শ্রমঘন বাংলাদেশে শ্রমিকরা কতটা নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন তার প্রমাণ তাজরীন ফ্যাশনস বা রানা প্লাজার ঘটনা৷ ঝুঁকি যতটা শারীরিক, ততটাই মানসিক৷ প্রান্তিক এই মানুষগুলোর অনেককেই আমি দেখেছি মানসিক পঙ্গুত্ব বরণ করে নিতে৷
বিজ্ঞাপন
২০১৬ সাল৷ তিন বছর পূরণ হলো রানা প্লাজা দুর্ঘটনার৷ এর মধ্যে দেশের পোশাক শিল্প কারখানাগুলোতে অনেক পরিবর্তন এলো৷ অনেক পোশাক কারখানাই তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করল৷ অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটল অনেক কারখানায়৷ এখন তো বিশ্বজুড়ে সবুজ কারখানার তালিকায় নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশের বেশ ক'টি পোশাক কারখানা৷
সে যা-ই হোক, সেবার রানা প্লাজা দুর্ঘটনার শিকারদের মানসিক অবস্থা নিয়ে রিপোর্ট করতে গেলাম সাভারে৷ কথা বললাম বেশ ক'জনের সঙ্গে৷ তাঁদের একজন শাহজাহান সেলিম৷ যাঁরা রানা প্লাজা দুর্ঘটনার খোঁজ খবর রেখেছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই পরিচিত এই নামটির সঙ্গে৷ সাভারে একটি বাড়ির দোতলায় ভাড়া থাকেন শাহজাহান৷
ক্রাচে ভর করে আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এলেন তিনি৷ মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি৷ যে ঘরে আমরা বসেছি, তাতে একটি খাট আর একটা আলমারি৷ জানলার ওপারে একটু বারান্দাও আছে৷
তিনি একটি গান শোনান আমাদের৷ গানটি লিখেছেন হাসপাতালের বেডে শুয়ে শুয়ে৷ জানালা দিয়ে দুপুরের রোদ পড়ছে শাহজাহানের ভিজে ওঠা চোখে৷ ভ্রুক্ষেপ নেই৷ গেয়ে চলেছেন তিনি৷ ‘‘আমি কী যে ভুল করেছি, রানা প্লাজায় গিয়েছি৷ এখন শুধু ঝরা মালা গাঁথি৷ সারাটি জীবন দুঃখ হলো মোর সাথি৷''
নিজেদের অধিকার সম্পর্কে শ্রমজীবী মানুষদের কথা
বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে খেটে খাওয়া মানুষরা পদে পদে বঞ্চিত হচ্ছেন শ্রম অধিকার থেকে৷ কয়েকটি ক্ষেত্রে কর্মরত শ্রমিকদের অধিকারসচেতনতা এবং এ প্রসঙ্গে তাঁদের মতামত জেনে নিন এই ছবিঘরে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
ঝর্ণা আক্তার, পোশাক শ্রমিক
শ্রম অধিকার বলতে আমার কাজের ন্যায্য পারিশ্রমিক পাওয়াকে বুঝি, কিন্তু সেটা আমি পাই না৷ মাসে বেতন পাই ছয় হাজার টাকা, ওভার টাইম নিয়ে সেটা নয় হাজার টাকার মতো হয়৷ এই টাকা দিয়ে বহু কষ্টে খেয়ে-পড়ে বেঁচে আছি৷ অনেক সময় বেতন বকেয়া রেখেই চাকরি থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
মুকুলি বেগম, গৃহকর্মী
শ্রম অধিকার কী জিনিস তা বুঝি না৷ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করে যাই৷ সপ্তাহে কোনো ছুটির দিন নেই৷ ছোটখাট অসুখ-বিসুখ হলেও কাজে যেতে হয়৷ এর বাইরে পদে পদে খারাপ ব্যবহার পেতে হয় বাড়ির মালিকের কাছ থেকে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
