মিশরে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তিন কন্যাশিশুর যৌনাঙ্গচ্ছেদের অভিযোগে শিশুদের বাবা ও এক ডাক্তারের বিচার শুরু হচ্ছে৷ দেশটির এক মানবাধিকার আইনজীবী জানিয়েছেন এ তথ্য৷
বিজ্ঞাপন
উইমেনস সেন্টার ফর গাইডেন্স অ্যান্ড লিগ্যাল অ্যাওয়ারনেস এর নির্বাহী পরিচালক রেদা আল-দানবোকি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন গত সপ্তাহে সোহাগ প্রদেশের জুহায়নাহ জেলায় অস্ত্রোপচারের এই ঘটনা ঘটে৷ জেলাটি রাজধানী কায়রো থেকে ৩৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত৷
তিনি বলেন, অভিযুক্ত বাবা করোনা ভাইরাসের টিকা দেয়ার কথা বলে তার ৮, ৯ ও ১১ বছর বয়সী তিন মেয়েকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যান৷ পরে তাদেরকে চেতনানাশক দিয়ে অজ্ঞান করে অস্ত্রোপচার করা হয়৷
পরবর্তীতে বাবার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যাওয়া মাকে মেয়েরা ঘটনাটি জানালে মা পুলিশে অভিযোগ করেন৷ এরপরই সেই ডাক্তার ও মেয়েদের বাবাকে গ্রেপ্তার করা হয়৷
দেশটির রাষ্ট্রীয় কৌসুলির দপ্তর থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে প্রাথমিক তদন্তে অস্ত্রোপচারের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে৷
আল-দানবোকি জানিয়েছেন, এই অভিযোগে ডাক্তারের সাত বছর এবং বাবার আট বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে৷
গত শতাব্দীর ৯০ এর দশক থেকেই নারীর যৌনাঙ্গচ্ছেদের বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছে মিশর৷ ২০০৮ সালে মিশরের আদালতে নারীর যৌনাঙ্গচ্ছেদ দণ্ডনীয় ঘোষণা করে আইন পাস হয়৷ তবে আইনের বিরোধীতাও ছিল প্রবল৷ ২০১৫ সালে সরকারের এক জরিপে দেখা যায় নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দেশটির ৮৭ শতাংশ নারীরই যৌনাঙ্গচ্ছেদ করা হয়েছে৷
২০১৬ সালে আইনটি সংশোধন করা হয়৷ পুরনো আইনে ‘সাধারণ অপরাধ' হিসেবে দুই বছর কারাদণ্ডের বিধান থাকলেও পরবর্তীতে ‘গুরুতর অপরাধ' হিসেব করে সাজা সাত থেকে আট বছর করা হয়৷
কিন্তু তারপরও একেবারে বন্ধ করা যায়নি এই প্রথা৷ আরব বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশটিতে প্রায়শই যৌনাঙ্গচ্ছেদ করতে গিয়ে রক্তপাতে নারীর মৃত্যুর খবর শিরোনাম হয়৷ জানুয়ারিতে আসিয়ুত প্রদেশে অস্ত্রোপচারের সময় ১২ বছরের এক শিশুর মৃত্যুর খবরেও তোলপাড় হয় দেশটিতে৷
প্রতিবাদ সত্ত্বেও চলছে নারীর যৌনাঙ্গচ্ছেদ
আফ্রিকার দেশগুলোতে এখনো চলছে নারীর যৌনাঙ্গচ্ছেদ৷ যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে তা নিষিদ্ধ৷ ঐতিহ্য রক্ষার নামে নারীর উপর বর্বর নির্যাতনের কিছু ছবি পাবেন এই ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters/S. Modola
সবার জন্য একই ব্লেড
কেনিয়ার রিফ্ট গ্রামের এই নারী হাতে থাকা ব্লেডটি দিয়ে ইতোমধ্যে চারজনের যৌনাঙ্গচ্ছেদ করেছেন৷ পোকোট জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্য অনুযায়ী, ব্লেড দিয়ে মেয়েদের যৌনাঙ্গের বাইরের অংশ কেটে বা যৌনাঙ্গচ্ছেদের মাধ্যমে তাঁদের মেয়ে থেকে নারীতে পরিণত করা হয়৷ যদিও বিশ্বের অনেক দেশে এটা নিষিদ্ধ, তাসত্ত্বেও অনেক নারী এখনো এই বর্বরতার শিকার হন৷
ছবি: Reuters/S. Modola
অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি
যৌনাঙ্গচ্ছেদের অনুষ্ঠান বা আচার শুরুর আগের প্রস্তুতির ছবি এটি৷ পোকোট জনগোষ্ঠীর নারী এবং শিশুরা আগুনের পাশে বসেছেন শীত থেকে বাঁচতে৷ এখানকার নারীদের মধ্যে যাঁরা যৌনাঙ্গচ্ছেদ বা ‘ফিমেল জেনিটাল মিউটিলেশন’ (এফজিএম) করতে চান না, তাঁদের সহজে বিয়ে হয় না৷ আর প্রত্যন্ত এই এলাকায় বিয়ে ছাড়া মেয়েদের পক্ষে চলা কার্যত অসম্ভব৷
ছবি: Reuters/S. Modola
বাধা দেয়া সম্ভব নয়
যোনাঙ্গচ্ছেদের আগে মেয়েদের উলঙ্গ করে ধোয়া হয়৷ এর ফলে পরবর্তীতে তাঁদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা হতে পারে, কারণ তাঁদের মায়েদেরও সমস্যা হয়েছে৷ যৌনাঙ্গচ্ছেদের কারণে সংক্রমণ, বন্ধ্যাত্ব এমনকি সন্তান জন্ম দেয়ার সময় সমস্যাও হতে পারে৷ আফ্রিকার ২৮টি দেশে, আরব উপদ্বীপে এবং এশিয়ার কিছু দেশে এখনো এই চর্চা রয়েছে৷ ইউরোপের অভিবাসী মেয়েরাও অনেক সময় এই ঝামেলায় পড়েন৷
ছবি: Reuters/S. Modola
ভীতিকর পরিস্থিতি
রিফট উপত্যকার একটি কুঁড়েঘরে যৌনাঙ্গচ্ছেদের জন্য অপেক্ষা করছেন কয়েকজন পোকোট মেয়ে৷ ২০১১ সালে কেনিয়া সরকার এই চর্চা নিষিদ্ধ করেছে৷ তবে ইউনিসেফ-এর প্রকাশিত তথ্য অনযায়ী, দেশটির ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সি অন্তত ২৭ শতাংশ মেয়ের যৌনাঙ্গচ্ছেদ করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/S. Modola
ব্যথা সহ্য করে থাকতে হবে
একজন খৎনাকারী একটি মেয়ের যৌনাঙ্গচ্ছেদ করছেন৷ স্থানীয়রা আশা করেন যে, মেয়েরা এ সময় মুখ বুজে ব্যথা সহ্য করে যাবে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, দশ শতাংশ মেয়ে যৌনাঙ্গচ্ছেদের সময় মারা যায়৷ আরো ২৫ শতাংশ মারা যায় যৌনাঙ্গচ্ছেদের কারণে সৃষ্ট শারীরিক জটিলতার কারণে৷ সোমালিয়ার ৯৮ শতাংশ মেয়ে যৌনাঙ্গচ্ছেদের শিকার৷
ছবি: Reuters/S. Modola
পাথরের উপর রক্ত
একেক গোষ্ঠী একেকভাবে যৌনাঙ্গচ্ছেদ করে থাকে৷ পোকোট সম্প্রদায় যোনিদ্বার কেটে ফেলে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, মূলত তিনভাবে যৌনাঙ্গচ্ছেদ করা হয়৷ প্রথম পদ্ধতি হচ্ছে, ক্লিটোরিয়াস বা ভঙ্গাকুর কেটে ফেলা৷ দ্বিতীয় পদ্ধতিতে, যোনিদ্বারের বাইরের এবং ভেতরের কিছু অংশ কেঁটে ফেলা হয়৷ আর তৃতীয় পদ্ধতিতে কার্যত যোনিদ্বার পুরোটা কেটে সমান করে ফেলা হয়৷
ছবি: Reuters/S. Modola
সাদা রং করা
পোকোটদের যৌনাঙ্গচ্ছেদের অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে মেয়েদের দেহে সাদা রং করা হয়৷ তারা আগে থেকেই ধরে নেয় যে, এতে করে সংক্রমণে বা মাত্রাতিরিক্ত রক্তপাতের কারণে মেয়েটি মারা যেতে পারে৷ এমন বর্বরতা থেকে মেয়েদের বাঁচাতে ২০১৪ সালে বিশেষ পুলিশ বাহিনী তৈরি করেছে কেনিয়া৷
ছবি: Reuters/S. Modola
জীবনভর যন্ত্রণা
যৌনাঙ্গচ্ছেদের পর একটি মেয়েকে পশুর চামড়া জড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ পোকোট জনগোষ্ঠীর ধারা অনুযায়ী, মেয়েটি এখন বিয়ের উপযোগী হয়েছে৷ অনেক উপজাতী গোষ্ঠী মনে করে, এফজিএম হচ্ছে স্বাস্থ্যকর ব্যাপার৷ এরফলে মেয়েরা আরো বেশি গর্ভধারণের উপযোগী হয় এবং স্বামীর প্রতি অনুগত থাকে৷
ছবি: Reuters/S. Modola
মা থেকে মেয়েতে?
এই কিশোরী কোনোদিন যৌনাঙ্গচ্ছেদের যন্ত্রণার কথা ভুলবে না৷ কিন্তু ভবিষ্যতে সে কি এই ব্যথা থেকে তার মেয়েকে রক্ষা করতে পারবে? কিছু দেশে এখন শিশুদের যৌনাঙ্গচ্ছেদ করা হয়৷ কেননা বাচ্চাদের করা হলে সেটা আলাদাভাবে মানুষের নজর কাড়ে না!