কমপ্যাক্ট ডিস্ক বা সিডির ব্যবহার আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে৷ জার্মানির এক শিল্পী সেই সিডিকে ব্যবহার করছেন ভাস্কর্য তৈরির কাজে৷ অভিনব সেই সৃষ্টিকর্মগুলি যথেষ্ট সমাদরও পাচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
একটি হিট-গান, চিমটা ও সিডি – ব্যাস, মাটিয়াস হিনৎস এই নিয়েই কাজ করতে পারেন৷ ড্যুসেলডর্ফ শহরের কাছে থাকেন এই শিল্পী৷ প্রায় ৯ বছর ধরে তিনি ‘ডেটা ভাস্কর্য’ নিয়ে চর্চা করছেন৷ এর জন্য তিনি কয়েকশো সিডি গরম করে তার উপকরণ ম্যাক্রোলনকে নতুন রূপ দিচ্ছেন৷ মাটিয়াস হিনৎস বলেন, ‘‘তথ্যের বিকৃতি, বা বলতে গেলে ডিজিটাল মাধ্যমে রাখা গোপন তথ্যের মাধ্যমে আমি অ্যানালগ বস্তু তৈরি করি, যা ছুঁয়ে দেখা যায়, ঘেঁটে দেখা যায়৷ তার উপর ধাক্কা মারা যায়, অনুভব করা যায়, এমনকি কিছু শুনতে পাওয়া যায়৷ তার নিজস্ব গন্ধও রয়েছে৷ এই বিষয়টি বেশ রোমাঞ্চকর৷’’
মাটিয়াস হিনৎস নিজের ভাস্কর্যগুলির নাম দিয়েছেন ‘অ্যানালগ-ডিজিটাল’৷ ড্যুসেলডর্ফ-এর শিল্প অ্যাকাডেমিতে শিক্ষা গ্রহণ করে তিনি বৈপরিত্যের মধ্যে ব্যবধান দূর করার কাজে মনোনিবেশ করেছেন৷ নিজস্ব পদ্ধতি প্রয়োগ করে তিনি কয়েক'শ ‘ডেটা-স্কাল্পচার’ তৈরি করেছেন৷ তাঁর কাজের মূলমন্ত্র হলো – বস্তুর মধ্যে মানুষ৷
সিডি থেকে শিল্প
04:18
তবে মানুষের মূর্তি তৈরির কাজে বেশ কাকতালীয়ভাবে তিনি ভাস্কর্যের কাঁচামাল হিসেবে সিডি ব্যবহার করতে শুরু করেন৷ ২০০৮ সালে এক হাসপাতাল তাঁকে একটি ভাস্কর্য গড়ে তোলার কাজ দেয়৷ নিজের সৃজনশীল সত্তা দিয়ে ক্রোমোজোমের রূপ ফুটিয়ে তোলার দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি৷ তখন তাঁর মনে হয়েছিল, কমপ্যাক্ট ডিস্ক বা সিডি শুধু তথ্য ধারণ করার মাধ্যম নয়৷ মাটিয়াস হিনৎস বলেন, ‘‘তথ্যভরা একটি সিডি মানুষের একটি জিনের মতো৷ জিনের উপর জিন বসালে শেষ পর্যন্ত একটা আস্ত মানুষ সৃষ্টি হয়৷ শৈল্পিক ক্ষেত্রে কাজ করার সুবাদে আমি সিডির উপর সিডি বসিয়ে একটি মূর্তি তৈরি করতে পারি৷’’
তবে মাটিয়াস হিনৎস তাঁর ডিজিটাল ভাস্কর্যের অনুপ্রেরণা পান এক অ্যানালগ উপকরণ থেকে – ব্রকোলি নামক সবজি থেকে৷ প্রাথমিক খসড়ার জন্য তিনি সেই সবজির অংশ ব্যবহার করেন৷ কয়েকদিন ধরে শুকিয়ে নিয়ে তার রূপান্তর ঘটান৷ সেটাই হয় তাঁর ডেটা ভাস্কর্যের ভিত্তি৷
নিলামে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হওয়া শিল্পকর্ম
নিলামে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হওয়া শিল্পকর্মটি পিকাসোর৷ তবে ক্লিম্ট এবং ফান গখ-ও আছেন তালিকায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পিকাসোর ‘ওমেন অফ আলজিয়ার্স’: ১৭৯.৪ মিলিয়ন
১৯৫৪ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত পাবলো পিকাসো দেলাক্রোয়ার ‘লে ফেম দ’আলজের’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৫টি ছবি আঁকেন৷ সেসব ছবির একটি, ‘ভার্সন ও’, ২০১৫ সালের মে মাসে নিলামে বিক্রি হয়েছে ১৭৯.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে৷
ছবি: Reuters
মোদিগলিয়ানির ‘রিক্লাইনিং ন্যুড’: ১৭০.৪ মিলিয়ন
২০১৫ সালের নভেম্বরে ক্রিস্টির এক নিলামে সাতজন সম্ভাব্য ক্রেতা এই পেইন্টিংটি কেনার জন্য নয় মিনিট ধরে উত্তেজনাপূর্ণ দর কষাকষিতে অংশ নেন৷ শেষমেষ টেলিফোনে নিলামে অংশ নেয়া চীনের এক ক্রেতা চিত্রকর্মটি কিনে নেন৷ ১৯১৭-১৮ সালে ছবিটি আঁকা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
