1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কংগ্রেস নেতার ‘হিন্দু পাকিস্তান' মন্তব্য!

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
২৮ জুলাই ২০১৮

ভারতীয় কংগ্রেস দলের সাংসদ শশী থারুরের এক বেফাঁস উক্তিকে ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছে৷ তিনি মন্তব্য করেছিলেন, আগামী বছর নির্বাচনে বিজেপি যদি দুই-তৃতীয়াংশ আসন নিয়ে ক্ষমতায় আসে তাহলে ভারত ‘হিন্দু পাকিস্তান'এ পরিণত হবে৷

Indien Shashi Tharoor Politiker und Schriftsteller
ছবি: Getty Images/AFP/R. Jain Paras

তিনি বলেন, দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে হাতিয়ার করে বিজেপি সংবিধান সংশোধন করতে ইতস্তত করবে না৷ তবে হ্যাঁ, তারজন্য সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভাতেও দরকার দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা, যেটা বর্তমানে বিজেপির নেই৷

ইতিমধ্যে বিজেপি ও মৌলবাদী হিন্দু সংগঠন আরএসএস সেরকম পরিবেশ তৈরির মহড়া শরু করে দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন কেরালার সাংসদ থারুর৷ যেমন গোরক্ষার নামে গণপিটুনি, মুসলিম ও দলিত সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্য, লাভ জেহাদ, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে জিন্নার ফটো রাখা নিয়ে তুলকালাম কান্ড ইত্যাদি৷

থারুরকে সতর্ক করেছে কংগ্রেস

থারুরের এই উক্তি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে জোর বিতর্ক৷ শশী থারুরের নিজের দল কংগ্রেসও থারুর মন্তব্যে দলকে জড়াতে চায়নি৷ পক্ষান্তরে এই ধরণের অবান্তর মন্তব্য থেকে বিরত থাকার জন্য রাহুল গান্ধীর তরফে তাঁকে সাবধান করে দেওয়া হয়েছে৷

কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিং সরজেয়ালা দলের পক্ষ থেকে বলেন, ভারতীয় মূল্যবোধ এবং মৌলিকত্ব সভ্যতার মানদন্ডে পাকিস্তান থেকে আলাদা৷ আসলে এর অর্থ ঠিক কী সেটা উনি ভেঙে বলেননি৷ তবে এটা মোটামুটি স্পষ্ট, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে দাবিয়ে রেখে সংবিধান প্রদত্ত মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করে বিজেপি এমন একটা রাজনৈতিক পরিমন্ডল তৈরি করতে চাইছে, যেখানে সংখ্যালঘুদের বাস করা কঠিন হয়ে উঠছে৷ গোমাংস নিয়ে গণপিটুনি তারই একটা দিক৷ অথচ স্মরণাতীতকাল থেকে হিন্দুধর্ম সহিষ্ণুতার পরাকাষ্ঠা৷ বিভিন্ন ধর্মের সহাবস্থান এই ভারতভূমিতে৷

বিজেপির প্রতিক্রিয়া

বিজেপি মুখপাত্র সম্বিত পাত্র তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, থারুরের মন্তব্য ভারতীয় গণতন্ত্রের অবমাননা, ভারতীয় সংবিধানের ওপর আঘাত৷ নিজের দেশের ভাবমূর্তিকে কলঙ্কিত করা৷ একজন সাংসদ হয়ে বারংবার তিনি নিজের দেশকে এবং হিন্দু ধর্মকে হেয় করে যাচ্ছেন, এটা অত্যন্ত লজ্জার বিষয়৷

তিরুভান্থপুরমে থারুর অফিসের উপর বিজেপির যুব শাখা যে ভাঙচুর চালাবে তাতে আর আশ্চর্যের কি আছে? শশী থারুর এমন কি রাহুল গান্ধীকেও ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি তুলেছে বিজেপি৷

বিশ্লেষকের কথা

শশী থারুরের এই বিতর্কিত মন্তব্য প্রবীণ রাজনৈতিক বিশ্লেষক অমূল্য গাঙ্গুলি কীভাবে দেখছেন ডয়চে ভেলে জানতে চাইলে তিনি বললেন, ‘‘বিজেপি ও সংঘপরিবারের মৌলবাদ বা ধর্মীয় উগ্রবাদ কারোর অজানা নয়৷ যেমন গোরক্ষার নামে গণপিটুনি ইত্যাদি৷ কাজেই থারুর যে মন্তব্য করেছেন কার্যত তা ঠিক৷ তবে হ্যাঁ, সংবিধান পালটানো অতো সহজ নয়৷ তবে বিজেপি যদি সংসদের লোকসভা এবং রাজ্যসভা উভয় সভাতেই দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আসে তাহলে আশঙ্কার কারণ আছে৷ ফ্যাসিজিমের দিকে দেশকে নিয়ে যেতে পারে৷''

অমূল্য গাঙ্গুলি

This browser does not support the audio element.

