কখন নির্বাচন হবে সেটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত: প্রধান উপদেষ্টা
২৫ আগস্ট ২০২৪
ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানান, নির্বাচন কখন অনুষ্ঠিত হবে সে বিষয়ে রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ উপদেষ্টারা সংকটকালে দেশের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন৷
বিজ্ঞাপন
রোববার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘‘একটা বিষয় জানতে সবাই আগ্রহী৷ কখন আমাদের সরকার বিদায় নেবে৷ এটার জবাব আপনাদের হাতে৷ কখন আপনারা আমাদের বিদায় দেবেন৷ আমরা কেউ দেশ শাসনের মানুষ নই৷ আমাদের নিজ নিজ পেশায় আমরা আনন্দ পাই৷ দেশের সংকটকালে ছাত্রদের আহ্বানে আমরা এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছি৷’’
তিনি বলেন, ‘‘আমরা সমস্ত শক্তি দিয়ে এই দায়িত্ব পালন করবো৷ আমাদের উপদেষ্টামণ্ডলীও এই লক্ষ্যে উদ্ধুদ্ধ হয়ে সবাই মিলে একটা টিম হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি৷ কখন নির্বাচন হবে সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত৷ আমাদের সিদ্ধান্ত নয়৷’’
৮ আগস্ট দায়িত্ব গ্রহণের পর দ্বিতীয়বারের মতো জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস৷
ভাষণের শুরুতে বন্যার্তদের দুর্ভোগের বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘‘স্মরণাতীত কালের ভয়াবহ বন্যায় যারা নিহত হয়েছেন, যারা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বা যারা সর্বস্ব হারিয়েছেন বা যারা দুঃসহ জীবন যাপন করছেন তাদের স্মরণ রেখে আজকের কথাগুলো বলছি৷’’
বন্যায় উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘বন্যাদুর্গতদের জীবন দ্রুত স্বাভাবিক করার জন্য যাবতীয় উদ্যোগ সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে নেয়ার আয়োজন করেছি৷’’
প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে সকল ধরনের বন্যা প্রতিরোধে আমাদের অভ্যন্তরীণ এবং প্রতিবেশিদের সঙ্গে যাতে যৌথভাবে নেয়া যায় সেই আলোচনা শুরু করেছি৷’’
আরআর/এফএস
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশা ও চ্যালেঞ্জ
নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশা ও সরকারের কিছু চ্যালেঞ্জ নিয়ে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলেছে ডিডাব্লিউ৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP
সিফাত নাহার, চিকিৎসক
স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে ওষুধের অপ্রতুলতা, পর্যাপ্ত সরঞ্জামের অভাব, লোকবলের অভাবসহ আরো অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে৷ এসব কারণে আমরা প্রায়ই প্রতিকূলতার সম্মুখীন হই৷ মাঝেমধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়৷ তাই আমার প্রত্যাশা থাকবে, এই সরকার কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকসহ সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং সীমাবদ্ধতাগুলো দূর করার চেষ্টা করবে৷
ছবি: DW
দীপংকর সরকার দীপু, ভিজুয়াল আর্টিস্ট
বেশিরভাগ মানুষের আস্থা অর্জন, জানমালের নিরাপত্তা বিধান, দুর্নীতিকে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা, সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা- ইত্যাদি সরকারের চ্যালেঞ্জ৷ আর সরকারের কাছে প্রত্যাশা থাকবে তারা যেন দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে আনতে পারেন, দুর্নীতি নির্মূল করতে পারেন, মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে পারেন ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে পারেন৷
ছবি: DW
সাদিয়া মরিয়ম রূপা, আলোকচিত্রী ও শিক্ষক
