জার্মানির এক সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তাকে সাড়ে পাঁচ বছরের জেল দেয়া হয়েছে৷ ইউরোপের বিভিন্ন দেশকে প্রায় পাঁচ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা ক্ষতির মুখে ফেলা ‘কম-এক্স' কর ফাঁকি কেলেংকারিতে জড়িত থাকার দায়ে তার বিরুদ্ধে এই রায় দেয়া হয়৷
বিজ্ঞাপন
ব্যক্তিগত গোপনীয়তার কারণে জার্মানির বন শহরের আদালত ঐ কর্মকর্তার নাম প্রকাশ করেনি৷ তবে তিনি জার্মানির বেসরকারি ব্যাংক এমএম ভারবুর্গে কাজ করতেন৷ কর ফাঁকি দিয়ে আয় করা এক কোটি তিন লাখ টাকাও তাকে ফেরত দিতে বলা হয়েছে৷ অবশ্য এই রায়ের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করতে পারবেন৷
‘কম-এক্স' কর ফাঁকির বিষয়টা এমন: কোনো কোম্পানির ডিভিডেন্ড ঘোষণার দিন ও তার কিছু আগে-পরে কয়েকজন মিলে নিজেদের মধ্যে ঐ কোম্পানির শেয়ার দ্রুত লেনদেন করেন৷ এর মাধ্যমে তারা যে কর কখনও দেননি, তার উপরও রিটার্ন পেয়ে থাকেন৷ পরে নিজেদের মধ্যে ঐ টাকাটা ভাগ করে নেন তারা৷ আইনের একটি ফাঁক কাজে লাগিয়ে জেনেশুনেই এভাবে লাভবান হতেন বিনিয়োগকারীরা৷ এতে ক্ষতি হত সরকারের৷ যেমনটা হয়েছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সরকারের৷ ক্ষতির পরিমাণ প্রায় পাঁচ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা৷ সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে জার্মানির- প্রায় ৫৭ হাজার কোটি টাকা৷
প্রতারণার গল্প নিয়ে যত সিনেমা
ব্যাংক হিসাব শূন্য, অথচ চেক দিয়ে কোটি কোটি ডলার তুলছেন৷ আবার তিনিই বনে যাচ্ছেন পাইলট, ডাক্তার কিংবা আইনজীবী৷ মুচি ক্যাপ্টেন বনে গ্রেপ্তার করলেন সিটি মেয়রকে৷ বিশ্বব্যাপী এমন অনেক প্রতারণার গল্প উঠে এসেছে বিভিন্ন সিনেমায়৷
ছবি: imago/EntertainmentPictures
‘ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান’ (২০০২)
বাবা-মায়ের ডিভোর্সের পর চেক জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতারণার সূচনা হয় ফ্রাঙ্ক আবাগনালের৷ মাত্র ১৬ বছর বয়সেই রেখেছিলেন প্রতারক হিসেবে সাফল্যের স্বাক্ষর৷ পর্যায়ক্রমে পাইলট, এরপর ডাক্তার এবং আইনজীবীর ভূমিকা পালন করতে দেখা যায় তাকে৷ স্টিভেন স্পিলবার্গের মনোমুগ্ধকর সিনেমাটিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও৷
ছবি: imago/EntertainmentPictures
‘ক্যান ইউ এভার ফরগিভ মি?’ (২০১৮)
আপনার লেখার হাত যদি ভালো হয়, তাহলে অর্থকষ্ট আপনার কাছে ব্যাপারই না! তেমনই এক দৃষ্টান্ত আর্থার লি ইসরায়েল, যিনি তারকাদের নাম করে ৪০০টি চিঠি লিখেন এবং সেগুলো বিক্রি করে হাতিয়ে নেন বিপুল অর্থ৷ এক সময় এফবিআইয়ের হাতে ধরা পড়লে অপরাধ স্বীকার করে নেন তিনি৷ পরবর্তীতে তার আত্মজীবনীর ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয় সিনেমাটি৷ এটি ২০১৯ সালের অস্কারে ৩টি ক্যাটেগরিতে মনোনয়ন পায়৷
