1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কমিশনের কড়া দাওয়াইয়ে কি অবাধ হবে নির্বাচন?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৪ এপ্রিল ২০২৪

আধাসেনা মোতায়েন থেকে পুলিশ প্রশাসনে রদবদল, একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। এতে কি লোকসভা নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হবে?

আসন্ন লোকসভা নির্বাচন উপলক্ষে ভারতের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের প্রচার করা পোস্টার
পশ্চিমবঙ্গে সাত ধাপের নির্বাচনের প্রথম ধাপ ১৯ এপ্রিলছবি: Sajjad HUSSAIN/AFP

১৯ এপ্রিল প্রথম দফার নির্বাচন। তার প্রস্তুতি চূড়ান্ত করতে দফায় দফায় বৈঠক করছে কমিশন। নেয়া হচ্ছে বিভিন্ন পদক্ষেপ।

আধাসেনা মোতায়েন

প্রতিবারের মতো এবারও পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন পরিচালনায় বিপুল সংখ্যায় আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করতে চলেছে নির্বাচন কমিশন। ভোট ঘোষণার আগেই আধাসেনা রাজ্যে চলে এসেছে। কলকাতা ও জেলায় জেলায় তাদের রুট মার্চ শুরু হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে গোটা দেশের জন্য ৩৪০০ কোম্পানি আধাসেনা চেয়েছে। এর মধ্যে ৯২০ কোম্পানি অর্থাৎ এক চতুর্থাংশের বেশি শুধু পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের জন্য চেয়েছে কমিশন। এই রাজ্যে ৪২টি কেন্দ্রে ভোট নেয়া হবে। এর থেকে প্রায় দ্বিগুণ ৮০টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হবে উত্তরপ্রদেশে। দেশের সবচেয়ে বড় এই রাজ্যে নির্বাচনের জন্য আড়াইশো কোম্পানি বাহিনী চেয়েছে কমিশন।

পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় গত বছর। একদিনে গোটা রাজ্যে ভোট নেয়া হয়। কলকাতা হাইকোর্টে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে পঞ্চায়েত ভোট করানো নিয়ে মামলা হয়েছিল। আদালত বলেছিল, ৮০০ কোম্পানি বাহিনী লাগবে। এবারের লোকসভা ভোটে সেই সংখ্যাও ছাপিয়ে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে।

পশ্চিমবঙ্গের ইতিমধ্যে এসে গিয়েছে ১৭৭ কোম্পানি আধাসেনা। প্রথমে দেড়শো, পরে আরো ২৭ কোম্পানি বাহিনী এসেছে। আগামী ১৯ এপ্রিল উত্তরবঙ্গের কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়িতে ভোট নেয়া হবে। প্রথম দফার এই নির্বাচনের জন্য সাড়ে ৩০০ কোম্পানি আধা সামরিক বাহিনী লাগবে। এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে আরো বাহিনী এসে যাবে বলে সূত্রের খবর।

বদলি বিধায়কের স্বামী

ভোট ঘোষণার পর থেকে জাতীয় নির্বাচন কমিশন দেশ জুড়ে পুলিশ ও প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল করছে। পশ্চিমবঙ্গেও একের পর এক বদলির নির্দেশ আসছে। একেবারে গোড়াতেই রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারকে সরিয়ে দিয়েছে কমিশন।

সোনারপুর দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক লাভলি মৈত্রের স্বামী সৌম্য রায়কে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। আইপিএস আধিকারিক সৌম্য কলকাতা পুলিশের ডিসি পদে নিযুক্ত ছিলেন। মঙ্গলবার কমিশন নির্দেশ দেয়, নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কহীন কোনো পদে সৌম্যকে নিয়োগ করতে হবে। এই পদে উপযুক্ত তিনজন আধিকারিকের নাম রাজ্য পাঠিয়েছে কমিশনকে। বদলির ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী তার মধ্যে থেকে একজনকে কমিশন বেছে নেয়।

বাংলা টেলিভিশন জগতের পরিচিত মুখ লাভলিকে গত বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী করে তৃণমূল। তারপর বিরোধীদের দাবি মেনে সৌম্যকে সেই ভোটের সময় পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। এই সিদ্ধান্ত লোকসভা ভোটের সময়ও নিল কমিশন। এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

‘আমার ব্যক্তিগত ধারণা, এই মেশিনে খুব একটা গন্ডগোল নেই’

This browser does not support the audio element.

মমতার মন্তব্য, "লাভলি বিধায়ক হওয়ার অনেক আগে সৌম্য আইপিএস হয়েছে। স্ত্রী বিধায়ক বলে কি স্বামী চাকরি করবে না?" বদলি বিষয়ে বারবারই কেন্দ্রকে আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, "নির্বাচনের আগে নিজেদের কটা অফিসার কে বদলি করেছে। কজন বিএসএফকে বদলি করেছে। সকলের জন্য বিচার সমান হওয়া উচিত।"

রাজ্য পুলিশের ডিজির পর গত মাসে চার জেলাশাসককে বদলি করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। পূর্ব মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পূর্ব বর্ধমান ও বীরভূমের জেলাশাসকদের সরিয়ে দেয়া হয়েছে।

বিশেষ পর্যবেক্ষক

পশ্চিমবঙ্গ সহ পাঁচ রাজ্যে বিশেষ পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছে নির্বাচন কমিশন। এ রাজ্যের দায়িত্ব নিয়ে ইতিমধ্যেই কলকাতায় এসে গিয়েছেন পর্যবেক্ষক অলোক সিনহা। বুধবার তিনি রাজ্যের পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য জানতে চান।

রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি কী অবস্থায় রয়েছে, তা জানতে প্রথম দিনই রিপোর্ট তলব করেন সিনহা। এ জন্য রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আরিজ আফতাব বৈঠক ডাকেন। বৈঠকে যোগ দেন মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, ডিজি, বিভিন্ন দপ্তরের কর্তারা।

কত বছরের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ব্যাপক হানাহানি হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গে। গত বিধানসভা নির্বাচনের পর ভোট পরবর্তী হিংসা হয়েছিল জেলায় জেলায়। তাই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখছে কমিশন। বিশেষ পর্যবেক্ষকের নির্দেশ, যাদের বিরুদ্ধে অপরাধের রেকর্ড আছে, তাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে।

আগামিকাল রাজ্যে আসছেন কমিশনের বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক। পঞ্জাবের ১৯৮৪ ব্যাচের আইপিএস অনীলকুমার শর্মা এই দায়িত্ব পেয়েছেন। শনিবার বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক ও বিশেষ পর্যবেক্ষকের সঙ্গে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের বৈঠক হবে।

এত আয়োজন সত্ত্বেও নির্বিঘ্ন নির্বাচন নিয়ে নিশ্চিত হতে পারছেন না ভোটকর্মীদের একাংশ। শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক, শিক্ষক কিংকর অধিকারী বলেন, "৯২০ কোম্পানি বাহিনীর কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু প্রথম দফার ভোটের আগে মাত্র ১৭৭ কোম্পানি রাজ্যে রয়েছে। এটা দিয়ে প্রথম দফায় প্রতি বুথে জওয়ান মোতায়েন করা যাবে না। তাই আমরা প্রচন্ড আতঙ্কিত। ১৪ এপ্রিল আবার সিইও দপ্তরে আমরা বিক্ষোভ দেখাব, নিরাপত্তার জন্য আবেদন জানাব।"

ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন

বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্র বা ইভিএম নিয়ে বারবার প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। এবারও নির্বাচনের আগে একই ধরনের অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। বিরোধীদের দাবি, ভোটযন্ত্রে কারসাজি করে ক্ষমতায় আসতে পারে বিজেপি। সাম্প্রতিক অতীতে বিধানসভা নির্বাচনে মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে বিজেপির জয়ের পর একই প্রশ্ন তুলেছিল বিরোধী।

বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, "বিরোধীরা যখন ইভিএমের মাধ্যমে ভোটে জিতছে, তখন মেশিন নিয়ে কোনো আপত্তি তুলছে না। হেরে গেলেই আপত্তি জানাচ্ছে। লোকসভা নির্বাচনে পরাজয় নিশ্চিত বুঝে আগে থেকেই তারা ইভিএমের যুক্তি খাড়া করছে।"

রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুভময় মৈত্র বলেন, "এই বিষয়ে আমি কাজ করি। আমার ব্যক্তিগত ধারণা, এই মেশিনে খুব একটা কিছু গন্ডগোল নেই। গন্ডগোল যে নেই সেটা বোঝানোর দায় কেন্দ্রের শাসক দলের। ভিভিপ্যাট সম্পূর্ণ গুনতে হবে। এছাড়া এই মেশিনের সার্কিট ও সেই সংক্রান্ত পড়াশোনা গোটা দেশে ছড়িয়ে দেয়া উচিত কেন্দ্রের। যাতে গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ বুঝতে পারেন ও বোঝাতে পারেন, এই মেশিনে গন্ডগোল নেই এবং ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বজায় আছে।"

সদিচ্ছার অভাব

নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া যে রাজনৈতিক দলগুলির সদিচ্ছার উপর নির্ভর করে, তা মনে করেন পর্যবেক্ষকদের বড় অংশ। তাই কমিশনের কঠোর মনোভাবে পরিস্থিতির পরিবর্তন খুব একটা হবে বলে মনে করেন না অধ্যাপক রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী।

তিনি বলেন, "যারা আধাসেনা মোতায়েন করবেন, ভোট পরিচালনা করবেন, তারা সবাই রাজ্য সরকারের পুলিশ প্রশাসনের কর্মী। কমিশন যাই বলুক না কেন, তাদের ভূমিকা সাময়িক। কর্মীদের সুযোগ সুবিধা বা পদোন্নতি নির্ভর করে রাজ্যের উপর। তাদের সাহায্য নিয়ে শাসক দল ভোট করিয়ে নিতে চায়। তাই শাসকের সদিচ্ছা ছাড়া অবাধ ভোট সম্ভব নয়।"

শাসকের এই ভূমিকার কথা বামফ্রন্ট আমলে বারবার তুলেছে বিরোধী কংগ্রেস ও পরে তৃণমূল কংগ্রেস। এখন বিরোধীদের নিশানায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।

শুভময়ের বক্তব্য, বিরোধীরা যখন শাসকের ভূমিকা নেয়, তখন তাদের বক্তব্য পাল্টে যায়।

তিনি বলেন, "শাসকের ভাষা ও বিরোধীদের ভাষা সব জায়গাতেই এক হয়ে যায়। তৃণমূল কেন্দ্রে বিরোধী, রাজ্য শাসক। এই দুটি জায়গায় তাদের বক্তব্য পরিবর্তিত হয়। বিজেপির ক্ষেত্রেও তাই। গণতন্ত্র রক্ষার দায়িত্ব যে বড় রাজনৈতিক নেতানেত্রীর, তারা রাজনৈতিক সাক্ষরতা নিয়ে সচেতন নন। তারা ভারতের গণতন্ত্র রক্ষার ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে ব্যর্থ হচ্ছেন।"

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