কবর থেকে তোলা হলো আনিস খানের দেহ। হাইকোর্টের নির্দেশে সোমবার দ্বিতীয়বার ময়না-তদন্ত হলো।
আনিস খানের কবর।ছবি: Subrata Goswami/DW
বিজ্ঞাপন
কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে আনিস খানের দেহের দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত হলো। ময়না-তদন্তের সময় আনিসের জেঠতুতো ভাই সলমন, তাদের আইনজীবী এবং জেলা বিচারক রাই চট্টোপাধ্যায় উপস্থিত ছিলেন। হাসপাতালে বিশেষ তদন্তকারী দল(সিট)-এর দুই কর্তাও উপস্থিত ছিলেন।
বিকেল চারটে থেকে ময়না তদন্ত শুরু হয়। চলে সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে। দেহের ২৪ জায়গার এক্স-রে করা হয়। সূত্র জানাচ্ছে, এক্স-রে-তে দেখা গেছে, মুখ, বাঁদিকের পাঁজর, পা ও মাথায় আঘাতের চিহ্ন আছে। পুরো ময়না-তদন্তের ভিডিও রেকর্ডিং করা হয়েছে। ময়না তদন্তের পর রাত নয়টা নাগাদ আনিসের দেহ আবার আমতায় নিয়ে যাওয়া হয়। রাতেই দেহ কবরস্থ করা হয়েছে।
কেন দ্বিতীয়বার ময়না-তদন্ত
সিট দ্বিতীয়বার ময়না তদন্ত করতে চেয়েছিল এবং হাইকোর্ট তার অনুমতি দেয়। আনিসের মৃত্যু কীভাবে হয়েছে, তা জানার ক্ষেত্রে বিস্তারিত ময়না তদন্ত করা জরুরি বলে সিট জানিয়েছিল। সিটের আশা, দ্বিতীয় ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর তারা বুঝতে পারবে, আনিসের দেহ ছাদ থেকে কতটা দ্রুত পড়েছিল, কোথায় কতটা আঘাত লেগেছে, সেই আঘাতের পরিমাণ কতটা এবং তার মৃত্যুর জন্য কোন আঘাত দায়ী? আনিসের মৃত্যু-রহস্যের সমাধান করতে গেলে এই সব প্রশ্নের জবাব খুবই জরুরি বলে তারা মনে করছেন।
এখন আনিসের কবর পাহারায় সিসিটিভি
আনিস খানের মৃত্যু নিয়ে তোলপাড় পশ্চিমবঙ্গ। হাইকোর্ট দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। আনিসের কবরের সামনে সিসিটিভি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
শোকাহত বাবা
আনিসের ঘরে বসে তার বাবা। ছেলের আকস্মিক মৃত্যুর শোক এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি। সরকার প্রশাসন কাউকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না।
ছবি: Subrata Goswami/DW
নীরবে নিভৃতে কাঁদে
থমথমে বাড়িতে কারও মুখে কোনো কথা নেই। সকলেই নির্বাক হয়ে বসে আছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পুলিশের ঘেরাটোপ
বাড়ির সামনে বিশাল পুলিশ বাহিনী। সকলকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না বাড়িতে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
নজরদারি ক্যামেরা
আনিসের কবরের সামনে লাগানো হয়েছে সিসিটিভি। ২৪ ঘণ্টা স্ক্রিনের দিকে নজর রাখছেন পুলিশকর্মীরা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সিসিটিভিতে কবর
সিসিটিভির স্ক্রিনে দেখা যাচ্ছে আনিসের কবর। এই কবর থেকে তুলেই দ্বিতীয়বার তার ময়নাতদন্ত হওয়ার কথা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
দেহ চুরির ভয়
আনিসের পরিবারের ভয়, দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের আগে দেহ লোপাট হয়ে যেতে পারে। সে কারণেই সিসিটিভির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বিক্ষোভ কর্মসূচি
আনিসের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে আসছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। অনেকে বাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভও দেখাচ্ছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
এই সেই বাড়ি
এই বাড়ির ছাদ থেকেই আনিসকে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ
স্থানীয় থানার পুলিশ অফিসারকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। আনিসের পরিবারের দাবি পুলিশের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
9 ছবি1 | 9
দেহ তোলার ক্ষেত্রে জটিলতা
সিট প্রথমে গত শনিবার আনিস খানের দেহ কবর থেকে তুলতে চায়। তারা ভোররাতে গিয়ে দেহ তোলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আনিসের পরিবার তাতে রাজি হয়নি। গ্রামবাসীরাও বাধা দেয়। সোমবারও প্রথমে কাকভোরে তারা দেহ আনতে যায়। কিন্তু আনিসের পরিবার জানিয়ে দেয়, জেলা বিচারক না এলে তারা দেহ কবর থেকে তুলতে দেবেন না। হাইকোর্টের নির্দেশে সেটাই বলা ছিল। সিটের যুক্তি ছিল, হাইকোর্ট বলেছিল, ময়না-তদন্তের সময় জেলা জজ থাকবেন। কবর থেকে দেহ তোলার সময় ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের অফিসার থাকলেই হলো। সেই অফিসার তারা এনেছেন।
কিন্তু আনিসের পরিবার এই যুক্তি মানতে রাজি হয়নি। তারপর সিটের কর্মকর্তারা জেলা বিচারককে নিয়ে আসেন। সমস্যা মেটে। আনিসের দেহ কবর থেকে তুলতে দিতে রাজি হয় তার পরিবার। পরে আনিসের দাদা সাবির বলেন, তারা এখনো সিবিআই তদন্তের দাবি করছেন। কারণ, সিটের মধ্যে আদালতের নির্দেশ অমান্য করার প্রবণতা আছে।
আনিস হত্যা: পোস্টারে, প্রতিবাদে মুখর কলকাতা
প্রতিবাদের আগুন নিভছে না৷ প্রতিবাদী তরুণ আনিস খান হত্যার প্রতিবাদে কলকাতা এখনো মুখর৷ আনিসের বাড়ি হাওড়ার আমতায় ঘেরা করা হলো থানা৷ পথে পথে পোস্টার, প্রতিবাদ...