জার্মানির হিয়ারোনিমুস কার্ল ফ্রিডরিশ ফ্রাইহার ফন ম্যুনশাউজেন একজন প্রতিভাবান গল্পকথকও ছিলেন৷ গ্রামের বাড়িতে অভিজাত ব্যক্তিদের নিয়ে তিনি বিভিন্ন পার্টির আয়োজন করতেন এবং ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে নিজের গল্প বলতেন৷ কীভাবে তিনি কামানের গোলায় ভর করে বহুদূর পাড়ি দিয়েছেন, এমন গল্প শুনতেও মানুষ আসতো সেখানে৷ ‘মিথ্যাবাদী’ এই ব্যারনের গল্প বিভিন্ন সিনেমায় ঠাঁই পেয়েছে৷ এর একটি ১৯৪৩ সালের ‘ম্যুনশাউজেন’৷
ছবি: picture-alliance/United Archives
‘আই লাভ ইউ ফিলিপ মরিস’ (২০০৯)
চার বার জেল থেকে পালাতে পেরেছেন স্টিভেন জে রাসেল৷ এই প্রতারক তার প্রতিভা দিয়ে বিচারক, ডাক্তার ও মিলিয়নেয়ারসহ বিভিন্ন রূপ ধারণ করেছিলেন৷ আর এসব করেই ব্যাংক ও ইন্সুরেন্স কোম্পানি থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছিলেন৷ কমেডি চলচ্চিত্র ‘আই লাভ ইউ ফিলিপ মরিস’-এ রাসেলের চরিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়৷ কারাগারের সহবন্দি ফিলিপ মরিসের সঙ্গে তার প্রেমের নানা দিকও আছে ওই সিনেমায়৷
ছবি: Imago/EntertainmentPictures
‘অ্যামেরিকান হাসেল’ (২০১৩)
দুর্নীতিবাজ রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে ১৯৭০ সালে এফবিআইয়ের একটি অভিযানের উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে এই সিনেমা৷ একজন প্রতারককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল সেই অভিযানে৷ সিনেমাটি মোট ১০টি অস্কার নমিনেশন পেলেও পুরস্কার ঘরে তুলতে পারেনি৷
ছবি: imago/Unimedia Images
‘দ্য ক্যাপ্টেন ফ্রম ক্যোপেনিক’ (১৯৫৬)
১৯০৬ সালে ক্যাপ্টেনের সাজ নিয়ে ক্যোপেনিকের টাউন হলে যান মুচি ফ্রিডরিশ ভিলহাইম ফোইগট৷ মেয়রকে গ্রেপ্তারের পর ট্রেজারিতে ডাকাতিও করেন তিনি৷ এই ডাকাতিতে তিনি কিছু সৈন্যকেও কাজে লাগাতে পেরেছিলেন৷ সত্য ওই ঘটনার উপর অনেকগুলো সিনেমা নির্মিত হয়েছে, তার একটি ‘দ্য ক্যাপ্টেন ফ্রম ক্যোপেনিক’৷
ছবি: picture-alliance/United Archives/IFTN
6 ছবি1 | 6
২০১২ সালে জার্মানি আইনের ঐ ফাঁক বন্ধ করে দেয়৷ আদালত বলেছে, ঐ ব্যাংক কর্মকর্তা অবৈধ জেনেও ২০০৬ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত চলা কর লেনদেনের বিষয়টি গোপন রেখেছেন৷
২০১৭ সালে প্রথম ‘কম-এক্স' কর ফাঁকি কেলেংকারির বিষয়টি ধরা পড়ে৷
কেলেংকারির সঙ্গে জড়িত সন্দেহে সাম্প্রতিক সময়ে জার্মানির ডয়চে বাংক, কমার্ৎসবাংক ও ফ্রাংকফুর্টের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ক্লিয়ারস্ট্রিমের একটি সাবসিডিয়ারিতে বেশ কয়েকবার অভিযান চালানো হয়৷
‘কম-এক্স' কেলেংকারির ঘটনায় এই প্রথম কাউকে কারাদণ্ড দেয়া হলো৷ এর আগে গত বছর মার্চে বন শহরের আদালত একই অভিযোগে দুজন ব্রিটিশ সাবেক ইনভেস্টম্যান্ট ব্যাংকারের বিরুদ্ধে স্থগিত রায় দিয়েছিল৷
অনলাইন ব্যাংকিং করুন, ঝুঁকি এড়িয়ে টাকা বাঁচান
আপনি কি অনলাইনে টাকা লেনদেন করেন? এতে টাকা এবং সময় দু’টোই বাঁচে৷ জার্মানিতে অনলাইন ব্যাংকিং দিনদিন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে৷ তবে অনলাইন ব্যাংকিংয়ে কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত৷ জেনে নিন...
