ডেমোক্র্য়াট কনভেনশনে বারাক ও মিশেল ওবামার আশা, কমলা হ্যারিস জিতবেন, কিন্তু লড়াই খুবই কঠিন।
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্র্যাটদের কনভেনশনের দ্বিতীয় দিনে প্রধান আকর্ষণ ছিলেন বারাক ওবামা। বারাক ও তার স্ত্রী মিশেল দুজনেই কনভেনশনে বলেছেন। তারা কমলা হ্যারিসের প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন এবং বলেছেন, হ্যারিসই পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হবেন।
বারাক ওবামা তার আধঘণ্টার ভাষণে বলেছেন, ''কমলা হ্যারিস তার নতুন কাজের জন্য তৈরি। তিনি তার সারা জীবন সাধারণ মানুষের জন্য ব্যয় করেছেন। অ্যাটর্নি জেনারেল হিসাবে তিনি বড় ব্যাংক, কলেজের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। তাদের কেলেঙ্কারির কোটি কোটি ডলার সাধারণ মানুষের জন্য নিয়ে আসতে পেরেছেন। বাড়ি বন্ধক রাখা নিয়ে যখন সংকট দেখা দেয়, তখন তিনি আমাকে, আমার প্রশাসনকে বলে বাড়ির মালিকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যবস্থা করেন।''
বারাক ওবামা বলেছেন, ''যদি আমরা সবাই আগামী ৭৭ দিন আমাদের কাজ করি, এমনভাবে কাজ করি, যা আগে কখনো করিনি, তাহলে আমরা হ্যারিসকে প্রেসিডেন্ট হিসাবে দেখব।''
বারাক ওবামার মতে, ''আমাদের এমন নেতাকে নির্বাচিত করা উচিত, যিনি অ্যামেরিকাকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। একসঙ্গে আমরা একটা আরো নিরাপদ, ন্যায়ের ভিত্তিতে চলা, সকলের সমান অধিকার ও স্বাধীনতায় বিশ্বাসী দেশকে গড়ে তুলতে পারব।''
বারাকের আবেদন, ''আসুন, আমরা সকলে একসঙ্গে কাজ শুরু করে দিই।''
ট্রাম্পের সমালোচনা
বারাক ওবামা বলেছেন, ''একজন ৭৮ বছর বয়সি ধনকুবের যিনি শুধু চক্রান্তের অভিযোগ করে যান, কমলা হ্যারিসের কাছে হারার ভয়ে যিনি প্রতিদিন অভিযোগ করে যাচ্ছেন।''
মার্কিন প্রেসিডেন্টের আসলে কতটা ক্ষমতা?
ওভাল কার্যালয়ে যিনি বসেন, তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন- সাধারণ মানুষের ধারণা এমনই৷ আসলে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সীমিত৷ কারণ, সরকারের অন্যান্য বিভাগেরও বলার সুযোগ রয়েছে৷
ছবি: Ken Cedeno/abaca/picture alliance
মার্কিন সংবিধান যা বলছে
একজন প্রেসিডেন্ট চার বছরের জন্য নির্বাচিত হন এবং দুইবারের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারেন না৷ তিনি রাষ্ট্র এবং সরকারের প্রধান৷ কেন্দ্রীয় নির্বাহী বিভাগ তার দায়িত্বে থাকে, যার কর্মীসংখ্যা চল্লিশ লাখের বেশি৷ তাদের মধ্যে সেনা সদস্যরাও অন্তর্ভূক্ত রয়েছেন৷ কংগ্রেসে অনুমোদিত আইন প্রয়োগ করা তার দায়িত্ব৷
ছবি: bildagentur-online/picture alliance
ভারসাম্য রক্ষা
নির্বাহী, বিচার বিভাগ এবং আইনসভা নামে সরকারের তিনটি বিভাগ রয়েছে৷ এরা একে অপরের ক্ষমতার সীমা নির্ধারণ করে৷ প্রেসিডেন্ট চাইলে কাউকে ক্ষমা করে দিতে পারেন এবং কেন্দ্রীয় বিচারপতিদের নিয়োগ দিতে পারেন৷ তবে সেগুলো নিশ্চিত করতে সিনেটের অনুমোদন লাগবে৷ সিনেটের অনুমোদন নিয়ে মন্ত্রিসভার সদস্যদেরও নিয়োগ দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷
ছবি: Evelyn Hockstein/File Photo/REUTERS
কংগ্রেসকে জানাতে হয়
দেশ কেমন চলছে তা পর্যায়ক্রমে কংগ্রেস জানানোর দায়িত্ব রয়েছে প্রেসিডেন্টের৷ বাৎসরিক ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ বক্তব্যে এটা করেন তিনি৷
ছবি: Kevin Lamarque/REUTERS
চাইলেই ‘না’ বলতে পারেন না
রাষ্ট্রপতি চাইলে একটি বিল অনুমোদন না করে কংগ্রেসে ফেরত পাঠাতে পারেন৷ কিন্তু কংগ্রেসের দুই তৃতীয়াংশ সদস্য যদি চান, তাহলে বিলটি প্রেসিডেন্টের অনুমোদন ছাড়াও কার্যকর করতে পারেন৷ এখন অবধি মার্কিন প্রেসিডেন্টের ভেটো দেয়া এক হাজার পাঁচশ ত্রিশটি বিলের মধ্যে মাত্র ১১২টি কার্যকর করেছে সিনেট৷
