ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের বেশ কিছু বসবাসকারীকে সরিয়ে দিল ইসরায়েল। সেখানে সেনা ছাউনি তৈরি হবে।
বিজ্ঞাপন
ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক থেকে একাধিক ইহুদি পরিবারকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিল ইসরায়েল সরকার। ওই জায়গায় সেনা ছাউনি তৈরি হবে বলে জানানো হয়েছে। ফিলিস্তিনিদের বক্তব্য, ওই জমি তাদের। সেনার বদলে তাদের ওই জমি প্রাপ্য ছিল।
বেশ কিছু পরিবার ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের একটি অংশে বেশ কয়েক মাস ধরে তাদের আশ্রয় গড়ে তুলছিল। ধীরে ধীরে গড়ে উঠছিল ছাউনি। বৃহস্পতিবার ওই ইহুদি পরিবারগুলিকে নোটিস দেয় ইসরায়েল সরকার। বলা হয়, শুক্রবার বিকেল ৪টের মধ্যে তাদের ওই জমি ছেড়ে দিতে হবে। নইলে সেনা গিয়ে তাদের তুলে দেবে। ওই জমিতে বসবাসকারীদের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়েছে সরকারের। পরবর্তীকালে সেনা মনে করলে তাদের কেউ কেউ আবার ফিরে যেতে পারবে সেখানে। কিন্তু আপাতত তাদের সরে যেতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ওই জায়গাটি স্ট্র্যাটেজিক। ফলে সেনা সেখানে ছাউনি গড়ে তুলবে। তৈরি হবে পোস্ট। ওই জমির পাশেই ফিলিস্তিনিরা বাস করেন। দীর্ঘদিন ধরেই ওই জমি নিজেদের বলে দাবি করেন তারা। সেনাকে লক্ষ্য করে পাথরও ছুড়েছেন তারা। সেনাও পাল্টা কাঁদানে গ্যাস এবং গুলি ছুড়েছে। তাতে চারজনের মৃত্যু হয়েছে বলেও ফিলিস্তিনের দাবি।
গাজায় ৩৯ হাজার ঘর তৈরিতে ইসরায়েলের বাধা
গত মে মাসে ইসরায়েলের হামলায় তাদের কারো ঘর মাটিতে মিশে গেছে, কারো ঘর আছে কিন্তু তাতে বাস করার অবস্থা নেই৷ ইসরায়েলের কারণে ঘরগুলো গড়ে তোলা যাচ্ছে না৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: MOHAMMED SALEM/REUTERS
৩৯ হাজার ঘর!
গাজার সরকারের হিসেব অনুযায়ী, ১১ দিনের যুদ্ধে ইসরায়েলের হামলায় ২২০০ ঘর পুরোপুরি ধংস হয়েছে আর ৩৭ হাজার ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷
ছবি: MOHAMMED SALEM/REUTERS
দরকার ৫০০ মিলিয়ন ডলার
গত ২১ মে মূলত মিশর ও কাতারের সধ্যস্থতায় যুদ্ধ থামাতে রাজি হয় ইসরায়েল ও হামাস৷ যুদ্ধবিরতির আলোচনার সময় মধ্যস্থতাকারী দুই দেশ গাজায় ধংস ও ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর এবং রাস্তাঘাট নির্মাণে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের অর্থ সহায়তার প্রস্তাব রাখে৷
ছবি: MOHAMMED SALEM/REUTERS
গাজায় ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে গাজা সীমান্ত ইসরায়েল ও মিশরের কঠোর নজরদারিতে৷ সীমান্ত দিয়ে হামাসের কাছে যাতে অস্ত্র বা অস্ত্র তৈরির রসদ যেতে না পারে- তা নিশ্চিত করার স্বার্থে এমন নিয়ন্ত্রণ আরোপ জরুরি বলে মনে করে ইসরায়েল ও মিশর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Hollander
পণ্য প্রবেশে বাধা
১১ দিনের যুদ্ধ চলার সময় সীমান্ত দিয়ে গাজায় পণ্য প্রবেশ বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল৷ সেই নিষেধাজ্ঞা ধীরে ধীরে শিথিল করা হচ্ছে৷ সোমবার থেকে গাজায় জ্বালানি প্রবেশের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে৷ তবে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং বোতলজাত পণ্যের কারখানার জন্য অপরিহার্য সিরাপ প্রবেশ করতে না দেয়ায় গাজায় ৬০ বছর ধরে চলে আসা পেপসি কারখানা সম্প্রতি বন্ধ হয়ে গেছে৷
ছবি: Mohammed Salem/REUTERS
হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের অভিযোগ ও সন্দেহ
হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের বরাবরের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, ক্যানাডা, জাপান, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত সংগঠনটি সবসময় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে মদত দেয়৷ গাজাবাসীর জন্য অর্থ সংগ্রহ করে সেই অর্থের সিংহভাগ অস্ত্র কেনায় ব্যয় করে বলেও তাদের অভিযোগ৷ ইসরায়েলের সন্দেহ ঘর-বাড়ি নির্মাণের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার পেলেও তার সামান্যই এ কাজে ব্যয় করা হবে৷
ছবি: Mohammed Salem/REUTERS
হামাসের অস্বীকার
অন্যদিকে একক রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলকে অস্বীকার করে আসা হামাস বরাবরই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে৷ ওপরের ছবিতে জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলে আশ্রয় নেয়া কয়েকজন গৃহহীন গাজাবাসী৷
ছবি: MOHAMMED SALEM/REUTERS
ইসরায়েলের নতুন শর্ত
গাজার ২০ লাখ অধিবাসীর দুই-তৃতীয়াংশের জীবনই অর্থ সহায়তা-নির্ভর৷ ঘর হারানোদের জীবন তাই এখন মহাসংকটে৷ কেউ কেউ ওপরের এই ছবির মতো জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুল বা অন্য কোনো ভবনে থাকছেন৷ অনেকের মাথার ওপরে শুধুই খোলা আকাশ৷ কিন্তু অর্থসহায়তার প্রশ্নে ইসরায়েল বলছে, ২০১৪ সালের যুদ্ধের সময় নিখোঁজ দুই সেনাসদস্য এবং দুজন বেসামরিক নাগরিক, অর্থাৎ চারজন ইসরায়েলিকে ফিরিয়ে দিলেই কেবল অর্থ সহায়তা দেয়া হবে৷
ছবি: MOHAMMED SALEM/REUTERS
শর্ত মানা কি সম্ভব?
