ফের জঙ্গি হামলায় ২২ জনের মৃত্যু ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোয়। আক্রমণ চালিয়েছে এডিএফ জঙ্গিরা।
বিজ্ঞাপন
ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোয় ফের সাধারণ মানুষের উপর আক্রমণ চালালো এডিএফ জঙ্গিরা। নিহত ২২ জন। তার মধ্যে ১০ জন নারী। এর আগে নতুন বছরের গোড়ায় ২৫ জনকে হত্যা করেছিল জঙ্গিরা। স্থানীয় মানুষের দাবি, 'গণহত্যা' শুরু হয়েছে। কিন্তু সরকার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
মঙ্গলবার কঙ্গোর পূর্ব প্রান্তে মেওয়ান্ডা গ্রামে হানা দেয় অ্যালায়েড ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সের (এডিএফ) জঙ্গিরা। স্থানীয় মানুষের দাবি, জঙ্গিদের কাছে কাটারি এবং বন্দুক ছিল। গ্রামে ঢুকে একের পর এক বাড়িতে হামলা চালায় তারা। বাদ দেওয়া হয়নি শিশু এবং নারীদের। প্রবল মারের মুখে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ২২ জনের। ১০ জন গুরুতর আহত। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা হয়েছে। এর আগে ৩১ ডিসেম্বর রাতেও জঙ্গিরা আক্রমণ চালিয়ে ২৫ জনকে হত্যা করেছিল। ২০২০ সালে একাধিকবার এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে ওই জঙ্গি সংগঠনটি।
প্রতি দু’সেকেন্ডে একজন ঘরছাড়া
আজ বিশ্ব শরণার্থী দিবস৷ জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, ২০১৭ সালে প্রতি দু'সেকেন্ডে একজন বাস্তুচ্যূত হয়েছেন৷ মিয়ানমার, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, সিরিয়াসহ কয়েকটি দেশ থেকে অনেক মানুষ বাসভূমি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AA/E. Omic
গৃহহীন যারা
সহিংসতা, যুদ্ধ ও সংঘাতের ফলে বিশ্বে এখন ৬৮ দশমিক ৫ মিলিয়ন, অর্থাৎ ৬ কোটি ৮৫ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত অবস্থায় আছেন৷ মঙ্গলবার জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক সংস্থা ইইএনএইচসিআর এ কথা জানিয়েছে৷ জাতিসংঘের হিসেব মতে, ২০১৬ সালে সারা বিশ্বে ৬ কোটি ৫৬ লাখ মানুষ ঘরছাড়া হয়েছিল৷ সেবছর মূলত মিয়ানমার থেকেই বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল৷ .
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
দু’ সেকেন্ডে একজন
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, গতবছরই ১ কোটি ৬২ লক্ষ মানুষ নতুন করে গৃহহীন হয়েছে৷ এদের মধ্যে যাঁরা প্রথমবার বাধ্য হয়ে ঘর ছেড়েছেন, তাঁরাও যেমন আছেন, তেমনি আছেন যাঁরা আগে থেকেই উদ্বাস্তু, তাঁরাও৷ অর্থাৎ প্রতিদিন ৪৪,৪০০ মানুষ বিতাড়িত হচ্ছেন এবং প্রতি দু'সেকেন্ডে ১ জন করে গৃহহীন হচ্ছেন৷
যুদ্ধ, হিংসা এবং উৎপীড়নের জন্য ৬ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষ নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Swarup
দেশের মধ্যে
অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ বা হিংসার জন্য দেশের ভেতরেই অনেক মানুষ বাস্তুভিটা ছেড়ে অন্য জায়গায় যেতে বাধ্য হয়৷ তাঁদের বলা হয় আইডিপি (ইন্টারনালি ডিসপ্লেসড পিপল)৷ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে বিশ্বে প্রায় ৪কোটি আইডিপি ছিল৷ এই সংখ্যাটা আগের বছরের তুলনায় কমেছে৷ কলম্বিয়া, সিরিয়ায় এদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি৷