ক্লিম্টের ‘দ্য উওম্যান ইন গোল্ড’: ১৩৫ মিলিয়ন
১৯০৭ সালে এই ছবিটি আঁকেন গুস্তাভ ক্লিম্ট৷ ২০০৬ সালে সেটি নিলামে বিক্রি হয় ১৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে৷ তখন এটাই ছিল কোনো পেইন্টিং এর নিলামে ওঠা সর্বোচ্চ দাম৷ সেবছরই অবশ্য আরেকটি পেইন্টিং বিক্রি হয় ১৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে৷
ছবি: AUSSCHNITT: picture-alliance/Heritage Images
ফান গখের ‘পোট্রেইট অফ ড. গাশে’: ১৪৯.৭ মিলিয়ন
কথিত আছে ফান গখ ১৮৯০ সালে হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার গাশে সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘‘ও আমার চেয়েও অসুস্থ৷’’ গাশের এই পোট্রেট ১৪৯.৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে বিক্রি হয়৷
ছবি: AP
বেকনের ‘থ্রি স্টাডিজ অফ লুসিয়ান ফ্রয়েড’: ১৪২.৪ মিলিয়ন
১৯৬৯ সালে আঁকা এই ছবি তিনটি ফ্রান্সিস বেকনের সঙ্গে তাঁর সতীর্থ পেইন্টার লুসিয়ান ফ্রয়েডের বন্ধুত্ব এবং শত্রুতার সম্পর্ককে তুলে ধরেছে৷ ২০১৩ সালের নভেম্বরে ছবিটি নিলামে বিক্রি হয় ১৪২.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
5 ছবি1 | 5
মাটিয়াস হিনৎস কাঠ ও ফুলের মতো প্রাকৃতিক উপকরণ নিয়ে কাজ করেন৷ কিন্তু গলানো সিডিগুলি যোগসূত্র হিসেবে থাকে৷ উপকরণ হিসেবে এর অনেক সুবিধা রয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘কাজের সময় বিরক্ত লাগতো, যে কাঠ ক্ষয়ে যায়, মোমে ফাটল ধরে অথবা রোদ উঠলে গলে যায়৷ পোকায় কাঠ খেয়ে নেয়৷ ম্যাক্রোলন-এর সম্ভাবনা দেখে খুবই উৎসাহ পেয়েছি৷ সেটা নিয়ে কত কী যে করা যায়, নানা রকম রূপ দেওয়া যায়৷ কোনো ভুল করলে বা সন্তুষ্ট না হলে বিনা সমস্যায় সবকিছু ধ্বংসও করে দিতে পারি৷’’
এই কৃত্রিম উপাদানের আরও কিছু সুবিধা রয়েছে৷ এটি হালকা, স্থিতিশীল – যে কোনো আবহাওয়ায় অক্ষত থাকে৷ চার মিটার লম্বা এমন ভাস্কর্য বাড়ির সামনেই সহজে বসানো যায়৷ মাটিয়াস হিনৎস-এর মূর্তিগুলি সত্যি চোখে পড়ার মতো৷ ড্যুসেলডর্ফ শহরের এক গ্যালারিতে যেমনটা শোভা পাচ্ছে৷
গোটা জার্মানিতেই তাঁর ভাস্কর্যের চাহিদা রয়েছে৷ যেমন ২০১০ সালে প্লাস্টিক সংক্রান্ত এক বাণিজ্যমেলা উপলক্ষ্যে তাঁকে একটি ভাস্কর্য তৈরি করতে হয়েছিল৷ ২০১৬ সালে তথ্য প্রযুক্তি মেলা ‘সেবিট’-এও তাঁর সৃষ্টি দেখা গেছে৷ সেগুলির কোনো নাম দেওয়া হয় না৷ সিডির মধ্যে কোন তথ্য লুকিয়ে রয়েছে, শিল্পী তা নিয়ে মাথা ঘামান না৷ হিনৎস বলেন, ‘‘এর কোনো কন্টেট নেই৷ মনের মধ্যেই তা থাকে৷ যার যেমন ইচ্ছা ভেবে নিতে পারে৷’’
মাটিয়াস হিনৎস এখনো নানা উপকরণ নিয়ে কাজ করার সব সম্ভাবনা পরখ করে দেখেন নি৷ তবে ভবিষ্যতেও তিনি তাঁর পছন্দের উপকরণ সিডি নিয়ে কাজ করতে চান৷
ডানিয়েলা স্পেট/এসবি
আবর্জনা থেকে বিস্ময় জাগানো শিল্পকর্ম
সমুদ্রসৈকত নোংরা করে ফেলে প্লাস্টিকের ব্যাগ, স্যান্ডেল, খেলনা, টুথব্রাশসহ নানারকম পরিত্যক্ত জিনিস৷ সবার চোখে আবর্জনা হলেও ‘ওয়াশড অ্যাশোর’-এর কাছে এ সব অমূল্য বস্তু৷ তাই এগুলো দিয়েই দারুণ সব শিল্পকর্ম সৃষ্টি করছে তারা৷
ছবি: Washed Ashore
আবর্জনাই যখন শিল্পীর হাতে...
