লাইট ডিটেকশন অ্যান্ড রেঞ্জিং পদ্ধতি, যার নাম ‘লিডার'৷ এই পদ্ধতিতে কঙ্গো নদীর অববাহিকায় কী পরিমাণ বনভূমি, সবুজসম্পদ বা ‘বায়োমাস' আছে, তা হিসেব করে দেখা হচ্ছে – স্যাটেলাইটের ছবির সঙ্গে মিলিয়ে৷
বিজ্ঞাপন
এর ফলে কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের বনভূমির পরিস্থিতি হয়ত বদলাবে না, কিন্তু কার্বন নির্গমন সার্টিফিকেট বেচার সময় কঙ্গোর ভবিষ্যতে লাভবান হবার সম্ভাবনা থাকবে৷ ধরা যাক একটি বিমান নির্দিষ্ট রুট বরাবর পশ্চিম আফ্রিকার কঙ্গো নদীর অববাহিকার উপর দিয়ে উড়ে চলেছে৷ একই সঙ্গে বিমানে রাখা বিশেষ যন্ত্র দিয়ে নীচের গাছপালা, বনজঙ্গল মাপা হচ্ছে৷
বিমানটিতে রয়েছে তথাকথিত ‘লিডার' প্রণালী: এটি এমন একটি রাডার, যা দিয়ে ভূপৃষ্ঠে যা কিছু আছে, তা স্ক্যান করা চলে৷ এই তথ্য থেকে পরে বনভূমির পরিস্থিতি যাচাই করা চলে: বনজঙ্গল অক্ষত আছে কিনা, নাকি তা ইতিমধ্যেই গাছ কাটা কিংবা গোচারণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷
স্ক্যানের ফলাফল থেকে যে ত্রিমাত্রিক মানচিত্র তৈরি হবে, তাতে জঙ্গলের বিভিন্ন গাছের উচ্চতা, বাড়িঘর, রাস্তা, ফাঁকা মাঠ, সব কিছু দেখা যাবে৷ এই সব তথ্য মিলিয়ে জানা যাবে, এলাকাটি কী পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড ধরে রাখতে পারে৷
কী নেই ভিরুঙ্গা পার্কে!
আফ্রিকার দেশ ডিআর কঙ্গোর ভিরুঙ্গা ন্যাশনাল পার্কে কী নেই? সক্রিয় আগ্নেয়গিরি, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বন, সাভানা আর বরফে আচ্ছাদিত পর্বতমালা, গোরিলা, বিভিন্ন জাতের পাখি, উদ্ভিদ – আছে সবই৷ কিন্তু তারপরও যেন কী নেই?
ছবি: WWF/Brent Stirton
বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ
সক্রিয় আগ্নেয়গিরি, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বন, সাভানা আর বরফে আচ্ছাদিত পর্বতমালা সমৃদ্ধ আফ্রিকার দেশ ডিআর কঙ্গোর ‘ভিরুঙ্গা ন্যাশনাল পার্ক’৷ তাই ইউনেস্কো ১৯৭৯ সালে এই পার্কের নাম বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে৷ এর আগে ১৯২৫ সালে তৎকালীন ঔপনিবেশিক শাসক বেলজিয়াম ভিরুঙ্গাকে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছিল৷
ছবি: WWF/Brent Stirton
বিভিন্ন জাতের পাখি ও উদ্ভিদ
ভিরুঙ্গা পার্কে প্রায় ৭০০ প্রজাতির পাখি ও দুই হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে৷ পাশের গোমা শহরের জন্য জ্বালানি সরবরাহ করতে গিয়ে প্রতি বছর পার্কের বনাঞ্চলের একটা বড় অংশ হারিয়ে যাচ্ছে৷ জঙ্গিরাও এই বনের কাঠ কেটে বিক্রি করে সেই অর্থ দিয়ে অস্ত্র কিনে থাকে৷
ছবি: WWF/Brent Stirton
গোরিলার বাস
ভিরুঙ্গা পার্কের অন্যতম বাসিন্দা প্রায় ২০০ গোরিলা৷ ইউনেস্কোর এই পার্ককে স্বীকৃতি দেয়ার পেছনে বিলুপ্ত হতে থাকা এই প্রাণীর অবস্থানও একটা কারণ৷
ছবি: WWF/Brent Stirton
তেল অনুসন্ধান নয়
লন্ডন-ভিত্তিক একটি কোম্পানি ‘সোকো ইন্টারন্যাশনাল’ ভিরুঙ্গা পার্কে তেল অনুসন্ধান করতে চেয়েছিল৷ কিন্তু আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার’ বা ডাব্লিউডাব্লিউএফ এর প্রতিবাদ জানালে সেই পরিকল্পনা বাদ হয়ে যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অনুসন্ধানে যে বিপদ হতে পারতো
