সাবেক পূর্ব জার্মানির কমিউনিস্ট ইতিহাসের নিদর্শন সংরক্ষণ আদৌ প্রয়োজনীয় কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে৷ এক স্থপতি সে সময়কার স্থাপত্যের মধ্যে স্থায়ী শিল্পকর্ম অমর করে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন৷
বিজ্ঞাপন
সাবেক পূর্ব জার্মানির স্থাপত্যশৈলি মার্টিন মালেশকা-কে মুগ্ধ করে৷ গত ১৫ বছর ধরে এই স্থপতি সে সময়কার অনেক নিদর্শনের ছবি তুলে সে সব নথিভুক্ত করে চলেছেন৷ সময়ের সঙ্গে লড়াই চলছে৷ কারণ অনেক নিদর্শন চিরকালের জন্য হারিয়ে যাচ্ছে৷ মার্টিন বলেন, ‘‘১৯৯০ সালে যা ঘটেছে এবং তার পরের ২৫ বছরে যা চলেছে, তা আমার কাছে বড়ই জোরালো পরিবর্তন৷ সে আমলের যে তিনটি বাড়িতে আমি থেকেছি, সেগুলির উঠানে শিল্পের নানা নিদর্শন ছিল৷’’
ফ্র্যাংক গ্যারির দারুণ কিছু স্থাপত্য
ক্যানাডায় জন্ম নেয়া মার্কিন স্থপতি ফ্র্যাংক ও. গ্যারির কাজ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত৷ ছবিঘরে তাঁর নকশায় করা কিছু ভবন সম্পর্কে তথ্য থাকছে৷
ছবি: picture-alliance/ZB/W. Thieme
গুগেনহাইম মিউজিয়াম, বিলবাও (১৯৯৭)
গ্যারির পরিকল্পনায় নির্মিত এই ভবনটির কাজ শেষ হতে সময় লেগেছে মাত্র চার বছর৷ ১৯৯৭ সালে উদ্বোধন হওয়া সুদৃশ্য এই আর্ট মিউজিয়ামটি এখন পর্যন্ত প্রায় দুই কোটি দর্শকের মন কেড়েছে৷ শিল্পপ্রেমী ছাড়াও সাধারণ পর্যটকরা মনোরম এই স্থাপত্যটি দেখতে যান৷
ছবি: picture-alliance/ZB/W. Thieme
ড্যান্সিং হাউস, প্রাগ (১৯৯৬)
চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানীতে যাওয়া পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ এই অফিস ভবনটি৷ ক্রোয়েশিয়ার স্থপতি ভ্লাদো মিলুনিচের সঙ্গে মিলে যৌথভাবে এই ভবনের নকশা করেন গ্যারি৷
ছবি: picture alliance/dpa/Arco Images GmbH
ভিটরা ডিজাইন মিউজিয়াম, জার্মানি (১৯৮৯)
দক্ষিণ-পশ্চিম জার্মানির ছোট্ট শহর ভাইল আম রাইনে অবস্থিত এই ভবনটি সুইজারল্যান্ডের আসবাবপত্র নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ভিটরার জার্মান সদরদপ্তর৷ এর পরিকল্পনা করেছেন গ্যারি৷
ছবি: picture alliance/dpa/robertharding
নয়ার সলহোফ, ড্যুসেলডর্ফ, জার্মানি (১৯৯৯)
‘রাইনহাফেন সেন্টার অফ আর্টস অ্যান্ড দ্য মিডিয়া’র তিনটি ভবন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে৷ একটু আঁকাবাঁকাভাবে তৈরি করা বিল্ডিংগুলোতে কয়েক রকমের উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে৷
ছবি: DW/N. Aubel
মিউজিয়াম অফ বায়োডাইভারসিটি, পানামা সিটি (২০১৪)
এটি ছিল ল্যাটিন অ্যামেরিকায় গ্যারির প্রথম প্রকল্প৷ জীববৈচিত্র্যের জন্য পরিচিত পানামায় এমন একটি মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠা করতে তাই গ্যারি কয়েকটি রং ব্যবহার করেছেন৷ সঙ্গে ছাদ আর ভবনের বাইরের অংশেও রেখেছেন বিচিত্রতার ছাপ৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Arangua
