গণভোটের রায়ের পর রাশিয়ার উপর আরও নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে বিতর্কে লিপ্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো৷ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারির পাশাপাশি রুশ নেতাদের উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে এবার নড়েচড়ে বসে চিন্তাভাবনা করছে ইইউ৷
ছবি: DMITRY SEREBRYAKOV/AFP/Getty Images
বিজ্ঞাপন
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্মেলনের প্রথম দিনে বৃহস্পতিবার ন্যাটো প্রধান আন্ডার্স ফগ রাসমুসেন বলেছেন, শীতল যুদ্ধের পর ইউরোপের দেশগুলোর নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যকার বর্তমান পরিস্থিতি৷
ম্যার্কেলের হুমকি
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টে বলেন, সমস্যা যদি দীর্ঘায়িত হয় তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচিত ইউরোপের দেশগুলোতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা ব্যক্তিদের তালিকাটা বড় করা, তাদের অর্থ জব্দ এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা৷ শুক্রবার শেষ হবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দু'দিনের সম্মেলন৷ এর মধ্যেই সিদ্ধান্ত নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন ম্যার্কেল৷ ম্যার্কেল আবারো বলেন, ‘‘গণভোট আয়োজন আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি৷'' ইউরোপের শক্তিধর অর্থনীতির দেশ জার্মানি এরই মধ্যে রাশিয়ার সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে৷ জার্মানি রাশিয়ার প্রধান গ্যাস আমদানিকারী দেশ৷
ক্রাইমিয়ায় সব শান্ত?
সবার মনোযোগ এখন ইউক্রেনের ক্রাইমিয়ার দিকে৷ ক্রাইমিয়ায় যা ঘটেছে তাকে রাশিয়ার আগ্রাসন বলা হলেও রুশ সেনাদের কিন্তু সাদরে গ্রহণ করে নিয়েছে স্থানীয়রা৷ ছবিঘরে দেখুন ক্রাইমিয়ার পরিস্থিতি৷
ছবি: DW/F. Warwick
কোসাকদের আগমন
রাশিয়ার ক্রাসনোডার থেকে এসেছে ২৫০ জনের মতো কুবান কোসাক৷ সামরিক বাহিনীর পোশাক পরেননি তাঁরা৷ সেভাস্টোপোলের রুশপন্থি কর্তৃপক্ষ কোসাকদের শপথ পাঠ করিয়েছে৷ স্বেচ্ছাসেবী কোসাকরা জানিয়েছে, ক্রাইমিয়াবাসীদের রক্ষা করার জন্য তারা স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে কাজ করবে৷
কুবান কোসাকরা সেভাস্টোপোলের পুলিশের সঙ্গে টহলে অংশ নিচ্ছে৷ মাথায় উলের টুপি পরে রবি বার থেকে রাস্তায় টহল দিচ্ছে কোসাকরা৷ ২০০৫ সালে এথনিক সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী এবং শক্তিশালী সামরিক শক্তি হিসেবে কোসাকদের স্বীকৃতি দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন৷
ছবি: DW/F. Warwick
কঠিন সময়ে নিরাপত্তা
রাশিয়া এবং ক্রাইমিয়ার টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন কোসাকদের নেতা কর্নেল সের্গেই সাভোনিন ইউরিয়েভিচ৷ তিনি বলেন, কোসাকরা সেভাস্টোপোলের মানুষদের রক্ষা করার জন্য এসেছে৷
ছবি: DW/F. Warwick
‘স্বায়ত্তশাসন, বিচ্ছিন্নতাবাদ নয়’
ক্রাইমিয়ায় অনেকের হাতেই দেখা যায় ক্রাইমিয়া এবং রাশিয়ার পতাকা৷ এর অর্থ এই নয় যে, ক্রাইমিয়া ইউক্রেন থেকে আলাদা হয়ে গেছে৷ সেভাস্টোপোলের এই তরুণ-তরুণীরা জানালেন, তাঁরা ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ চাননা, কেননা ইউক্রেনকে তাঁরা ভ্রাতৃপ্রতীম রাষ্ট্র মনে করেন৷ তাঁদের দাবি একটাই – স্বায়ত্তশাসন এবং এথনিক রুশ হিসেবে প্রাপ্য মর্যাদা৷
ছবি: DW/F. Warwick
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?
এই প্রবীণ এসেছেন কোসাকদের সমর্থন জানাতে৷ রাশিয়ার প্রতি তাঁর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে৷ পরনে রুশ সেনাবাহিনীর মতো কমলা আর কালো রংয়ের পোশাক৷ তিনি নিজেও সোভিয়েত ইউনিয়নের রেড আর্মির সাবেক কর্মকর্তা৷
ছবি: DW/F. Warwick
রাস্তায় তল্লাশি
সিমফারোপোল এবং সেভাস্টোপোলের মাঝের হাইওয়েতে গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে রুশপন্থি বেসামরিক বাহিনীর সদস্যরা৷
ছবি: DW/F. Warwick
ব্যবসার জন্য খারাপ সময়?
