বাংলাদেশে কমিউনিটি রেডিও-র পর এবার কমিউনিটি টেলিভিশন চালুর স্বপ্ন দেখছেন সংশ্লিষ্টরা৷ সরকার অনুমতি দিলেই তাঁরা নাকি এই টেলিভিশন চালুর করার জন্য প্রস্তুত৷ তাঁদের কথায়, এতে বাণিজ্যিক টেলিভিশনের থেকে খরচ অনেক কম৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশে কমিউনিটি রেডিও যাত্রা শুরু করে ২০১০ সালে৷ এখন বাংলাদেশে ১৪টি কমিউনিটি রেডিও প্রতিদিন গড়ে ১০০ ঘণ্টা অনুষ্ঠান প্রচার করছে৷ আরো ১৮টি কমিউনিটি রেডিওকে গত বছর লাইসেন্স দিয়েছে সরকার৷ চলতি বছরেই তাদের কার্যক্রম শুরু হবে৷ কমিউনিটি রেডিওগুলার সংগঠন বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও এন্ড কমিউনিকেশন বা বিএনএনআরসি-র প্রধান নির্বাহী বজলুর রহমান ডয়চে ভেলেকে জানান, তাঁদের আশা ২০১৫ সাল নাগাদ ৬০টি এবং ২০২১ সাল নাগাদ ৪০০টি কমিউিনিটি রেডিও হবে বাংলাদেশ৷ তিনি বলেন, কমিউনিটি রেডিও এরই মধ্যে স্থানীয়, বিশেষ করে উপকূলীয় মানুষের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে৷ কারণ তাঁরা স্থানীয় ভাষায় মানুষের সমস্যা, সমাধান এবং সম্ভাবনা নিয়ে অনুষ্ঠান প্রচার করছে৷ উপকূলীয় এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে কমিউনিটি রেডিওই সাধারণ মানুষের তথ্যের একমাত্র উত্স বলে জানান তিনি৷
তবে এখানেই থামতে চান না তাঁরা৷ তাঁরা এখন স্বপ্ন দেখছেন কমিউনিটি টিভি-র৷ বজলুর রহমান জানান, এটা শুধু স্বপ্ন নয়, এটা বাস্তব হবে শিগগিরই৷ সরকার নীতিগতভাবে কমিউনিটি টিভি-র অনুমতি দেয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে৷ জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা ঘোষিত হওয়ার পরই সম্প্রচার কমিশন লাইসেন্সের শর্ত এবং নীতিমালা ঠিক করবে৷
‘অন্বেষণ’ এর যাত্রা শুরু
ঢাকায় বুধবার এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে টেলিভিশনে ডয়চে ভেলের যাত্রা শুরুর খবর জানানো হয়েছে৷ প্রতি শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়, রবিবার রাত দেড়টা এবং বিকেল সাড়ে তিনটায় একুশে টেলিভিশনে প্রচার করা হবে ‘অন্বেষণ’৷
ছবি: DW
‘অন্বেষণ’ – প্রতি শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়
একুশে টেলিভিশনে প্রতি সপ্তাহে ডয়চে ভেলে তুলে ধরবে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, পরিবেশ বিষয়ক নানা প্রতিবেদন৷ ওয়েবসাইটে পাবেন একই বিষয়ে নানা বাড়তি তথ্য৷ অনুষ্ঠান চলাকালীন ফেসবুকের মাধ্যমে সংলাপে যোগ দিন আমাদের সাথে৷
ছবি: DW
ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন
বুধবার ডয়চে ভেলের সংবাদ সম্মেলনে হাজির ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত ড.আলব্রেশট কনৎসে, ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগের প্রধান এবং অন্বেষণ-এর সঞ্চালিকা দেবারতি গুহ, মার্কেটিং বিভাগের কর্মকর্তা টোবিয়াস গ্রোটে-বেভারবর্গ এবং একুশে টেলিভিশনের চেয়ারম্যান ও সিইও আব্দুস সালাম৷
ছবি: DW/R. Manzoor
‘বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় করবে’
বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও পরিবেশ বিষয়ক টিভি অনুষ্ঠান ‘অন্বেষণ’ এর ব্যাপারে আশাবাদী জার্মান রাষ্ট্রদূত ড.আলব্রেশট কনৎসে৷ ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘‘ডয়চে ভেলের এই নতুন অনুষ্ঠান দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরো সুদৃঢ় করবে৷’’
