অর্থনীতি, প্রকৃতি আর স্বাস্থ্যগত সংকটের কঠিন এক সময়ে ঈদ উদযাপন করছেন বাংলাদেশের মানুষ৷ কোরবানির ত্যাগের শিক্ষা হোক এই পরিস্থিতি মোকাবিলার অনুপ্রেরণা৷
বিজ্ঞাপন
করোনার কঠিন বাস্তবতায় রোযার ঈদপালন করেছেন বাংলাদেশের মানুষ৷ অর্থনৈতিক সংকটটা তখনও ততটা প্রকট হয়ে উঠেনি, যতটা হয়েছে এখন৷ শহর ছেড়ে কর্মহীন বহু মানুষ গ্রামে পাড়ি জমিয়েছেন৷ কিন্তু সেখানেও তারা ভালো নেই৷ মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে বন্যা৷
সবশেষ সরকারি হিসাবে দেশের প্রায় এক চতুর্থাংশ পানিতে তলিয়ে গেছে৷ ৪৭ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন৷ মৃত্যু অর্ধশত পেরিয়েছে৷ এমন এক পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে মানুষ কোরবানির ঈদ পালন করছেন৷
আরবি ঈদুল আজহা শব্দের অর্থ কোরবানি বা ত্যাগের উৎসব৷ মুসলিমদের ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, হযরত ইবরাহীম (আ.) সৃষ্টিকর্তার আদেশ পালনের উদ্দেশ্যে প্রাণপ্রিয় পুত্র হযরত ইসমাঈল (আ.)-কে তার সম্মতিতে কোরবানি করতে উদ্যত হন৷ কিন্তু আল্লাহ তার সংকল্পে সন্তুষ্ট হয়ে হযরত ইবরাহীম (আ.)-কে পুত্রের স্থলে একটি পশু কোরবানির আদেশ দেন৷ এরপর থেকে মুসলিমরা প্রতি বছর আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে প্রতিবছর পশু কোরবানি দিয়ে আসছেন৷
দেশে দেশে ঈদুল আজহা উদযাপন
করোনা মহামারির ভিন্ন বাস্তবতায় আরো একটি ঈদ উদযাপন করছেন মুসলিমরা৷ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মুখে মাস্ক পরে শুক্রবার সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিত হচ্ছে ঈদ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Diyanet
করোনামুক্তির প্রার্থনা
ঈদ পালন করেছে মালয়েশিয়া৷ কুয়ালালামপুরের একটি মসজিদে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা৷ করোনা মুক্তির প্রার্থনাও জানিয়েছেন তারা সৃষ্টিকর্তার কাছে৷
ছবি: Reuters/Lim Huey Teng
কোরবানি
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মুসলিমের দেশ ইন্দোনেশিয়া৷ জাকার্তায় কোরবানি দেয়ার জন্য একটি গরুকে শোয়ানোর চেষ্টা করছেন স্বেচ্ছাসেবীরা৷
ছবি: Reuters/W. Kurniawan
খোলা ময়দানে
প্রায় ত্রিশ লাখ মুসলমান বসবাস করেন থাইল্যান্ডে৷ এশিয়ার এই দেশটিতে প্রায় দুই হাজার মসজিদ আছে, যার মধ্যে একশটিরই অবস্থান রাজধানী ব্যাংককে৷ সেখানে থাই ইসলামিক সেন্টারের সামনে ঈদের নামাজের বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয়৷
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
নারী ও শিশুরাও
থাই ইসলামিক সেন্টারের জামাতে অংশ নিয়েছেন নারী ও শিশুরাও৷
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
মস্কোয় সীমিত পরিসরে
রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর সবচেয়ে বড় মসজিদের ঈদ জামাতের ছবি এটি৷ তবে কড়াকড়ির কারণে হাতে গোনা কয়েকজন ধর্মীয় নেতা সেখানে নামাজ আদায় করেছেন৷
ছবি: Reuters/S. Zhumatov
যুক্তরাজ্যে কড়াকড়ি
যুক্তরাজ্যের ব্র্যাডফোর্ড গ্র্যান্ড মসজিদের বাইরের চিত্র৷ মসজিদে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ছিল কড়াকড়ি৷ সম্প্রতি করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে ইস্ট ল্যাংকাশায়ার, ওয়েস্ট ইয়র্কশায়ারে মানুষকে একে অন্যের বাড়িতে দেখা করতে নিষেধ করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/empics/D. Lawson