মোহাম্মদ রিপন, নির্মাণ শ্রমিক
শ্রম অধিকার বুঝি না৷ দিন শেষে পারিশ্রমিক পেলেই খুশি৷ সপ্তাহে সাতদিনই কাজ করি৷ কাজ করলে টাকা পাই, না করলে পাই না৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
মোহাম্মদ নূরুদ্দিন, দিনমজুর
শ্রম অধিকার বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই৷ সারাদিন খেটে ৩০০-৪০০ টাকা পাই৷ এ টাকা একটু বাড়লে ভালো৷ এই বাজারে এই টাকায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বেঁচে থাকা কঠিন৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
রাশেদ, বাস চালক
শ্রম অধিকার নিয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই৷ দিনে ১৬ ঘণ্টার বেশি গাড়ি চালাই৷ মালিকের টার্গেট পূরণ হওয়ার পর যা পাই, সেটা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
জসিম উদ্দীন, বাসের হেলপার
শ্রম অধিকার হলো কাজের সঠিক পারিশ্রমিক পাওয়া৷ সেটা আমি পাই না৷ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত একটানা কাজ করি৷ সপ্তাহে একদিনও ছুটি পাই না৷ বাড়ি গেলে কাজ ছেড়ে যেতে হয়৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
আসাদুল, রিকশা-ভ্যান চালক
শ্রম অধিকার কী বুঝি না৷ কাজ করলে টাকা পাই, না করলে পাই না৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
মোহাম্মদ রাজু, অটো রিকশা চালক
শ্রম অধিকার হলো আমার কাজের ন্যায্য পারিশ্রমিক পাওয়া৷ আমি সেটা পাই না৷ গাড়ির মালিকের জমা, পুলিশের অযথা হয়রানি, পথে পথে যাত্রীদের দুর্ব্যবহার – এ সব নিয়েই দিন চলে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
সোহেল হাওলাদার, রিকশা চালক
আমাদের আবার অধিকার কী? মানুষ আমাদের মানুষই মনে করে না৷ সবাই ভাড়া কম দিতে চায়৷ অনেক যাত্রীই খারাপ ব্যবহার করে, অনেকে গায়ে হাত তোলে৷ কিন্তু আমাদের কথা বলার কোনো জায়গা নেই৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
বাবলু মিয়া, রং মিস্ত্রী
শ্রম অধিকার কী জিনিস বুঝি না৷ কাজ শেষে টাকা পেলেই খুশি৷ সেটা পাইও৷ তবে অনেক ঝুঁকি নিয়ে বড় বড় বিল্ডিংয়ে কাজ করি৷ কোনো রকম দুর্ঘটনা হলে কোথাও থেকে কোনো সাহায্য পাই না৷ কাজ না থাকলে না খেয়ে থাকতে হয়৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
10 ছবি1 | 10
শাহজাহান সরাসরি দুর্ঘটনার শিকার নন৷ তিনি ছিলেন উদ্ধারকারী৷ বহু আহতকে উদ্ধার করেছেন তিনি৷ উদ্ধার করতে গিয়ে নিজেই আহত হন৷ হয়ে যান পঙ্গু৷
‘‘আলতাফ আমার কাছে পানি চাইছিল৷ আমি পানি দিছিলাম৷ কিন্তু সে পানি খাইতে পারে নাই৷ এসব কথা যখন মনে হয়, তখন নিজেকে স্থির রাখতে পারি না৷''
প্রতিনিয়ত সেসব ঘটনা তাড়া করে ফেরে শাহজাহানকে৷ অনেককে হাত-পা কেটে জীবিত বা মৃত অবস্থায় বের করে এনেছিলেন৷ সেই আর্তচিৎকার, সেই রক্তাক্ত ঘটনাগুলো কেড়ে নিয়েছে তাঁর ঘুম৷
