কতটা স্বাভাবিক হলো কাশ্মীর?
১৯ আগস্ট ২০১৯![Kaschmir Protest & Unruhen in Srinagar](https://static.dw.com/image/50058100_800.webp)
৫ আগস্ট জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বদলের পর থেকে সেখানে জারি ছিল ১৪৪ ধারা৷ সোমবার থেকে আংশিক তোলা হয়েছে কার্ফু৷ চালু হয়েছে সরকারি দপ্তরগুলি৷ রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক জানিয়েছেন, স্বাভাবিক হচ্ছে কাশ্মীরের পরিস্থিতি৷
এদিকে, শ্রীনগরের ৯০০টি স্কুলের মধ্যে মাত্র ১৯৬টি স্কুল খোলার কথা রবিবার জানিয়েছিলেন শ্রীনগরের ডেপুটি কমিশনার শাহিদ ইকবাল৷ কিন্তু বাস্তবে খুলেছে মাত্র ৯০টি স্কুল৷ রাজৌরি অঞ্চলে কিছু স্কুল খোলার খবরও পাওয়া গেছে৷ এর সাথে, আংশিকভাবে চালু করা হয়েছে কাশ্মীরে ল্যান্ডলাইন পরিষেবাও৷ কিছু অংশে চালু হয়েছে টুজি ইন্টারনেট পরিষেবাও৷
ডেপুটি কমিশনার ইকবাল একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সোমবার শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের আহ্বান জানান তাদের স্কুলে পাঠানোর জন্য৷ তিনি বলেন, ‘‘কিছু এলাকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা কয়েকটি স্কুল খোলার পরামর্শ দিয়েছি৷ বাবা-মায়েদের প্রতি অনুরোধ, যেখানেই স্কুল খুলছে, সেখানে তাদের পাঠান৷ নিরাপত্তার দায় আমাদের৷'' কিন্তু প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও স্কুলে দেখা নেই শিক্ষার্থীর৷
ইতিমধ্যে, অর্থনীতিবিদ জাঁ দ্রাজসহ মোট চারজনের একটি তথ্য অনুসন্ধানকারী দল কাশ্মীর থেকে ঘুরে এসেছে৷ আপাতদৃষ্টিতে ‘কাশ্মীর স্বাভাবিক' থাকার যে প্রচারণা সরকারের পক্ষে চালানো হচ্ছে, তার সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র তুলে ধরেছে এই দলের প্রতিবেদন৷
ভারতের সংবাদমাধ্যমে কোথাও নেই কাশ্মীরের অন্যত্র বা জম্মু অঞ্চলের স্বাভাবিক হবার খবরাখবর৷ অন্যদিকে, পুলিশের সাথে সংঘর্ষের খবর জানিয়েছেন প্ল্যানিং কমিশনের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি রোহিত কানসাল৷ সব মিলিয়ে, সত্যিই কি স্বাভাবিক কাশ্মীর? ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার ‘দ্য স্ক্রল' প্রকাশ করেছে সেই চিঠির বয়ান৷
আর কতদিন বন্দি স্থানীয় নেতৃত্ব?
স্কুল খোলার খবর থেকে কাশ্মীরে স্বাভাবিকতা ফিরে আসার কথা বলা হলেও স্থানীয় নেতৃত্বের গৃহবন্দি অবস্থায় কোনো পরিবর্তন ঘটেনি৷
গত ১৪ দিন ধরে গৃহবন্দি রয়েছেন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ, তাঁর পিতা ন্যাশনাল কনফারেন্স দলের বলিষ্ঠ নেতা ফারুক আবদুল্লাহ, বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি, জম্মু কাশ্মীর পলিটিকাল মুভমেন্ট দলের প্রধান শাহ ফয়সালের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব৷তারা কেমন আছেন, কী করছেন, সেবিষয়ে কোনো খবর পাওয়া না গেলেও ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে মেহবুবাকন্যা ইলতিজিয়া মুফতির একটি চিঠি৷
যদিও তিনি কোনো ধরনের রাজনৈতিক কাজকর্মের সাথে যুক্ত নন, তবুও মায়ের মতো গৃহবন্দি ইলতিজিয়া৷ কিছুদিন আগে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে একটি চিঠি লেখেন তিনি৷ তিনি জানান, ‘‘আমার কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে যোগাযোগ নেই৷ আইন মেনে চলা এক সাধারণ নাগরিক আমি৷ তবুও কেন আমার কন্ঠরোধ করা হচ্ছে?'' ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার ‘দ্য স্ক্রল' প্রকাশ করেছে সেই চিঠির বয়ান৷
কবে মুক্তি পাবেন বর্তমানে গৃহবন্দি কাশ্মীরের প্রায় ৭০০ নেতানেত্রী, এবিষয়ে সরকারের নেই কোনো স্পষ্টীকরণ৷ আংশিক টেলিফোন পরিষেবা ও স্থানীয় স্কুলের প্রতীকী চালু হওয়াই এখন ভারতে ‘স্বাভাবিক কাশ্মীর'র সংজ্ঞা৷ অন্তত, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এমন চিত্রই তুলে ধরছে আপাতত৷
কাশ্মীর ঘুরে আসা তথ্য অনুসন্ধানকারী দলের প্রতিবেদনে নেই এই কৃত্রিম স্বাভাবিকতার কোনো চিত্র৷ স্থানীয় নাগরিকদের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে উঠছে দৈনন্দিন জীবনযাত্রা বিঘ্ন হবার হতাশা৷ সরকারে ওপর অনাস্থার কথাওরয়েছে সেখানে৷ এমন একটি প্রতিবেদন সরকারের স্বাভাবিক কাশ্মীরের ধারণার সাথে সাংঘর্ষিক বলেই হয়ত কোনো ‘মেনস্ট্রিম' সংবাদমাধ্যমে তা আলোচিত হচ্ছে না৷
অক্টোবর থেকে যখন পুরোপুরি বদলে যাবে জম্মু ও কাশ্মীরের মান, আজকের রাজ্যকে যখন ভেঙে দু'টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হবে, তখনও কি এক থাকবে ‘স্বাভাবিক কাশ্মীর' এর চিত্র? একইভাবে কি তখনও বন্দি থাকবে স্থানীয় কন্ঠস্বর?