শেষ হলো কমনওয়েলথ গেমস। পদক তালিকায় ভারত চার নম্বরে, পাকিস্তান ১৮তম স্থানে। বাংলাদেশ কোনো পদক পায়নি।
বিজ্ঞাপন
২০১৮ সালে পদক-তালিকায় তিন নম্বরে ছিল ভারত। সেবার ভারত শুটিং থেকে মোট ১৬টি পদক পেয়েছিল। কিন্তু এবার গেমসে শুটিং ছিল না। তাও ভারত ২২টি সোনা, ১৬টি রুপো ও ২৩টি ব্রোঞ্জ পেয়ে চতুর্থ স্থানে আছে। প্রথম তিনটি দেশ হলো অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও ক্যানাডা।
শেষ দিনে চারটি সোনা জেতে ভারত। তিনটি সোনা এসেছে ব্যাডমিন্টন ও একটি টেবিল টেনিস থেকে। ব্যাডমিন্টন তারকা পি ভি সিন্ধু সোনা পেয়েছেন।
সোনাজয়ী বাঙালি ভারোত্তোলকের লড়াইয়ের কাহিনি
অচিন্ত্য শিউলি। কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জিতেছেন। অতি গরিব পরিবার থেকে আসা অচিন্ত্যকে অনেক লড়াই করে এই জায়গায় পৌঁছাতে হয়েছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
অচিন্ত্যর লড়াই
কলকাতার পাশে হাওড়ার পাঁচলায় দেউলপুর গ্রামে অচিন্ত্যর বাড়ি। গরিব গ্রামের অতি গরিব পরিবারের ছেলে। এমন পরিবার যাদের মাসের আয় হাজার তিন-চার টাকা। জরাজীর্ণ বাড়ি। টালির ছাদ। প্রতিদিনের খাবার জোগাড় করতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়, সেখান থেকে উঠে এসেছে এই চ্যাম্পিয়ন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
অচিন্ত্যর স্কুল
এই স্কুলেই অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে অচিন্ত্য। তারপর বাবা মারা যাওয়ায় আর পড়া এগোয়নি। লেগে পড়তে হয়েছে কাজে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
প্রশিক্ষণের জায়গা
এখানেই প্রশিক্ষণ করত অচিন্ত্য। অষ্টম দাসের কাছে। নিজের বাড়িতে অতি সাধারণ বা বলা ভালো ন্যূনতম সরঞ্জাম নিয়ে কোচিং করান অষ্টম। এখানেই দিনের পর দিন পড়ে থেকে ভারোত্তোলনের টেকনিক শিখেছে অচিন্ত্য।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
মায়ের অবদান
অচিন্ত্যের বাবা ভ্যান চালাতেন। কিন্তু খুব কম বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি চলে যান। তখন হাল ধরতে হয়েছে মা-কে। তিনি জরির কাজ করতে থাকেন। একসময় অলোক ও অচিন্ত্যও জরির কাজ করেছে। এভাবেই ছেলেকে তৈরি করেছেন তিনি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কষ্ট সার্থক
অচিন্ত্যর মা পূর্ণিমা জানালেন, তার কষ্ট সার্থক। একটা সময়ে তিনি ও তার দুই ছেলে মিলে জরির কাজ করে প্রতি সপ্তাহে সাতশ টাকা পেতেন। তাই দিয়ে সংসার চালাতে হয়েছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
দাদার কৃতিত্ব
অচিন্ত্যর দাদা অলোক শিউলি আসলে ভারোত্তোলন শিখতেন অষ্টম দাসের কাছে। তিনিই ভাইকে নিয়ে যান কোচের কাছে। বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের ভার নিতে হবে বলে ভাইকেই এগিয়ে দেন তিনি। নিজে পিছনে চলে যান। উপমহাদেশের পরিবারের বড় ভাইয়ের সেই আত্মত্যাগের কাহিনি। এখন ভাইয়ের কৃতিত্বে উদ্বেল হন তিনি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
সোনা জেতার পর
