গরিব দেশগুলোতে গত ২০ বছরে মানুষের প্রত্যাশিত আয়ু গড়ে নয় বছর বেড়েছে৷ এছাড়া সারা বিশ্বে প্রত্যাশিত আয়ু ছয় বছর বেড়ে নারীদের ক্ষেত্রে হয়েছে ৭৩ বছর, যেখানে পুরুষের ৬৮ বছর৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্প্রতি জানিয়েছে এ তথ্য৷
বিজ্ঞাপন
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডাব্লিউএইচও বলছে, রোগ প্রতিরোধে সাফল্য এবং শিশুমৃত্যুর হার কমে আসার ফলেই এ অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে, যদিও ধনী ও দরিদ্র দেশে মানুষের গড় আয়ুর ব্যবধান এখনো অনেক বেশি৷
ডাব্লিউএইচও-র বার্ষিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৯০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ছয়টি দরিদ্র দেশে মানুষের প্রত্যাশিত আয়ু ১০ বছর পর্যন্ত বেড়েছে৷ এর মধ্যে লাইবেরিয়ায় প্রত্যাশিত গড় আয়ু ৪২ বছর থেকে ২০ বছর বেড়ে ৬২ বছর হয়েছে৷
এছাড়া ইথিওপিয়ায় ৪৫ বছর থেকে বেড়ে ৬৪ বছর, মালদ্বীপে ৫৮ থেকে বেড়ে ৭৭ বছর, কম্বোডিয়ায় ৫৪ থেকে বেড়ে ৭২ বছর, পূর্ব টুমরে ৫০ থেকে বেড়ে ৬৬ বছর এবং রুয়ান্ডায় ৪৮ থেকে বেড়ে ৬৫ বছর হয়েছে৷
বিশ্বব্যাপী আয়ু বাড়ার পরিণতি
গোটা বিশ্বে ৬৫ বছরের বেশি বয়সের মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে৷ জাতিসংঘের সূত্র অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে তাঁদের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যাবে, যা জনসংখ্যার প্রায় ১৫.৬ শতাংশ৷ এর কারণ ও পরিণতি কী হতে চলেছে?
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/GettyImages
আরও বেশি বয়স্ক মানুষ
গোটা বিশ্বে মানুষের আয়ু বাড়ছে৷ ২০১০ সালে ৬৫ বছরের বেশি বয়সি মানুষের সংখ্যা ছিল মাত্র ৭.৭ শতাংশ৷ জাতিসংঘের পূর্বাভাষ অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে তা দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়াবে (১৫.৬ শতাংশ)৷ একদিকে পড়তি জন্মহার, অন্যদিকে আয়ু বেড়ে চলায় এমন পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে৷ বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে ভবিষ্যতে বয়স্কদের সংখ্যা বাড়বে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অবসরের পর প্রেম
১০০ বছর আগে কোনো মানুষ ৭৫ বছর পূর্ণ করলে, সেটা হতো এক বিরল ঘটনা৷ তাঁদের অতি বৃদ্ধ মনে করা হতো৷ আর আজ অবসর নেয়ার পরেও অনেকে তরতাজা সুস্থ যুবকের মতো থাকেন, চুটিয়ে জীবন উপভোগ করেন৷ জার্মানিতে শতবর্ষ পূর্ণ করা মানুষের সংখ্যা গত ৩ দশকের তুলনায় প্রায় পাঁচ গুণ বেড়ে গেছে৷
ছবি: Fotolia/Gina Sanders
তরতাজা শরীর
বয়স হলেও শারীরিকভাবে সচল থাকা আজ আর নতুন কোনো ঘটনা নয়৷ চিকিৎসার উন্নতি ও সমৃদ্ধিই এর মূল কারণ৷ উন্নয়নশীল দেশেও এমন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে৷ ভবিষ্যতে বয়স্ক মানুষদের একটা বড় অংশই এ সব দেশে থাকবেন৷
ছবি: Patrizia Tilly/Fotolia
নারীরা সন্তান চাইছেন না
আগামী বছরগুলিতেও এমন প্রবণতা বজায় থাকবে৷ তরুণ দম্পতিরা কম সন্তান চাইছেন৷ এর অন্যতম কারণ হলো, নারীরা তাঁদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন৷ কাজের পাশাপাশি সন্তান সামলানো তাঁদের জন্য বেশ কঠিন হয়ে পড়ে৷
ছবি: Fotolia/Fotowerk
মেয়েরা স্কুলে যেতে চায়
নারীরা যে আগের তুলনায় কম সংখ্যক সন্তান চাইছেন, তার আরও একটা কারণ রয়েছে৷ তাঁরা আসলে সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ চান৷ বিশেষ করে গরিব দেশগুলিতে মায়েরা তাঁদের কন্যাসন্তানদের ভাই-বোনদের দেখাশোনার কাজে ব্যস্ত না রেখে স্কুলে পাঠাতে চান৷
ছবি: DW/H. Hashemi
অবসর ভাতা কাঠামোর দুর্বলতা
