বাংলাদেশের সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা কমে আসছে৷ আর এ সংখ্যা কমে আসার পিছনে মূল কারণ চোরাশিকার৷ সম্প্রতি মাত্র ১০৬টি বাঘের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানান জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনিরুল খান৷
ছবি: picture-alliance/AP/J. Kundu
বিজ্ঞাপন
প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল খান দীর্ঘদিন ধরে ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার' নিয়ে গবেষণা করছেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানান, মূলত বাঘের চামড়া, হাড়, নখ এবং দাঁতের লোভেই শিকারিরা তাদের হত্যা করে৷ পরে সে সব জিনিস চড়া দামে দেশে ও দেশের বাইরে বিক্রি হয়৷
ডয়চে ভেলে: সুন্দরবনে এখন বাঘের প্রকৃত সংখ্যা কত?
মনিরুল খান: এর আগে পায়ের ছাপের ভিত্তিতে যখন সংখ্যা গণনা করা হয়েছিল, তখন বাঘের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক ছিল: কিন্তু এখন ‘ক্যামেরা সার্ভে'-র মাধ্যমে বাঘের সংখ্যা নির্ণয় করা হয়েছে৷ এটা নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি৷ এই সার্ভে অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে কম-বেশি ১০৬টা বাঘ আছে৷ এই সংখ্যা থেকে এটা অন্তত নিশ্চিত করে বলা যায় যে, বাঘের সংখ্যা কমছে৷
বিপদে আছে বাঘ
বাঘ ভয়ংকর, বাঘ হিংস্র, বাঘের থাবার কবলে পড়লে কারো রক্ষা নেই – সবই ঠিক৷ তারপরও সারা পৃথিবীর বাঘই পড়েছে ভীষণ বিপদে৷ ‘আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস’-এ পাওয়া তথ্য বলছে, এখনই ব্যবস্থা না নিলে ধীরে ধীরে বিলুপ্তও হয়ে যেতে পারে বাঘ৷
বাঘ হারিয়ে যাচ্ছে
সারা বিশ্বেই বাঘের সংখ্যা খুব দ্রুত কমছে৷ এক শতক আগে যেখানে এক লাখের মতো বাঘ ছিল, সেখানে এখন আছে মাত্র ৩ থেকে ৪ হাজার বাঘ! আটটি উপ-প্রজাতির মধ্যে তিনটি একেবারে উধাও৷ তাছাড়া শুধুমাত্র সুমাত্রা, সাইবেরিয়া, রয়েল বেঙ্গল, মালয়, ইন্দোচীন এবং দক্ষিণ চীনের বাঘই টিকে আছে৷ ছবির এই বাঘটাও এখন আর জঙ্গলে নেই, শুধু চিড়িয়াখানাতেই আছে এরা৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Joe
বাঘ থাকবে কোথায়?
বাঘের বিচরণ ছিল এমন জঙ্গলের প্রায় ৯৩ শতাংশই এখন মানুষের দখলে৷ কোথাও শুরু হয়েছে চাষবাস৷ কোথাও গড়ে উঠেছে জনবসতি৷ এ অবস্থা চলতে থাকলে বসবাসের জায়গার অভাবেই হয়ত বাঘ ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাবে৷ ছবির এই সাদা রঙের বিরল বেঙ্গল টাইগারের হয়ত আর চিহ্নই থাকবে না৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/W. Layer
রয়েল বেঙ্গল টাইগারেরও মহাবিপদ
জলবায়ু পরিবর্তন বাঘের জন্যও বড় রকমের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ বাংলাদেশ ও ভারতের অংশের সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারদের তো বিপদ দিন দিন বাড়ছে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা যত বাড়ছে, ততই ছোট হয়ে আসছে ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ঘর’ সুন্দরবন৷ বাংলাদেশের সুন্দরবনে যেমন আর মাত্র ১০০টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার অবশিষ্ট আছে৷
ছবি: picture-alliance/AP/J. Kundu
শিকারের সময়...
শিকারের সময় বাঘ একা থাকতে পছন্দ করে৷ সাধারণত রাতেই খাদ্যের খোঁজে শিকারে বের হয় বাঘ৷ অন্ধকারে শিকার তাকে দেখবে না, চুপি চুপি সামনে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঘাড়টা কামড়ে ধরা যাবে – এ সব আবার বাঘমামা খুব ভালো বোঝে!
ছবি: Getty Images/N. Asfouri
সাঁতারু বাঘ
বাঘের হাত থেকে বাঁচতে পানিতে ঝাঁপ দেয়া রীতিমতো আহাম্মকি৷ বাঘের পানি খুব পছন্দ৷ সাঁতারেও খুব পটু সে৷ সুতরাং পানিতে ঝাঁপ দেয়া শিকারকে ধরা বাঘের জন্য কোনো ব্যাপারই নয়৷
ছবি: Imago
বাঘের প্রিয় খাবারের তালিকায় মানুষ নেই...
বাঘ কিন্তু মানুষের মাংস খেতে পছন্দ করে না৷ বাঘের প্রিয় খাবারের তালিকায় হরিণ, মহিষ, ভালুক, কুকুর, চিতা, কুমির, এমনকি অজগর সাপও আছে, কিন্তু মানুষ নেই৷ তারপরও কেন বাঘ মানুষ শিকার করে? ভয়ে৷ যখন মনে হয়, মানুষ তাকে আক্রমণ করতে পারে তখন নিজেকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে উল্টো নিজেই আক্রমণ করে বসে বাঘ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Scheidemann
বংশবৃদ্ধির সময়
যেসব অঞ্চলে আবহাওয়া একটু গরম, সেখানে নভেম্বর থেকে এপ্রিল – এই সময়টাই বাঘের প্রজননের জন্য আদর্শ সময়৷ শীতপ্রধান দেশে শীতেই বাচ্চা নেয় বাঘ৷ বাচ্চা সাধারণত ১০৩ দিন মায়ের পেটে থাকে৷ বাঘিনী একসঙ্গে তিন থেকে চারটি বাচ্চা দেয়৷ বয়স আট সপ্তাহের মতো হলেই বাঘের ছানারা মায়ের সঙ্গে বেরিয়ে পড়ে৷ দেড় বছরের মাথায় ছানা বাঘ একা একা শিকার শুরু করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Fischer
বাঘের সবচেয়ে বড় শত্রু
বাঘের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ কিন্তু মানুষ৷ মানুষই তাদের চক্ষুশূল৷ হবে না কেন! জঙ্গল দখল করে করে বাঘের বসবাসের জায়গা ছোট করছে মানুষ৷ নানা ছুতোয় বন্দুক নিয়ে বাঘ শিকারও করে মানুষ৷ বাঘের সবচেয়ে বড় শত্রুও তাই মানুষ৷
প্রধান কারণ হলো চোরাশিকার (পোচিং)৷ গত কয়েক বছরে সুন্দরবনে বেশ কয়েকবার বাঘের চামড়া এবং হাড় পাওয়া গেছে, যেটা ইঙ্গিত করে যে এখনও সেখানে ‘পোচিং' হচ্ছে৷ এর সঙ্গে সঙ্গে চলছে বনে বাঘের যে প্রধান খাদ্য, সেই হরিণের চোরাশিকার৷ বাঘ শিকারের ফলে সরাসরি বাঘের সংখ্যা কমছে৷ আর হরিণের চোরাশিকারের ফলে বাঘের খাদ্য কমে যাচ্ছে৷ অর্থাৎ বাঘের ধারণক্ষমতা কমে যাচ্ছে৷ এতে করে বাঘের ‘ব্রিডিং সাকসেস' এবং ‘সার্ভাইভাল রেট'-ও কমে যাচ্ছে৷ তাই হরিণের সংখ্যা কমলে, এ কথা বলা যেতেই পারে যে শেষ পর্যন্ত বাঘের সংখ্যা কমবে৷
মংলা পোর্ট সুন্দরবনের খুব কাছেই৷ তাই খুব সহজেই জাহাজের মাধ্যমে বাঘের ‘বডিপার্টস' পাচার করা সম্ভব৷ পোচারদের (চোরাশিকারি) কাছে এই বন্দর খুব সহজ একটা ‘অ্যাক্সেস' পয়েন্ট৷ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাঘের চামড়ার ‘ডিমান্ড' আছে৷ অনেক সময় বিদেশিরা এসে এ সব জিনিসের খোঁজ করে৷ আর পোচাররাও সেই সুযোগ নেয়৷ বিদেশে চামড়ার পাশাপাশি হাড়, নখ, দাঁত – এ সবেরও ‘ডিমান্ড' আছে৷ তবে চোরাশিকারির চক্র দেশের ভিতরেও আছে৷ অর্থাৎ স্থানীভাবেও বাঘের চামড়ার চাহিদা আছে৷ না, এখানে যে কোনো ‘অর্গানাইসড গ্যাং' কাজ করছে, সে কথা বলবো না৷ তবে শিকারি এবং পাচারকারীরা বেশ সক্রিয় বাংলাদেশে৷
সুন্দরবনের বাঘের ওপর নানা ক্ষতিকর পরীক্ষা-নীরিক্ষার কথা আমরা শুনি...
মনিরুল খান
This browser does not support the audio element.
রেডিও কলারিং-এর মাধ্যমে একসময় বাঘের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হতো৷ এই পদ্ধতিতে বাঘকে অজ্ঞান করে তার গলার মধ্যে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম বা জিপিএস লাগিয়ে দেয়া হতো৷ এতে করে প্রত্যেক ঘণ্টায় তার অবস্থান জানা যেত৷ কিন্তু কলার পরানোর পর সুন্দরবনের দু'টো বাঘ মারা যায়৷ তাই তার পর থেকে রেডিও কলারিং বন্ধ করা হয় বাংলাদেশে৷ অন্য পদ্ধতিটা হলো বাঘের ভিডিও ধারণ বা ছবি তোলার জন্য বেইটিং বা টোপ ফেলা৷ বাঘকে খাবারের টোপ দিয়ে কোনো জায়গায় এনে ছবি তোলা৷ এটারও এখন আর অনুমতি আর দেয়া হচ্ছে না৷
বাঘ আর কোন কোন দিক থেকে ঝুঁকির মুখে আছে?
‘সি লেভেল রাইজ', অর্থাৎ সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে গেলে সুন্দরবনের বাঘও বিপদে পড়বে৷ এ জন্য এখনই ‘অ্যাডাপটিভ মেজার্স' নেয়া উচিত৷ তাছাড়া চোরাশিকার বন্ধ করা না গেলে সুন্দরবনের বাঘ বিলুপ্ত হয়ে যাবে, অচীরেই৷
এক্ষেত্রে সরকারের কী করণীয়?
সুন্দরবন ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট'৷ বাংলাদেশের ‘টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান'-এ স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে কী কী করতে হবে, তা বলা আছে৷ এবার সেটার বস্তবায়ন দরকার৷ সরকার চেষ্টা করছে, বনবিভাগও চেষ্টা করছে৷ কিন্তু ব্যবস্থাপনাটা এখনও অপ্রতুল৷ অথচ আমরা আন্তর্জাতিকভাবে বাঘ রক্ষায় চুক্তিবদ্ধ৷ প্রথানমন্ত্রী ‘সেন্ট পিটার্সব্যার্গ ডিকলেয়ারেশন'-এ স্বাক্ষর করেছিলেন৷ ভারতের সঙ্গে আমাদের সুন্দরবন নিয়ে চুক্তিও রয়েছে৷ আমরা জাতি হিসেবে বাঘ সংরক্ষণে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ৷ আইন আছে, এখন শুধু মাঠ পর্যায়ে এর সঠিক বাস্তবায়ন প্রয়োজন৷
বাঙালি হিসেবে এই প্রতিজ্ঞা আমরা কীভাবে রক্ষা করতে পারি? জানান আপনার মতামত৷
সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য কি ধ্বংস হয়ে যাবে?
‘ওটি সাউদার্ন স্টার-৭’ নামের অয়েল ট্যাংকারটির তলদেশ ফেটে যাওয়ায় ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬৬৪ লিটার ফার্নেস অয়েল শেলা নদী থেকে পশুর নদী পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে৷ এদিকে স্থানীয় পদ্ধতিতে এ যাবৎ সামান্য পরিমাণ তেল অপসারণ করা সম্ভব হয়েছে৷
ছবি: STR/AFP/Getty Images
শ্বাসমূলীয় বন ও পশুপাখির জীবন বিপন্ন
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সুন্দরবনে তেলবাহী জাহাজডুবির ঘটনায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হবে৷ এর ফলে সুন্দরবনের গাছপালা, মাছ ও পশুপাখির প্রাণ বিপন্ন হতে পারে৷ এছাড়া তেল সরানোর কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়া গেলে দীর্ঘ মেয়াদে শ্বাসমূলীয় বন ও বনের পশুপাখির জীবনে বিপর্যয় বয়ে আসতে পারে৷ অথচ নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান দাবি করেছেন যে, তেলের প্রভাবে সুন্দরবনের তেমন ক্ষতি হবে না৷
ছবি: STRDEL/AFP/Getty Images
যে দুটি কাজ করা উচিত ছিল
সুন্দরবনে জাহাজ ডুবে সাড়ে তিন লাখ লিটারেরও বেশি তেল নদীতে ছড়িয়ে পড়ার পর অন্তত দুটি কাজ দ্রুত করা উচিত ছিল বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা৷ প্রথমত, নদীতে ফ্লোটিং বুমের সাহায্যে ভাসমান তেল যেন ছড়িয়ে না পড়ে, সে ব্যবস্থা করা৷ দ্বিতীয়ত, নিয়ন্ত্রণে আনা ভাসমান তেল তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করা৷
ছবি: STR/AFP/Getty Images
মন্ত্রণালয়ের নীতি লঙ্ঘন
সাম্প্রতিক কালে ফার্নেস তেল আমদানি অন্তত ২০ গুণ বেড়েছে বাংলাদেশে৷ এ সব বিপজ্জনক পদার্থকে বলা হয় ‘হ্যাজম্যাট’ (হ্যাজারডাস ম্যাটেরিয়াল বা ঝুঁকিপূর্ণ পদার্থ) এবং এর পরিবহনে প্রয়োজনীয় সতর্কতা নেওয়া সাধারণ রীতি৷ মন্ত্রণালয় এই রীতি লঙ্ঘন করেছে৷ কোনো দুর্ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার পূর্বপ্রস্তুতি তাদের ছিল না৷
ছবি: DW/M, Mamun
জাহাজ চলাচলের অনুমোদন কেন
সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে যান্ত্রিক যান চলা দেশের ও আন্তর্জাতিক নিয়মের লঙ্ঘন৷ সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে জাহাজ চলাচলের অনুমোদন কেন দেওয়া হলো, সে বিষয়ে অনুসন্ধান করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন৷
ছবি: DW/M, Mamun
ডলফিনের মৃত্যু
কয়েকজন বিশেষজ্ঞ দুর্ঘটনার পর সুন্দরবন এলাকা ঘুরে এসেছেন৷ তাঁদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী কাঁকড়া, কচ্ছপ, ডলফিনসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী মরতে শুরু করেছে৷
ছবি: Ingrid Kvale
জেলেদের কর্ম বিপর্যয়
সুন্দরবনে শেলা নদীতে তেল ছড়িয়ে বিপর্যয়ের পর সেখানকার কয়েক হাজারেরও বেশি জেলে পরিবারের দিন কাটছে অলস৷ নদী ও খালে তেল ভেসে থাকায় এসব জেলেরা জাল পেতে মাছ শিকার করতে পারছেন না৷ এর ফলে তাঁদের সংসার চালাতে কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে৷
ছবি: STRDEL/AFP/Getty Images
শেলা নদীতে ট্যাংকার দুর্ঘটনা
৯ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার ভোরের দিকে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের কাছে শেলা নদীতে সাড়ে তিন লাখ লিটারের ফার্নেল ওয়েলবাহী ট্যাংকার ডুবির পর, ছড়িয়ে পড়েছে তেল৷ সুন্দরবনের ৩৪ হাজার হেক্টর এলাকায় এরই মধ্যে তেল ছড়িয়ে পড়েছে বলে বন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন৷