নাইরোবির হাট
ঈদের দিন সকালেও পশু বেচাকেনা চলেছে কেনিয়াতে৷ নাইরোবির একটি হাটে ছাগল বিক্রি চলছে৷
ছবি: Reuters/T. Mukoya
আল আকসায় জামাত
আল আকসা মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন হাজারো ফিলিস্তিনি৷ বেসরকারি হিসাবে ফিলিস্তিনিরা প্রায় এক লাখ পশু কোরবানি দেন প্রতি বছর৷ প্রার্থনায় অংশ নেয়াদের সবার মুখে ছিল মাস্ক৷
ছবি: Reuters/A. Awad
আয়া সোফিয়ায় জামাত
সম্প্রতি আয়া সোফিয়াকে জাদুঘর থেকে মসজিদে রূপান্তর করেছে তুরস্ক৷ সেখানে ঈদের জামাতের আয়োজন করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Diyanet
স্বাস্থ্যবিধি
করোনার কারণে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আছে তিউনিসিয়ায়৷ সামাজিক দূরত্ব আর স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সেখানকার মানুষ ঈদের জামাতে অংশ নিয়েছেন৷ ছবিতে তিউনিসের আল জাইতুন মসজিদে প্রার্থনারত এক নারীকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AA/Y. Gaidi
দূরত্ব নেই
এটি আফগানিস্তানের জালালাবাদের একটি ঈদ জামাতের ছবি৷ মুসল্লিদের মধ্যে সেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কোনো ব্যবস্থা বা প্রচেষ্টা ছিল না৷
ছবি: picture-alliance/AA/W. Sabawoon
বাড়ি ফেরা
আগের মতো না হলেও ঈদের আগের দিনও রাজধানী ঢাকা ছেড়েছেন অনেক মানুষ৷ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উদ্দেশ্যে যাত্রী বোঝাই লঞ্চ চলেছে সদরঘাট থেকে৷
বাংলাদেশে কোরবানির ধর্মীয় মহিমার পাশাপাশি আছে অর্থনৈতিক গুরুত্বও৷ সরকারি হিসাবে এখন প্রতিবছর এক কোটির বেশি পশু কোরবানি হয়৷ কোরবানিকে কেন্দ্র করে সঞ্চালিত হয় গ্রামীণ অর্থনীতি৷ লেনদেন হয় কয়েক হাজার কোটি টাকা৷ আবার কোরবানির পশুর চামড়াকে কেন্দ্র করেই বাংলাদেশে ট্যানারি শিল্প বিকশিত হয়েছে৷ গড়ে উঠেছে চামড়াজাত পণ্য তৈরির কারখানা, যা কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা আয়েরও অন্যতম খাত৷
শঙ্কার বিষয় হলো, অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে এ বছর অনেকেই কোরবানি দিতে পারছেন না৷ আবার করোনা এবং বৈশ্বিক চাহিদা কমে যাওয়ায় চামড়া শিল্প আগে থেকেই ধুঁকছে৷ ট্যানারিগুলোতেও তাই আগের মতো চামড়ার চাহিদা নেই৷ সব মিলিয়ে এই বছর কোরবানি যে অন্যবারের মতো অর্থনীতিকে চাঙা করবে না তা বলা বাহুল্য৷
তারপরও কোরবানিরত্যাগের শিক্ষা সংকটময় এই সময় পার করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে৷ ইসলামের বিধান অনুযায়ী, কোরবানিকৃত পশুর তিন ভাগের একভাগই আত্মীয়-স্বজন আর দরিদ্রদের মধ্যে বিলিয়ে দিতে হয়৷ চামড়া থেকে বিক্রিত অর্থও শুধু গরিবরাই পাবে৷ ত্যাগের এই শিক্ষা এখন গুরুত্বপূর্ণ অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে৷ কাজ হারানো, দারিদ্র্যসীমার নীচে নেমে আসা মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানো আমাদের সবার কর্তব্য হয়ে উঠেছে৷ উৎসবের মাঝে বন্যায় নিঃস্ব হওয়া মানুষগুলোকেও ভুলে গেলে চলবে না৷
কোরবানির ত্যাগের থেকে শিক্ষা নিক রাষ্ট্রও৷ সমাজে সুষম বণ্টন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সরকারেরও দায়িত্ব৷