শশী থারুরকে তাঁর নিজের দল কংগ্রেসও সমর্থন করেনি কেন, এর উত্তরে রাজনৈতিক বিশ্লেষক গাঙ্গুলি বললেন, ‘‘চিরকালই কংগ্রেসের দু'নৌকায় পা দিয়ে চলার একটা প্রবণতা আছে৷ কংগ্রেসের মধ্যেও একটা চাপা মুসলিম তোষণ কাজ করছে বলে বিজেপির অভিযোগও মিথ্যে নয়৷ সেটা বুঝতে পেরে সেটা সংশোধনের চেষ্টা করছে কংগ্রেস৷ তাই নীরব থাকাটাই শ্রেয় বলে মনে করছে৷ দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কারোর যদি দাঁড়ি থাকে আর মাথায় থাকে স্কালক্যাপ, তাহলে ট্রেনে সিট নিয়ে বা বাসে চড়া নিয়েও আপনি নিরাপদ নন৷ কথা কাটাকাটি থেকে অবস্থা কোনদিকে মোড় নেবে বলা মুশকিল৷ বলবে পাকিস্তান চলে যাও৷ ভারতের প্রাক্তন উপ-রাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারিও বলেছেন, দেশে মুসলিমরা নিজেদের নিরাপদ মনে করে না৷ দেশভাগের পর কংগ্রেসের বড় কৃতিত্ব ছিল সংখ্যালঘু মুসলিম, খ্রিষ্টান, পার্সি সকলেই এখানে নিরাপদ বোধ করতো৷ সম্ভবত সেটাই বিজেপি এবং সংঘপরিবারের ক্ষোভের কারণ৷ দুঃখের কারণ মুসলিমদের সঙ্গে দলিতদেরও টার্গেট করেছে সংঘপরিবার৷''

নতুন নয়

শুধু শশী থারুর নন, এর আগেও ‘হিন্দু পাকিস্তান' শব্দবন্ধ ব্যবহার করা হয়েছিল৷ গত বছর ভারত-ছাড়ো আন্দোলনের ৭৫ বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে সংসদের উভয় সভায় এক স্মরণ অনুষ্ঠানে সিপিএম নেতা ও রাজ্যসভার তত্কালীন সাংসদ সীতারাম ইয়েচুরি বলেছিলেন, ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে ভারতকে রক্ষা করা এবং ভারতকে হিন্দু-পাকিস্তান হতে না দেওয়ার লক্ষ্যেই এগোতে হবে৷ এই মন্তব্য নিয়েও যথেষ্ট হৈচৈ হলেও সংসদের নথি থেকে বাদ দেওয়া হয়নি৷ গত বৃহস্পতিবারও সিপিএম নেতা ইয়েচুরি সেই কথার পুনরাবৃত্তি করে বলেছেন, ‘‘সংসদের ভেতর গত বছর আমি বলেছিলাম, এদেশে যা ঘটছে, তার প্রেক্ষিতে ‘হিন্দু পাকিস্তান' হতে দেওয়া যাবে না৷''

পর্যবেক্ষকদের ধারণা, সংসদের রেকর্ড থেকে যে আশঙ্কার কথা বাদ দেওয়া হয়নি, বিতর্কিত বলে মনে করেনি তা নিয়ে এতো শোরগোল কেন? কংগ্রেসের ভর্ৎসনা অগ্রাহ্য করে থারুর তাঁর নিজের অবস্থানে অবিচল থেকে বলেছেন, পাকিস্তান সৃষ্টিই হয় ধর্মের ভিত্তিতে৷ ধর্মই তার পরিচিতি৷ ‘টু-নেশনস থিওরি' তাই ভারত মানতে পারেনি৷ সহিষ্ণু ভারতে ইদানীং দেখা যাচ্ছে, একটা অসহিষ্ণুতা মাথা চাড়া দিয়েছে, যেটা নিয়ে শাসক দল মাথা ঘামাচ্ছে না মোটেই৷ সেই অর্থেই ‘হিন্দু পাকিস্তান' শব্দবন্ধ উঠে এসেছে৷

‘হিন্দু পাকিস্তান’ বলতে আপনারা কী বোঝেন বন্ধুরা? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