লিলিয়া ভজনুক একজন স্যুভেনির বিক্রেতা৷ রাবারের তৈরি মুখোশগুলোর মধ্যে পুটিনের চেহারার মুখোশটার এখন দারুণ কাটতি৷ তবু খুব চিন্তায় আছেন লিলিয়া৷ চলমান সংকট ব্যবসার বড় রকমের ক্ষতি করবে বলে আশঙ্কা তাঁর৷
ছবি: DW/F. Warwick
হৃদয়-মন জয় করেছে তাঁরা
সেভাস্টোপোলে গেলেই ব্ল্যাক সি ফ্লিট অঁসম্বল-এর কনসার্ট দেখতে পাবেন৷ নাচ-গানের এই স্থানীয় সংগঠনটি তাদের পরিবেশনা দিয়ে সবার মন জয় করেছে৷ রুশ লোকসংগীতে সাগরের প্রশংসা করে যেসব গান রচনা করা হয়েছে মূলত সেগুলোই পরিবেশন করে ব্ল্যাক সি ফ্লিট অঁসম্বল৷ রাশিয়ার ঐতিহ্যবাহী ইয়াব্লোচকো বা ‘ছোট্ট আপেল’ নাচটা সত্যই মনোমুগ্ধকর৷
ছবি: DW/F. Warwick
চাই শুধু স্বায়ত্তশাসন
সেভাস্টোপোলের অধিকাংশ মানুষই রুশ জাতীয়তাবাদের সমর্থক৷ ইউক্রেনীয়দের তারা অবিশ্বাস করে, মনে করে ইউক্রেনীয়রা চরম ডানপন্থি৷ সেভাস্টোপোলের মানুষ মনে করে রুশ বাহিনীর উপস্থিতি এ অঞ্চলের স্বায়ত্তশাসন এবং নিরাপত্তার রক্ষাকবচ৷
ছবি: DW/F. Warwick
10 ছবি1 | 10
রাশিয়ার বক্তব্য
অন্যদিকে ক্রেমলিন অনবরত সতর্ক করে দিয়ে বলছে, পশ্চিমা বিশ্বের অর্থনৈতিক নানা সেক্টর রাশিয়ার সাথে জড়িত৷ ফলে রাশিয়ার উপর কোনো ধরনের আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারি হলে তারাও কোনরকম ছাড় দেবে না৷ রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ হুঁশিয়ার করে বলেছেন, যে কোনো ধরনের পরিস্থিতির জন্য তারা প্রস্তুত৷ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তাদের ইঙ্গিত, ইরানের পরমাণু ইস্যুতে আলোচনায় তাদের ট্রাম্প কার্ডটি তুলে ধরবে তারা৷
জাতিসংঘের প্রতি কিয়েভের আহ্বান
বুধবার ইউক্রেন ঘোষণা করেছে, মস্কো নেতৃত্বাধীন কমনওয়েলথ অফ ইনডেপেন্ডেন্ট স্টেটগুলোর জোটে থাকবে না তারা৷ ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তারা জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে ক্রাইমিয়াকে ‘ডিমিলিটারাইজড জোন' বা অসামরিক এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে এবং রাশিয়া তাদের ২৫ হাজার সেনা সেখান থেকে নিজেদের ঘাঁটিতে ফিরিয়ে নেয়৷ সেইসাথে ক্রাইমিয়ায় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পশ্চিমা শক্তিগুলোর সহায়তা চেয়েছেন তারা৷
রাশিয়া ও ক্রাইমিয়ার কয়েকজন কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়েছে৷ তাদের ভিসা শিথিলের ব্যাপারে রাশিয়ার সাথে এরই মধ্যে আলোচনা প্রত্যাখ্যান করেছেন ইইউ নেতারা৷ ইইউ আপাতত রাশিয়ার ১৩ জন ও ক্রাইমিয়ার ৮ জন সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপের ঘোষণা করেছে, যাঁরা ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব খর্ব করে এই বিচ্ছিন্নতাবাদী উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন৷ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের কয়েকজন উপদেষ্টা, ক্রাইমিয়ার বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতৃবৃন্দ এবং ইউক্রেনের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বলে জানা গেছে৷ এর ফলে তাঁরা ইইউ দেশগুলিতে প্রবেশ করতে পারবেন না, সেখানে তাঁদের বিষয়-সম্পত্তিও তাঁদের নাগালের বাইরে চলে যাবে৷
জি-৭ এর বৈঠক আহ্বান
আগামী সপ্তাহে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে ইউক্রেন নিয়ে আলোচনা করতে জি-৭ নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷ রাশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে শিল্পোন্নত দেশগুলোর সংস্থা জি-৮ এর সদস্য হলেও ইউক্রেন সংক্রান্ত আলোচনায় দেশটিকে আমন্ত্রণ জানাননি ওবামা৷