পৃথিবীর কক্ষপথ আবর্জনায় ভরে যাচ্ছে৷ পুরানো, বিকল স্যাটেলাইট বা সেগুলির অংশবিশেষ ভবিষ্যতের মহাকাশ অভিযানগুলির জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠছে৷ তাই বিশেষজ্ঞরা এই আবর্জনা সাফাইয়ের উপর জোর দিচ্ছেন৷
বিজ্ঞাপন
কয়েক'শ স্যাটেলাইটের ভিড়ের মাঝে পৃথিবীকে এমনই দেখতে লাগে৷ বিশেষ করে নিম্নভাগের কক্ষপথ সক্রিয় স্যাটেলাইট ছাড়াও মহাকাশ আবর্জনায় ভরা৷ ফলে সংঘাত-সংঘর্ষের ঝুঁকি দিন-দিন বেড়েই চলেছে৷ ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার সমন্বয়ক টোমাস রাইটার বলেন, ‘‘এই প্রবণতা অত্যন্ত ভয়ংকর৷ পৃথিবীর কক্ষপথে বস্তুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে, ফলে সংঘাতের আশঙ্কাও বাড়ছে৷ সেইসঙ্গে ‘কেসলার সিন্ড্রোম' নামের এক ঝুঁকিও রয়েছে, যার ফলে আরও আবর্জনা সৃষ্টি হয়৷''
এই আবর্জনা ভবিষ্যতের মহাকাশ অভিযানের জন্য হুমকি হয়ে উঠছে৷ বিশেষ করে যে অভিযানে মানুষও অংশ নেবে৷ রকেট বা মহাকাশযানকে পুরানো স্যাটেলাইট ও মহাকাশ আবর্জনার পাশ কাটিয়ে অত্যন্ত সরু পথ দিয়ে যেতে হবে৷ মহাকাশ সংস্থাগুলিকে চালু স্যাটেলাইটগুলিকে সর্বদা নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে৷ তা না করলে অন্য বস্তুর সঙ্গে সেগুলির ধাক্কা লাগতে পারে৷ টোমাস রাইটার বলেন, ‘‘আবর্জনার ঘনত্ব এমন মাত্রায় পৌঁছচ্ছে, যে কক্ষপথে যে কোনো স্যাটেলাইটের সঙ্গে তাদের দ্রুত সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠছে৷ তখন আর ৪০০ থেকে ১,২০০ কিলোমিটার উচ্চতার মধ্যে নিম্ন কক্ষপথ আর ব্যবহার করা যাবে না৷ সেই পরিস্থিতি যাতে না আসে, আমাদের তা নিশ্চিত করতে হবে৷''
গ্রহাণুর বুকে মহাকাশযান
গ্রহ-নক্ষত্রের রহস্য উন্মোচনে মানুষ যথেষ্ট উদ্যোগ দেখিয়ে চলেছে৷ কিন্তু গ্রহাণু? কিছুদিন আগেই একটি গ্রহাণু আচমকা পৃথিবীর বিপজ্জনক রকম কাছে এসে পড়েছিল৷ নাসা এবার ‘বেনু’ নামের এক গ্রহাণুতে যান পাঠালো৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press/C. Meaney
যাত্রার সূচনা
২০১৬ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর ভোরে যাত্রা শুরু করলো ‘অসিরিস-রেক্স’ নামের যান৷ সেটিকে মহাকাশে পৌঁছে দেবার দায়িত্ব নিয়েছে ‘অ্যাটলাস-ভি’ রকেট৷ প্রায় সাত বছরের এই অভিযানে ‘বেনু’ গ্রহাণু থেকে মূল্যবান নমুনা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার কথা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Raoux
‘বেনু’ কেন?
