প্যান্ট পরে আর কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে কঙ্গোর বেনি শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে মোটর বাইক চালান ইমেলডা মাম্বু৷ এখন আর তার সন্তাননদের ক্ষুধার্ত অবস্থায় রাতে ঘুমাতে যেতে হয় না৷
বিজ্ঞাপন
দশ বছর আগে মাম্বুর কৃষক স্বামী মারা যান৷ ছয় সন্তানের মা মাম্বুকে বেঁচে থাকার জন্য নতুন পথ খুঁজে বের করতে হয় ৷ মাম্বু যে শহরে বাস করে সেখানকার বেশিরভাগ মানুষই দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করেন৷ তাদের আয় দিনে ১.৯০ ডলারের চেয়েও কম ৷ এই পরিস্থিতিতে উপায়ান্তর না দেখে মাম্বু তার জমানো টাকা দিয়ে শহর থেকে বোডা নামে পরিচিত লাল রংয়ের একটি মোটর বাইক কিনে ফেলেন এবং সাথে সাথেই সেটা চালানো শুরু করে দেন ৷
কঙ্গোতে দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধ ও অরাজকতার শেষ হয় ২০০৩ সালে ৷ বর্তমানে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের পূর্বাঞ্চলে ইসলামি জঙ্গিদের তৎপরতা রয়েছে৷ ২০১৮ সালে রয়টার্স ফাউন্ডেশনের করা এক জরিপ অনুযায়ী নারীদের জন্য বিপজ্জনক শীর্ষ দশটি দেশের একটি কঙ্গো ৷ জাতিসংঘের এক হিসেব অনুযায়ী, দেশের পূর্বাঞ্চলে গত বছর যৌন নির্যাতনের ঘটনা শতকরা ৩৪ ভাগ বৃদ্ধি পায় ৷
এমন এক জায়গাতেই মাম্বুর মতো একজন নারী মোটরবাইক চালিয়ে যাত্রীদের মন জয় করেছেন৷ মাম্বু বলেন, ‘‘শহরের বাইরে একবার মোটর বাইক চালাতে গিয়ে লাল পোশাকধারী এক ডাকাতদলের পাল্লায় পড়েছিলাম, যারা আমার ক্ষতি করতে চেয়েছিল৷ পরে অবশ্য তারা আমার মোটরবাইক দেখে খুবই অবাক হয় এবং আমাকে যেতে দেয়৷’’
ব্যবসার শুরুতেই সৌভাগ্যক্রমে মাম্বু কয়েকজন যাত্রী পেয়ে যায়, যারা তার বাইকে নিয়মিত যাতায়াত করেন৷ মাম্বু বলেন, ‘‘এখন আর আমার বাচ্চাদের না খেয়ে ঘুমোতে যেতে হয় না!’’
‘‘মায়ের মোটর বাইকে আয় করা অর্থ দিয়ে আমরা খাওয়া-দাওয়া, লেখাপড়া ছাড়াও প্রয়োজনীয় সব কিছুই করতে পারি এখন” একথা জানায় মাম্বুর মেয়ে নিমা মান্ডেফু৷
এনএস/এসিবি (রয়টার্স)
২০১৮ সালের ডিসেম্বরের ছবিঘরটি দেখুন...
কঙ্গোর হাতে তৈরি চকোলেট!