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বিচার দাবি
হাওড়ার আমতায় আনিস খানের বাড়ির পাশে একটি পোস্টারে শুধু লেখা ‘বিচার চাই’৷
ছবি: Subrata Goswami/DW
‘পুলিশ তুমি জবাব দাও’
সরাসরি পুলিশের দিকে আঙুল তোলা হয়েছে আরেক পোস্টারে৷ পোস্টারে এও স্পষ্ট যে এখনো সিবিআই তদন্তেই আস্থা আনিসের পরিবার ও অধিকাংশ সমব্যথীর৷
ছবি: Subrata Goswami/DW
মিছিলের প্রস্তুতি
আমতা থানা ঘেরাওয়ের আগে প্রতিবাদী পোস্টার হাতে আনিস খানের প্রতিবেশীরা৷ পাড়ার প্রতিবাদী ছেলেটির এইভাবে চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না তারা৷
ছবি: Subrata Goswami/DW
থানা ঘেরাও
থানা ঘেরাও করে সন্তান হত্যার প্রতিবাদ জানান আনিসের বাবা সালেম খানম ও তার স্বজন এবং প্রতিবেশীরা৷ ফুরফুরা শরিফের কাশেম সিদ্দিকীও ছিলেন তাদের সঙ্গে৷
ছবি: Subrata Goswami/DW
প্রতিবাদী পোস্টার
পোস্টারেও আনিস হত্যার জন্য আঙুল তোলা হয়েছে পুলিশের দিকে৷ কলাকাতার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে চোখে পড়েছে এই ধরনের পোস্টার৷
ছবি: Satyajit Shaw/DW
এসএফআইয়ের প্রতিবাদ
সরাসরি শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে আঙুল তুলেছে বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআই৷ তাদের পোস্টারে লেখা, আনিস খানকে হত্যা করেছে তৃণমূল৷
ছবি: Satyajit Shaw/DW
থানা ঘেরাও
কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা ঘেরাও করে প্রতিবাদ জানায় একাধিক সংগঠন৷
ছবি: Satyajit Shaw/DW
প্রেসিডেন্সিতে প্রতিবাদ
‘‘ইনসাফ চাই, ছাত্র খুনের বিচার চাই’’, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে চোখে পড়েছে এমন পোস্টার৷
ছবি: Satyajit Shaw/DW
আলিয়ায় সরব পড়ুয়ারা
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, এমনই একটি ব্যানার হাতে প্রতিবাদ জানিয়েছেন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা৷ তারাও সিবিআই তদন্তের কথাই বলেছেন বারবার৷ আনিস খান এই আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়তেন৷
ছবি: Satyajit Shaw/DW
আদর্শের মৃত্যু নেই
প্রতিবাদে উত্তাল তিলোত্তমা কলকাতা থেকে বাঁকুড়ার বরজোড়া৷ প্রতিবাদে সরব রাজ্যের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়া, সমাজকর্মীরাও৷ আনিস খানের হত্যাকারীদের কঠিন শাস্তি চান প্রত্যেকে৷
ছবি: Satyajit Shaw/DW
10 ছবি1 | 10
আনিসের দেহ কবর থেকে তোলা হয়। তারপর পুরো রাস্তা গ্রিন করিডোর করে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। ওই সময় যাতে কোনোরকম বিক্ষোভ না হয়, সেজন্য পুরো হাসপাতাল চত্বর নিরাপত্তার বেড়াজালে ঘিরে ফেলা হয়।
সিটের জেরা
সোমবারও সিট-এর অফিসাররা আমতা থানার কয়েকজন পুলিশকর্মীকে জেরা করেছেন। আনিসের বাবা জানিয়েছেন, ঘটনার দিন চারজন পুলিশ কর্মী এসেছিল। তার মধ্যে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি দুই জনকে এখনো পাওয়া যায়নি। ঘটনার বাড়তি তথ্য পেতে সিট এখন আমতা থানার অন্য পুলিশকর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে।