চতুর্থবার চ্যান্সেলরের দায়িত্ব নেবার পর জার্মান সরকার প্রধান আঙ্গেলা ম্যার্কেল প্রথম সাক্ষাৎকারেই তাঁর এই মিশনের ঘোষণা দেন৷
বিজ্ঞাপন
জাতীয় নির্বাচনে প্রথমবার অংশ নিয়েই এবার জার্মানির কট্টর ডানপন্থি দল অলটারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড বা এএফডি ১২ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট পায়, যা তৃতীয় সর্বোচ্চ৷ অন্যদিকে, আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সিডিইউ ও জোটভুক্ত মধ্য-বামপন্থি দল এসপিডি বেশ জনসমর্থন হারিয়েছে৷
এএফডি বরাবরই ম্যার্কেলের কড়া সমালোচক৷ অনেক আগে থেকেই তারা ম্যার্কেলকে চ্যান্সেলরের পদ থেকে হটানোর দাবি করে আসছে৷
বুধবার জার্মানির রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যম এআরডি'কে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন যে, তাঁর দল যেটুকু জনসমর্থন হারিয়েছে, তা ফের জিততে হবে৷
‘‘যারা প্রতিবাদ করতে গিয়ে ঐ দলটিকে ভোট দিয়েছেন, তাদের সমস্যা সমাধান করতে হবে৷'' বলেন ম্যার্কেল৷ ‘‘এর অর্থ হলো, আমাদের লক্ষ্য জার্মান পার্লামেন্ট থেকে এই দলের প্রতিনিধিদের সংখ্যা কমানো৷''
এএফডি নেতাদের আপত্তিকর যত মন্তব্য
জার্মানির ডানপন্থি পপুলিস্ট পার্টি অল্টারনেটিভ ফর জার্মানির (এএফডি) নেতারা গত কয়েকমাস ধরে একের পর এক উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন৷ তাদের সেরকম কয়েকটি বক্তব্য এখানে তুলে ধরা হলো৷
ছবি: picture alliance/ZB/H. Schmidt
ফ্রাউকে পেট্রি
‘অবৈধভাবে জার্মানিতে প্রবেশকারী শরণার্থীদের দিকে গুলি ছোড়া উচিত জার্মানির বর্ডার পুলিশের’, বলেছিলেন এএফডি’র কো-চেয়ার৷ ২০১৬ সালে জার্মানির একটি আঞ্চলিক পত্রিকাকে তিনি জানান, পুলিশ অফিসাররা সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে প্রয়োজনে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে পারে৷ সর্বশেষ সাবেক কমিউনিস্ট পূর্ব জার্মানির নেতা এরিক হ্যোনেকার এ ধরনের কথা বলেছেন৷
ছবি: Getty Images/T. Lohnes
বও্যর্ন হ্যোকে
জার্মানির থ্যুরিঙ্গা রাজ্যের এএফডির প্রধান বার্লিনের হলোকস্ট মেমোরিয়ালকে ‘মন্যুমেন্ট অফ শেইম’ আখ্যা দিয়ে জার্মানিতে নাৎসি অতীতের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন৷ গুরুত্বপূর্ণ এক নির্বাচনের বছরে এই মন্তব্য করায় তাকে বহিস্কার করার পথে যেতে বাধ্য হয়েছেন এএফডির সদস্যরা৷
ছবি: picture-alliance/Arifoto Ug/Candy Welz
আলেক্সান্ডার গাউলান্ড
এএফডির ডেপুটি চেয়ারম্যান আলেক্সান্ডার গাউলান্ড গতবছর বলেন, জার্মানির জাতীয় ফুটবল দলের রক্ষণভাগের খেলোয়াড় জ্যেরম বোয়াটেংকে তাঁর পারফর্মেন্সের জন্য অনেকে প্রশংসা করলেও, তাঁর মতো কাউকে কেউ প্রতিবেশী হিসেবে চাইবে না৷ কৃষ্ণাঙ্গ বোয়াটেংকে নিয়ে এমন মন্তব্য সমালোচনার ঝড় তোলে জার্মানিতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Murat
বিট্রিক্স ফন স্টর্চ
প্রাথমিকভাবে এএফডি ইউরো এবং বেইলআউটের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েছিল৷ কিন্তু পরবর্তীতে দ্রুতই শরণার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় দলটি৷ ইউরোপের এই আইনপ্রণেতা বলেছেন, ‘‘যারা সীমান্তে আমাদের থামার নির্দেশ গ্রহণ করে না, তারা আক্রমণকারী৷ আর সেসব আক্রমণকারীকে প্রতিহত করতে হবে৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Murat
মার্কুস প্রেতজেল
এএফডির নর্থ রাইন-ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের চেয়ারম্যান মার্কুস প্রেতজেল৷ ফ্রাউকে পেট্রির নতুন স্বামীও তিনি৷ বার্লিনে গত বছর ক্রিসমাস মার্কেটে প্রাণঘাতি হামলার পর তার মন্তব্য, ‘‘ম্যার্কেলের কারণেই প্রাণ হারিয়েছে এরা৷’’
ছবি: picture alliance/dpa/M. Murat