‘‘এমনিতে ঘুম হয় না৷ যদিও একটু চোখ লাগে, তখন অল্প শব্দেই লাফ দিয়া উঠি৷''
আরো অনেক কথা বললেন শাহজাহান৷ ভারাক্রান্ত মনে যখন বেরিয়ে আসছিলাম, তখন ডেকে বললেন, ‘‘কারখানায় মানুষগুলা অনেক কষ্ট করে কাজ করেন৷ আপনারা তাঁদের কথা বলবেন৷ আমার মতো বা আমার চেয়েও অনেকে খারাপ অবস্থায় আছে৷''
গনগনে সূর্যটা তখন সবেমাত্র পশ্চিম দিকে হেলেছে৷ আমার কেন যেন খুব পানির পিপাসা পাচ্ছিল৷ ছুটে চললাম একটি এনজিও'র মানসিক পরিচর্যা কার্যক্রম দেখতে৷
সেখানে গিয়ে কথা হলো রুপা, নিলুফা, খালেদা ও আসমার সঙ্গে৷ এঁরা প্রত্যেকেই পোশাক শ্রমিক৷ দুর্ঘটনার সময়ে রানা প্লাজার ভেতরেই ছিলেন৷ তবে শারীরিকভাবে বড় কোনো ক্ষতি হয়নি তাঁদের৷ কিন্তু এঁরা কেউই এখন আর কাজ করতে পারেন না৷ প্রচণ্ড ভয়, দুর্বিষহ সব স্মৃতি সারাক্ষণ তাড়া করে বেড়ায় তাঁদের৷
কাঁদতে কাঁদতে আসমা বলছিলেন, ‘‘এমন কইরা বাইচা থাকার চাইতে সেই সময় মইরা গেলেই ভালো হইতো৷''
কাজ করেন না৷ তাই বাড়ির সবার ‘খোটা' সহ্য করেও কোনোমতে টিকে আছেন খালেদা৷ বলেন, ‘‘আমি তো চাই কাজ করতে৷ কিন্তু পারি না৷ যতবার যাই, মনে হয়, এই বুঝি বিল্ডিং কাইপা উঠল৷ চইলা আসি৷ ঘুমাইতে পারি না৷ যারা মারা গেছে, লাশগুলা ডাকে৷''
এঁরা সবাই তাঁদের আত্মীয়-অনাত্মীয় সহকর্মী হারিয়েছেন রানা প্লাজার দুর্ঘটনায়৷ নিলুফা তাঁর বাসার পাশে একটি রাস্তায় একটু ফাটল ধরেছে বলে সেই রাস্তা দিয়ে কখনো যান না৷ কারণ, তাঁর মনে হয়, সেই রাস্তায় তিনি ডেবে যাবেন৷
‘‘পরশু দিন মাচা থিক্কা একটা পাতিল পড়ছে আমার গায়ে৷ ভয়ে আমার দাঁতে দাঁত লাইগা গেছে গা৷'' বলছিলেন তিনি৷
কথা হলো, এনজিওটির দুই মনোসামাজিক পরামর্শকের সঙ্গে৷ তাঁরা জানালেন যে, একে পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার বা পিটিএসডি বলে৷ এই সমস্যায় ঠিকমতো মানসিক চিকিৎসা না দিলে এই মানসিক পঙ্গুত্ব থেকে এদের মুক্তি সহসা মিলবে না৷
একই বিষয় নিয়ে পরদিন কথা বলতে গেলাম জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ফারুক আলমের সঙ্গে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আর্থিক অনুদানে একটি প্রকল্পের অধীনে তিনি ও তাঁর দল রানা প্লাজা দুর্ঘটনার শিকারদের অনেককেই শুরুর দিকে মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা দিয়েছেন৷ তিনি যা বললেন, তা আরো ভয়াবহ৷
‘‘আমাদের এখানে এক রোগী ছিলেন৷ উনি একজন উদ্ধারকারী৷ কিন্তু পরে নিজেই মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ আমরা প্রায়ই দেখতাম, হাসপাতালের বিছানার নীচ থেকে তিনি লাশ উদ্ধার করার চেষ্টা করতেন৷''
