কার্বনের জাল যোগ করে কংক্রিটের আরও একটি স্তরের মধ্যে তা বসানো হয়৷ সবশেষে চূড়ান্ত টেক্সটাইল কংক্রিট ২৪ ঘণ্টা ধরে শক্ত করা হয়৷ সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে প্রো. মানফ্রেড কুয়রবাখ বলেন,‘‘হালকা কাঠামোর কারণে কম উপকরণ লাগে৷ জ্বালানিও কম পোড়ে৷ সিমেন্ট তৈরির সময় কম কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন হয়৷''
টেক্সটাইল কংক্রিট কত চাপ নিতে পারে, এবার তার প্রমাণ দেবার সময় এসেছে৷ যে সব প্রকল্পে টেক্সটাইল কংক্রিট ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলির সার্ভে-র দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও স্থপতিরা এই প্রযুক্তি সম্পর্কে আরও জানতে গবেষণাগারে ক্র্যাশ টেস্ট-এর ফলাফল কাজে লাগাতে পারেন৷
বিজ্ঞানীরা টেক্সটাইল কংক্রিট দিয়ে তৈরি একটি গার্ডারের উপর চাপ সৃষ্টি করে ভাঙার ঠিক আগের অবস্থা পর্যন্ত নিয়ে যেতে চান৷ চাপ ক্রমেই বাড়িয়ে দেওয়া হয়৷ চিড় ধরতে শুরু করে৷ কিন্তু ভেতরের কার্বন উপকরণ প্রবল চাপ সহ্য করার ক্ষমতা রাখে৷ পরীক্ষায় দেখা গেল, যে টেক্সটাইল কংক্রিট প্রচলিত রিইনফোর্সড কংক্রিটের তুলনায় ৬ গুণ বেশি মজবুত৷
‘গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ড ফর সাসটেনেবল আর্কিটেকচার’ পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে ২০০৭ সাল থেকে৷ পুরস্কার দেওয়া হয় তেমন স্থপতিদের যারা মানুষ ও পরিবেশের কথা স্মরণে রেখে বাড়ি ডিজাইন করেন৷
ছবি: Andrea Vargasনেদারল্যান্ডসের স্থপতি আনে ফেন্স্ট্রা মনে করেন, যাদের জন্য বাড়ি তৈরি করা হচ্ছে, তাদের কথা ভোলা উচিৎ নয়৷ আফগানিস্তান ও ভারতে তিনি যেসব প্রকল্পে কাজ করেছেন, সেগুলোর উদ্দেশ্য ছিল স্থানীয় বাসিন্দাদের উপকার করা৷ আফগানিস্তানের বামিয়ান প্রদেশে ফেন্স্ট্রার সৃষ্ট এই প্যাভিলিয়নটিকে তাঁর ‘স্লো আর্কিটেকচার’-এর নমুনা হিসেবে ধরা যেতে পারে৷ তিনি স্থানীয়, এমনকি অদক্ষ শ্রমিক নিয়েও কাজ করে থাকেন৷
ছবি: Anne Feenstraইরাকি স্থপতি সালমা সামার দামলুজি-র জন্ম বৈরুতে৷ তিনি নতুন বাড়ি তৈরি করেন না, বরং সেই সব প্রাচীন স্থানগুলির সংস্কার করেন, উগ্রপন্থীরা যেগুলি ধ্বংস করার হুমকি দিয়েছে৷ যেমন ইয়েমেনের ওয়াদি দাও’য়ান৷ সালমা সামার দামলুজি যে কোম্পানির হয়ে কাজ করেন, তারা মধ্যপ্রাচ্যের সাংস্কৃতিক সম্পদ রক্ষা করতে আগ্রহী৷
ছবি: Salma Samar Damlujiযে উপকূলীয় অঞ্চল জলবায়ু পরিবর্তন ও সাগরের পানির উচ্চতা বাড়ার কারণে বিপন্ন, সেখানে কী ধরনের বাড়ি তৈরি করা উচিৎ? জার্মান স্থপতি ব্যার্ন্ড গুন্ডারমান নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে ঠিক সেই সমস্যার সমাধান খুঁজছেন৷ শহরটাকে বন্যা থেকে বাঁচাতে হবে, আবার সাগরের সঙ্গে সংযোগও বজায় রাখতে হবে৷
