গ্লাসগোর জলবায়ু সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বিশ্ব নেতারা। কিন্তু গরিব দেশের প্রতিনিধিত্ব কোথায়? উঠছে প্রশ্ন।
বিজ্ঞাপন
১২০টি দেশ অংশ নিয়েছে গ্লাসগোর জলবায়ু সম্মলনে। বিশ্বের তাবড় নেতারা একাধিক সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছেন এরমধ্যেই। কিন্তু অভিযোগ উঠছে, অপেক্ষাকৃত গরিব দেশগুলির সেই অর্থে প্রতিনিধিত্ব নেই এই সম্মেলনে। অধিকাংশ দেশের পরিবেশবিদরাই সম্মেলনে এসে পৌঁছাতে পারেননি। কারণ, করোনাবিধি মেনে তাদের পক্ষে এসে পৌঁছানো সম্ভবই হয়নি। এর দায় কার? কপ ২৬ আপাতত এই প্রশ্নে উত্তাল।
সম্মেলনের উদ্যোক্তাদের দাবি, গতবছরের তুলনায় এবার অনেক বেশি পরিবেশবিদ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। সবমিলিয়ে সংখ্যাটি প্রায় ৪০ হাজার। রাষ্ট্রনেতারা ছাড়া অধিকাংশ পরিবেশবিদই অপেক্ষাকৃত উন্নতদেশের বাসিন্দা। যারা ভ্যাকসিন পেয়ে গেছেন। যাদের দেশ থেকে আসার ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য কোনোরকম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি। কিন্তু গরিব দেশগুলি, বিশেষ করে আফ্রিকার দেশগুলির ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে। করোনা ঠেকাতেই ওই সমস্ত বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে বহু পরিবেশবিদ আসতেই পারেননি সেখান থেকে। ১০ বা ১৪ দিনের কোয়ারান্টিনের খরচ তুলতে পারেননি বলে অনেকে আসতে পারেননি। যারা এসেছেন, তাদের অনেকেই গ্লাসগোয় জায়গা পাননি। পার্শ্ববর্তী শহর এডিনবরায় তাদের থাকতে হচ্ছে। নিয়মিত সম্মেলনে যোগ দিতে পারছেন না তারা।
এবারের জলবায়ু সম্মেলনের প্রধান খেলোয়াড় যারা
গ্লাসগো জলবায়ু সম্মেলনে নিজ নিজ দাবি দাওয়া নিয়ে হাজির হচ্ছে ১৯৭ টি দেশ৷ কপ২৬-এ উন্নত, উন্নয়নশীল আর স্বল্পোন্নত দেশগুলোর, কার কী এজেন্ডা থাকছে জানুন ছবিঘরে৷
ছবি: Alistair Grant/AP Photo/picture alliance
চীন
বৈশ্বিক জলবায়ু লক্ষ্য অর্জন কতটা সম্ভব তা অনেকাংশে নির্ভর করে বিশ্বের সর্বোচ্চ কার্বন নিঃসরণকারী এই দেশের কর্মকাণ্ডের উপরে৷ ২০৬০ সাল নাগাদ কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জনের ঘোষণা দেন শি জিনপিং, যা বিজ্ঞানীদের বেঁধে দেয়া লক্ষ্যের চেয়ে ১০ বছর পিছিয়ে৷ ২০২৬ সালের মধ্যে কয়লার ব্যবহার বন্ধের ঘোষণাও এসেছে৷ এবারের সম্মেলনে সহ পরিবেশমন্ত্রীকে পাঠাচ্ছে চীন, যা বড় ধরনের কোনো ঘোষণার পথে বড় বাধা বলে মনে করছেন অনেকে৷
ছবি: Wiktor Dabkowski/ZUMA/picture alliance
যুক্তরাষ্ট্র
কার্বন নিঃসরণে চীনের পরে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান৷ ট্রাম্পের বিদায়ের পর চলতি বছর আবারও জলবায়ু আলোচনায় ফিরেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ প্যারিস চুক্তিতে ফেরার পাশাপাশি ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বণ নিঃসরণ ২০০৫ সালের তুলনায় ৫০ শতাংশ কমানোর ঘোষণা দেন বাইডেন৷ কিন্তু এ সংক্রান্ত সুস্পষ্ট নীতির অভাব গ্লাসগো সম্মেলনে চীন, ভারত ও ব্রাজিলের মতো দেশগুলোকে চাপে রাখার ক্ষেত্রে বড় বাধা বলে মনে করছেন কূটনৈতিক ও এনজিওকর্মীরা৷
ছবি: Reuters/B. McDermid
যুক্তরাজ্য
এবারের সম্মেলন নিয়ে ভীষণ আশাবাদী আয়োজক দেশটি৷ এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে কয়লাকে ইতিহাসের পাতায় নিয়ে যাবেন বলে উল্লেখ করেছেন সম্মেলনের নেতা ব্রিটিশ মন্ত্রী অলোক শর্মা৷ ২০৫০ সালের মধ্যে নিট কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি আছে যুক্তরাজ্যের৷ উত্তর সাগরে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান বন্ধে চাপ আছে বরিস জনসন সরকারের উপরে৷ সেক্ষেত্রে দেশটিকে সামনের দিনে আমদানিকৃত জ্বালানির উপর নির্ভরশীল হতে হবে৷
