1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কট্টরপন্থার গ্রাসে পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
২৫ জানুয়ারি ২০২১

শাঁখা-পলা না পরলে ট্রোল, নবমীর দিন মাংস খাওয়ার কথা বললে গণমাধ্যমে গালিগালাজ৷ কট্টরপন্থীদের দাপট বাড়ছে পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতিতে৷

Indien Coronavirus Durga Puja
ছবি: Sudipta Bhoumick

দিনকয়েক আগের ঘটনা, বাংলা টিভি সিরিয়ালের এক নবীন অভিনেত্রী বিয়ের পর এক পারিবারিক অনুষ্ঠানে নিজের ছবি সামাজিক মাধ্যমে দিয়েছিলেন৷ তিনি কেন হিন্দু ধর্মের রীতি মেনে শাঁখা-পলা পরেননি, সেই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো ট্রোল করা হয় তাঁকে৷ শেষে তিনি স্টেটাস দিতে বাধ্য হন যে, শাঁখা-পলা নিয়ে কেউ জ্ঞান দেবেন না৷ জ্ঞানী হওয়ার থেকে তিনি গুণী হতেই বেশি পছন্দ করবেন৷ বাঙালি নারীরা সিঁদুর, শাখা-পলা পরবেন, না কি তাকে পুরুষতান্ত্রিকতার চিহ্ন বলে বর্জন করবেন, সেটা তাঁদের সিদ্ধান্ত৷ কিন্তু ঘটনা হল, হিন্দু বাঙালির ঠিক কেমন হওয়া উচিত, সে নিয়ে জ্ঞান দেওয়ার মানুষ এখন খুবই বেড়ে গেছে৷ ভোট যত এগিয়ে আসছে, তত এই ধরনের গুরুঠাকুরের সংখ্যা বাড়ছে৷

সম্প্রতি এক টিভি চ্যানেলের বিতর্কসভায় বিখ্যাত গায়ক এবং এক সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় রাজনীতির কাছে তাঁর প্রত্যাশা সম্বন্ধে বলতে গিয়ে বলেন, দুর্গাপুজোয়নবমীর দিন গরুর মাংস খেতে পারবেন, এমন স্বাধীনতা তাঁর চাই৷ অবশ্যই নবমীর দিন মাংস খাওয়া সম্পন্ন বাঙালির এক পুরনো ‘‌ট্র্যাডিশন'‌, যার সঙ্গে ধর্মীয় আচারের কোনও যোগ নেই এবং উত্তর বা পশ্চিম ভারতে প্রচলিত ‘‌নবরাত্রি'‌র সঙ্গে কোনো মিল নেই৷ অভিনেত্রী, টিভি সিরিয়ালের পরিচিত মুখ দেবলীনা দত্ত প্রকাশ্যে সমর্থনও জানান অনিন্দ্যের এই দাবিতে, যে দরকার হলে তিনি অনিন্দ্যর বাড়িতে গিয়ে গোমাংস রেঁধে দিয়ে আসতে রাজি৷ এর পরই দেবলীনাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় জঘন্য আক্রমণের মুখে পড়তে হয়৷ তাঁকে গণধর্ষণ, এমনকী খুন করার হুমকিও দেয় তারা, যারা মনে করে ওঁরা হিন্দুত্ববিরোধী কথা বলছেন৷

কে বাড়িতে কী খাবেন, কবে খাবেন সেটা তো তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়!