প্রায় ৫ লক্ষ গ্রহাণুর মধ্যে ‘বেনু’-কেই গন্তব্য হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে, কারণ তার কক্ষপথ পৃথিবীর খুব কাছে৷ তাছাড়া আয়তনের দিক থেকেও আদর্শ৷ নাসার তথ্যভাণ্ডারে অন্যতম প্রাচীন গ্রহাণু এটি৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press/C. Meaney
লাভ-লোকসানের হিসেব
প্রায় ৮০ কোটি ডলারের এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য প্রায় ৪৫,০০০ কোটি বছর আগের অবস্থা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা৷ সেখান থেকে ধুলাবালি, ধাতু ও মাটির নমুনা সংগ্রহ করে ২০২৩ সালে ‘অসিরিস-রেক্স’ আবার ঘরে ফিরে আসলে বিজ্ঞানীরা মূল্যবান জ্ঞান অর্জনের আশা করছেন৷
ছবি: Reuters/M. Brown
ছোট হলেও শক্তিশালী
‘অসিরিস-রেক্স’-এর আকার একটি এসইউভি গাড়ির মতো হলেও অত্যন্ত উন্নত যন্ত্রপাতি ভরা রয়েছে৷ নানা রকমের ক্যামেরা, লেজার, স্পেকট্রোমিটার এই প্রথম কোনো গ্রহাণুর মধ্যে ধাতুর বিন্যাস পরীক্ষা করবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/NASA/D.Gerondidakis
গ্রহাণুতে অনেক কাজ
২০১৮ সালের আগস্ট মাসে ‘অসিরিস-রেক্স’-এর ‘বেনু’ গ্রহাণু পৌঁছানোর কথা৷ সেখানে প্রায় দু-বছর ধরে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ব্যস্ত থাকবে যানটি৷ তারপর ২০২০ সালের জুলাই মাসে নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু হবে৷ তবে সরাসরি গ্রহাণুর ‘মাটি’ ছোঁবে না এই যান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/NASA/Goddard
মূল্যবান নমুনা
গত শতাব্দীর ষাট ও সত্তরের দশকে অ্যাপোলো অভিযানের পর এত পরিমাণ মহাজাগতিক নমুনা পৃথিবীতে আনা হয়নি৷ নাসা আশা করছে, ‘অসিরিস-রেক্স’ এই কাজে অত্যন্ত সফল হবে৷ ‘ট্যাগস্যাম’ নামের এক যন্ত্র ভাসমান যান থেকে হাত বাড়িয়ে সেই কাজ করবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পৃথিবীর জন্য বিপদ
এই অভিযানের আরেকটি উদ্দেশ্য ‘ইয়ারকভস্কি এফেক্ট’ সম্পর্কে আরও জ্ঞান অর্জন করা৷ সূর্যের আলো গ্রহাণুদের কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত করার ফলে তারা বিপথগামী হয়ে পৃথিবীর সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটাতে পারে৷ এমন ঝুঁকির আগাম পূর্বাভাষ দিতে চান বিজ্ঞানীরা৷ এই অভিযান সম্পর্কে আরও জানতে উপরে ডানদিকে ক্লিক করুন৷
ছবি: picture-alliance/AP
7 ছবি1 | 7
স্যাটেলাইট আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সঙ্গী হয়ে উঠেছে৷ যোগাযোগ, যাতায়াত, কৃষি থেকে শুরু করে জলবায়ু ও আবহাওয়া সংক্রান্ত গবেষণার ক্ষেত্রে স্যাটেলাইট আমাদের সাহায্য করে৷
কিন্তু সময় ও প্রযুক্তির সঙ্গে সঙ্গে উড়ন্ত এই সব যন্ত্র সেকেলে অথবা অকেজো হয়ে পড়ে৷ তখন নতুন স্যাটেলাইটের প্রয়োজন পড়ে৷ বিশেষজ্ঞদের দাবি – সবার আগে অকেজো স্যাটেলাইট সাফ করতে হবে৷ তারপর নতুন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা যাবে৷ টোমাস রাইটার বলেন, ‘‘স্যাটেলাইট সাধারণত ৭ থেকে ১০ বছর অথবা তার সামান্য বেশি সময় সক্রিয় থাকে৷ তারপর সেটিকে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করতে হয়৷ সেখানে যে আবর্জনা রয়েছে, অবশ্যই তা সংগ্রহ করা উচিত৷ এ বিষয়ে অনেক আইডিয়া সত্ত্বেও কোনো সুস্পষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হয় নি৷ এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আন্তর্জাতিক স্তরে যার সুরাহা হওয়া উচিত৷''