কঙ্গো নামটি শুনলেই সবার মনে সহিংসতা, গৃহযুদ্ধ, শান্তিরক্ষা বাহিনীর কর্মকাণ্ডের কথাই ভেসে ওঠে৷ এই যুদ্ধবিধ্বস্ত কঙ্গোতে প্রথম স্থাপিত হয়েছে চকোলেট ফ্যাক্টরি৷ কোম্পানির নাম ‘কোকোয়া কঙ্গো’৷
ছবি: DW/J. Raupp
বেনির কোকো বীজ
বিশ্বে কোকো বিন রপ্তানির জন্য কঙ্গোর বেনি টাউন অনেক আগে থেকেই সুপরিচিত৷ কোকোয়া কঙ্গো’র প্রতিষ্ঠাতা অ্যাডেলে গেউইট ও ম্যাথিউ চেম্বার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা বেনির এই কোকো বিনকে রপ্তানির পরিবর্তে দেশেই জনপ্রিয় করবেন৷ সেই ভাবনা থেকেই দেশের প্রথম চকোলেট ফ্যাক্টরি নির্মিত দেশে উৎপাদিত কোকো বীজ থেকে৷
ছবি: DW/J. Raupp
বীজের জন্য অপেক্ষা
কোকো বীজের জন্য রীতিমতো সংগ্রাম করতে হয়৷ বনে-জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা সন্ত্রাসীদের চোখ এড়িয়ে দুর্গম পথ দিয়ে কোকো বীজ আসে ম্যাথিউদের কারখানায়৷ তাঁদের নিজস্ব চাষীদের প্রায় সবাই নারী৷ এর ওপর রয়েছে রপ্তানিকারকদের দৌড়াত্ম্য৷
ছবি: DW/J. Raupp
নিজে নিজে শেখা
অ্যাডেলে গেউইট বড় হয়েছেন ক্যামেরুনে, ফিন্যান্স নিয়ে পড়াশোনা করেছেন কেনিয়াতে৷ কঙ্গোর নারীদের সাবলম্বী হতে সহায়তা করতেই এসেছিলেন এখানে৷ নিজে নিজে কোকো, দুধ, মাখন মিশিয়ে চকোলেট বানাতে শেখেন তিনি৷
ছবি: DW/J. Raupp
সম্পূর্ণ হাতে তৈরি
কোকোয়া কঙ্গো প্রতিষ্ঠার তিন মাসে যত চকোলেট-বার উৎপাদিত হয়েছে তার সবই খুব সাবধানে স্টোভে জ্বালিয়ে প্রস্তুত করা৷ কয়েক হাজার বার তৈরি হয়েছে এখানে৷ ২০১৯ সাল থেকে প্রতি মাসে ২০ হাজার চকোলেট-বার তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে তাদের৷
ছবি: DW/J. Raupp
১০০ ভাগ দেশি
কোকোয়া কঙ্গো-তে কাজ করেন মেমি সিমিয়ার৷ পাঁচ সন্তানের মা এই কর্মী এখানে চকোলেট-বার প্যাকেজিংয়ের কাজ করেন৷ তিনি জানান, টিভিতে চকোলেট খেতে দেখেছেন৷ এ যে সত্যিই তৈরি করা যায়, এর স্বাদ নেওয়া যায় এমন ভাবনাও ছিল না৷ এখন শতভাগ দেশে তৈরি চকোলেটের স্বাদ দিতে পারছেন নিজের সন্তানদের৷
ছবি: DW/J. Raupp
দৃ্ষ্টিনন্দন প্যাকেট
আর সব চকোলেট কোম্পানির মতো রঙিন জরি কাগজে, কোম্পানির লেবেল সাঁটা ও গুণগান বর্ণনা করা প্যাকেট নয় কোকোয়া কঙ্গোর৷ স্থানীয় শিল্পীদের আঁকা ছবি দিয়ে মলাট করা হয় কোকোয়া কঙ্গো’র চকোলেট-বারের৷ ৩টি ৫০ গ্রামের বারের এই চকোলেট প্যাকেটের দাম পড়ে ১৭ ইউরো৷
ছবি: DW/J. Raupp
পদে পদে বিপদ
বেনির কোকো উৎপাদনকারী নারীদের জন্য কাজ করেন সিলভিয়া৷ তিনি জানান, এখানে নারীরা ভীষণ অনিরাপদ৷ মাঠে কাজ করার সময় ধর্ষিত হওয়া, অপহৃত কিংবা খুন হয়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক ঘটনা৷ কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করলে নিরাপত্তা পাওয়া যায়, কিন্তু কৃষকদের এখানে নিরাপত্তা নেই৷ চকোলেট শিল্পকে রক্ষা করতে সরকারকেও দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করেন সিলভিয়া৷