কিন্তু গত ৭ অক্টোবর থেকে পরিস্থিতি দুঃসহ হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন গ্রামের মানুষ। বস্তুত ওই দিনই ইসরায়েলে হামাস আক্রমণ চালায়। প্রায় ১২০০ মানুষের মৃত্যু হয়। ২৩৯জনকে পণবন্দি করে নিয়ে যায় হামাস। ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে সরাসরি সংঘাতে নামে। তারপর থেকেই ওয়েস্ট ব্যাংকের পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হতে শুরু করেছে। সেখানে ফিলিস্তিনিদের উপর অত্যাচার বেড়েছে বলে অভিযোগ। প্রায় প্রতিদিনই হুমকির মুখোমুখি হতে হচ্ছে হালিমাদের।
গাজায় যে পরিমাণ মানবিক সহায়তা যাচ্ছে
গত সপ্তাহান্তে রাফা সীমান্ত দিয়ে গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানো শুরু হয়েছে৷ এখন পর্যন্ত কী পরিমাণ সহায়তা পাঠানো হয়েছে সেখানকার বাসিন্দাদের?
ছবি: Ahmed Gomaa/Xinhua/IMAGO
কত ট্রাক সহায়তা?
সপ্তাহান্তে সীমান্ত খুলে দেওয়ার পর গাজায় শনিবার ২০ ট্রাক এবং রোববার ১৪ ট্রাক মিলিয়ে মোট ৩৪ ট্রাক সহায়তা পাঠানো হয়৷ সোমবার আরো ৪০টি ট্রাকে সহায়তা পাঠানোর খবর পাওয়া যায়৷ এরপর আর কোনো সহায়তার ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে কি না সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি৷
ছবি: Ahmed Gomaa/Xinhua/IMAGO
কী সহায়তা দেওয়া হচ্ছে?
জানা গেছে ট্রাকে করে খাবার পানি, ওষুধ, খাবার এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠানোর অনুমতি দিয়েছে ইসরায়েল৷ প্রবেশ পথে ট্রাকগুলোকে যাচাই-বাছাই করছে ইসরায়েলের নিরাপত্তারক্ষীরা৷ সহায়তার নামে যেন কোনো অস্ত্র প্রবেশ করতে না পারে সেজন্যই ট্রাকগুলোতে তল্লাশি চালায় ইসারায়েলি কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: Ahmed Gomaa/Xinhua/IMAGO
কী দরকার গাজাবাসীর?
দাতা সংস্থাগুলো বলছে, গাজার সাধারণ মানুষের নিত্য চাহিদা মেটাতে দিনে অন্তত একশ ট্রাক সহায়তা প্রয়োজন৷ খাবার, ওষুধ ছাড়াও জ্বালানি সহযোগিতা দেওয়ার আহ্বান ত্রাণ সরবরাহকারী সংস্থাগুলোর৷ গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় পানির সংকট তৈরি হচ্ছে৷ তাছাড়া হাসপাতালগুলোকে চালু রাখতে প্রয়োজন জ্বালানি৷
ছবি: Hatem Ali/AP/picture alliance
জ্বালানি সরবরাহ করা হচ্ছে?
বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, জ্বালানি নিয়ে ৬টি ট্যাংকার রাফাহ ক্রসিং অতিক্রম করেছে যদিও স্বতন্ত্র সূত্র থেকে এটি নিশ্চিত করা যায়নি৷ তবে ফিলিস্তিনের একজন মুখপাত্র বিষয়টি নিশ্চিত করলেও ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল এমন তথ্যের কথা অস্বীকার করেছে৷ এদিকে, ফিলিস্তিনের বেসামরিক বিষয়ক ইসরায়েলের ডিফেন্স বডির পক্ষ থেকে বলা হয়, জাতিসংঘের একটি তেলের ডিপো থেকে হাসপাতালে জ্বালানি সরবরাহ করা হয়েছে৷
ছবি: Mohammed Abed/AFP/Getty Images
অপেক্ষমাণ সহায়তা
সীমান্ত খুলে দেওয়ার পর থেকে গাজায় প্রবেশের লক্ষ্যে কয়েক দিন ধরে সহায়তার ট্রাক অপেক্ষমাণ রয়েছে৷ জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থা জানায়, গাজা সীমান্তে সংস্থাটির এক হাজার টন খাদ্য সরবরাহের অপেক্ষায় রয়েছে৷
ছবি: Ibraheem Abu Mustafa/REUTERS
সহায়তায় কোন কোন দেশ
ফিলিস্তিনীদের সহায়তায় এরইমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মিশরে সহায়তা পাঠিয়েছে৷ এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, রাশিয়া, তুরস্ক এবং রুয়ান্ডাসহ বেশ কয়েকটি আরব দেশ৷
ছবি: Mohammed Asad/AP Photo/picture alliance
জার্মানির অর্থ সহায়তা বৃদ্ধি
গাজার বসবাসরত সাধারণ মানুষের জন্য ৫০ মিলিয়ন ইউরোর বাড়তি সহায়তা ঘোষণা করেছে জার্মানি৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক বৃহস্পতিবার এই ঘোষণা দেন৷ জার্মানির এই সহয়তা জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর কার্যক্রমে সহায়ক হবে বলে মন্তব্য বেয়াবকের৷
ছবি: Annette Riedl/dpa/picture alliance
7 ছবি1 | 7
রিপোর্ট বলছে, গত দেড় মাসে ১৬৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন ওয়েস্ট ব্যাংকে। ইসরায়েলি ফোর্স এসে তাদের হত্যা করেছে বলে অভিযোগ। আট জনের মৃত্যু হয়েছে স্থানীয় ইসরায়েলি বাসিন্দাদের মারধরে।
জাতিসংঘের দেওয়া তথ্য বলছে, ১৫টি বেদুইন এবং চাষাবাদের সঙ্গে যুক্ত গোষ্ঠীর অন্তত এক হাজার ১৪৯ জনকে ঘর ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। নিজেদের হাতে গবাদি পশু হত্যা করতে হয়েছে। ভেঙে দিতে হয়েছে বাড়ি। স্থানীয় ইসরায়েলি বাসিন্দারা একাজ করতে বাধ্য করেছে তাদের।
স্থানীয় ইসরায়েলি বাসিন্দারা ফোর্স নিয়ে এসে অত্যাচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ। তারা সঙ্গে করে বুলডোজার নিয়ে আসছে। ভেঙে দেওয়া হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের বাড়ি। এই পরিস্থিতিতে ওয়েস্ট ব্যাংকের ফিলিস্তিনিরা কোথায় যাবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে বিভিন্ন মহলে।