একটি সমাধানসূত্র এর মধ্যেই পরীক্ষা করা হয়েছে৷ তা হলো পুরানো স্যাটেলাইটগুলিকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা৷ অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়ায় স্যাটেলাইটকে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ফিরিয়ে আনা হয়৷ সেই যাত্রায় বিশাল মাত্রায় উত্তাপ ও গতি দেখা যায়৷ সেই চাপের মুখে স্যাটেলাইটের বাইরের অংশ পুড়ে যায়৷ তবে টাইটেনিয়ামের মতো উত্তাপ-নিরোধক উপকরণ রক্ষা পায়৷
বেশিরভাগ সময়ে সেগুলি সমুদ্রে গিয়ে পড়ে৷ ভূমির উপর পড়ার ঘটনা খুবই বিরল৷ কিন্তু হুমকি থেকেই যায়৷
মহাকাশে প্রথম মানুষ থেকে প্রথম ফুল
মহাকাশে মানুষের যাওয়া একটা সময় অকল্পনীয়ই ছিল৷ কুকুর পাঠিয়ে স্বপ্নযাত্রার সোপান তৈরি হলো৷ প্রথম মানুষ হিসেবে ইউরি গ্যাগারিন গেলেন৷ তারপর প্রথম নারী, প্রথম ফুল হয়ে এবার শুরু হলো মহাকাশে প্রথম টমেটো দেখার অপেক্ষা৷
ছবি: Colourbox/M. Bell
সবার আগে ফলের মাছি
মহাকাশে প্রথম প্রাণী ফলের মাছি৷ হ্যাঁ, ১৯৪৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিকিরণের প্রভাব পরীক্ষা করার জন্য ভি-টু রকেটে মানুষ না পাঠিয়ে এক ধরণের মাছিই পাঠিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ দু’বছর পর শুরু হয় বানর পাঠানো৷ ঊনিশ শতকের পঞ্চাশের দশকে ইঁদুর এবং কুকুরও পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷
তখনকার সোভিয়েত ইউনিয়ন, অর্থাৎ আজকের রাশিয়াও মহাকাশে পরীক্ষামূলকভাবে প্রাণী পাঠিয়েছে বেশ কয়েকবার৷ তবে ১৯৫১ সালে প্রথম তাদের পাঠানো দু’টি কুকুর মহাকাশ থেকে জীবিত ফেরে৷ তবে কোনো প্রাণীই মহাকাশে গিয়ে অরবিট প্রদক্ষিণ করেনি৷ ১৯৫৭ সালে সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছিল সোভিয়েত ইউনিয়নেরই আরেক কুকুর লাইকা৷ লাইকা অরবিট থেকে ফেরায় মানুষেরও মহাকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন জাগে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রথম মানুষ ইউরি গ্যাগারিন
মহাকাশ ঘুরে আসা প্রথম মানুষ ইউরি গ্যাগারিন৷ ১৯৬১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভস্টক নভোযানে চড়ে পৃথিবীর কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করে আসেন তিনি৷ ছবিতে স্ত্রী এবং সন্তানের সঙ্গে আনন্দঘন মুহূর্তে ইউরি গ্যাগারিন৷
ছবি: AFP/Getty Images
মহাকাশে প্রথম নারী
মহাকাশে প্রথম নারী পাঠাতেও দেরি করেনি সোভিয়েত ইউনিয়ন৷ ১৯৬১ সালেই ৪০০ আবেদন থেকে বেছে নেয়া হয় ভ্যালেন্টিনা টেরেশকোভাকে৷ ভস্টক চালিয়ে মহাকাশে গিয়ে ভেলেন্টিনা টেরেশকোভা সুস্থ, স্বাভাবিক অবস্থাতেই ফিরেছিলেন নিজের দেশে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রথম ফুল
কয়েকদিন আগেই পাওয়া গেছে মজার এক খবর৷ মহাকাশে এবার ফুল ফুটেছে৷ জিনিয়া ফুল৷ মহাকাশে মাটিই নেই৷ তারপরও সেখানে ফুল ফোটানো কিন্তু মহাবিস্ময়েরই ব্যাপার৷ নাসার নভোচারীরা এবার তা-ও সম্ভব করেছেন৷ আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র (আইএসএস)-এর নভোচারী স্কট কেলি টুইটারে একটি জিনিয়া ফুলের ছবি পোস্ট করে জানিয়েছেন, এটা মহাকাশে প্রথম ফোটা ফুল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/NASA
তারপর টমেটো?
নভোচারীরা ধীরে ধীরে মহাকাশে খাদ্যশস্য ফলানোর দিকে এগিয়ে যেতে চান৷ সেই লক্ষ্যের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবেই আসলে জিনিয়া ফোটানো৷ ইতিমধ্যে খুব ছোট আঙ্গিকে লেটুস চাষের চেষ্টা শুরু হয়েছে৷ খুব শিগগির নাকি তাজা টমেটোও দেখা যাবে মহাকাশে!