ছবি: DW/R. Manzoor
‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সব দিক তুলে ধরা হবে’
ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগের প্রধান এবং অন্বেষণ-এর সঞ্চালিকা দেবারতি গুহ জানান, ‘‘এই অনুষ্ঠানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সব দিক তুলে ধরা হবে৷ তাতে প্রাধান্য থাকবে জার্মানি তথা ইউরোপের দৃষ্টিকোণের৷ তবে তা অবশ্যই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট মাথায় রেখে৷’’
ছবি: DW/R. Manzoor
বিশেষজ্ঞের অভিমত
‘অন্বেষণ’ অনুষ্ঠানে একাধিক প্রতিবেদন ছাড়াও নিয়মিত পাবেন কোনো বিষয় সম্পর্কে বিশেষজ্ঞের অভিমত৷ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নানা বিষয়ের মূল্যায়ন তুলে ধরা হবে সেই আলোচনায়৷
ছবি: DW
‘একটি মাইলফলক’
ডয়চে ভেলের মার্কেটিং বিভাগের কর্মকর্তা টোবিয়াস গ্রোটে-বেভারবর্গ বলেন, টেলিভিশনে বাংলা বিভাগের অনুষ্ঠান সম্প্রচার একটি মাইলফলক৷ ডয়চে ভেলে প্রায় ৪০ বছর ধরে বাংলায় অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে৷ স্থানীয় বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে টেলিভিশনে অনুষ্ঠান সম্প্রচার তারই ধারাবাহিকতা৷
ছবি: DW/R. Manzoor
‘অন্বেষণ নতুন মাত্রা যোগ করবে’
একুশে টেলিভিশনের চেয়ারম্যান ও সিইও আব্দুস সালাম মনে করেন, ‘‘অন্বেষণ অনুষ্ঠানটি অনেক জনপ্রিয় হবে৷ কারণ এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের দর্শকরা উন্নত বিশ্বের স্বাস্থ্য, পরিবেশসহ নানা বিষয়ে গবেষণা এবং সর্বশেষ আবিষ্কারের খবর জানতে পারবেন৷’’
ছবি: DW/R. Manzoor
অন্বেষণ এর টিভি ট্রেইলর
ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে অন্বেষণ-একটি টিভি ট্রেইলর দেখানো হয়৷ এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন দেবারতি গুহ৷ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সব বয়সের এবং সব শ্রেণির মানুষের কথা বিবেচনায় রেখেই অন্বেষণ অনুষ্ঠানটি তৈরি করা হচ্ছে৷’
ছবি: DW/Swapan
8 ছবি1 | 8
তিনি বলেন, কমিউিনিটি টিভি-র চরিত্র ও নীতি হবে কমিউনিটি রেডিও-র মতোই৷ এছাড়া এই টিভি স্থাপন এবং পরিচালনার ব্যয় হবে খুবই কম৷ বাংলাদেশে একটি কমিউিনিটি টিভি স্থাপনের খরচ ১ কোটি টাকার বেশি হবে না৷ বজলুর রহমান জানান, নেপালের লুম্বিনি কমিউনিটি টিভি ১৮ ঘণ্টা অনুষ্ঠান এবং সংবাদ প্রচার করে৷ তারা ৩৯ জন কর্মী, ৬টি ক্যামেরা এবং ১টি স্টুডিও-র মাধ্যমে কাজ করে৷ এর ৯০ ভাগ খরচ উঠে আসে বিজ্ঞাপন এবং অন্যান্য খাত থেকে৷ আর ১০ভাগ তারা আয় করে তাদের প্রোডাকশন হাউস থেকে৷ বজলুর রহমানের মতে, বাংলাদেশেও এটি সম্ভব৷
তিনি জানান, দু'ভাবে কমিউিনিটি টিভি চালু করা যায়৷ কেবেল এবং টেরিস্ট্রিরিয়ালের মাধ্যমে৷ প্রথম দিকে তারা কেবেল অপারেটরদের কেবেলর মাধ্যমে শুরু করতে চান এই সম্প্রচার৷ সরকার তাতে সম্মতও হয়েছে৷ জানা গেছে, ৩০ কি.মি. এলাকার মধ্যে এর সম্প্রচার সীমাবদ্ধ থাকবে৷ প্রঙ্গত, কমিউনিটি রেডিও-র সম্প্রচার এলাকা ৩০ কি.মি.৷
বজলুর রহমান জানান, একটি নয় কমিউনিটি রেডিও-র মতোই একাধিক কমিউিনিটি টিভি চালু করতে চান তাঁরা৷ এবং সেটা হবে উপকূলীয় এলাকাসহ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য৷ কমিউনিটির লোকজনই তা পরিচালনা করবেন৷ এ জন্য দেয়া হবে প্রশিক্ষণ৷ কমিউনিটির চাহিদাকে সামনে রেখেই অনুষ্ঠান এবং তথ্য প্রচার করা হবে৷