ছবি: picture-alliance/AA/E. Omic
সিরিয়ার দুর্দশা
গত ৭ বছর ধরে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার ওপর দিয়ে নানা ঝড় বয়েছে৷ ২০১৭ সালের শেষ অবধি প্রায় ৬৩ লাখ মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল৷ এছাডা়ও সিরিয়াতে প্রায় ৬২ লাখ মানুষ দেশের ভেতরেই উদ্বাস্তু জীবন কাটাচ্ছে৷
ছবি: DW/S. Derks
আফগানিস্তান
সিরিয়ার পরেই যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের স্থান৷ প্রচুর মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে আফগানিস্তান থেকে পালাচ্ছেন৷ বিশ্বব্যাপী নজিরবিহীনভাবে যুদ্ধ, সহিসংতা ও উৎখাতের কারণে প্রতিদিনই রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে৷ অন্যান্য দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে বিভিন্ন সংস্থার দ্বারে দ্বারে ঘুরছে যুদ্ধবিধ্বস্ত এসব মানুষ৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Paduano
দক্ষিণ সুদানের অবস্থা
দক্ষিণ সুদানে গৃহযুদ্ধ চলছে ২০১৩ সাল থেকে৷ গৃহযুদ্ধের কবলে পড়ে গত কয়েক বছরে দেশটির লাখ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে৷ জাতিসংঘের মতে, এই দেশ সবচেয়ে খারাপ অবস্থার মধ্যে আছে৷
ছবি: Reuters/H. Kalis
তুরস্ক
প্রতিবেদন অনুযায়ী, তুরস্কে প্রচুর শরণার্থী রয়েছে৷ ২০১৭ সালের শেষের দিক পর্যন্ত তুরস্কে প্রায় ৩৫ লক্ষ শরণার্থী ছিল৷ তার মধ্যে অধিকাংশই সিরিয়ার মানুষ৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Gouliamik
গরিব দেশেও
অ্যামেরিকা আর ইউরোপ যাঁরা পৌঁছচ্ছেন, তাঁরা ছাড়াও অনেক শরণার্থী কম আয় সম্পন্ন বা মধ্যম আয় সম্পন্ন দেশগুলোতে আশ্রয় নিচ্ছেন৷ জাতিসংঘ শরণার্থী কমিশন (ইউএনএইচসিআর) বলছে, প্রায় ৮৫ শতাংশ শরণার্থী উন্নয়নশীল দেশে আশ্রয় নিচ্ছেন, যাঁরা খুবই দরিদ্র৷ এদের মধ্যে আফগানিস্তান, দক্ষিণ সুদান, মিয়ানমার, সোমালিয়া, সুদান এবং কঙ্গো, উগান্ডার মানুষই বেশি৷
ছবি: Getty Images/AFP/J.C. Magnenet
8 ছবি1 | 8
স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, মেওয়ান্ডায় হত্যা চালানোর পর পাশেই আরেকটি গ্রামে একই ভাবে আক্রমণ চালিয়েছিল জঙ্গিরা। তবে সেখানে নিহতের সংখ্যা এখনো জানা যায়নি।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা সংগঠন দীর্ঘদিন ধরেই ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোয় শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ সেখানে লেগেই আছে। সম্প্রতি এডিএফ যে ঘটনা ঘটাচ্ছে, তাও এথনিক ক্লিনজিংয়ের ঘটনা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। স্থানীয় মানুষ তো বটেই, জাতিসংঘও নিউ ইয়ার ইভ এবং মঙ্গলবারের ঘটনাকে গণহত্যা বলে দাবি করেছে। স্থানীয় মানুষের দাবি, প্রশাসন হামলা রুখতে ব্যর্থ। প্রতিদিন আক্রমণের ভয়ে থাকেন সাধারণ মানুষ। নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা জাতিসংঘও করে উঠতে পারেনি।