জার্মানির মতো অনেক দেশেই বাড়িভাড়া থেকে শুরু করে প্রায় সব বিলই ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠাতে হয়৷ এ সবের জন্য আগের তুলনায় জার্মানিতে ব্যাংকের ট্রান্সফার চার্জ বেশ বেড়ে গেছে৷ তাছাড়া ব্যাংকে যাওয়ার ঝামেলাও রয়েছে৷ তাই ঘরে বসে বিশ্বের যে কোনো জায়গা থেকে যে কোনো সময় ব্যাংকের কাজটি অনলাইনেই সেরে ফেলা যায়৷
ছবি: Imago/Niehoff
ঝুঁকি
অনলাইন ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক সম্বলিত একটি ব্যবস্থায় তাই হ্যাকারদের আক্রমণের আশঙ্কা থেকেই যায়। এতে গোপনীয়তা যেমন নষ্ট হতে পারে, তেমনি কম্পিউটার সিস্টেমেও গন্ডগোল দেখা দিতে পারে৷
ছবি: Schlierner - Fotolia.com
নিয়মিত আপডেট করতে হবে
ইন্টারনেট নিরাপত্তার জন্য কম্পিউটার নিয়মিত আপডে করতে হবে, যাতে সর্বশেষ সংস্করণ থাকে৷ এটা অপারেটিং সিস্টেম এবং ইন্টানেট ব্রাউজারের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য৷ তাছাড়া আপনার ব্যাংক থেকে যে ইন্টারনেট ঠিকানাটি দেওয়া হবে, শুধু সেটাই ব্যবহার করবেন এবং সবসময় নিজেই এ কাজটি করবেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa Themendienst/J. Kalaene
সতর্কতা
অতি জরুরি না হলে কোনো দোকান, রেস্তোরাঁ কিংবা স্টেশনের ওয়াইফাই ব্যবহার করে অনলাইন ব্যাংকিং না করাই ভালো৷
ছবি: Imago/Westend61
পাসওয়ার্ড
পাসওয়ার্ড যত বড় হবে, ততটাই নিশ্চিন্ত৷ সবচেয়ে ভালো হয় ছোট এবং বড় অক্ষর ও সংখ্যা মিলিয়ে নিজের পছন্দমতো পাসওয়ার্ড তৈরি করে নিলে৷
ছবি: Reuters/P. Kopczynksi
জার্মানদের আগ্রহ কেমন?
জার্মানিতে শতকরা ৫০ ভাগ মানুষ অনলাইন ব্যাংকিং করছেন, যদিও তাঁদের মধ্যে তরুণদের সংখ্যাই বেশি৷ তবে ব্যাংক থেকে বয়স্কদেরও অনলাইন ব্যাংকিং করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে৷