আন্দ্রে ভেন্ডট
স্যাক্সনি রাজ্যের সাংসদ সম্প্রতি জানতে চেয়েছেন অভিভাবকহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক শরণার্থীর পেছনে রাষ্ট্র কতটা খরচ বহন করবে৷ তাঁর এই বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা হয়েছে৷ গত বছরের জুলাই অবধি ৫২,০০০ অভিভাবকহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক শরণার্থী জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছে৷
ছবি: picture alliance/ZB/H. Schmidt
6 ছবি1 | 6
অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে মহাজোট সরকার গঠনের পথ পরিষ্কার করার পরও মাত্র নয় ভোটের ব্যবধানে চতুর্থবার চ্যান্সেলর নির্বাচিত হয়েছেন ম্যার্কেল৷
যদিও কে তাঁকে ভোট দিয়েছেন, কে দেননি তা জানা সম্ভব নয়, তারপরও বোঝাই যায়, তাঁর ক্রিস্টিয়ান ব্লক ও মধ্যবামপন্থি এসপিডি'র জোটের বাইরের সংসদ সদস্যরাই তাঁর বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন৷
জার্মান সংসদ বুন্ডেসটাগে এএফডি'ই এখন সবচেয়ে বড় বিরোধী দল৷ এই দলটির প্রধান সমস্যা হলো, ম্যার্কেলের শরণার্থী নীতি৷ নির্বাচনের আগেও প্রচারণার সময় তারা ম্যার্কেলকে গদি থেকে নামানোর ডাকই দিয়েছিলেন৷
বুধবার সংসদে চ্যান্সেলর নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবার সময় এএফডির এক নেতার সহকারী দর্শনার্থীদের জন্য নির্ধারিত স্থান থেকে একটি প্ল্যাকার্ড উঁচিয়ে ধরেন, যাতে লেখা ছিল, ‘‘ম্যার্কেলের বিদায় হোক''৷পরে অবশ্য তাকে সরিয়ে নেয়া হয়৷
নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে ম্যার্কেলের বিপক্ষে ভোট দেবেন উল্লেখ করায় এএফডি'র আরেক সংসদ সদস্যও জরিমানা গুনেছেন৷ এএফডি'র সমর্থকদের অনেককেই ‘নিও নাৎসি' বলে ২০১৬ সালে এএফডি'র লাইপসিশ শাখার প্রধানের গাড়ির নাম্বার নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছিল৷ তাঁর গাড়ির নাম্বার ছিল এএইচ১৮১৮৷ ‘এএইচ' হলো অ্যাডলফ হিটলারের নামের আদ্যাক্ষর৷ আর সংখ্যাগুলো হলো প্রথম ও অষ্টম বর্ণ৷ বলা হয়ে থাকে, এই দু'টি বর্ণ নব্য নাৎসিদের একটি কোড৷
শিল্পীর তুলিতে আঙ্গেলা ম্যার্কেল
তাঁর ‘মেন্টর’ হেলমুট কোলের মতোই এবার চতুর্থ কর্মকাল শুরু করতে চলেছেন চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ স্বাভাবিকভাবেই, রাজনীতির জগতে তাঁর গুরুত্বের প্রতিফলন ঘটেছে শিল্পের জগতে, যার কিছু নিদর্শন রয়েছে এই ছবিঘরে৷
ছবি: Elizabeth Peyton
ম্যার্কেলের মানবিকতা
ছবিতে ম্যার্কেল সাধারণত নীরব, নিরুদ্বিগ্ন, নিরুত্তাপ৷ উত্তর আয়ারল্যান্ডের চিত্রশিল্পী কলিন ডেভিডসন তাঁর ম্যার্কেল প্রতিকৃতিতে বিশ্ববরেণ্য রাজনীতিকের মানবিক দিকটি ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন৷ ২০১৫ সালে আঁকা ছবিটি টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ অলঙ্কৃত করে, ম্যার্কেল সে বছরই ‘পার্সন অফ দ্য ইয়ার’ হিসেবে মনোনীত হন৷ তার পিছনে ছিল চলতি উদ্বাস্তু সংকটে তাঁর সাহসী ও সহানুভূতিপূর্ণ মনোভাব৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Time Magazine
পপ আইকন ম্যার্কেল
মার্কিন চিত্রশিল্পী এলিজাবেথ পিটন ‘ভোগ’ ফ্যাশন ম্যাগাজিনের জন্য ২০১৭ সালে ম্যার্কেলের এই প্রতিকৃতিটি আঁকেন৷ পিটনের ছবির বৈশিষ্ট্য হলো, তিনি ম্যার্কেলকে এক তরুণীর অবয়ব প্রদান করেছেন৷ পিটন এভাবেই বিভিন্ন পপ তারকার ছবি এঁকেছেন৷
ছবি: Elizabeth Peyton
ফেডারাল শিল্পসংগ্রহের অঙ্গ
১৯৭০ সাল থেকে ‘বুন্ডেসকুন্স্ট্জামলুং’ বা ফেডারাল শিল্পসংগ্রহে যুদ্ধপরবর্তী জার্মান শিল্পকলার নমুনা সংরক্ষণ করা হচ্ছে৷ ম্যার্কেলের এই প্রতিকৃতিটির শিল্পী কিন্তু নেদারল্যান্ডসের এরিক ফান লিজহুট৷
ছবি: Erik van Lieshout
মডেল ও শিল্পী, দু’জনই নামকরা রাজনীতিক!
