1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কম খেয়ে ঋণ করে চলছেন তারা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৪ মে ২০২২

দ্রব্যমূল্যের চাপে অনেকেই এখন ভোগ্যপণ্যের ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছেন৷ আবার কেউ কেউ ব্যয় ঠিক রাখতে গিয়ে প্রতি মাসেই ধারদেনা করছেন৷

Bangladesch Menschenschlange vor LKWs mit Lebensmitt´len in Dhaka
ফাইল ছবি৷ছবি: Abdul Halim

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অবস্থা চলতে থকলে অপুষ্টির শিকার হতে পারে দেশের বড় একটি অংশ৷ বাড়তে পারে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা৷

বাজারে এখন শুধু ভোজ্য তেলের দামই নয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দামই বাড়ছে৷ দামবৃদ্ধির এই চাপ টের পাচ্ছেন নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা৷

এমন কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে যে, তাদের অনেকেই ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন৷ কেউ সঞ্চয় ভেঙে খরচ চালাচ্ছেন৷ আর দাম বাড়ায় অনেকেই পছন্দের খাবারে এনেছেন পরিবর্তন৷ যেমন গরুর মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন অনেকে৷ কেউবা আগের চেয়ে প্রয়োজনের তুলনায় কম খেয়ে চাপ সামলাচ্ছেন৷

এমনই একজন হলেন সুমাইয়া ইমলাম৷ তিনি  ঢাকার একটি সরকারি প্রাইমারি স্কুলের সহকারী শিক্ষক৷ বেতন পান ২৭ হাজার টাকা৷ তার স্বামী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন৷ বেতন পান ৫০ হাজার টাকা৷ গত তিন বছরে তার স্বামীর বেতন বাড়েনি৷ তার বেতন এক বছরে বেড়েছে মাত্র ৭০০ টাকা৷ তাদের একটি সন্তান আছে৷ স্বামী স্ত্রী দুজনকেই নিজ নিজ বাবা-মা ও ভাই-বোনদের খরচ চালাতে হয়৷

‘ঋণতো বাড়তে থাকবে, শোধ করব কীভাবে’

This browser does not support the audio element.

সুমাইয়া ইসলাম জানান, ‘‘গত এক বছরে আমাদের পরিবারের খরচ প্রায় দুইগুণ বেড়ে গেছে৷ শুধু তেলের দাম নয়, শাকসবজিসহ সবকিছুর দামই বেড়ে গেছে৷ আগে যা ১০০ টাকায় কিনতাম তা কিনতে এখন ২০০ টাকা লাগে৷ কিন্তু আমাদের আয় বাড়েনি৷’’

তিনি জানান, যা আয় হয় তা তাদের হাতে থাকে না৷ বেতন পেয়েই প্রতিমাসে গড়ে ২০ হাজার টাকা ঋণ শোধ করতে হয়৷ আবার মাসের শেষে ধার করতে হয়৷ এর ফলে গত এক বছরে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন বলে দাবি তার৷

তার কথা, ‘‘এভাবে চলতে থাকলে জানি না কীভাবে চলব৷ ঋণতো বাড়তে থাকবে৷ শোধ করব কীভাবে!’’

নিজের সহকর্মীদের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমার সহকর্মীদেরও একই অবস্থা৷ তবে আমার পরিচিত যারা ব্যবসা করেন তাদের সমস্যা হচ্ছে না তেমন৷’’

নাজমুল হক তপনকে তার তিন সদস্যের পরিবারকে মাসে ৫০ হাজার টাকায় চালাতে হয়৷ করোনার সময় তার বেতনও কমে গেছে৷ আগে বেশি বেতন পেতেন৷ আর এখন উল্টো নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে৷

তার কথা, ‘‘আমি ঋণ এড়াতে গরুর মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি৷ আগে মাসে চার কেজি কিনতাম৷ এখন কিনি না৷ চার প্যাকেটের বদলে এখন দুই প্যাকেট দুধ কিনি৷ মাছ কেনা কমিয়ে দিয়েছি৷ মাংস বলতে এখন ব্রয়লার মুরগি৷ আর অফিসে হেঁটে যাই৷’’

নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের এই করুণ গল্প তেমন আর আলাদা নয়৷ সবাই বলতে গেলে এখন হয় ঋণ করে সংসার চালাচ্ছেন অথবা ভোগ্যপণ্যের ব্যবহার কমিয়ে কোনোভাবে টিকে আছেন৷

‘এটা অব্যাহত থাকলে মানুষ আরো ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়বে’

This browser does not support the audio element.