তেল অনুসন্ধানের অনুমতি দিলে ভিরুঙ্গা পার্কের এডওয়ার্ড লেকের পানি দূষিত হয়ে পড়তো৷ এতে ঐ লেকের ধারে বাস করা প্রায় ৫০ হাজার পরিবারের সমস্যা হতো৷ কারণ তাঁরা পানি পান ও রান্নার কাজের প্রয়োজনীয় পানি ঐ লেক থেকেই সংগ্রহ করে থাকেন৷ এছাড়া লেকে থাকা মাছগুলোও মরে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল৷ এই মাছ ঐ পরিবারগুলোর আয়ের একটা বড় উৎস৷
ছবি: WWF/Brent Stirton
যুদ্ধ থেকে পালিয়ে
মহিলারা পার্কের একটি স্থানীয় বাজারে শুঁটকি বিক্রি করছেন৷ ডিআর কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠী সক্রিয় থাকায় ভয়ে সেখান থেকে অনেক মানুষ পালিয়ে এই পার্কে অবস্থান নিয়েছে৷ অবশ্য এই পার্কেরও একটা অংশে এক সময় অনেক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে৷
ছবি: WWF/Brent Stirton
লোকদের বোঝাতে হবে
পার্কের ডিরেক্টর ইমানুয়েল দ্য মেরোড বলেন, ‘‘ভিরুঙ্গাকে বাঁচাতে হলে আমাদের মানুষদের বোঝাতে হবে যে বন সংরক্ষণের একটা আর্থিক দিক রয়েছে৷’’
ছবি: Getty Images
সংরক্ষণের আর্থিক দিক
ডাব্লিউডাব্লিউএফ বলছে ভিরুঙ্গা পার্ককে ঘিরে প্রায় ৪৫ হাজার চাকরি সৃষ্টি করা যেতে পারে৷ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, মৎস্য উৎপাদন, ইকো ট্যুরিজম, গবেষণা, শিক্ষা – এ সব খাতে এই চাকরির ব্যবস্থা করা সম্ভব৷ ঠিকমতো পরিকল্পনা করলে এই পার্ক থেকে বছরে প্রায় দশ লক্ষ ইউরো আয় করা সম্ভব৷
ছবি: WWF/Brent Stirton
8 ছবি1 | 8
কঙ্গো নদীর অববাহিকা আয়তনে প্রায় পশ্চিম ইউরোপের সমান৷ এখানকার সব তথ্য সংগ্রহ করে তার মূল্যায়ন করতে বেশ কয়েক মাস সময় লাগবে৷ কিন্তু সেই তথ্য হবে অত্যন্ত কাজের, বলে মনে করেন ডাব্লিউডাব্লিউএফ বা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার-এর এলভিস শিবাসু:
‘‘অরণ্য সংরক্ষণ এবং ভবিষ্যতে সিওটু সার্টিফিকেট নিয়ে ব্যবসার প্রস্তুতি হিসেবে এটা গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোর পক্ষে ভালো৷''
যদি কখনো এমিশন বাণিজ্য থেকে এই অঞ্চলে অর্থসমাগম হয়, তাহলে মধ্য আফ্রিকার দেশগুলি কঙ্গো অববাহিকার অরণ্যাঞ্চলকে বাঁচিয়ে রেখে অনেক বেশি রোজগার করবে৷ অবশ্য সে প্রক্রিয়া শুরু হতে এখনো অনেক বাকি – ওদিকে সময় ফুরিয়ে আসছে৷ জনসংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে; সেই ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জ্বালানির চাহিদা মোটানোর জন্য গাছ কেটে কাঠকয়লা তৈরি করে, ট্রাক-ট্রাক কাঠকয়লা শহরে পাঠানো হচ্ছে৷
‘লিডার' লাইট ডিটেকশন অ্যান্ড রেঞ্জিং পদ্ধতিতে কঙ্গো-র ‘বায়োমাস' বা অরণ্যসম্পদের পরিমাপ করার প্রকল্পের দায়িত্বে আছেন অরেলি শাপিরো৷ শুধু বিমান থেকে তোলা ছবি দিয়ে সে কাজ করা সম্ভব নয়৷ সেজন্য স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবিরও প্রয়োজন পড়ে, জানালেন শাপিরো:
‘‘বিমান থেকে পাওয়া লিডার-তথ্যকে স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়৷ মহাকাশ থেকে গোটা দেশের বনভূমিকে এক নজরে দেখা যায়৷''