ছবি: Urbia Groupথাই স্থপতি সুরিয়া উম্পানসিরিরতন বৌদ্ধ মন্দির ও মঠ নিখর্চায় ডিজাইন করে দেন৷ তাঁর স্থাপত্যে যেন বৌদ্ধ ভিক্ষুদের জীবনধারার প্রতিফলন ঘটেছে, ধ্যান ও প্রার্থনা, কর্ম বা খাদ্যগ্রহণ, সব কিছু ধর্মচক্রের মতো ঘুরে চলেছে...৷
ছবি: Dechophon Rattanasatchathamস্পেনের সান্তিয়াগো চিরুগেদা নিজেকে একজন বিদ্রোহী গেরিলা মনে করেন৷ তিনি আর্বান হাউজিং প্রত্যাখ্যান করে নাগরিকদের নিজস্ব উদ্যোগের উপর নির্ভর করেন৷ তাঁর কর্মযজ্ঞের কেন্দ্র হলো সেভিইয়া৷ শহরের লা কার্পা চত্বরে চিরুগেদা একটি ‘মাকড়শা’ সৃষ্টি করেছেন, যার শরীর একটি কনটেইনার ও পাগুলো স্টিলের প্লেট দিয়ে তৈরি৷
ছবি: Recetas Urbanasইকুয়েডরের আল বর্দে সংস্থার স্থপতিরা তাঁদের বিভিন্ন প্রকল্পে স্থানীয় মানুষদের নেয়ার চেষ্টা করেন৷ বাসিন্দাদের সহযোগিতায় তাঁরা অনেক সরকারি ভবন সৃষ্টি করেছেন, যেমন মানাবি প্রদেশের ‘এসপারান্সা দস’, যা কিনা একটি স্কুল৷ স্থানীয় ধীবররা বহুকাল ধরে এভাবে ডালপালা আর বাঁশের কঞ্চি মিলিয়ে তাদের বাড়িঘর তৈরি করে আসছেন৷
ছবি: Andrea Vargas তবে নতুন এই উপকরণের এত গুণ থাকা সত্ত্বেও সেটি কিন্তু ধ্বংস করা সম্ভব৷ প্রো. কুয়রবাখ বলেন, ‘‘আমরা যখন টেক্সটাইল কংক্রিট দিয়ে প্রথম সেতু তৈরি করতে চেয়েছিলাম, তখন তার দুটি সংস্করণ তৈরি করতে হয়েছিল৷ ল্যাবে একটি সেতুর উপর যতটা সম্ভব ভার চাপানো হয়েছিল, যাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তার সহনশীলতা মাপতে পারে৷ এটাই সেই সংস্করণ৷ এখনো চিড় দেখা যাচ্ছে, কোনোরকমে মেরামতি করে দেখানো হচ্ছে৷''
সেতুর অন্য সংস্করণটি দেখিয়ে দিয়েছে, সেটি কতটা মজবুত৷ ল্যাবে ও হাতেনাতে বিভিন্ন পরীক্ষা থেকে পাওয়া জ্ঞানের ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা আরও নির্মাণের পরিকল্পনা করছেন৷
টেক্সটাইল কংক্রিট দৈনন্দিন বস্তু তৈরির ক্ষেত্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় উদ্বুদ্ধ করে৷ ড্রেসডেন ক্যাম্পাসের ছাত্র-ছাত্রীরা বিশেষভাবে ডিজাইন করা আসবাবপত্রে আরাম করে বসতে পারে৷ প্রো. কুয়রবাখ বলেন, ‘‘আসলে ঘরের মধ্যে কংক্রিটের ব্যবহার সহজে আশা করা যায় না৷ এটা বিস্ময়কর নয়, কারণ কংক্রিট হয় মোটা, বড়সড় ও ভারি৷ ফলে বসার ঘরে এমন উপকরণ কেউ চায় না৷ কিন্তু কার্বন ব্যবহার করলে অত্যন্ত পাতলা করে তৈরি করা যায়৷ ছোট, পাতলা অংশ তৈরি করে তা দিয়ে চেয়ার, টেবিল অথবা সোফা তৈরি করা যায়৷''
টেক্সটাইল কংক্রিট ইঞ্জিনিয়ার ও ডিজাইনারদের সামনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে৷ কে জানে, ভবিষ্যতে এমন পাতলা ও মজবুত টেক্সটাইল কংক্রিট দিয়ে কী তৈরি হবে?