গাজাবাসীরা কি খুব তাড়াতাড়ি আবার মাথা গোঁজার ঠাঁই ফিরে পাবেন? দৃশ্যত তা অসম্ভব, কারণ, যে দু’জন সৈন্যকে ফেরত চাওয়া হচ্ছে তাদের ইসরায়েলও ইতিপূর্বে ‘মৃত’ ঘোষণা করেছে৷ তাছাড়া হামাস মনে করে, ইসরায়েল আটক ফিলিস্তিনীদের ফিরিয়ে দিলেই কেবল ইসরায়েলিদের ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব৷ অথচ ইসরায়েলের নতুন প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট ইতিমধ্যে কারাবন্দি ‘ফিলিস্তিনি জঙ্গিদের’ ফিরিয়ে দেয়ার বিরুদ্ধে তার অবস্থান স্পষ্ট করেছেন৷
ছবি: MOHAMMED SALEM/REUTERS
ইসরায়েলের পাশে বাইডেন
অর্থ নিয়ে হামাস তা যেন অস্ত্র ক্রয়ে ব্যয় না করে তা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও নিশ্চিত করতে চান৷ তাই গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ঘর-বাড়ি গড়ে তোলার বিষয়টি চূড়ান্ত করার কাজে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের অংশগ্রহণ দাবি করেছে বাইডেন প্রশাসন৷ কিন্তু ২০০৭ সালের গৃহযুদ্ধে হামাসের কাছে হেরে যাওয়ার পর থেকে মাহমুদ আব্বাসকে কখনো গাজার বিষয়ে আগ্রহ দেখাতে দেখা যায়নি৷
ছবি: Doug Mills/New York Times/Getty Images
9 ছবি1 | 9
বিতর্কিত চুক্তি কেন
এর আগে ফিলিস্তিনিদের জমি থেকে উচ্ছেদ করলেও ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক থেকে ইহুদিদের কখনো উচ্ছেদ করেনি ইসরায়েল। সম্প্রতি ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রীর বদল হয়েছে। নতুন প্রধানমন্ত্রী বেনেট অতি দক্ষিণপন্থি বলে পরিচিত। আলাদা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অস্তিত্বই তিনি স্বীকার করেন না। এ বিষয়ে আগে বহু বক্তৃতা করেছেন তিনি। তবে যে সরকার তিনি গড়েছেন, সেখানে বামপন্থি, ইসলামপন্থি সবরকম দলই আছে। ফলে বেনেটকেও খানিকটা মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই পরিস্থিতির মধ্যেই নতুন চুক্তিটি সামনে আনা হয়। যেখানে ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক থেকে ইসরায়েলিদের উচ্ছেদের নোটিস দেওয়া হয়েছে।
চুক্তিতে অবশ্য বলা হয়েছে, প্রাথমিক ভাবে সেখানে সেনা ছাউনি গড়বে। পরবর্তীকালে সব ঠিক থাকলে কিছু পরিবারকে সেখানে ফের বসবাস করার সুযোগ দেওয়া হবে।
ফিলিস্তিনের প্রতিক্রিয়া
স্বাভাবিক ভাবেই ফিলিস্তিন এই চুক্তিতে খুশি নয়। তাদের বক্তব্য, চুক্তি হয়েছে ইসরায়েলের মানুষের সঙ্গে সেনার। ফিলিস্তিনিদের কথা ভাবা হয়নি। ওই জমি তাদের বলে দাবি করছেন ফিলিস্তিনিরা। ইসরায়েলের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য দাবি করেছেন, এটি একটি ঐতিহাসিক চুক্তি।
বস্তুত, ১৯৬৭ সালে ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের দখল নেয় ইসরায়েল। তার আগে সেখানে ফিলিস্তিনিরা থাকতেন। ইসরায়েল তারপর থেকে ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক নিজেদের বলে দাবি করে। ফিলিস্তিন তা মেনে নেয় না। বস্তুত, দুই তরফই মনে করে, ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক একটি স্ট্র্যাটেজিক অঞ্চল।