অচিন্ত্যও সোনা জেতার পর তার মা, দাদা ও কোচের অবদানের কথা বলেছেন। আসলে তারা না থাকলে সোনা তো দূরে থাক, ভারোত্তোলকই হতে পারতেন না তিনি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
মেডেল ঝুলিয়ে রাখা
অচিন্ত্যদের কোনো আলমারি নেই। তাই বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পাওয়া সোনা, রুপো, ব্রোঞ্জের মেডেল ঝুলিয়ে রাখতে হয় এভাবেই।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
একটা ডিমের জন্য
একটা ডিমসেদ্ধ ও এক প্লেট ঘুগনির জন্য ধান পর্যন্ত বয়েছেন অচিন্ত্য। তার দাদা অলোক জানিয়েছেন, সেনা অ্যাকাডেমিতে ট্রেনিং করতে যাওয়ার পর ভাই ভালো করে খেতে পেরেছে। কোচ অষ্টমও বলেছেন, তারপর থেকে অচিন্ত্যর পেশি সুগঠিত হয়েছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কোচ অষ্টম দাস
অচিন্ত্যর এই লড়াইয়ে সবসময় পাশে থেকেছেন কোচ অষ্টম দাস। এমনকি তিনি ১৫ হাজার টাকা দিয়ে পর্যন্ত সাহায্য করেছেন। অষ্টম বলেছেন, ''আমি ১৬০ জনকে কোচিং করিয়েছি। কিন্তু আমার পরিকাঠামো সামান্য। আমাকে যদি সাহায্য করা হয়, তাহলে আমি এরকম আরো অচিন্ত্য তৈরি করব।''
ছবি: Satyajit Shaw/DW
শিক্ষকের কথা
অচিন্ত্যর স্কুলে বাংলা শিক্ষক দিলীপ সিং জানিয়েছেন, অচিন্ত্য লেখাপড়ায় মাঝারি মানের ছিল। তার মনোযোগ বেশি ছিল খেলাধুলোয়। তবে অষ্টম শ্রেণির বেশি সে পড়তে পারেনি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
অলিম্পিকের জন্য
কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জেতা হয়ে গেছে। এবার লক্ষ্য অলিম্পিক। তার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ শুরু করবে অচিন্ত্য। উপরের ছবিতে কোচ অষ্টম ভাবিষ্যতের অচিন্ত্যদের তৈরি করতে ব্যস্ত।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
স্কুলের হিরো
স্কুলের বাচ্চাদের কাছে অচিন্ত্য এখন হিরো। তার ছবি নিয়ে বাচ্চারা ব্যান্ড বাজিয়ে উৎসব পালন করছে। তবে অচিন্ত্যকে এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। অলিম্পিকের মেডেল পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
13 ছবি1 | 13
ভারত এবার লন বোল, মেয়েদের ক্রিকেট, মেয়েদের হকি ও জুডোয় পদক পেয়েছে। এর আগে তারা কমনওয়েলথ গেমসে এই বিভাগগুলি থেকে পদক জেতেনি।
অলিম্পিকে সোনাজয়ী নীরজ কুমার চোটের জন্য কমনওয়েলথ গেমসে অংশ নিতে পারেননি। জ্যাভলিন থ্রোতে পাকিস্তানের ক্রীড়াবিদ সোনা জিতেছেন। ভারত রীতিমতো ভালো ফল করেছে ভারোত্তোলোন থেকে। প্রথম বাঙালি হিসাবে অচিন্ত্য শিউলি ভারোত্তোলনে সোনা জিতেছেন।
বাংলাদেশের ফল
বাংলাদেশ এই কমনওয়েলথ গেমসে কোনো পদক পায়নি। তবে বাংলাদেশের টেবিল টেনিস দল আশা জাগিয়েছিল। কিন্তু সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে তারা ভারতের কাছে হেরে যায়।
ভারোত্তোলনে ৫৫ কিলোগ্রামের গ্রুপে স্ন্যাচ এবং ক্লিন অ্যান্ড জার্ক মিলিয়ে বাংলাদেশের আশিকুর ২১১ কিলোগ্রাম তুলে পঞ্চম হয়েছেন।
ভারোত্তোলনে ৬৪ কিলোগ্রাম ওজন বিভাগে মাবিয়া অষ্টম স্থান পেয়েছেন।