উন্নয়নশীল দেশগুলিতে অবসর ভাতা বা সামাজিক সুরক্ষা প্রায় নেই বললেই চলে৷ কিন্তু বেড়ে চলা জনসংখ্যার কারণে এ সব দেশে কিছুকাল পর বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়বে৷ অবসরপ্রাপ্তদের জীবন সহজ করে তুলতে তাই উপযুক্ত কাঠামো গড়ে তুলতে হবে৷
ছবি: Issouf Sanogo/AFP/GettyImages
শুধু দেখাশোনাই যথেষ্ট নয়
জার্মানির মতো সমৃদ্ধ দেশেও বয়স্কদের দেখাশোনার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই৷ ‘ওল্ড এজ হোম’ বা বৃদ্ধাবাস থাকলেও তার খরচ কম নয়৷ অবসর ভাতা কমে চলায় অনেক বৃদ্ধ মানুষ দারিদ্র্যের কবলে পড়ছেন৷
ছবি: Fotolia/Kzenon
বৃদ্ধ বয়সে দারিদ্র্যের বিপদ
দরিদ্র অঞ্চলে বিশেষ করে বয়স্ক নারীরা অনেক সময়ে বাধ্য হয়ে ভিক্ষা করতে বাধ্য হন৷ অনেক মানুষ সারা জীবন শুধু মাঠেই কাজ করেছেন, বেশি বয়সের জন্য সঞ্চয়ের সুযোগ পান নি৷ হাড়ভাঙা খাটুনি আর তাঁদের সহ্য হয় না৷ বয়স্কদের সংখ্যা বেড়ে চলায় এমন সমস্যা প্রকট হয়ে উঠছে৷
ছবি: picture-alliance/Lehtikuva/Hehkuva
বৃদ্ধদের বিপ্লব
সারা বিশ্বে বয়স্ক মানুষ ন্যায্য অবসর ভাতার দাবিতে প্রতিবাদ দেখাচ্ছেন৷ যেমন নিকারাগুয়ায় তাঁরা মাসে কমপক্ষে ৯০ মার্কিন ডলার পেনশনের দাবি জানাচ্ছেন৷
ছবি: REUTERS
বেশি বয়স পর্যন্ত কাজ
জাতিসংঘ তার সদস্য দেশগুলির উদ্দেশ্যে বয়স্ক মানুষের জন্য উপযুক্ত কাজ সৃষ্টি করার ডাক দিচ্ছে৷ চাকরি জীবন থেকে অবসর নেবার প্রচলিত ধারণায় পরিবর্তন প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করে জাতিসংঘ৷ অনেক বয়স্ক মানুষ আজই ছোটখাটো ব্যবসা করছেন৷
ডাব্লিউএইচও-র প্রধান মার্গারেট চ্যান এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘বিশ্বজুড়ে মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো, এখন পাঁচ বছর বা তার কম বয়সি শিশুমৃত্যুর হার অনেক কমে এসেছে৷''
অবশ্য জীবনযাপন পদ্ধতিতে পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের বিভন্ন দেশে হৃদরোগ আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে৷ সংক্রামক রোগের প্রকোপ কমে এলেও অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর হার আগের তুলনায় বেড়েছে বলে জানান ডাব্লিউএইচও-র পরিসংখ্যান ও তথ্য বিভাগের প্রধান তিস বুয়ের্মা৷
ধনী দেশগুলোতে গত দুই দশকে প্রত্যাশিত গড় আয়ু বৃদ্ধির হার কমার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি৷ এদিক দিয়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছে জাপান৷ সেখানে একজন নারী ৮৭ বছর পর্যন্ত বাঁচার আশা করতে পারেন৷ আর পুরুষদের প্রত্যাশিত গড় আয়ু সবচেয়ে বেশি আইসল্যান্ডে, ৮১.২ বছর৷
ডাব্লিউএইচও-র পরিসংখ্যান বিভাগের কলিন ম্যাথার্স বলেন, ‘‘মানুষের আয়ুর সীমা যদি আমরা ৯০ বছর ধরি, তাহলে ওই সীমার দিকে যত অগ্রসর হওয়া যাবে, প্রত্যাশিত গড় আয়ু বৃদ্ধির হার তত কমে আসার কথা৷ কিন্তু ধনী দেশগুলোতে এর কোনো লক্ষণ আমরা দেখতে পাচ্ছি না৷''
মার্গারেট চ্যান বলেন, ‘‘ধনী ও গরিবের মধ্যে প্রত্যাশিত গড় আয়ুর ব্যবধান এখনো অনেক বেশি৷ কারণ উচ্চ আয়ের দেশের মানুষ একটি নিম্ন আয়ের দেশের মনুষের তুলনায় অনেক ভালোভাবে জীবন কাটাতে পারে৷''
এখনকার গড় আয়ুর বিচারে একটি ধনী দেশের ছেলে শিশু ৭৬ বছর বাঁচবে বলে আশা করা যায়৷ অন্যদিকে একটি গরিব দেশের ছেলে শিশুর প্রত্যাশিত আয়ু তার চেয়ে ১৬ বছর কম৷ মেয়েদের ক্ষেত্রে এই পার্থক্য আরো বেশি৷ ধনী দেশে যেখানে নারীদের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ৮২ বছর, দরিদ্র দেশে তা ৬৩ বছর৷
তামাকের ব্যবহার কমে আসার কারণেও অনেক দেশে প্রত্যাশিত গড় আয়ু বাড়ছে বলে ডাব্লিউএইচও-র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে৷