তিনি বলেন যে, বেশ কয়েকজন এমনই বিষণ্ণতায় ভুগছিলেন যে, আত্মহত্যার চেষ্টা পর্যন্ত চলে যায়৷ পিটিএসডি ও বিষণ্ণতাসহ বেশ কয়েকটি মানসিক রোগে আক্রান্ত দুর্ঘটনার শিকাররা৷ কিন্তু অর্থের অভাবে তাঁদের ঠিকমতো পরিচর্যা দেয়া হয়নি৷ সরকারি ও বিদেশি কিছু সাহায্য মিলে তাৎক্ষণিকভাবে যে সেবা দেয়া হয়েছে, তা যথার্থ নয়৷
তিনি স্বীকার করলেন যে, যে দেশে দু'মুঠো খাদ্য জোগাড় করাই দুঃসাধ্য, সেখানে শারীরিক স্বাস্থ্যের পর মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা বিলাসিতাই মনে হতে পারে৷
কিন্তু এই বিলাসিতা যে প্রয়োজনের নামান্তর, সেই মানসিকতা তৈরি করতে হবে৷ কারণ, এতগুলো মানুষ, যাঁরা মানসিক পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, তাঁদের শ্রমহীনতা শুধু সেই মানুষটিরই ক্ষতি করছে তাই নয়, তাঁদের পরিবার ও সর্বোপরি দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে৷
আর কিছু ক্ষতি চোখে দেখা যায় না৷ তাই আমাদের দৃষ্টি প্রসারিত করতে হবে৷
ঐতিহাসিক কয়েকটি শ্রম আন্দোলন
মে দিবসের চেতনা শ্রমিকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে ১৮৯০ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মে দিবস পালনের সূচনা হয়৷ ছবিঘরে দেখে নিন বিশ্বের অন্যতম কয়েকটি শ্রম আন্দোলনের কথা৷
ছবি: picture alliance / Tass/dpa
হে মার্কেটের শ্রমিকদের আন্দোলন
১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা নেমেছিলেন তুমুল আন্দোলনে৷ তাঁদের দাবি ছিল, উপযুক্ত মজুরি এবং দৈনিক আট ঘণ্টার বেশি কাজ নয়৷ মে মাসের প্রথম দিনেই শ্রমিকরা ধর্মঘটের আহ্বান জানায়৷ প্রায় তিন লাখ শ্রমিক যোগ দেয় সেই সমাবেশে৷ বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের রুখতে মিছিলে পুলিশ এলোপাথাড়ি গুলি চালায়৷ বহু শ্রমিক হতাহত হন৷
ছবি: picture-alliance/KPA/TopFoto
মে দিবস
পরে আন্দোলনে অংশ নেওয়ার অপরাধে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় গ্রেপ্তারকৃত ছয় শ্রমিককে৷ কারাগারে বন্দিদশায় এক শ্রমিক নেতা আত্মহত্যাও করেন৷ পরের বছর প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে দিনটিকে মে দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷
ছবি: AP
আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস
বর্তমানে মে মাসের প্রথম দিনটিকে পুরো পৃথিবীতে পালন করা হয় ‘মে দিবস’ হিসেবে৷ পৃথিবীর সব শ্রমিকের লড়াই-সংগ্রাম-পরিশ্রমের প্রতি সম্মান জানানো হয় এই দিনে, শ্রদ্ধা জানানো হয় তাঁদের আত্মত্যাগের পুণ্যস্মৃতির উদ্দেশ্যে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. U. Zaman
শ্রমজীবী মানুষের সংগঠন
অ্যামেরিকা স্বাধীন হওয়ার আগে শ্রমজীবী মানুষের প্রথম সংগঠন গড়ে ওঠে ১৬৮৪ সালে৷ ঠেলাগাড়ির চালকরা প্রথম ঠেলা শ্রমিক ইউনিয়ন গড়ে তোলেন৷ ১৮৪২ সালে অ্যামেরিকায় শ্রমিক শ্রেণি ট্রেড ইউনিয়ন ধর্মঘট করার অধিকার পায়৷ বিশ্বের প্রথম নারী শ্রমিকদের ধর্মঘট পালিত হয় অ্যামেরিকায় ১৮২৩ সালে৷ বিশ্বের শিল্প-কারখানাগুলোয় শ্রমিক আন্দোলন শুরু হয় ১৮২৮ সালে৷
ছবি: M. Cardy/Getty Images
আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী সংগঠন
ঊনবিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শ্রমিক শ্রেণি নিজ নিজ দেশে ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে তোলে৷ ১৮৬৪ সালে মার্কস- এঙ্গেলসের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী সমিতি৷ ইতিহাসে এটাই প্রথম আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী সংগঠন নামে খ্যাত৷
ছবি: AP
প্যারিস কমিউন
১৮৭১ সালের ১৮ মার্চ প্যারিসের শ্রমিকরা শহর থেকে বুর্জোয়া শাসকদের হটিয়ে নিজেদের হাতে ক্ষমতা নিয়ে নেয়৷ দশ দিন পরে ২৮ মার্চ তারিখে শ্রমিকরা গঠন করেছিল পৃথিবীর প্রথম প্রলেতারিয়েত রাষ্ট্র প্যারিস কমিউন৷
অক্টোবর বিপ্লব
অক্টোবর বিপ্লবকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত অঞ্চলগুলোয় বলা হয় ‘মহান অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব’৷ ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়ায় বলশেভিকরা ক্ষমতা দখল করে, শুরু হয় ‘লাল’ আর ‘সাদা’-দের মধ্যে গৃহযুদ্ধ৷ অক্টোবর বিপ্লবের বিজয় রাশিয়াকে রাজনৈতিকভাবে একটি অগ্রসর রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পুঁজিবাদী দাসত্ব থেকে মুক্তি
এই বিপ্লব জনগণকে পুঁজিবাদী দাসত্ব থেকে মুক্ত করেছিল৷ এই বিপ্লব শ্রমিক শ্রেণি ও মেহনতি কৃষকের জন্য শুধু সামাজিক মুক্তিই আনেনি, রাশিয়ার গণতান্ত্রিক সমস্যাগুলোও সমাধান করতে সক্ষম হয়েছিল৷ লেনিন স্বয়ং ১৯২৪ সালে পরলোকগমন করেন, কিন্তু রুশ বিপ্লব, সোভিয়েত রাশিয়া বা কমিউনিজম, এ সবের সঙ্গে তাঁর নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত৷
ছবি: picture-alliance/akg
তেভাগা আন্দোলন
১৯৩০ সালে বাংলার কয়েকটি জেলায় কৃষকরা তেভাগার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিলেন৷ তেভাগা আন্দোলনের মূল দাবি ছিল, ভাগচাষিকে ফসলের তিন ভাগের দুই ভাগ দিতে হবে৷ এই আন্দোলনটি ছিল সম্পূর্ণ বর্ণ হিন্দুদের বিরুদ্ধে মুসলমান ও নমঃশূদ্র চাষিদের অসহযোগ আন্দোলন৷ এ আন্দোলনে জমিদারদের পাইক-বরকন্দাজদের ঠ্যাঙাড়ে বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধ করতে হয়েছিল কৃষকদের৷ ১৯৪৬ সালেও আর এক দফা আন্দোলন হয়েছিল৷
ছবি: AFP/Getty Images/R. Gacad
দক্ষিণ আফ্রিকা
দক্ষিণ আফ্রিকার খনি শ্রমিকদের ওপর নানা নির্যাতন, মজুরি বৃদ্ধি, থাকা-খাওয়া ও জীবনমান উন্নয়ন ইত্যাদি সমস্যা নিয়ে আন্দোলন গড়ে ওঠে এবং ১৯৪৬ সালে ৭০ হাজার শ্রমিকের অংশগ্রহণে ধর্মঘট পালিত হয় কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে৷ এএনসি এই আন্দোলনে যোগদানের বিষয়ে নীরব থাকলেও ম্যান্ডেলা পরিচিত কয়েকজনকে নিয়ে কমিউনিস্ট নেতা জেবি মার্কসের সঙ্গে দেখা করে এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন৷
