নন্টেফন্টে. চাচা চৌধুরী, টিনটিন – ছোটবেলায় অনেকেই এই সব কমিক্স পড়ে আমোদ পেয়েছেন৷ কিন্তু আরও বড় আকারের সচিত্র গ্রাফিক নভেলও রয়েছে৷ বার্লিনের এক শিল্পী এক্ষেত্রে বিশাল সাফল্য অর্জন করেছেন৷
বিজ্ঞাপন
কমিক বইয়ের ক্ষেত্রে গত কয়েক বছর ধরে এক নতুন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে৷ উলি লুস্ট এই নতুন ধারার পথিকৃৎ৷ তাঁর সর্বশেষ সৃষ্টিকর্ম ‘ভালো মানুষ হবার প্রচেষ্টা' এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার ‘গোল্ডেন ওয়াইল্ডক্যাট' পেতে পারে৷ উলি বলেন, ‘‘অঁগুলেম শহরের উৎসবে যোগ দেওয়াই দারুণ অভিজ্ঞতা, কারণ সেটাই ইউরোপের সবচেয়ে বড় কমিক উৎসব৷ ফরাসিরাই ইউরোপে সবচেয়ে বেশি কমিক পড়েন৷ সেখানে আমাদের তুলনায় কমিকের কদর অনেক বেশি৷ গোটা ফ্রান্স জুড়ে অঁগুলেম উৎসবের পোস্টার ছেয়ে যায়৷ আর আমি যেহেতু ১০ জন সম্ভাব্য জয়ীদের তালিকায় স্থান পেয়েছি, গোটা দেশে পোস্টারে আমার নামও শোভা পাচ্ছে৷''
২৮ বছর বয়স পর্যন্ত উলি লুস্ট কমিক নিয়ে তেমন ঘাঁটাঘাঁটি করেন নি৷ তারপর বার্লিনে এসে প্রেনৎলাউয়ার ব্যার্গ পাড়ার জীবনযাত্রা নিয়ে এক প্রতিবেদন সৃষ্টি করেন, যা ছিল তাঁর আঁকা স্কেচে ভরা৷ সেখানে তিনি পাংক হিসেবে নিজের অতীত জীবনের স্মৃতি এবং সৃজনশীলতার আদর্শ জায়গা খুঁজে পান৷ জার্মান ভাষাভাষী অঞ্চলে তিনি আজ সেরা কমিক লেখকদের অন্যতম৷ উলি লুস্ট বলেন, ‘‘আমার কাছে বার্লিনের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে৷ এর মধ্যে আমি বেশ অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি৷ ১৯৯৫ সালে বার্লিনে পাকাপাকি আসার কথা কিছুদিন আগে মনে পড়লো৷ ভিয়েনা শহরে আমি বরাবর বহিরাগত ছিলাম৷ অথচ বার্লিনে যেন সবাই আমার মতো৷ ফলে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম৷ সে সময়ে মেয়েদের মধ্যে ছোট চুল, বুট, মিনিস্কার্টের খুব চল ছিল৷ বার্লিনের এমন আত্মসচেতন নারীদের দেখে দারুণ ভালো লেগেছিল৷ সঙ্গে সঙ্গে আমার শহরটিকে বড় আপন মনে হলো৷''
বাংলাদেশে সমকামী নারীদের নিয়ে কমিক স্ট্রিপ
এক সমকামী নারীর প্রেম নিয়ে কমিক স্ট্রিপ প্রকাশ করা হয়েছে ঢাকায়৷ গত পাঁচ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ কাউন্সিলে ‘ধী-এর গল্প’ নামের কমিক স্ট্রিপের মোড়ক উন্মোচন করা হয়৷ ফেসবুক, টুইটারেও ধী-এর গল্প নিয়ে চলছে আলোচনা৷
ছবি: Instagramm/Project Dhee
ধী-এর গল্প
কার্টুন চরিত্রের নাম ধী৷ মফস্বলের এক তরুণী যে কিনা অন্য এক নারীর প্রেমে পড়েছেন, তাকে নিয়েই মূলত সাজানো হয়েছে চরিত্রটি৷ বাংলাদেশে সমকামিতা নিষিদ্ধ৷ আর এধরনের কমিকও এই প্রথম প্রকাশ করা হলো৷
ছবি: AFP/Getty Images/M. Uz Zaman
সহায়তায় ‘বয়েজ অফ বাংলাদেশ’
সমকামী পুরুষদের গ্রুপ ‘বয়েজ অফ বাংলাদেশ’ ‘ধী-এর গল্প’ নিয়ে ফেসবুকে প্রচারণা চালাচ্ছে৷ ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে আগতদের মধ্যে কমিকটির ফ্রি কপিও বিতরণ করা হয়৷
ছবি: Facebook/Project Dhee