ছবি: Scott Heppell/AP Photo/picture alliance
ইউরোপীয় ইউনিয়ন
বিশ্বের আট ভাগ গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের দায় এই জোটের ২৭ দেশের৷ তবে গত কয়েক বছর ধরেই তাদের নিঃসরণের মাত্রা পড়তির দিকে৷ ১৯৯০ সালের পর্যায়ের চেয়ে ২০৩০ সাল নাগাদ নিট নিঃসরণ অন্তত ৫৫ শতাংশে আর ২০৫০ সালে শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্য তাদের৷ গত দুই বছর ধরেই তাপদাহ আর বন্যার মতো বৈরি জলবায়ুর মুখোমুখি হচ্ছে তারা৷
ছবি: INA FASSBENDER/AFP
স্বল্পোন্নত দেশ
৪৬টি দেশ, ১০০ কোটি নাগরিক আছে এই দলে৷ তারা ছড়িয়ে আছে আফ্রিকা, এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে৷ উন্নত দেশগুলোর মাত্রাতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণের ভুক্তভোগী মূলত বাংলাদেশসহ এই দেশগুলোই৷ আফ্রিকান গ্রুপ অব ন্যাশনস, ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের সাথে মিলে এলডিসি দেশগুলোর লক্ষ্য থাকবে, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে উন্নত দেশগুলোর বছরে ১০০ কোটি ডলারের জলবায়ু তহবিলের প্রতিশ্রুতি রক্ষায় চাপ দেয়া৷
ছবি: DW/M. Rashed
‘ব্যাসিক’ দেশসমূহ
ব্রাজিল, সাউথ আফ্রিকা, ভারত এবং চীন উন্নয়নশীল এই অর্থনীতিগুলো এখন উচ্চ দূষণকারী দেশে পরিণত হয়েছে৷ তারা জলবায়ু তহবিলে ধনীদের আরো বেশি বেশি অর্থ প্রদানে চাপ দিয়ে আসছে৷ নতুন দিল্লি মনে করে উন্নত দেশগুলোর বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার দেয়াও যথেষ্ট নয়৷ এই তহবিল ৭৫০ বিলিয়নে নেয়ার দাবি সাউথ আফ্রিকার৷ অ্যামাজনের বন ধ্বংসের বিপরীতে আর্থিক ক্ষতিপূরণ চায় ব্রাজিলও৷
ছবি: REUTERS
6 ছবি1 | 6
প্রশ্ন এবং অভিযোগ
পরিবেশবিদদের একাংশের বক্তব্য, জলবায়ু পরিবর্তনের যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার দায় প্রথম বিশ্ব বা উন্নত বিশ্বের। যথেচ্ছভাবে তারা পরিবেশের ক্ষতি করেছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফল অনেক বেশি ভোগ করছে অপেক্ষাকৃত গরিব দেশগুলি। বিশেষত, পৃথিবীর নীচের অর্ধের আফ্রিকা মহাদেশ। যারা সবচেয়ে বেশি সমস্যায়, কার্যত তাদের বাদ দিয়েই এত বড় একটি সম্মেলন হয়ে যাচ্ছে। নেওয়া হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত। অথচ যারা সবচেয়ে বেশি সমস্যায়, তাদের কথাই শোনার সুযোগ হচ্ছে না।
পরিবেশবিদদের দাবি
২০০৯ সালের জলবায়ু সম্মেলনে উন্নত দেশগুলি শপথ নিয়েছিল, ২০২০ সালের মধ্যে অপেক্ষাকৃত গরিব দেশগুলিকে ১০০ বিলিয়ন ডলার করে দেওয়া হবে। ওই সাহায্য নিয়ে তারা তাদের অর্থনীতিকে সবুজবান্ধব করার চেষ্টা করবে। কার্বন নিঃসরণের ক্ষেত্রে সচেতন হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই আশ্বাস পূরণ করা হয়নি। এবারের জলবায়ু সম্মেলনে ওই বিষয়টি নিয়ে যাতে আলোচনা হয়, তার দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবিদদের এক বড় অংশ।
তাপমাত্রা বৃদ্ধি
এবারের জলবায়ু সম্মেলনে একটি বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন বিশ্বনেতারা। যেভাবেই হোক তাপমাত্রা বৃদ্ধি এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখতে হবে। কীভাবে তা সম্ভব, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন ফুটপ্রিন্ট অনেকটা কমিয়ে ফেলার শপথ নেওয়া হয়েছে। মিথেন গ্যাস নিঃসরণ কমানোর সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। পরিবেশবিদদের বক্তব্য, এর কোনোটাই সম্ভব নয়, যদি গরিব দেশগুলিকে এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা না যায়। এবং তাদের সঙ্গে পেতে গেলে তাদের অর্থনৈতিক বুনিয়াদের দিকে নজর দিতেই হবে।