ছবি: dapd
জার্মানির শ্রমিক আন্দোলন
১৯৫৩ সালের ১৭ জুন তৎকালীন পূর্ব জার্মানির সরকারের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছিল শ্রমিকসহ সাধারণ জনগণ৷ বড় কোম্পানিগুলো জাতীয়করণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পূর্ব জার্মান সরকার, যার প্রতিবাদে ১৬ জুন থেকে আন্দোলন শুরু করেছিল কয়েকশ’ শ্রমিক৷ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে প্রায় ৭০০ শহরে৷ ১৭ জুন আন্দোলন থেকে সরকারের পদত্যাগ, স্বাধীন নির্বাচন অনুষ্ঠান ও দুই জার্মানির একত্রীকরণের দাবি ওঠে৷ সেনাদের গুলিতে নিহত হয় ৫০ জন৷
ছবি: Getty Images
শ্রমিক বিক্ষোভে উত্তাল ইউরোপ
স্পেন ও পর্তুগালে ২০১২ সালের ১৪ নভেম্বর বুধবার পালিত হয়েছিল সাধারণ ধর্মঘট৷ কর্মবিরতি পালন করেছিলেন গ্রিস ও ইটালির শ্রমিকরা৷ এই আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানায় বেলজিয়াম, জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, পোল্যান্ডসহ পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো৷ এতে বিভিন্ন দেশের শিল্প-কারখানা অচল হয়ে পড়ে৷ বাতিল হয় ইউরোপের অনেক ফ্লাইট৷ চার দেশে একযোগে ধর্মঘট পালনের ঘটনা ইউরোপে এটিই প্রথম৷
ছবি: Reuters
ফ্রান্সে শ্রমিক আন্দোলন ২০১৬
একবিংশ শতাব্দীতে এসেও ফ্রান্সে সর্ববৃহৎ শ্রমিক বিদ্রোহ দেখা গিয়েছে ২০১৬ সালে৷ শ্রম আইন সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে অসন্তোষের জের ধরে জেনারেল কনফেডারেশন অব লেবার (সিজিটি) ইউনিয়নের ডাকে ধর্মঘটে ফ্রান্সের প্রায় সব বিভাগের শ্রমিকরাই অংশ নিয়েছিলেন৷ এ ধর্মঘটের একপর্যায়ে প্রায় ৩৫ লাখ শ্রমিক রাস্তায় নেমে আসেন৷ তাদের সঙ্গে শামিল হয় ছাত্র ও তরুণরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সর্বভারতীয় সাধারণ ধর্মঘট
হয়েছিল ১৯৮২ সালের ১৯শে জানুয়ারি সেই ধর্মঘট ছিল বৃহৎ, ঐতিহাসিক এবং সবদিক দিয়ে সফল৷ পশ্চিমবঙ্গ এবং কেরালায় সর্বাত্মক বন্ধ পালিত হয়েছিল৷
ছবি: Reuters/D. Siddiqui
ভারতে শ্রমিক বিক্ষোভ
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ন্যূনতম মাসিক মজুরি ১৮ হাজার রুপি করা এবং শিল্প-কারখানার বেসরকারিকরণ ঠেকানোসহ ১৪ দফা দাবিতে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতজুড়ে সাধারণ ধর্মঘট পালন করেন সেবা খাতের লাখ লাখ শ্রমিক৷ ১৫ কোটির বেশি শ্রমিক এ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন বলে সংগঠনগুলোর দাবি৷
ছবি: AP
15 ছবি1 | 15
আপনি কি মনে করেন, এঁদের মানসিক সুরক্ষা দেয়া সরকারের দায়িত্ব?