প্রত্যাশা: পাহাড় থেকে সেনাশাসন হটাতে হবে, পাহাড় দখলমুক্ত করতে হবে৷ ক্ষমতাধর ও আইনপ্রণেতাদের জনগণের কাছে জবাবদিহিতা থাকতে হবে৷ বাকস্বাধীনতা খর্ব করা যাবে না৷ বিচারব্যবস্থাকে স্বাধীন করতে হবে৷ জনস্বার্থবিরোধী সব চুক্তি বাতিল করতে হবে৷
ছবি: DW
আলী আরাফাত জাকারিয়া, লেখক
প্রত্যাশা: রাষ্ট্র সংস্কার, বিশেষ করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার, আইন-শৃঙ্খলা ঠিক করা, পুলিশকে দলীয় রাজনীতি থেকে দূরে রাখা, দুর্নীতি দমন ও ছাত্র হত্যার বিচার করা, আর্থিকখাতে দুর্নীতি করা ব্যক্তিদের বিচার এবং সর্বোপরি নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাখা৷ চ্যালেঞ্জ: অর্থনীতি ঠিক করা, সতর্কতার সাথে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করে পুলিশ রিফর্ম করা৷
ছবি: DW
ফারহানা শারমিন শুচি, উদ্যোক্তা
স্বচ্ছ সরকার চাই৷ রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ছিল, সেগুলো নির্মূল করতে হবে৷ দীর্ঘদিন ধরে অন্যায়, অবিচার দেখেছি৷ এগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে হবে৷ দুর্নীতিবাজদের সরিয়ে তরুণ প্রজন্মকে নিয়োগ দিতে হবে৷ দুর্নীতি দূর করতে শিক্ষার্থীদের মনিটরিং দরকার৷
ছবি: DW
আমিরুল, প্রকৌশলী
প্রত্যাশা: কথা বলা ও রাস্তায় নামার অধিকার ফিরিয়ে আনা৷ এখন যে পরিস্থিতি সেটা আগে মোকাবেলা করুক, সব স্বাভাবিক করে আনুক এটাই আশা করি৷ প্রাইমারি ফোকাস হওয়া উচিত রাষ্ট্রকে আগে গড়ে তোলা৷ নৈরাজ্য হবার পরে যে অবস্থা বা গত সরকার ১৫ বছর যেভাবে শাসন করেছে এটা থেকে স্বাভাবিক করার জন্য দেশকে একটা শক্তিশালী জায়গায় নেওয়া উচিত৷ অর্থনৈতিক দিক থেকে এবং সকল দিকই যেন ঠিকঠাক করতে পারে৷
ছবি: DW
শিমু আক্তার, শিক্ষার্থী ও ভলিবল খেলোয়াড়
আশা করবো বর্তমান সরকার শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ গড়ার দাবির কথা মাথায় রেখে রাষ্ট্র পুনর্গঠন করবে৷ তবে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করা এই সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে পারে৷
ছবি: DW
আবুল বাশার, শরবত বিক্রেতা
আমি চাই এই সরকার সুন্দরভাবে দেশ পরিচালনা করবে যেন গরিব, ধনী সবাই শান্তিতে বাস করতে পারেন৷ রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতার প্রতি লোভ এই সরকারকে বিপদে ফেলতে পারে বলেও মনে করেন তিনি৷
ছবি: DW
রুপসী চাকমা, শিক্ষার্থী
পার্বত্য চট্টগ্রামে বহুদিন ধরে ‘সেনাশাসন’ চলছে৷ যত ধরনের বৈষম্য তৈরি করা দরকার, সেটা তারা করেছে৷ আমরা সেনাশাসন প্রত্যাহার চাই৷ কল্পনা চাকমার গুমের যে ঘটনা ঘটেছিল তার তদন্ত ও সন্ধান চাই৷ দীর্ঘদিন ধরে যে স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা ছিল সেটা নির্মূল করা বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে৷ দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা নির্মূল করে সংস্কার করাই হবে অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ৷
ছবি: DW
জয়নাল, পান বিক্রেতা
সরকারের কাছে আমার প্রত্যাশা, দ্রব্যমূল্য যেন কম থাকে, সাধারণ মানুষ যেন কম দামে খাবার কিনতে পারে৷ তবে মনে হয় দ্রব্যের দাম কমানো অনেক কঠিন হবে৷ অবশ্য সরকার যদি আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে, তাহলে হয়তো পারবে৷
ছবি: DW
ইসরাত জাহান ইমু, শিক্ষার্থী
দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সময়ে হয়ে আসা ছাত্র আন্দোলনের সকল দাবি যেন এই সরকার পূরণ করে৷ এছাড়া অফিস-আদালত থেকে শুরু করে সব প্রতিষ্ঠানে গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে হবে৷ কাঠামোগত দুর্নীতি দূর করতে হবে৷ নতুন সংবিধান তৈরি করে প্রশাসনিক কাঠামো এমনভাবে পরিবর্তন করতে হবে যেন পরবর্তী কোনো সরকার আবার স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে না পারে৷