কিন্তু বাংলায় বিজেপির রাজনৈতিক প্রভাব যত বাড়ছে, ততই কি এ ধরনের অবাঙালি সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে?‌ অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় মনে করেন, ‌অবাঙালি সংস্কৃতিও সংস্কৃতি৷ ঠিক যেমন বাঙালি সংস্কৃতি৷ তার একটা বিশেষ জায়গা আছে সকলের কাছে৷ বাঙালির ক্ষেত্রে যেটা হয়, বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের ক্ষেত্রে, তাঁরা যেমন ইংরেজি ভাষা শেখেন, সবসময় সেটাকেই মুকুট পরিয়ে রেখে দেন৷ নিজের ভাষা মাটিতে গড়াগড়ি যায়, সেদিকে নজরও যায় না৷ সেটা পশ্চিমবঙ্গের বাঙালির ক্ষেত্রে হয়েছে৷ অনিন্দ্য মনে করেন, একই রকম ভাবে, সংস্কৃতির ক্ষেত্রে একটা আত্মশ্লাঘার জায়গা আছে৷ যখনই মনে হয় কোনও অন্য স্রোত আসছে, নতুন বলেই হয়তো সেটাকে এমনভাবে আঁকড়ে ধরার চেষ্টা হয়, তখন নিজস্বতা যেটুকু আছে, যেটা বাংলার মানুষের সংস্কৃতি, সেটা বিপন্ন হয়ে পড়ে৷ ভয়ের জায়গাটা সেটাই৷‌

‘‘সংস্কৃতি এরকম না, যে এত বিধিনিষেধ জারি করে’’: অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়

This browser does not support the audio element.

অনিন্দ্য বলছেন, ‘‌‘‌আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির একটা আধুনিকতা ছিল৷ আজকে এমন একটা সংস্কৃতি এসে যদি আমাদের সেই ভাবনাগুলোকে দূরে সরিয়ে দেয়, তখন আমরা আরও বেশি বিপন্ন হয়ে পড়ব৷ সংস্কৃতি মানুষকে মুক্তচিন্তা করতে শেখায়৷ সংস্কৃতি এরকম না, যে এত বিধিনিষেধ জারি করে৷'‌'

বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য কিন্তু ধর্মীয় আচার বা বিধিনিষেধের এই বিরোধিতার যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন না৷ তাঁর বক্তব্য, ‘‌‘‌নবমীর দিন, বা অষ্টমীর দিন গোমাংস ভক্ষণ, এটা কি বাঙালিকে আহত করে না?‌ বাঙালি কি এটা গ্রহণ করে?‌ এটা তো বাঙালি সংস্কৃতি নয়৷ ওটা মানতে পারবে না বলেই বাঙালি সর্বস্ব ছেড়ে দিয়ে ওপার থেকে এপারে চলে এসেছিল৷ এই খাদ্যাভ্যাসটা ওপারে রপ্ত করতে পারলেই, শাঁখা-নোয়া ছেড়ে দিতে পারলেই বাঙালিকে তো স্বভূমে বিতাড়িত হয়ে এপারে চলে আসতে হতো না৷ বাঙালি তো নিজের আইডেন্টিটির জন্যেই এখানে এসেছে৷ উদ্বাস্তু হয়ে এসেছে৷ নিজের সর্বস্ব ছেড়ে শেয়ালদা স্টেশনের ফুটপাথে আশ্রয় নিয়েছে৷ এটাই তো বাঙালির ইতিহাস! (‌কাজেই)‌ এটা তো প্রগতিশীলতা নয়৷‌'‌'

‘‘বাঙালি তো নিজের আইডেন্টিটির জন্যেই এখানে এসেছে’’: শমীক ভট্টাচার্য

This browser does not support the audio element.

যদিও সংস্কৃতির জগতের অধিকাংশ মানুষই এই বিভাজনের তত্ত্বকে, এই কট্টরপন্থাকে মানছেন না। রবিবার গড়িয়াহাট মোড়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দেখিয়েছেন গায়ক, প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ কবীর সুমন৷ সোমবার ধর্মতলায় জড়ো হচ্ছেন টালিগঞ্জের এক ঝাঁক তারকা, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, দেবলীনা দত্তরা নিজেদের মত প্রকাশ করেছেন বলে যে লাগাতার হুমকির মুখে পড়ছেন, তার প্রতিবাদ জানাতে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