1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভ্রূণ হত্যা ঠেকাতে অভিনব উদ্যোগ

২৩ মার্চ ২০১৭

ভারতে কন্যা ভ্রুণ হত্যার ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে৷ তবে পুনে শহরের এক চিকিৎসক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন৷ তাঁর হাসপাতালে কন্যা সন্তানের প্রসব করানো হচ্ছে বিনামূল্যে৷ এ পন্থা ছেলে সন্তানকে প্রাধান্য দেওয়ার দৃষ্টিভঙ্গি কি বদলে দেবে?

Indien Krankenhaus Pune
নিজের হাসপাতালে কাজ করছেন ডা. গনেশ রাখছবি: DW/K.Keppner

‘মেয়ে হয়েছে!’ কেবল এই দু'টো শব্দ ১০ বছর আগে জয়ার হৃদয়কে মুচড়ে দিয়েছিল৷ কেননা তাঁর স্বামী এবং পরিবারের অন্যান্যরা একজন পুত্র সন্তান কামনা করছিলেন৷ তাই মেয়ে হওয়ার পর জয়াকে হাসপাতালে দেখতে আসেনি পরিবারের কেউ৷ বাড়ি ফেরার পরও তাঁকে শাস্তি পেতে হয়৷ কয়েক মাস ধরে তাঁর ওপর চলে অকথ্য নির্যাতন ও হয়রানি৷ শেষে অস্ত্র হিসেবে স্বামী ও শ্বশুড়বাড়ির লোকজন জয়ার ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপ করে৷ ঝলসে যায় জয়ার মুখ, ক্ষতবিক্ষত হয় ঘাড় এবং বুক৷ এমনকি জয়াকে আইনত মৃত দেখাতে ডেথ সার্টিফিকেট পর্যন্ত তৈরি করে ফেলে তাঁরা৷

এ মুহূর্তে পুনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জয়া জানান, ‘‘কখনো কখনো মনে হয় একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দিলে জীবনে হয়ত এত অশান্তি থাকতো না৷ জীবনটা হয়ত অন্যরকম হতো৷’’

মেয়ের জন্ম দেয়ায় স্বামী ও শ্বশুড়বাড়ির লোকজন জয়ার ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপ করেছিলছবি: DW/K.Keppner

জয়ার এই ঘটনাই প্রমাণ করে ভারতে পুত্র সন্তানের কতটা চাহিদা বা প্রাধান্য রয়ে গেছে আজও৷ আর এর ফলেই ঘটে চলেছে কন্যা ভ্রুণ হত্যা৷ সরকার নানা ধরনের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে জন্মের আগে গর্ভের সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণ না করা হয়, হত্যা করা না হয় কন্যা ভ্রুণ, কিন্তু তারপরও দেশজুড়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটেই চলেছে৷ মার্চ মাসেই পুনের দক্ষিণে একটি হাসপাতালের কাছ থেকে গর্ভপাত করানো ১৯টি কন্যা ভ্রুণ উদ্ধার করেছে পুলিশ৷

বলা বাহুল্য, এভাবে কন্যা ভ্রুণ হত্যার ফলে ভারতের পুরুষ ও নারীর অনুপাতে পার্থক্য দেখা দিয়েছে৷ ২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি ১০০০ জন ছেলের বিপরীতে মাত্র ৯২৭টি মেয়ের জন্ম হয়েছিল ভারতে৷ আর ২০১৬ সালে পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, প্রতি হাজারে মাত্র ৯১৮টি মেয়ে জন্মগ্রহণ করেছে ভারতে৷

হাসপাতালে জন্ম নেয়া এক নবজাতক কন্যাছবি: DW/K.Keppner

এই পরিসংখ্যানই ডা. গনেশ রাখের যেন টনক নড়িয়ে দিয়েছে৷ পরিস্থিতি যে আসলে কতটা ভয়াবহ, তা তিনি বুঝতে পেরেছেন৷ এই চিকিৎসকই জয়ার চিকিৎসা করছেন৷ তিনি জানান, যখনই অন্তঃসত্ত্বা নারীরা প্রসবের জন্য হাসপাতালে আসেন, তাঁর সব আত্মীয়স্বজনই আশা করে থাকেন যে ছেলে হবে৷ যদি ছেলে হয় আনন্দের বন্যা বয়ে যায়, মিষ্টি বিতরণ করা হয়৷ কিন্তু মেয়ে হলে আত্মীয়স্বজনদের দেখাই পাওয়া যায় না৷ এ থেকেই তিনি নতুন এই উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি, যার নাম ‘কন্যা শিশুদের রক্ষা করতে প্রচারণা’৷ ২০১২ সালের শুরু থেকেই এর জন্য কাজ করছেন তিনি৷ কোনো নারী কন্যাসন্তান প্রসব করলে হাসপাতালে কোনো অর্থ দিতে হয় না আর৷ শুধু তাই নয়, কন্যাসন্তানের জন্মের পর হাসপাতালের কর্মীরাই কেক এবং মিষ্টি বিতরণ করে থাকেন৷

প্রচারণা শুরুর পর এ পর্যন্ত ৫০০টি কন্যাসন্তানের জন্ম হয়েছে এই হাসপাতালে৷ এমনই এক কন্যাসন্তানের মা চান্দাবাই জানান, ‘‘এই হাসপাতালে এসে আমার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে৷ আমার মেয়ে অশ্বীনীর মেয়ে, মানে আমার নাতনি হওয়ায় এখন তাই আমরা খুব খুশি৷ তাছাড়া হাসপাতাল থেকে জন্মনিয়ন্ত্রণ শিখছে অনেকে৷ এই হাসপাতালে কোনো মেয়ের জন্ম হলেই হাসপাতালের কর্মীরা মাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান৷ মেয়ে হওয়ার জন্য কেকও কাটা হয়৷ জানানো হয়, মেয়ে হওয়াটাও একটা উৎসবের কারণ বৈকি!’’

সোনিয়া ফালনিকার (পুনে)/এপিবি

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে জানাতে পারেন নীচে মন্তব্যের ঘরে...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