ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে ব্রিটেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের করে আনার পরিকল্পনা ব্যক্ত করেছেন৷ মে চান ‘হার্ড ব্রেক্সিট', অর্থাৎ ব্রিটেন ইউরোপীয় একক বাজার থেকেও বেরিয়ে আসবে৷ মে-র এই সিদ্ধান্তে উদ্বিগ্ন জার্মানি৷
বিজ্ঞাপন
ইউরোপীয় একক বাজার (সিঙ্গল মার্কেট) বা অভ্যন্তরীণ বাজার (ইন্টারনাল মার্কেট) হলো ইইউ-এর সেই এলাকা, যার অভ্যন্তরে পণ্য, পুঁজি, পরিষেবা ও মানুষজনের মুক্ত আসা-যাওয়া সম্ভব৷ এগুলিকে বলা হয় ‘চার স্বাধীনতা'৷
মে লন্ডনে বলছেন, যুক্তরাজ্যর পক্ষে ইউরোপীয় একক বাজারের ‘চার স্বাধীনতা' মেনে চলা সম্ভব নয়, বিশেষ করে মানুষজনের অবাধ যাতায়াতেরস্বাধীনতা৷ মে বলেন, যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় একক বাজারে যতদূর সম্ভব প্রবেশাধিকার বজায় রাখার আশা করে বটে, কিন্তু সেজন্য ব্রাসেলসকে ‘‘বিপুল পরিমাণ অর্থ'' প্রদান করতে রাজি নয়৷
Theresa May hopes to make a success of 'Brexit'
01:06
মে তাঁর ভাষণের সূচনায় ইউরোপ সম্পর্কে ঘোষণা করেন যে, ‘‘ইইউ-এর সাফল্য ব্রিটেনের স্বার্থে'' এবং যোগ করেন যে, ব্রিটেন ‘‘একক বাজারে বৃহত্তম সম্ভব প্রবেশাধিকার'' পাবার ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ‘‘একটি সাহসী ও উচ্চাভিলাষী'' মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের চেষ্টা করবে৷ কিন্তু যুগপৎ তিনি বলেন, বিশ্বের অপরাপর অংশের সঙ্গে বাণিজ্যও একটি অগ্রাধিকার৷
‘‘আমরা বৃহত্তর বিশ্বে বেরিয়ে পড়তে চাই'', বলেন মে৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে বলেছেন, অ্যামেরিকার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির ক্ষেত্রে ব্রিটেন ‘‘লাইনের শেষে নয়, লাইনের আগে'', মে সে-কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ইইউ-কে একটি ‘‘শাস্তিমূলক'' ব্রেক্সিট চুক্তির প্রচেষ্টা করা সম্পর্কে সাবধান করে দেন৷
মে বলেন, ব্রিটেনে কত মানুষ আসছেন, যুক্তরাজ্য তা নিয়ন্ত্রণ করবে৷ অপরদিকে তিনি বলেন যে, তিনি ব্রিটেনে বসবাসকারী ইইউ নাগরিক ও ইইউ-তে বসবাসকারী ব্রিটিশ নাগরিকদের অধিকারসমূহ নিশ্চিত করতে চান৷
মে জানান যে, ব্রিটেন ইউরোপিয়ান কোর্ট অফ জাস্টিসের এক্তিয়ার থেকে পশ্চাদপসারণ করবে৷ ইইউ-এর সঙ্গে ব্রেক্সিট সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনায় স্কটল্যান্ড, ওয়েলস ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে শলাপরামর্শ করা হবে৷ চূড়ান্ত ব্রেক্সিট চুক্তি সম্পর্কে পার্লামেন্টে ভোট হবে, বলে মে জানান৷
এদিকে মে-র এই সিদ্ধান্তে উদ্বিগ্ন জার্মানি৷ তাই খুব তাড়াতাড়ি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷
এসি/ডিজি (এএফপি, রয়টার্স)
বন্ধু, এ ব্যাপারে আপনার কোনো মন্তব্য থাকলে লিখুন নীচের ঘরে৷
ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের মুখে ব্রিটেন
