1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কক্সবাজারে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৮ অক্টোবর ২০১৭

বাংলাদেশের কক্সবাজারে ছয় হাজার একর সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং পাহাড়ে এখন রোহিঙ্গাদের বসতি৷ এটা বেড়ে আট হাজার একর হওয়ার আশঙ্কা করছে বনবিভাগ৷ আর বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এতে পরিবেশ ও প্রাণীবৈচিত্র্য ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ছে৷

Bangladesch Biometrische Registrierung von Rohingya-Flüchtlinge
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman

কক্সবাজারের বন বিভাগ জানিয়েছে, সম্প্রতি আসা রোহিঙ্গারা টেকনাফ ও উখিয়া এলাকার প্রায় ৪ হাজার একর বনাঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আশ্রয় নিয়েছে৷ এর মধ্যে উখিয়া রেঞ্জের কুতুপালং, থাইংখালী ও আশাপাশের ৩ হাজার, টেকনাফ রেঞ্জের ৪৫০ একর, শিলখালী রেঞ্জের ৩৭৫ একর ও পুটিবুনিয়া রেঞ্জের ৫০ একর পাহাড়ি জায়গা রোহিঙ্গাদের দখলে রয়েছে৷ এর বাইরেও কিছু এলাকায় তাদের বসতি রয়েছে৷

সরকার কুতুপালং-এর বালুখালি এলাকায় দুই হাজার একর বন এবং পাহাড় অধিগ্রহণ করেছে সব রোহিঙ্গাকে এক জায়গায় রাখার জন্য৷ তবে জানা গেছে, আরো এক হাজার একর অধিগ্রহণ করা হবে৷ এটা করা হয়েছে ২৫ আগস্টের পর থেকে৷ তবে এর আগে ১৯৭৮ সাল থেকে কয়েক দফায় আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের জন্য চার হাজার একর বন ও পাহাড় অধিগ্রহণ করা হয়৷ এসবই বনবিভাগের সংরক্ষিত বন ও পাহাড়৷ 

Rayhan Sirkar.mp3 - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ফরেস্ট অ্যান্ড এনভায়রমেন্টাল সায়েন্স ইনস্টিটিউটের' সহযোগী অধ্যাপক ড. এ এইচ এম রায়হান সরকার দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের বসবাস এবং পরিবেশের ওপর এর প্রতিক্রিয়া নিয়ে কাজ করছেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পুরনো এবং নতুন রোহিঙ্গা আশ্রয় কেন্দ্র গড়েই উঠেছে সংরক্ষিত বন ও পাহাড় কেটে৷ এখানে পরিবেশকে বিবেচনায় নেয়া হয়নি৷ এরই মধ্যে কক্সবাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু হয়েছে৷ কক্সবাজার ও বান্দরবানে হতির সংখ্যা কমে যাচ্ছে৷ গাছপালা উজাড় হচ্ছে৷ সবচেয়ে বড় আশঙ্কার কথা হল পাহাড় ধস আরো বেড়ে যাবে৷''

হাতির পথে রোহিঙ্গাদের অবস্থান

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচার (আইইউসিএন)-এর ২০১৬ সালের ‘স্ট্যাটাস অব এশিয়ান এলিফ্যান্টস ইন বাংলাদেশ' প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘বন বিভাগের কক্সবাজার দক্ষিণ অঞ্চলের (উখিয়া-টেকনাফ) সংরক্ষিত বনে শুষ্ক মৌসুমে গড়ে ৭৮টির মতো হাতি থাকে৷ বর্ষায় গড়ে ৪৮টির মতো থাকে৷ এই সময় খাবারের সন্ধানে হাতি অভয়ারণ্য থেকে বেরিয়ে আসে৷'' 

