ভাই রাহুল গান্ধী এবং মা সোনিয়া গান্ধীর সংসদীয় নির্বাচনি কেন্দ্রে কংগ্রেসের হয়ে ভোট প্রচারে নামতে বোধহয় দেরি করে ফেলেছেন প্রিয়াঙ্কা বাড্রা (গান্ধী)৷ কারণ গৃহবধু হয়ে রাজনীতির পাদপ্রদীপে আসতে বরাবরই অনিচ্ছুক ছিলেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
বিভিন্ন জনমত সমীক্ষায় যখন ধরা পড়লো কংগ্রেস পার্টি হালে পানি পাবে না, তখন নেহেরু-গান্ধী পরিবার তথা কংগ্রেস পার্টির হয়ে ভোট প্রচারে নামলেন৷ তবে অনেক দেরি করে ফেলেছেন রাজীব-সোনিয়া কন্যা প্রিয়াঙ্কা বাড্রা৷ আসলে গৃহবধু হিসেবে রাজনীতির পাদপ্রদীপে আসতে বরাবরই অনিচ্ছুক ছিলেন তিনি৷ কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচন তাঁর দাদা এবং কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধীর রাজনৈতিক জীবনের সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ৷ দাদার হাত শক্ত করতে রাহুলের কেন্দ্র আমেথি এবং সোনিয়া গান্ধীর নির্বাচনি কেন্দ্র রায়বেরিলিতে কংগ্রেসের নির্বাচনি প্রচারের হাল ধরেছেন প্রিয়াঙ্কা৷ বংশপরিচয়ে প্রিয়াঙ্কা ভারতের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য৷ দীর্ঘদিন ঐ দুটি কেন্দ্রে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে৷ সেখানকার ভোটাররা তাঁকে কাছের মানুষ বলে মনে করে৷ সেখানকার মানুষজনদের কংগ্রেসমুখী করতে সেটাকে কাজে লাগাতে অসুবিধা হবে না প্রিয়াঙ্কার৷ ঐ দুটি কেন্দ্রের ভোট ৩০শে এপ্রিল৷ যদিও ২০১২ সালে উত্তর প্রদেশ বিধানসভা ভোটে মোটেই সুবিধা করতে পারেনি কংগ্রেস৷
অন্যদিকে রাহুলের নির্বাচনি প্রচারে কোথায় যেন একটা সম্মোহনী শক্তির অভাব চোখে পড়ে৷ ভোটারদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত সাড়ার অভাব থেকে যায়৷ কারণ রাহুল চিরদিনই লাজুক ও মুখচোরা৷ রাজনীতির কলাকৌশল বা ছলাকলায় খুব একটা দড় নন৷ কিন্তু কথা হচ্ছে প্রিয়াঙ্কা বাড্রার রাজনৈতিক বিচক্ষণতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে রাজনৈতিক পণ্ডিতদের মধ্যে৷ তবু উত্তর প্রদেশের আমেথি বা রায়বেরিলির গ্রামগঞ্জের অল্পশিক্ষিত বা অশিক্ষিত ভোটারদের মনে একটা ভাবাবেগ কাজ করে, যেহেতু প্রিয়াঙ্কার মুখশ্রীর মধ্যে তাঁর ঠাকুমা ইন্দিরা গান্ধীর ছবি দেখতে পায়৷
কিন্তু তাতেও বাধ সেধেছে তাঁর স্বামী রবার্ট বাড্রার পদবিটা৷ সম্প্রতি জমি কেলেঙ্কারির অভিযোগে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে এখন তাঁর স্বামী রবার্ট বাড্রা৷ কংগ্রেস জমানায় দুর্নীতির তালিকায় নতুন সংযোজন সোনিয়া গান্ধীর জামাই তথা প্রিয়াঙ্কার স্বামী রবার্ট বাড্রা৷ সেটা নিয়ে একটা ভিডিও এবং পুস্তিকা প্রকাশ করেছে বিজেপি৷ তাতে রবার্টকে আসামির কাঠগোড়ায় দাঁড় করিয়ে বলা হয়েছে, এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করে সোনিয়ার জামাই বছর দেড়েকের মধ্যে দেশের আর্থিক মন্দা অবস্থাতেও কি করে ৩০০ কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হতে পারেন, যদি না এর পেছনে সরকারি মদত থাকে? এটা কি তাহলে উন্নয়নের ‘রবার্ট মডেল'? পাল্টা জবাব প্রিয়াঙ্কার ‘‘মোদী বা বিজেপি যা খুশি বলুক, আমি চুপ থাকবো না৷ আমার পরিবারের নামে এই ধরনের বদনাম মেনে নেব না, লড়াই করবো৷ বিজেপি এখন ভয় পাওয়া ইঁদুরের মতো ছোটাছুটি করছে৷''
ভারতের নির্বাচন ২০১৪
ভারতে একমাসেরও বেশি সময় ধরে নয় দফায় ভোটগ্রহণ হবে৷ ৭ এপ্রিল থেকে ১২ মে পর্যন্ত চলবে ভোট গ্রহণ৷ ভোট গণনা হবে ১৬ মে৷ ৮০ কোটি ভোটার এই নির্বাচনে অংশ নেবেন৷
ছবি: DW/A. Chatterjee
জনগণের সরকার
ভারতের সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর৷ পার্লামেন্টে দুটি কক্ষ রয়েছে৷ উচ্চকক্ষকে বলা হয় রাজ্যসভা আর নিম্নকক্ষ লোকসভা হিসেবে পরিচিত৷ নিম্নকক্ষে যে দল বা জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় তারাই দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করে৷
ছবি: AP
দৌড়ে এগিয়ে
সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যাচ্ছে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে৷ তবে তিনি যদি প্রধানমন্ত্রী হন তাহলে যুক্তরাষ্ট্রকে ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের পথটা নতুনভাবে বিবেচনা করতে হবে৷ কেননা ২০০২ সালে গুজরাটে দাঙ্গার কারণে যুক্তরাষ্ট্র নরেন্দ্র মোদীকে বয়কট করেছে৷
ছবি: Reuters
কংগ্রেস নেতা
দীর্ঘ সময় ধরে কংগ্রেসের হাল ধরা সোনিয়া গান্ধী এবার দলের দায়িত্বের বোঝা তুলে দিয়েছেন নিজ পুত্র রাহুল গান্ধীর কাঁধে৷ ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর প্রপৌত্র, প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী পৌত্র এবং সবচেয়ে কমবয়সি প্রধানমন্ত্রীর ছেলে রাহুল৷ কিন্তু গত ১০ বছর ধরে রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট থেকেও সেখানে বড় কোনো ভূমিকা রাখতে পারছেন না তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দুর্নীতি বিরোধী নেতা
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে দিল্লির রাজ্যসভা নির্বাচনে অভিষেক হয় দুর্নীতি বিরোধী দল আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালের৷ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি৷ কিন্তু মাত্র ৪৯ দিনের মাথায় পদত্যাগ করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘কিং মেকার’ দল
বামপন্থি চারটি দল এবং সাতটি আঞ্চলিক দল মিলে থার্ড ফ্রন্ট গঠন করেছে, যা বিজেপি এবং কংগ্রেসের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ৷ লোকসভায় এখনই তাদের আধিপত্য আছে৷ ঝুলন্ত পার্লামেন্টের সম্ভাবনা থাকলে তারা হয়ে উঠতে পারে ‘কিং মেকার’৷ অর্থাৎ তারা যে দল সমর্থন করবে তারাই গঠন করবে সরকার৷
ছবি: Sajjad HussainAFP/Getty Images
সামাজিক গণমাধ্যমের ভূমিকা
এ বছর নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বড় ভূমিকা রয়েছে৷ এটিকে নির্বাচনি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে কোনো দলই পিছিয়ে নেই৷ এ বছর প্রথম ভোট দেবেন এমন মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি৷ এদের মধ্যে ৪০ ভাগ শহরে বাস করে, যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সক্রিয়৷ ফলে নতুন এই প্রজন্ম এবারের নির্বাচনে একটা বড় ভূমিকা রাখছে৷
মেশিনের মাধ্যমে ভোট
লোকসভার ৫৪৫ টি আসনের প্রতিনিধি নির্বাচনে ভারতের মানুষ ভোট দেবেন ৫ সপ্তাহ ধরে৷ ইলেকট্রনিক মেশিন পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ চলবে৷ ফলাফল জানা যাবে ১৬ মে৷
ছবি: AP
সংখ্যালঘুদের উপর নির্ভরশীলতা
ভারতে ১৩ শতাংশ ভোটদাতা মুসলিম৷ ১০০টি সংসদীয় কেন্দ্রে ১৫-২০ শতাংশ, ৩৫টি কেন্দ্রে ৩০ শতাংশ এবং ৩৮টি আসনে মুসলিম ভোটদাতাদের সংখ্যা ২০ থেকে ৩০ শতাংশের মতো৷ কাজেই আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম ভোটবাক্স নির্ণায়ক ভূমিকা নিতে পারে বলে মনে করছেন ভোট বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘নমো’ উন্মাদনা
যখন থেকে বিজেপি নরেন্দ্র মোদীকে (নমো) তাদের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেয়; তখন থেকেই সে দেশের গণমাধ্যমের একটি বড় অংশ হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির ব্র্যান্ড হিসেবে ‘নমোকে’ তুলে ধরার উদ্যোগ নেয়৷ বিজেপির প্রচার-কুশীলবদের রি-ব্র্যান্ডিং অভিযানের তোড়ে নৈতিকতার প্রশ্নগুলো হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে৷
ছবি: Sam Panthaky/AFP/Getty Images
9 ছবি1 | 9
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা, সোনিয়ার জামাই এখন ভোট-আবহে কংগ্রেসের কাছে বোঝার ওপর শাকের আঁটি৷ সোনিয়ার জামাই না হলে কংগ্রেস অনেক আগেই রবার্ট বাড্রার সঙ্গে সংস্রব রাখতো না৷ তবে নাগরিক সমাজের মতে নির্বাচনি প্রচার এক ধরনের বিপণন৷ বিপণনের মধ্যেও থাকা উচিত একটা সৌজন্য, শালীনতা৷ সেটা যেন ক্রমশই নষ্ট হতে বসেছে৷ প্রচারে উঠে এসেছে পরস্পরের প্রতি কুরুচিকর মন্তব্য৷ গণতন্ত্রে সেটা বাঞ্ছনীয় নয়৷