এই বিশাল মাছঠি তৈরি হয়েছে শুধু সমুদ্র সৈকতে কুড়িয়ে পাওয়া প্লাস্টিকের আবর্জনা দিয়ে৷ ভালো মনের শিল্পীর হাতে আবর্জনাও কত অপরূপ, কত অসাধারণ কিছু হয়ে উঠতে পারে – এ ছবিটা তারই নিদর্শন, তাই নয় কি?
ছবি: Washed Ashore
যেখানে দেখিবে প্লাস্টিক
‘যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই/পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন’ – ছাই কুড়ালে রতন তো পায়ই অনেকে৷ তবে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ওয়াশড অ্যাশোর’ সংগঠন প্লাস্টিক কুড়িয়েই তৈরি করছেন অমূল সব শিল্পকর্ম৷ শিল্প সৃষ্টির আগে ওরেগনের সমুদ্রসৈকত থেকে প্লাস্টিকের জিনিস সংগ্রহ করে, ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করার পর সব জিনিস রং অনুযায়ী আলাদা করাও কিন্তু খুব শ্রমসাধ্য এবং সময়সাপেক্ষ কাজ৷
ছবি: Washed Ashore
আসল উদ্যোক্তা
ছবির এই মানুষটির নাম অ্যাঞ্জেলা হ্যাসেলটিন পোৎসি৷ ‘ওয়াশড অ্যাশোর’ প্রকল্পের প্রধান তিনি৷ পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের নানা জিনিস দিয়ে নানা ধরনের প্রাণীর যে সব মূর্তি গড়া হয়, সেগুলোর সবচেয়ে কঠিন অংশটুকুও তিনিই করেন৷
ছবি: Washed Ashore
স্বেচ্ছাসেবা দিতে এসে শিক্ষার্থী
‘ওয়াশড অ্যাশোর’-এর উদ্যোগের অংশ হতে আজ অনেকেই আগ্রহী৷ স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে ‘ওয়াশড অ্যাশোর’-এর হয়ে কাজও করছেন অনেকে৷ পরিবেশ রক্ষা এবং পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজে শরিক হয়ে শিল্প সৃষ্টির নেশায়ও মেতেছেন কেউ কেউ৷
ছবি: Washed Ashore
সচেতনতা বৃদ্ধি
প্লাস্টিকের বড় প্রাণী তৈরি করেই কিন্তু কাজ শেষ নয়৷ শিল্পকর্মগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে প্রদর্শনের ব্যবস্থাও করে তারা৷ এ সব প্রদর্শনীর একটাই উদ্দেশ্য – পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি৷
ছবি: Washed Ashore
মনে দাগ কাটার মতো বড়
‘ওয়াশড অ্যাশোর’ সব সময় প্লাস্টিকের বড় বড় মূর্তিই তৈরি করে৷ বেশির ভাগ মূর্তিই সাড়ে তিন থেকে চার মিটার লম্বা এবং প্রায় তিন মিটার উঁচু৷ সবচেয়ে বড় একটি পাখির মূর্তি৷ সেই পাখির ডানার দৈর্ঘ্যই সাত মিটারের মতো!
ছবি: Washed Ashore
সবাই তাদের অনুসরণ করুন
অ্যাঞ্জেলা হ্যাসেলটিন পোৎসি মনে করেন, ‘ওয়াশড অ্যাশোর’ যে কাজটি করছে তা যদি বিশ্বের সব প্রান্তে অনেক মানুষ করতে শুরু করে তাহলেই তাদের উদ্দেশ্য সফল হবে৷ যেখানে-সেখানে প্লাস্টিকের জিনিস ফেলার প্রবণতা কমিয়ে পরিবেশ বিপর্যয় রোধ করা তাহলেই যে সম্ভব৷