টুইটারে প্রজেক্ট ধী
সমকামীদের অধিকারের বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরিতে ধী প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য অনলাইন উপস্থিতি রয়েছে৷ ফেসবুক, টুইটার এবং ইন্সটাগ্রামে তাদের প্রোফাইল রয়েছে৷ টুইটার অ্যাকাউন্টটি অবশ্য তেমন সক্রিয় নয়৷
ছবি: Twitter/Project Dhee
সমকামীদের যেভাবে দেখা হয়
বাংলাদেশে সমকামীদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে কার্টুনটিতে৷
ছবি: Twitter/Project Dhee
সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ
চলতি বছরের এপ্রিলে ধী প্রকল্পের উদ্যোগে ‘টিম বিল্ডিং’ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়৷ এই টুইটটিতে সেই কর্মসূচির কিছু ছবি দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Twitter/Project Dhee
ইন্সটাগ্রামে ধী
ধী প্রকল্পের ইন্সটাগ্রাম পাতাটির অবস্থাও টুইটারের মতো৷ এখন পর্যন্ত মাত্র পাঁচটি ছবি শেয়ার করা হয়েছে সেখানে৷
ছবি: Instagramm/Project Dhee
শাস্তিযোগ্য অপরাধ
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে সমকামিতা শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷ সমলিঙ্গের সঙ্গে যৌনকর্মে লিপ্ত হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত দেয়ার বিধান রয়েছে৷
ছবি: Instagramm/Project Dhee
7 ছবি1 | 7
সাধারণ কমিক্স ও সুপারহিরোর মহিমা নিয়ে উলি লুস্ট-এর মনে মোটেই তেমন উৎসাহ নেই৷ তিনি বরং তথাকথিত ‘গ্রাফিক নভেলস' নিয়ে ব্যস্ত থাকেন৷ সেগুলি আসলে বইয়ের আকারে কমিক্স, যার মাধ্যমে জটিল গল্প বলা হয়৷ তাঁর সৃষ্টিকর্মের মধ্যে নিজস্ব স্কেচ-সহ সচিত্র প্রতিবেদন থাকে৷ সাংবাদিক হিসেবে গবেষণা করে তিনি তার রসদ সংগ্রহ করেছেন৷ এভাবে তিনি সমাজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন৷ কখনো কখনো কয়েক'শো পাতার এমন একটি বই সৃষ্টি করতে কয়েক বছর সময় লেগে যায়৷ কারণ চিত্রনাট্য থেকে রং করা – সব কাজ উলি লুস্ট নিজেই করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘কমিক্স – বিশেষ করে গ্রাফিক নভেল অথবা প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য কমিক্স আমাকে মুগ্ধ করে, কারণ তাতে কোনো বিষয়বস্তু তুলে ধরার অবিশ্বাস্য সম্ভাবনা রয়েছে৷ আমি বাস্তবসম্মতভাবে সে সবের ছবি আঁকতে পারি, অথবা আমি সেগুলি আরও সহজভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারি৷ কোনো বিশেষ শৈলি প্রয়োগ করতে পারি, অতিরঞ্জিত করে তুলতে পারি৷ অথবা সাররিয়াল বা পরাবাস্তব, রূপকধর্মী ছবি সৃষ্টি করতে পারি৷ ফ্যানটাস্টিক রিয়ালিজমেরও আশ্রয় নিতে পারি৷ এমনকি বাস্তবের বর্ণনা দিতে গিয়েও নিজস্ব ধ্যানধারণা জোরালোভাবে তুলে ধরতে পারি৷''
উলি লুস্ট তাঁর সৃষ্টিকর্মে নিজস্ব জীবনকেও স্থান দিয়েছেন৷ ‘আজ আমার জীবনের শেষ দিন' নামের আত্মজীবনিমূলক কমিক্স সৃষ্টি করে তিনি ২০০৯ সালে বিশাল সাফল্য পেয়েছিলেন৷ ১৭ বছর বয়সে তিনি এক বান্ধবীর সঙ্গে কোনো টাকাপয়সা বা পরিচয়পত্র ছাড়াই কীভাবে ভিয়েনা থেকে ইটালির পালের্মো ভ্রমণ করেছিলেন, সেই বইয়ে তার বর্ণনা রয়েছে৷
উলি লুস্ট এরই মধ্যে অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন৷ যেমন বিখ্যাত ‘মাক্স ও মোরিৎস' পুরস্কার, পাঠকরাই যা স্থির করে থাকেন৷ অঁগুলেম থেকে ফেরার সময় ঝুলিতে ‘গোল্ডেন ওয়াইল্ডক্যাট' পুরস্কার থাকবে, এমনটাই তাঁর আশা৷
কমিকে ওয়াইল্ড ওয়েস্ট
বহু দশক ধরে কমিক স্ট্রিপের একটি স্থায়ী উপজীব্য হলো: কাউবয় এবং ইন্ডিয়ান, বাইসন এবং সিক্সগান সম্বলিত ওয়াইল্ড ওয়েস্ট৷ জার্মানিতে এ ধরনের ‘ক্ল্যাসিক’ কমিক স্ট্রিপ নিয়ে একটি প্রদর্শনী চলেছে৷
ছবি: Privatsammlung/Disney
অ্যাডভেঞ্চার
মার্কিন মুলুকের ‘ওয়েস্ট’, অর্থাৎ পশ্চিমাংশের খোলা-মেলা মাঠ-প্রান্তর গোটা ঊনবিংশ শতক ধরে ‘সেটলার’ বা অভিবাসীদের টেনেছে, সুদূর ইউরোপ থেকেও৷ সেই সব কাহিনি নিয়ে কমিক আঁকা শুরু হয় বিংশ শতাব্দীতে – যেমন ১৯৩৩ সালে ফ্লয়েড গটফ্রেডসন-এর আঁকা ‘পাইওনিয়ার’ মিকি মাউস৷
ছবি: Privatsammlung/Disney
দত্যি-দানব
সেটলার-রা নানা বাধাবিপত্তি, আবহাওয়ার দুর্যোগ, খিদে-তেষ্টা, রোগভোগ, হিংস্র জন্তু, সেই সঙ্গে তথাকথিত রেড ইন্ডিয়ানদের রোষ সহ্য করে এই ‘ফ্রন্টিয়ার’ অঞ্চলে বাসা বেঁধেছিলেন৷ ‘‘তার প্রথম ভাল্লুক’’ নামধারী এই ব্যঙ্গচিত্রটি এঁকেছিলেন কোনো অজ্ঞাত শিল্পী৷ কার্টুনটি প্রকাশিত হয় ১৯০১ সালের ২৭শে জানুয়ারি, ‘নিউ ইয়র্ক ওয়ার্ল্ড’ পত্রিকার রবিবারের সংস্করণে৷
ছবি: Sammlung Alexander Braun
সংস্কৃতির সংঘাত
অ্যামেরিকার বহু আদি বাসিন্দার কাছে সেটলারদের আবির্ভাব বিপর্যয় ডেকে এনেছিল৷ সেটলাররা যেমন চাষের জমি, তেমনই শিকারের ক্ষেত্রে নেটিভ অ্যামেরিকান – এককালে যাদের – ভুল করেই – ইন্ডিয়ান বলা হতো, তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়ায়৷ উইন্সর ম্যাককে-র ১৯০৬ সালে আঁকা ছবিটিতে নেটিভ অ্যামেরিকানদের বন্য উপজাতি হিসেবে দেখানো হয়েছে৷
ছবি: Sammlung Alexander Braun
জনপ্রিয় জিমি
যে সব অলংকরণ শিল্পী কমিক ছবি এবং বই’কে জনপ্রিয় করে তোলেন, জেমস সুইনারটন (১৮৭৫-১৯৭৪) তাদের মধ্যে পড়েন৷ তাঁর ‘জিমি’ বা ‘লিটল জিমি’ পর্যায়ের কার্টুনগুলো চলেছিল ১৯০৪ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত৷
ছবি: Privatsammlung/James Swinnerton
কমিক-এর স্বর্ণযুগ
যুক্তরাষ্ট্রে কমিকের স্বর্ণযুগ ছিল গত শতাব্দীর বিশের ও ত্রিশের দশক৷ ওয়াল্ট ডিসনি ১৯৩০ সাল থেকে অলংকরণ শিল্পীদের কাজে লাগাতে - এবং ছাপানো কমিক থেকে নির্বাক চিত্র বানাতে শুরু করেন৷ ফ্র্যাঙ্ক কিং ছিলেন সে আমলের একজন নামকরা কার্টুনিস্ট৷ তাঁর ‘‘গ্যাসোলিন অ্যালি’’ হলো যে সব কমিক স্ট্রিপ সবচেয়ে বেশিদিন ধরে চলেছে, তাদের তালিকায় দ্বিতীয়৷ এই ছবিটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯২৬ সালের ২৮শে আগস্ট তারিখে৷
ছবি: Sammlung Alexander Braun
‘ঘণ্টাখানেক পরে...’