লুই ভুইতঁ ফাউন্ডেশন, প্যারিস (২০১৪)
ফ্রান্সের বিখ্যাত ফ্যাশন ব্র্যান্ড লুই ভুইতঁ তাদের ফাউন্ডেশনের নকশার জন্য গ্যারিকে দায়িত্ব দেন৷ কাঠ, ইস্পাত আর কাচ দিয়ে তৈরি এই ভবনে একটি মিউজিয়াম ছাড়াও আছে সমকালীন শিল্পকলার কিছু সংগ্রহ৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Guay
ডিজনি কনসার্ট হল, লস অ্যাঞ্জেলস (২০০৩)
গ্যারিকে যখন এই কনসার্ট হলের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল, তখন তার সামর্থ্য নিয়ে অনেকেই আশংকা প্রকাশ করেছিলেন৷ তবে এখন এটি বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কনসার্ট হলে পরিণত হয়েছে৷ স্থাপত্যের দিক দিয়ে যেমন, তেমনি এই হলের অ্যাকুস্টিকস বা শ্রুতিগুণও প্রশংসিত হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
গ্যারির বাসভবন
গ্যারির মতো একজন স্থপতি সাধারণ বাড়িতে থাকবেন, তা তো হয় না৷ তাই ১৯৭৭ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা মোনিকায় এই বাড়িটি কেনার পর কয়েকবার তার নকশা পরিবর্তন করেছেন৷ গ্যারি নিজে তাঁর এই বাড়ির নাম দিয়েছেন ‘আইডিয়াস ল্যাবরেটরি’৷
ছবি: Flickr/IK's World Trip
অভিজ্ঞতা
৯০ বছর বয়সি গ্যারি আন্তর্জাতিক খ্যাতি পাওয়া শুরু করেন ১৯৮৯ সালে৷ তবে গ্যারি মনে করেন, সময়টা ঠিকই আছে, কারণ, ‘‘পঞ্চাশ বা ষাটেই একজন স্থপতি অভিজ্ঞ হয়ে ওঠে৷’’
ছবি: Bertrand Langlois/AFP/Getty Images
9 ছবি1 | 9
সাবেক পূর্ব জার্মানিতে কোনো ভবনের দুই শতাংশ স্থায়ী শিল্পকর্মের জন্য বরাদ্দ ছিল৷ প্রাচীর চিত্র, রিলিফ, মোসাইক ইত্যাদি সেখানে স্থান পেত৷ সেই স্থাপত্যের একঘেয়েমি কাটাতে কিছু ব্যয়ও করা হতো৷ আজকের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অনেকেই সেই শিল্পকে রাষ্ট্রের প্রচারণা হিসেবে গণ্য করলেও মার্টিন মনে করেন, সেগুলির সুরক্ষার পক্ষেও যুক্তি রয়েছে৷ মার্টিন মালেশকা বলেন, ‘‘বার্লিন প্রাচীর পতনের সময় আমার বয়স ছিল ৭ বা ৮৷ সেই বয়সে আমি বিশেষ কিছু টের পাইনি৷ রাজনৈতিক চেতনা তো ছিলই না৷ আমি তাই শিল্পকে অরাজনৈতিক হিসেবেই গণ্য করি৷’’
এরিশ এঙে-র মতো শিল্পীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ মার্টিনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ তাঁর এখনকার ছোট বাসা শিল্পকর্মে ঠাসা৷ ৮৫ বছর বয়স্ক এই শিল্পী এয়ারফুর্ট শহরে বিশাল এক প্রাচীর চিত্র এঁকেছিলেন৷ ১৯৭৬ সালে সেটি উদ্বোধন করা হয়৷ সেই আইডিয়ার কথা এখনো তাঁর মনে আছে৷ এঙে বলেন, ‘‘আমি সময়ের প্রতিকৃতি এঁকেছিলাম৷ অন্য কিছু সম্ভবই নয়৷ শিল্পী নিজেই সমসাময়িক মানুষের প্রতীক হয়ে থাকেন৷’’
মার্টিন মালেশকা এরিশ এঙে ও অন্যান্য শিল্পীদের প্রাচীর চিত্র সংরক্ষণ করতে চান৷ তাঁর কাছে এগুলি সাবেক পূর্ব জার্মানির ইতিহাসের ক্যাপসুল৷ স্থাপত্যের মধ্যে স্থায়ী শিল্পকর্ম জার্মানিতে আজ সত্যি বিরল হয়ে উঠেছে৷