ছবি: Mandel Ngan/AFP/Getty Images
ক্ষমতার ধূসর দিক
সংবিধান এবং সুপ্রিম কোর্টে সিদ্ধান্তগুলো মার্কিন প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার পরিধি পুরোপুরি বোঝাতে পারে না৷ ‘পকেট ভেটো’ নামের একটি চর্চা মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মধ্যে প্রচলিত আছে, যেটির প্রয়োগ কোনো বিলের ক্ষেত্রে করা হলে কংগ্রেসের কিছু করার থাকে না৷ সহস্রাধিকবার এই পন্থার প্রয়োগ ঘটিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্টরা৷
ছবি: Jacquelyn Martin/AP Photo/picture alliance
নির্দেশনা আইন হিসেবে কাজ করে
সরকারি কর্মীদের কোনো কাজ নির্দিষ্ট পরিধি অবধি করার নির্দেশনা দিতে পারেন প্রেসিডেন্ট৷ ‘নির্বাহী নির্দেশগুলো’ আইনের মতোই৷ এগুলোর প্রয়োগে অন্য কোনো অনুমতির দরকার হয় না৷ এক্ষেত্রে কংগ্রেস চাইলে পাল্টা আইনের অনুমোদন দিতে পারে এবং পরবর্তী প্রেসিডেন্ট আগের প্রেসিডেন্টের জারি করা নির্বাহী আদেশ বাতিল করতে পারেন৷
ছবি: Ronen Tivony/ZUMA Press/IMAGO
কংগ্রেসকে পাশ কাটানোর উপায়
প্রেসিডেন্ট চাইলে অন্য সরকারের সঙ্গে চুক্তি করতে পারে৷ কিন্তু সেগুলো সিনেটের দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের অনুমোদন পেতে হবে৷ তবে প্রেসিডেন্ট চাইলে ‘নির্বাহী সমঝোতার’ মাধ্যমে কংগ্রেসের অনুমোদন প্রক্রিয়া এড়িয়ে যেতে পারেন৷ কংগ্রেস আপত্তি না তোলা অবধি এ ধরনের সমঝোতা কার্যকর থাকে৷
ছবি: Evan Vucci/AP Photo/picture alliance
মার্কিন সেনা কোথায় যাবে নির্ধারণের ক্ষমতা
মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট৷ তবে যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষমতা কংগ্রেসের হাতে৷ কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই অবশ্য সশস্ত্র সংঘাতে সামরিক বাহিনীকে যুক্ত করতে পারেন প্রেসিডেন্ট৷
ছবি: HORST FAAS/AP/picture alliance
চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণ
যদি একজন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতার অপব্যবহার বা কোনো অপরাধ করেন, তাহলে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস তাকে অভিশংসন করার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে৷ মার্কিন ইতিহাসে তিনজন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এমনটা ঘটেছিল৷ তবে তারা কেউই অভিযুক্ত হননি৷ প্রেসিডেন্টের উপর চাপ প্রয়োগে কংগ্রেসের নানাবিধ ক্ষমতা রয়েছে৷
ছবি: J. Scott Applewhite/AP Photo/picture alliance
9 ছবি1 | 9
ওবামার অভিযোগ, ''ট্রাম্প বিভাজনের রাজনীতি করেন। অ্যামেরিকায় বিশৃঙ্খলা তৈরির জন্য তার আর চার বছর সময় দরকার। ট্রাম্প মনে করেন, দেশ আমরা আর ওরা-য় বিভক্ত। তাকে যারা সমর্থন করে, তারা আসল অ্যামেরিকান, বাকিরা বহিরাগত। এটা রাজনীতির সবচেয়ে পুরনো কৌশল। কিন্তু তার এই কৌশলে কাজ হবে না। আমরা তাকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য আরো চার বছর সময় দিতে পারি না।''
বারাক ওবামার বক্তব্য, ''ওদের কাছে ক্ষমতা মানে শক্তিশালীরা যা খুশি করতে পারবে। কিন্তু ডেমোক্র্যাটদের কাছে স্বাধীনতার অর্থ অনেক ব্যাপক। কর্মীরা যাতে পরিষ্কার বাতাসে শ্বাস নিতে পারে, পরিচ্ছন্ন জল পান করতে পারে, তাদের বাচ্চাকে স্কুলে পাঠাতে পারে এবং তাদের ঘরে ফেরা নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে যাতে তারা থাকতে পারে আমরা তার জন্য কাজ করি। কমলা হ্যারিস ও তার রানিংমেট টিম ওয়ালজও এটা বিশ্বাস করেন।''