বেলজিয়ান অলংকরণ শিল্পী এর্জ (জর্জ রেমিস, ১৯০৭-১৯৮৩) তাঁর তরুণ সাংবাদিক নায়ক টিনটিনকে নানা অ্যাডভেঞ্চারে রাশিয়া, কঙ্গো, এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাল্পনিক রেডস্কিন সিটি-তেও পাঠিয়েছিলেন –- ১৯৩২ সালে৷ অ্যামেরিকায় টিনটিনের ব্ল্যাকফুট ইন্ডিয়ানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়৷
ছবি: Privatsammlung/Moulinsart/Hergé
কমিক থেকে ‘নিউ ইয়র্কার’ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদশিল্পী
গ্যারেট প্রাইস (১৮৯৬-১৯৭৯) মাত্র কয়েক বছর ধরে কমিক এঁকেছিলেন: তাঁর ‘হোয়াইট বয়’ কমিকটি চলে মাত্র তিন বছর৷ তবুও তিনি ‘নিউ ইয়র্কার’ পত্রিকার প্রচ্ছদশিল্পী হয়েছেন এবং সে’ কাজ করেছেন সত্তরের দশক অবধি৷ তাঁর ‘হোয়াইট বয়’ কমিক স্ট্রিপের এই ছবিটি প্রকাশিত হয় ১৯৩৪ সালের ২৬শে আগস্ট তারিখে৷
ছবি: Privatsammlung/Garrett Price
ওয়াইল্ড ওয়েস্ট’এ মধ্যযুগীয় নাইট
হ্যারল্ড ‘হ্যাল’ ফস্টার (১৮৯২-১৯৮২) প্রিন্স ভ্যালিয়ান্ট নামধারী এক মধ্যযুগীয় নাইট’কে তাঁর কমিক স্ট্রিপের নায়ক করেন৷ তাঁর এই কমিক স্ট্রিপে নেটিভ অ্যামেরিকানদের সংস্কৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ পেয়েছে৷ ছবিটি প্রকাশিত হয় ১৯৪৭ সালের ১৫ই জুন তারিখে৷
ছবি: Privatsammlung/King Features Syndicate
মেড ইন সুইজারল্যান্ড
‘ইয়াকারি’ কমিক স্ট্রিপটির স্রষ্টা সুইজারল্যান্ডের কমিক শিল্পী ডেরিব৷ তিনি নেটিভ অ্যামেরিকান সংস্কৃতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভক্ত৷ তিনি এক ‘ইন্ডিয়ান’ কিশোরের অ্যাডভেঞ্চার নিয়ে কমিক আঁকছেন ১৯৭৩ সাল থেকে৷ তাঁর স্ট্রিপে জন্তুজানোয়ার কথা বলতে পারে৷ ছবিটি ১৯৭৯ সালের৷
ছবি: Derib
আবার লাকি লিউক
১৯৪৬ সালে যার সৃষ্টি, ২০১১ সালে সেই লাকি লিউককে আবার ফিরিয়ে এনেছেন এর্ভে দারমঁতঁ৷ তবে লাকি লিউক-এর মুখে আজ সিগারেটের পরিবর্তে খড়কে কাঠি৷ কমিকে ওয়াইল্ড ওয়েস্ট প্রদর্শনীটি চলবে ২৬শে এপ্রিল অবধি, বন’এর কাছে ট্রয়েসডর্ফ শহরে৷ তারপর যাবে হ্যানোভারের ভিলহেল্ম বুশ মিউজিয়ামে৷
ছবি: Sammlung Alexander Braun/Lucky Production/Achdé