জার্মানিতেই তৈরি হয়েছে এমন এক বাড়ি যা পুরোপুরি উল্টো৷ বাড়ির ছাদ নীচে আর টেলিভিশন, ফ্রিজ, আসবাবপত্র সব ওপরে! চলুন ঘুরে দেখি আজব সেই বাড়ি৷
ছবি: picture-alliance/ZB/Sauer২০০৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর জার্মানির মেকলেনবুর্গ ফোয়রপমার্ন রাজ্যের ট্রাসেনহাইডে-তে নির্মাণ করা হয় অদ্ভুত এই বাড়ি৷ জার্মান ভাষায় বাড়িটির নাম, ‘ডি ভেল্ট শ্টেট কপ্ফ’, অর্থাৎ ‘পৃথিবীটা মাথার ওপরে দাঁড়িয়ে’৷ সত্যিই তাই৷ বাংলায় ‘হেঁট মুণ্ডু ঊর্ধ্ব পদ’ বলে একটা কথা আছে, ঠিক সেভাবে এ বাড়ির ছাদটা নীচে, আর নীচে থাকার জিনিসগুলো সব ওপরে৷ পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ হয়ে উঠেছে এই বাড়ি৷
ছবি: picture-alliance/ZB/Löselবাড়িটির নকশা করেছেন দুই পোলিশ স্থপতি ক্লাউডিউসৎজ গোলোস এবং সেবাস্টিয়ান মিকিচিউক৷ কেমন করে উল্টো করে সব তৈরি বা স্থাপন করা হলো? সবই স্ক্রু আর আঠার জাদু৷ ঘরের আসবাবপত্র, টেলিভিশন থেকে শুরু করে সাধারণত মেঝেতে বা ছাদের নীচে থাকে এমন সব জিনিস ওপরে লাগানো হয়েছে শুধু স্ক্রু আর আঠা দিয়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Büttnerদর্শনার্থীরা গিয়ে অবাক হয়ে দেখেন সবকিছু৷ ছবিতে দেখুন, এক দর্শনার্থীর চোখের সামনে উল্টো হয়ে ঝুলছে একটা গাছের টব৷ অবাক তো লাগবেই!
ছবি: picture-alliance/dpa/Büttnerউল্টো বাড়ি হলেও বাড়ির একটা জিনিস অন্তত ঠিক আছে৷ কী সেটা, জানেন? সিঁড়ি৷ সিঁড়িও যদি ওপরের দিকে থাকতো তাহলে দর্শনার্থীদের কী বিপদটাই না হতো!
ছবি: picture-alliance/ZB/Sauerঘরের সব আসবাবপত্রের চাপটা পড়ে ছাদের ওপর৷ এমন বাড়ির কাঠামোটা একটু বেশি শক্ত না হলে কি চলে? সে কথা ভেবেই ইট-শুঁড়কির জায়গায় স্টিল ব্যবহার করে নির্মাণ করা হয়েছে ‘ডি ভেল্ট শ্টেট কপ্ফ’, নির্মাণকাজে ব্যয় হয়েছে ৩ লক্ষ ইউরো!
ছবি: picture-alliance/ZB/Sauer