1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কংগ্রেসের শীর্ষ পদে রাহুল গান্ধী?

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
১৭ অক্টোবর ২০১৭

সোনিয়া গান্ধীর পর রাহুল গান্ধী জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি হবেন কিনা – তা নিয়ে দীর্ঘদিন জল্পনা চলছিল৷ তবে শুক্রবার সোনিয়া গান্ধী একরকম সরাসরিই জানিয়ে দিলেন দলের পরবর্তী সভাপতি তাঁর ছেলেই হবেন, তা-ও এ মাসের শেষেই৷

Indien Wahlen
ছবি: DW/S. Wahhed

স্বাভাবিকভাবেই সোনিয়া তথা কংগ্রেসের এই সিদ্ধান্ত প্রশ্ন তুলেছে – আগামী সাধারণ নির্বাচনে রাহুল গান্ধী কি পারবেন দলকে টেনে তুলতে?

নেহেরু-গান্ধী পরিবারের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই জাতীয় কংগ্রেসের সর্বোচ্চ পদে বসতে চলেছেন দলের বর্তমান সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধী৷ দলের বর্তমান সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী স্বয়ং দীর্ঘদিনের নীরবতা ভেঙে সরাসরি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন সেকথা৷ বলেছেন, ‘‘অনেকদিন ধরেই আমার কাছে যেটা জানতে চাওয়া হচ্ছিল, এখন সেটাই হতে চলেছে৷ হ্যাঁ, আমার ছেলে রাহুলই ধরবে দলের হাল৷ সম্ভবত এই মাসের শেষ তাগাদ৷ কংগ্রেস সূত্রের খবর, দীপাবলির আগে কংগ্রেস কর্ম সমিতির বৈঠকে দলের সভাপতি হিসেবে রাহুলের নির্বাচনকে আনুষ্ঠানিকভাবে শিলমোহর দেওয়া হবে৷ ছয়টি রাজ্য ছাড়া সব রাজ্যগুলিতে কংগ্রেসের দলীয় নির্বাচন শেষ৷ একমাত্র প্রার্থী হিসেবে রাহুল গান্ধী সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত৷ কার্যত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি নির্বাচিত হতে চলেছেন, যেটা সোনিয়া গান্ধীর ক্ষেত্রে হয়নি৷ ২০০০ সালে দলের সভানেত্রী হিসেবে সোনিয়া গান্ধীকেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার সন্মুখীন হোতে হয়েছিল৷ দলে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন প্রয়াত জীতেন্দ্র প্রসাদ৷ সোনিয়া গান্ধী দলের ক্ষমতা তুলে দেবেন রাহুলের হাতে এ মাসের শেষে৷ নিজে দলের কোনো পদে থাকবেন না৷ থাকবেন শুধু সংযুক্ত দলীয় জোট ইউপিএর চেয়ারপার্সন হিসেবে৷ দলীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, সাংগঠনিক নির্বাচন, মনোনয়নপত্র দাখিল, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার এবং ভোটের তারিখ সম্ভবত ২৫শে অক্টোবর৷

উদয়ন বন্দোপাধ্যায়

This browser does not support the audio element.

রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, বর্তমানে জাতীয় কংগ্রেসের যে দূরবস্থা তাতেরাহুল গান্ধী কি কংগ্রেসকে সর্বভারতীয় ভিত্তিতে আবার চাঙা করে তুলতে পারবেন? রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বা বিচক্ষণতার দিক থেকে কতটা যোগ্য তিনি? তিনি কি পারবেন ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেসকে আবারো ক্ষমতায় আনতে? বলা বাহুল্য, এই নিয়ে আছে বিস্তর মতান্তর৷ গত সংসদীয় নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে তিনি আদৌ মাথা তুলতে পারেননি৷ তাঁর বিরুদ্ধবাদীদের অনেকের কাছ থেকে তাঁকে ঠাট্টাচ্ছলে পাপ্পু নাম শুনতে হয়৷ এমনকি উত্তর প্রদেশের আমেথি কেন্দ্র থেকে জিতে আসার পর সংসদে নিজের ভাষণশৈলি দিয়ে দাগ কাটতে ব্যর্থ হয়েছেন৷ দু-একবার কলাবতী নামের দলিত মহিলাকে নিয়ে আবেগঘন কাহিনি তোলার চেষ্টা করেছেন মাত্র৷ মোদী সরকারকে কোনো ইস্যুতেই কোণঠাসা করতে পারেননি৷ দলের চিন্তন বৈঠকেও তিনি ছিলেন অনুপস্থিত৷ তবে দলের সহ-সভাপতি হিসেবে রাহুল গান্ধী দু-একটি  মুখরোচক শব্দবন্ধ দিয়ে মাঝে মধ্যে মোদী সরকারকে ঘায়েল করার চেষ্টা করেছেন৷ যেমন মোদীর সরকারকে কটাক্ষ করেছিলেন তিনি স্যুট-বুট সরকার বলে৷ আবার অতি সম্প্রতি ১০ দিনের যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে সেখানকার প্রবাসী ভারতীয় এবং মার্কিন প্রশাসনের রাজনৈতিক মহলের কাছে রাহুল গান্ধী তুলে ধরেন মোদী সরকার ধর্মীয় মেরুকরণ, সাম্প্রদায়িক বিভাজন, বিপজ্জনক অসহিষ্ণুতার দিকগুলি৷

 কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে রাহুল গান্ধী কি২০১৯ সালের নির্বাচনে দলকে ক্ষমতায় আনতে সক্ষম হবেন? এই প্রশ্নের উত্তরে রাষ্ট্র বিজ্ঞানি উদয়ন বন্দোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, তাঁর মতে দলকে চাঙা করতে পারতেন, যদি বিভিন্ন রাজ্যের কংগ্রেস সংগঠনগুলি মজবুত হতো৷ যেটা এখন অতটা নয়৷ হালে অবশ্য পাঞ্জাবের গুরদাসপুর সংসদীয় উপনির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থীর জয়লাভকে বেশ বড় কোরে দেখানো হচ্ছে৷ তবে কিছু তরুণ কংগ্রেস নেতা আছেন, যাঁরা দলকে মজবুত করতে চেষ্টা করছেন৷ যেমন রাজস্থানের শচিন পাইলট, মধ্যপ্রদেশের জ্যোতিরিন্দ্র সিন্ধিয়া প্রমুখ৷ এঁরা সবাই রাহুলের হাত শক্ত করতে পারেন৷ এগুলো পজিটিভ ফ্যাক্টর৷ মোদ্দা কথা হচ্ছে, রাহুল গান্ধী হয়ত একনিষ্ঠ রাজনীতিক নন৷ মাঝে মাঝে থাকেন, মাঝে মাঝে গায়েব হোয়ে যান৷ উনি অনেক কথাই বলেন বটে, কিন্তু তার বাস্তবায়নের সঠিক পরিকল্পনা নেই৷ বড় মাপের সংগঠন পরিচালনার কর্মকুশলতা তেমন দড় নন৷

পারিবারিক কারণে দলের সভাপতি হওয়াটা অস্বীকার না করেও বলা যায় যে, এটাকে বড় করে দেখা ঠিক নয়৷ এই উপ-মহাদেশে বহু দেশেই পারিবারিক শিকড়কে ধরে অনেকেই ক্ষমতায় এসেছেন৷ যেমন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের মেয়ে হিসেবে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা অথবা মিয়ানমারে অং সান সু – দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র একটা সাধারণ বিষয়৷ তবে বিজেপিকে বেকায়দায় ফেলার যে সুযোগটা এসেছিল, রাহুল গান্ধী সেটাকে কাজে লাগাতে পারেননি৷ এই যেমন নোটবন্দি ইস্যুতে৷ ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, রাহুল গান্ধী এখনও মোদী-বিরোধী মুখ হয়ে উঠতে পারেননি৷ হ্যাঁ, কখনও হয়ত উনি আদিবাসী বাড়িতে গেছেন, কখনো গেছেন দলিত পরিবারে৷ এগুলো সব বিক্ষিপ্ত ঘটনা৷ কিন্তু একটা ‘কালেক্টিভ লিডারশিপ' গড়ে তুলতে পারেননি এখনও পর্যন্ত৷ এ সব কথাই ডয়চে ভেলেকে বললেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক উদয়ন বন্দোপাধ্যায়৷

আসল কথা, মোদী সরকারকে হটানোর জন্য দরকার সক্রিয় দলীয় সংগঠন, রাজনৈতিক বিচক্ষণতা এবং আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে মসৃণ জোটের রসায়ন৷ সেটা করতে না পারলে শুধু গালভরা কথা দিয়ে ২০১৯ সালের নির্বাচনে কংগ্রেসের ক্ষমতায় আসা সম্ভব নয়৷ সম্ভব নয় রাহুল গান্ধীর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্নপূরণ৷ পাশাপাশি, স্বাস্থ্যের কারণে সোনিয়া গান্ধীর পক্ষেও দলের হাল ধরে রাখা আর সম্ভব হচ্ছে না৷ আর কংগ্রেস যে কত দুর্বল হয়ে পড়েছে, ২০১৪ সালের সংসদীয় নির্বাচনি ফলাফলই তা বলে দিয়েছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