আঙ্গেলা ম্যার্কেলের এই প্রতিকৃতিটির আঁকিয়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ৷ বুশ এভাবেই মোট ৩০ জন সরকারপ্রধানের ছবি এঁকেছেন – স্বভাবতই আঙ্গেলা ম্যার্কেল সেই সংগ্রহ থেকে বাদ যাননি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/L. W. Smith
শ্লীল-অশ্লীল দু’ই আছে
আলেক্সান্ডার নিকোলিচ ও মিশায়েল কালিভোদা, এই দুই শিল্পী তাঁদের ‘ইউরোপীয় নাগরিকত্ব’ শীর্ষক একটি ভাস্কর্যে একবার দেখিয়েছিলেন, ম্যার্কেল কিভাবে পূর্ব ইউরোপের মানুষদের ইউরোপের নাগরিকত্ব পাবার আশার উপর ‘মলত্যাগ’ করছেন৷ অপরদিকে পেটার লেঙ্কের একটি রিলিফ বা উদ্গত ভাস্কর্যে ম্যার্কেলকে অপরাপর ‘গ্লোবাল প্লেয়ার্স’-এর সঙ্গে উলঙ্গ দেখানো হয়েছে৷ (ছবিতে) গেয়র্গ কোর্নারের ইনস্টলেশনে ম্যার্কেল ২,৬০০টি মূর্তির একটি৷
ছবি: Courtesy Georg Korner
দেশশাসনের দায়
আলোকচিত্রী হ্যার্লিন্ডে কোয়েলবল তাঁর ‘ক্ষমতার চিহ্ন’ পর্যায়ের ফটো সিরিজে সাবেক চ্যান্সেলর গ্যার্হার্ড শ্রোয়েডার বা সবুজ রাজনীতিক ইয়শ্কা ফিশারের মতো আঙ্গেলা ম্যার্কেলের পরিবর্তনকেও ধরে রাখতে চেয়েছেন৷ ক্ষমতা যে মানুষের মুখাবয়ব ও অভিব্যক্তি বদলে দিতে পারে, সেই বাস্তব সত্যটিকে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন কোয়েলবল৷
ছবি: Herlinde Koelbl
‘হিপস্টার’ ম্যার্কেল
ইসরায়েলি অলঙ্করণ শিল্পী আমিৎ শিমোনির তুলিতে বড় বড় রাজনীতিকরা হয়ে ওঠেন হিপস্টার – ট্রাম্প পরে থাকেন হাওয়াই শার্ট ও ওবামার মাথায় গজায় জটাজুটের মতো ক্যারিবিয়ানের ড্রেডলক হেয়ারস্টাইল৷ সেই পর্যায়ে আঙ্গেলা ম্যার্কেল লালকালো লিপস্টিক, মাথায় টুপি আর নাকে পিয়ার্সিং, অর্থাৎ হালফ্যাশনের নাক ফুঁড়িয়েই পার পেয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kappeler
ব্যঙ্গচিত্রীদের পোয়াবারো
ম্যার্কেলের ব্যঙ্গচিত্র আঁকা দৃশ্যত আদৌ শক্ত নয়: প্রতিবছর কপালে আর মুখে বা চোখের কোণে চিন্তার রেখাগুলিকে আর একটু গভীর করে আঁকলেই কাজ শেষ৷ সারা দুনিয়ার ব্যঙ্গচিত্রীকে দৃশ্যত আরো চার বছর ধরে ম্যার্কেলের ছবি আঁকতে হবে: তাতে তারা খুশি না অখুশি, সেটা শুধু তারাই জানেন৷