ব্রিটিশ ভোটাররা এমন এক সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে, যার পরিণতি হবে সুদূরপ্রসারী৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ ছেড়ে দেবার পক্ষে-বিপক্ষে জোরালো অভিযান চালাচ্ছে দুই শিবির৷ দাঁড়িপাল্লায় সমর্থনের মাত্রা প্রায় সমান-সমান৷
ছবি: Reuters/T. Melville
যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত
একক বাজার ও শুল্কমুক্ত বাণিজ্যের মতো লাভজনক সুবিধার প্রশ্নে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিয়ে ব্রিটেনের কোনো আপত্তি নেই৷ কিন্তু শুধু পণ্য ও পরিষেবা নয়, নাগরিকদের অবাধ প্রবেশের অধিকার, অভিন্ন মুদ্রা, শরণার্থীদের আশ্রয়ের মতো বিষয় তাদের পছন্দ নয়৷ এই ভাবমূর্তি কতটা ঠিক, গণভোটে তার প্রমাণ পাওয়া যবে৷
ছবি: Reuters/T. Melville
ব্রেক্সিট-এর প্রবক্তাদের যুক্তি
‘লিভ’ ক্যাম্পেন ভোটারদের উদ্দেশ্য ইইউ-র আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মের বেড়াজাল থেকে ব্রিটেনকে মুক্ত করার আহ্বান জানাচ্ছে৷ তাদের যুক্তি, নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণের ‘স্বাধীনতা’ ফিরে পেলে ব্রিটেন আরও সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে, বিশ্বে তাদের মর্যাদা বাড়বে৷
ছবি: Imago
‘ব্রেক্সিট অর্থনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনবে’
ইইউ থেকে বিচ্ছিন্ন হলে প্রবল অনিশ্চয়তা ও আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছে ব্রিটেনের ব্যবসা-বাণিজ্য জগত৷ তাদের মতে, ভবিষ্যতে ইইউ-র সঙ্গে সুবিধাজনক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করা সম্ভব হলেও প্রথম কয়েক বছরে চরম অচলাবস্থা বিরাজ করবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Halle'n
মিথ্যা প্রচারণার অভিযোগ
ব্রেক্সিট শিবির ব্রিটিশ ভোটারদের সামনে ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে৷ যেমন তাদের দাবি, তুরস্কের নাগরিকরা নাকি অদূর ভবিষ্যতে দলে দলে ব্রিটেনে বসবাস করতে আসছে৷ ‘রিমেন’ শিবিরের বিরুদ্ধেও আতঙ্ক ছড়ানোর অভিযোগ উঠছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. J. Ratcliffe
ব্রেক্সিট-পরবর্তী যুগের রূপরেখা
ইইউ-র বাইরে ব্রিটেনের বিকল্প সম্পর্কে স্পষ্ট চালচিত্র দিতে ব্যর্থ হচ্ছে ব্রেক্সিট শিবির৷ নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ডের মতো দেশকে আদর্শ হিসেবে তুলে ধরলেও এই দুই দেশকে যে বাধ্যতামূলকভাবে ইইউ-র অনেক নীতি কার্যকর করতে হয়, সেই সত্যটা গোপন রাখা হচ্ছে৷
ছবি: DW/B.Riegert
ইউরোপে ব্রিটেনের ভবিষ্যৎ
ভোটাররা ব্রেক্সিট-এর বিরুদ্ধে রায় দিলেও ব্রিটেন-এর সঙ্গে ইইউ-র সম্পর্ক আগের মতোই থাকবে কি না, তা নিয়েও জল্পনা-কল্পনা চলছে৷ সংহতি দেখানোর বদলে প্রায় প্রতিটি বিষয়ে আলাদা ছাড় দাবি করার ব্রিটিশ অভ্যাস নিয়ে বিরক্ত ইইউ-র বেশিরভাগ দেশ৷