1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কণ্ঠস্বর ও ধ্বনি থেকে অপরাধী ধরার কৌশল

৩১ অক্টোবর ২০১১

অপরাধ করেও বেঁচে যাওয়ার যেমন নানা কৌশল বের হচ্ছে, তেমনি অপরাধীকে ধরার জন্যও উদ্ভাবিত হচ্ছে বিভিন্ন কৌশল৷ তবে আঙুল কিংবা রক্তের ছাপের মতো প্রচলিত কৌশল ছাড়াও, কণ্ঠস্বর পর্যবেক্ষণ করে অপরাধীকে ধরার কাজ করছে জার্মানি৷

Foto: Tyll Winkler. August 2011. Munich.
কণ্ঠস্বর চেনার ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতি ঘটছেছবি: VerbaVoice/Winkler

বিদ্যুৎ, গ্যাস, আলো, তাপের মতো শব্দের কার্যকর ব্যবহারেও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা৷ নানা মাত্রার শব্দ কম্পন ব্যবহার করে ইতিমধ্যে বহু অজানা তথ্য জানার কৌশল উদ্ভাবন করেছে বিজ্ঞান৷ তবে এই শব্দ তথা মানুষের কণ্ঠ নিঃসৃত শব্দ কিংবা ধ্বনিমালা ব্যবহার করে অপরাধী সনাক্ত এবং অপরাধমূলক ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করছেন জার্মান অধ্যাপিকা আঙ্গেলিকা ব্রাউন৷ ব্যাংক ডাকাতি, ছিনতাইকারী, সন্ত্রাসী কিংবা অন্যান্য অপরাধ কর্মের সাথে জড়িতদের তিনি চিহ্নিত করছেন তাদের কণ্ঠস্বর বিশ্লেষণ করে৷

কণ্ঠস্বর পর্যবেক্ষণ অপরাধীকে ধরার উদ্যোগ চলছেছবি: VerbaVoice

জার্মানির ট্রিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বনিবিদ্যা বিশারদ ব্রাউন বলেন, ‘‘অনেকটা ঘটনাক্রমেই আমি এই কাজের সাথে জড়িয়ে পড়ি৷ আমি তখন জার্মানির মারবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিশেষায়িত ইন্সটিটিউটে কাজ করছিলাম৷ সেখানে জার্মানির বিভিন্ন এলাকার আঞ্চলিক ভাষা নিয়ে গবেষণা করা হতো৷ সেসময় আমার এক সহকর্মী জার্মানির কেন্দ্রীয় পুলিশ সংস্থার সাথে এবং তাদের ফরেনসিক পরীক্ষাগারে কাজ করতেন৷ আমি যেহেতু নানা উপভাষা এবং আঞ্চলিক ভাষা জানতাম, তাই তিনি তাঁর সাথে আমাকে কাজ করতে বলেন৷ ফলে আমি তাঁর সাথে কাজ করতে আগ্রহ বোধ করি৷ এভাবেই জার্মান পুলিশের সাথে এবং শব্দ ও ধ্বনি নিয়ে আমার কাজ করা শুরু৷'' জার্মানির ভেতরে এবং বাইরেও বিভিন্ন দেশে নানা বড় মাপের অপরাধ কর্মকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনে ব্রাউনের ডাক পড়ে৷ এসব ঘটনার মধ্যে অনেকগুলোই খুব দ্রুত সমাধান করতে হয়৷ বিশেষ করে অপহরণের ঘটনাগুলোর যোগসূত্র খুব অল্প সময়ের মধ্যে খুঁজে বের করে অপহৃতদের প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করতে হয়৷

১৯৮৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলের গোয়েন্দা সংস্থায় কাজ করতেন ব্রাউন৷ ঐ সংস্থার সাথে কাজ করার সময়ের তাঁর আলোচিত সাফল্য ছিল জার্মানির কোটিপতি ইয়ান ফিলিপ রেমৎসমার অপহরণের ঘটনার যোগসূত্র খুঁজে বের করা৷ তবে ২০০৩ সালে তিনি ট্রিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন৷ কারণ ধ্বনি এবং কণ্ঠস্বর থেকে যে কোন ঘটনার গভীরে চলে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আরো গবেষণা করতেই এখন বেশি পছন্দ করেন ব্রাউন৷ ভাষা ও শব্দ বিষয়ক পরীক্ষাগারে শব্দ এবং কণ্ঠস্বর নিয়ে গবেষণা ও বিশ্লেষণ কাজ চালান অধ্যাপিকা ব্রাউন৷

শেষ পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে অপরাধীকে ধরাই আসল চ্যালেঞ্জছবি: Fotolia/rosta

