1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের রোডম্যাপ তৈরিতে ৭ দফা প্রস্তাব

২৫ আগস্ট ২০২৫

'স্টেকহোল্ডারস' ডায়ালগে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য দিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এখন কক্সবাজারে। সেখানে ৭ দফার প্রস্তাব রাখেন তিনি৷

কক্সবাজারে সংলাপে অংশ নিতে গেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস৷
আট বছর আগের এই দিনে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে প্রাণে বাঁচতে রোহিঙ্গাদের ঢল নামতে শুরু করেছিল বাংলাদেশে।ছবি: Bangladesh's Chief Advisor Office of Interim Government/AFP

রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘমেয়াদী সমাধানে কক্সবাজারে আয়োজিত 'স্টেকহোল্ডারস' ডায়ালগে যোগ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় রোহিঙ্গাদের দ্রুত, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ, স্বেচ্ছায় ও টেকসইভাবে রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবাসনের জন্য বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ তৈরিতে যৌথ প্রচেষ্টার লক্ষ্যে সাত দফা প্রস্তাব পেশ করেছেন তিনি।

আজ সোমবার সকালে এই সংলাপে যোগ দিতে কক্সবাজার পৌঁছান প্রধান উপদেষ্টা বলে জানায় ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার দ্য ডেইলি স্টার।। সকাল ১১টার দিকে তিন দিনের এ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের বিশেষ অধিবেশন শুরু হয়। এতে মিয়ানমার ও আঞ্চলিক স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা, রোহিঙ্গাদের মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন এবং বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যৌথ প্রচেষ্টার আহ্বান জানানো হয়।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা কেবল কথার জালে বন্দি থাকতে পারি না। এখনই সময় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার।

তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের দায়িত্ব শুধু বাংলাদেশের নয়, বরং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও। সংকটের সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে ভাবা এবং তা বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখা সবার যৌথ দায়িত্ব।

প্রফেসর ইউনূসের সাত দফা প্রস্তাব

প্রথমত, রোহিঙ্গাদের দ্রুত, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ, স্বেচ্ছামূলক ও টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য একটি কার্যকর রোডম্যাপ তৈরিতে কাজ করতে হবে। কথার জালে আর বন্দি থাকা যাবে না।

দ্বিতীয়ত, ২০২৫-২৬ সালের যৌথ প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনার অর্থ ঘাটতি পূরণে আন্তর্জাতিক দাতাগোষ্ঠী ও মানবিক অংশীদারদের অব্যাহত সহায়তা জরুরি।

তৃতীয়ত, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সব ধরনের সহিংসতা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। এজন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ও আরাকান আর্মিকে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা, জীবিকা ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে মিয়ানমারের ভেতরে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের দ্রুত নিজ ঘরে ফিরতে দিতে হবে।

চতুর্থত, মিয়ানমারের ভেতরে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে উত্তেজনা হ্রাস ও সংঘাত নিরসনে সংলাপ প্ল্যাটফর্ম জরুরি। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনায় বসতে হবে যাতে পুনর্মিলন, অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও প্রত্যাবাসন সম্ভব হয়।

তহবিল সংকটে রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা

03:48

This browser does not support the video element.

পঞ্চমত, আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় আসিয়ানসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা অপরিহার্য। মানবপাচার, মাদকপাচার, ছোট অস্ত্রের চোরাচালানসহ সীমান্তবর্তী অপরাধ মোকাবিলার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

ষষ্ঠত, জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে। মিয়ানমার, আরাকান আর্মি ও অন্যান্য সংঘাতপক্ষের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সংকট নিরসনের স্বার্থে পদক্ষেপ নিতে হবে।

সপ্তমত, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে), আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থায় চলমান জবাবদিহি প্রক্রিয়াকে আরও গতিশীল করতে হবে। আইসিজের দেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ কার্যকর করতে হবে এবং গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের সূত্রপাত মিয়ানমারে, তাই সমাধানও মিয়ানমারেই নিহিত। দেরি না করে সব পক্ষকে দৃঢ় সংকল্প নিয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

প্রথম দিনের কর্মসূচিতে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিশেষ ইন্টারঅ্যাকটিভ সেশন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য আস্থা গড়ে তোলার উপায় নিয়ে আলোচনা হয়।

রোহিঙ্গাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এবং পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়াম এ সেশনে অংশ নেন। এতে আরো অংশ নেন কক্সবাজারের বিভিন্ন শিবির থেকে আসা রোহিঙ্গা প্রতিনিধি এবং রোহিঙ্গা প্রবাসীরা।

বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণ অধিকার পরিষদসহ দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরাও এ সংলাপে অংশ নেন।

নাগরিকত্ব ছাড়া ঘরে ফিরবে না রোহিঙ্গা শরণার্থীরা

06:25

This browser does not support the video element.

আট বছর আগের এই দিনে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে প্রাণে বাঁচতে রোহিঙ্গাদের ঢল নামতে শুরু করেছিল বাংলাদেশে।

২০১৭ সালে সীমান্তচৌকিতে ‘রোহিঙ্গা জঙ্গিদের' হামলার অজুহাত তুলে গণহত্যা শুরু করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। তখন প্রাণ বাঁচাতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। পরেও অনেকে বাংলাদেশে এসেছে। অনেক রোহিঙ্গা আগে থেকেও বাংলাদেশে ছিল। সব মিলিয়ে এখন কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৪ লাখ ছাড়িয়েছে। নিবন্ধিতদের বাইরেও  রয়েছে অনেক রোহিঙ্গা।

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের আর নিজ দেশে ফেরানো যায়নি। দুবার দিনক্ষণ চূড়ান্ত হলেও প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি। বরং গত দেড় বছরে নতুন করে এসেছে ১ লাখ ২৪ হাজার রোহিঙ্গা।

বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা কমছে। কারণ, আন্তর্জাতিক সহায়তাআগের মতো নেই। সব মিলিয়ে হতাশা বাড়ছে রোহিঙ্গাদের মধ্যে।

এমন পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে তিনটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সম্মেলনের আয়োজন করছে। প্রথমটি শুরু হয়েছে কক্সবাজারে।  অন্য দুই সম্মেলনের একটি হবে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। অন্যটি হবে ৬ ডিসেম্বর কাতারে।

রোহিঙ্গাদের ফেরাতে রাখাইনে ত্রাণ পাঠানো উচিত?

14:21

This browser does not support the video element.

যুক্তরাষ্ট্রের প্রশংসা

মিয়ানমার ছেড়ে আসতে বাধ্য হওয়া রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে রোববার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করা হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সহিংসতা ও বাস্তুচ্যুতির শিকার রোহিঙ্গাসহ মিয়ানমারের অন্যান্য জাতিগত গোষ্ঠীর প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করে আরো বলা হয়, মিয়ানমারের শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য অঞ্চলটির অন্যান্য দেশেরও প্রশংসা করে যুক্তরাষ্ট্র।

এসএস/এসিবি (দ্য ডেইলি স্টার)

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