চট্টগ্রামে হাতি চলাচলের জন্য ১২টি করিডোর আছে৷ এর আটটি কক্সবাজার এলাকায়৷ অধ্যাপক ড. এ এইচ এম রায়হান সরকার এই বিষয়ে বলেন, ‘‘এরই মধ্যে কুতুপাংল থেকে বালুখালী ক্যাম্প পর্যন্ত এলাকায় হাতি চলাচলের পথে ‘সাবধান, বন্যহাতি চলাচলের পথ' লেখা সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে৷ অথচ এসব সাইনবোর্ডের পাশেও অসংখ্য ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে বসবাস করছে রোহিঙ্গারা৷ আর প্রতিদিনই এই সব ঘরের সংখ্যা বাড়ছে৷''

তিনি বলেন, ‘‘হাতির চলাচলের পথে রোহিঙ্গারা বসতি স্থাপন করায় হিউম্যান-এলিফ্যান্ট কনফ্লিক্ট বাড়বে৷ উখিয়ার মধুছড়া সংরক্ষিত বনে এরইমধ্যে এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটেছে৷ ওই ঘটনায় হাতির আক্রমণে দুই রোহিঙ্গা মারা গেছে৷ ওখানে শুধু মানুষ ও হাতির সংঘর্ষ ঘটবে তা নয়, হাতির চলাচল পথ রোধ করায় হাতি আগে যেসব এলাকায় কখনও যায়নি, এখন সেসব এলাকায়ও চলে যেতে পারে৷''

বন বিভাগের ‘কিছু করার নেই'

কক্সবাজার দক্ষিণ বিভাগীয় বন সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আলী কবির ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পরিবেশ, বন, জীব বৈচিত্র্য যে হুমকির মুখে তা আমরা লিখিতভাবে জানিয়েছি৷ তবে এখানে আমাদের করণীয় কিছু নাই৷ কারণ এটা সরকারের সিদ্ধান্ত৷''

তিনি বলেন, ‘‘সরকারই বালুখালি এলাকার দুই হাজার একর জমি রোহিঙ্গাদের জন্য অধিগ্রহণ করেছে৷ এর পুরোটাই সংরক্ষিত বন এবং পাহাড়৷ পাহাড় ও গাছ কেটেই রোহিঙ্গাদের জন্য আবাস বানানো হয়েছে৷ বন আর পাহাড় ধ্বংস হওয়ায় এখানকার প্রাণি এবং পাখিও আর নেই৷''

এদিকে রোহিঙ্গাদের জ্বালানির চাহিদা মেটানোর একমাত্র পথ কাঠ৷ তারা জ্বালানির জন্য বনে ঢুকে গাছপালা কাটছে৷ শুধু তাই নয়, তাদের ব্যবহার করে একশ্রেণির বাংলাদেশি বন উজাড় করছে৷ ড. এ এইচ এম রায়হান বলেন, ‘‘স্থানীয় কিছু প্রভাবশালঅ এখন গাছ কেটে বিক্রি এবং পাহাড় কাটায় রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করছে৷'' 

Ali Kabir.mp3 - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

উখিয়ার কুতুপালংয়ের মধুরছড়া পাহাড় একটি সংরক্ষিত এলাকা হলেও কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাজার থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এখন শরণার্থী ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান নিয়েছে৷ ওই এলাকার সবুজ বনভূমি উধাও হয়ে গেছে৷ আবার আগে থেকে স্থানীয় যারা ছিলেন তারাও চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন৷ কারণ চাষের জমিও দখল হয়ে গেছে৷

বন সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আলী কবির এই বিষয়ে বলেন, ‘‘আমরা জিপিআরএস রিডিং নিয়ে দেখেছি ২৫ আগষ্টের পর আড়াই হাজার একর বন এবং পাহাড় নষ্ট হয়েছে৷ তবে তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে৷ কক্সবাজার দক্ষিণ এলাকায় মূলত রোহিঙ্গাদের বসবাস৷ আর এখানে সংরক্ষিত বন ও পাহাড় আছে এক লাখ একরের একটু বেশি৷''

উল্লেখ্য, জাতিসংঘও কক্সবাজারে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করেছে৷ তারা এক জায়গায় সব রোহিঙ্গাকে রাখা বিপজ্জনকও মনে করছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