ম্যোনশেনগ্লাডবাখ নগরীর পুলিশের মুখপাত্র ভিলি থেফেসেন বলেন, ‘‘বর্তমানে অপরাধীদের সনাক্ত করতে পুলিশের কাজে সহায়তার জন্য এ ধরণের ফরেনসিক বিজ্ঞানীদের গুরুত্ব বাড়ছে৷ ধ্বনি, কণ্ঠ এবং ডিএনএ পর্যালোচনার মাধ্যমে এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি নিশ্চিত ফল পাওয়া সম্ভব বলে উল্লেখ করেন তিনি৷ গত বছর জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলে ১০ বছর বয়সের একটি ছেলেকে অপহরণ এবং হত্যার ঘটনার তদন্তের সাথে জড়িত ছিলেন ব্রাউন৷ গ্রেফ্রাথ শহরে ঘটনাস্থলে শোনা একটি চিৎকার থেকে ঘটনার যোগসূত্র খোঁজার কাজ করেছিলেন তিনি৷ ঐ ঘটনায় তাঁর তদন্ত প্রতিবেদন থেকে নতুন কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ না পাওয়া গেলেও, তাঁর কিছু সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ অত্যন্ত কাজে লেগেছিল৷ থেফেসেন বলেন, ‘‘ধ্বনি কিংবা শব্দের উপর ভিত্তি করে যে কোনো অপরাধ কর্মের তদন্তের ক্ষেত্রে ব্রাউনই আমাদের প্রথম পছন্দ৷''

ব্রাউন বলেন, কণ্ঠস্বর থেকে মানুষের বয়স, লিঙ্গ, বংশ পরিচয় এবং জাতীয়তা পর্যন্ত জানা সম্ভব৷ এমনকি একজন মানুষ তার কণ্ঠস্বর পরিবর্তন করে কিংবা চাপা গলায় কথা বললেও তা সম্ভব হতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি৷ তাঁর মতে, কারো কণ্ঠস্বর পরীক্ষা ও বিশ্লেষণ করে পাঁচ থেকে দশ বছরের মধ্যে তার বয়স জানা যেতে পারে৷ এ পন্থায় নির্দিষ্ট ব্যক্তির বংশ পরিচয় উদ্ধার করা যায়৷ তবে সেক্ষেত্রে তার বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার বছর সম্পর্কে তথ্য জানতে পারলে সেটা অত্যন্ত সহায়ক হয়৷ আর কোনো ব্যক্তি বিদেশি ভাষায় কথা বললে, তার পদ্ধতিগত ভাষার ভুল উচ্চারণ এবং নির্দিষ্ট ধ্বনি থেকে জাতীয়তা নির্ণয় করা সহজতর, বলেন ব্রাউন৷

লোভে পাপ, পাপে...ছবি: Fotolia/Schulz-Design

বিজ্ঞানের এই যুগে অপরাধ কর্মের যোগসূত্র উদ্ধারে ব্রাউন সংশ্লিষ্ট ধ্বনি এবং কণ্ঠস্বরকে বিশেষায়িত কম্পিউটার সফটওয়ারের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করেন৷ তিনি বলেন, এর ফলে ভাষা দর্শনযোগ্য এবং পরিমাপযোগ্য হয়ে ওঠে৷ এই সফটওয়ারই নিরূপণ করে যে, শব্দগুলো নীচু নাকি উচ্চ কণ্ঠে করা৷ এমনকি শব্দ ধারণের গুণগত মান কমবেশি হলেও তাতে কিছুই আসে যায় না৷ তবে তিনি স্বীকার করেন যে, ‘‘আমার কাছে মনে হয় যে, মানবিক ইন্দ্রিয় ও বিশ্লেষণ ক্ষমতা মানুষের উচ্চারণ, ভাষা, ধ্বনি এবং ঘটনাস্থলের পারিপার্শ্বিক শব্দ নিয়ে কাজ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে৷ কারণ এ বিষয়গুলি খুবই সূক্ষ্ণভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হয়৷ তাই যন্ত্রের দ্বারা এসব কিছু স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হবে না বরং এক্ষেত্রে মানব মস্তিষ্ক খাটানোও জরুরি৷''

এভাবে যুক্তরাজ্যের সাম্প্রতিক এক ঘটনায় ব্রাউন নিরূপণ করেন যে, ইসলামি জঙ্গি হামলার হুমকি সম্বলিত ভিডিও চিত্রের কণ্ঠস্বর ঠিক সন্দেহভাজন ধর্মপ্রচারকের কি না৷ গত বছরের এলবে নদীতে দুর্ঘটনা কবলিত একটি জাহাজের ঘটনাও খতিয়ে দেখেছিলেন ব্রাউন৷ এক্ষেত্রে ঐ জাহাজটি নিমজ্জিত হওয়ার আগে কাপ্তানের সাথে নদী কর্তৃপক্ষের টেলিফোন সংলাপ বিশ্লেষণ করে তিনি নিশ্চিত করেন যে, কাপ্তান অতিরিক্ত মদ খেয়ে মাতাল থাকার কারণেই তেল বহনকারী জাহাজটি দুর্ঘটনায় পড়েছিল৷ তবে এতোটুকু সাফল্যে সন্তুষ্ট নন ব্রাউন, ফরেনসিক বিজ্ঞানের এই ধারার আরো উন্নতির জন্য গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি এবং তাঁর ৬০ জন শিক্ষার্থীর দল৷

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