কিন্তু এভাবে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকলে তারা কতদিন টিকতে পারবেন বলা মুশকিল৷

মোহাম্মদ বখতিয়ার হোসেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন৷ বেতন পান মাসে ১৮ হাজার টাকা৷ গত তিন বছরে তার এক টাকাও বেতন বাড়েনি৷ কিন্তু খরচ বেড়েছে প্রায় ৫০ ভাগ৷ চার ছেলে-মেয়েসহ পরিবারের সদস্য ছয়জন৷

তার কথা, ‘‘কোনোভাবে বেঁচে থাকার জন্য যা কিনতে হয় তা কিনি৷ কিন্তু তারপরও ঋণে আমি জর্জরিত৷ দোকানদারও আর বাকি দিতে চায় না৷ ১০ দিনের মধ্যেই বেতনের টাকা শেষ হয়ে যায়৷ কীভাবে বেঁচে আছি জানি না৷ আল্লাহই বাঁচিয়ে রেখেছেন৷’’

বাংলাদেশে শুধুমাত্র চলতি বছরেই ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে দুইবার৷ বলা হচ্ছে, বর্তমান দর প্রতিকেজি ১৯৮ টাকা৷ কিন্তু ১৯৮ টাকা দামে এক লিটার সয়াবিন তেল বাস্তবে পাওয়া যায় না৷ বাস্তবে ২২০ টাকা৷ টিসিবির দামের হিসাবের সাথে বাস্তবের কোনো মিল নাই৷ পেঁয়াজ, চাল, চিনি, ডাল, ডিম, মাছ, মাংসের দাম আরো এক দফা বেড়েছে৷ প্রতিটি ভোগ্য পণ্যের দাম গত এক সপ্তাহে প্রতি কেজিতে গড়ে ১০-২০ টাকা বেড়েছে৷ গরুর মাংসের কেজি এখন ৭২০ টাকা৷  শাকসবজির দাম প্রতিদিনই বাড়ছে৷

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘‘গত বছর আমাদের হিসেবে জীবনযাত্রার ব্যয় শতকরা ৯ ভাগ বেড়েছে৷ আমরা বছর শেষে এটা হিসাব করি৷ তবে আমাদের পর্যবেক্ষণ বলছে, এবছরের পাঁচ সাড়ে পাঁচ মাসেই জীবনযাত্রার ব্যয় ১০ ভাগেরও বেশি বেড়েছে৷ তবে মানুষের আয় বড়ছে না৷ বরং অনেকের আয় কমে গেছে৷’’

‘এবছরের পাঁচ মাসে জীবনযাত্রার ব্যয় ১০ ভাগেরও বেশি বেড়েছে’

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘মানুষ এখন  খাওয়া কমিয়ে খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখছে৷ আবার অনেকে ধার-দেনা করে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন৷’’

এ বিষয়ে সিপিডির অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘‘সরকার বলছে এখন মূল্যস্ফীতি ৬.২ ভাগ৷ কিন্তু বাস্তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিশেষ করে করে ভোগ্যপণ্যের দাম  গত এক বছরে ২০ থেকে ৪০ ভাগ বেড়েছে৷ কোনো ক্ষেত্রে এর চেয়ে বেশিও বেড়েছে৷ তাহলে বোঝা যায় সরকারের হিসাবের সাথে বাস্তবের মিল নাই৷ তাই সরকারের হিসাবের যে কৌশল তা নতুন করে ভেবে দেখা উচিত৷’’

তার কথা, ‘‘এই সময়ে মানুষের আয় বাড়েনি৷ এটা অব্যাহত থাকলে মানুষ আরো ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়বে এবং তা থেকে বের হতে পারবে না৷ দরিদ্র মানুষের সংখ্যা আরো বেড়ে যাবে৷ যারা এখনো সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন তাদের সঞ্চয় শেষ হয়ে যাবে৷ খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে৷ ফলে অপুষ্টি বাড়বে৷’’

এই অর্থনীতিবিদের আশা, চলমান অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হবে না৷ তবে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সরকারকে আগামী বাজেটে খাদ্য নিরাপাত্তা ও সামাজিক নিরাপত্তা বাড়াতে হবে৷

তিনি বলেন, ‘‘দ্রব্যমূল্য নিয়ে শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো বিশ্বই এখন সংকটে আছে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